কথা হচ্ছিলো নারী এবং পুরুষদের মানসিকতা ও সম্পর্ক নিয়ে। আমাদের আবাসিক ডাক্তার নারীপুরুষের জন্ম রহস্য যে ভাবে বুঝিয়ে দিলো সেই কথাগুলো আমি নিজের ভাষায় লিখছি।
XX ক্রোমোজোম নারীর সম্পদ আর XY ক্রোমোজোম পুরুষের। মানুষের জন্মের জন্য প্রয়োজন উভয় পক্ষের ২৩টি করে ক্রোমোজোম। যেখান থেকে ২২ + ২২ = ২২ জোড়া (৪৪টি) ক্রোমোজোম (অটোজম) তৈরি করে মানব দেহ।
মাত্র এক জোড়া (X + Y) ক্রোমোজোমের মিলন নির্ধারণ করে পুরুষ অথবা নারী হয়ে জন্মানো। যদি X + X এর মিলন হয় তবে সে হয় নারী আর যদি X + Y এর মিলন হয় তবে সে হয় পুরুষ।
একাধিক X ক্রোমোজোমের সাথে যদি একটিও Y ক্রোমোজোম থাকে তবে সেই Y ক্রোমোজোম X ক্রোমোজোমগুলোকে ডমিনেট করে এবং পুরুষের জন্ম হয়। মজার কথা হলো Y ক্রোমোজোম X ক্রোমোজোমকে ডমিনেট করলেও X ছাড়া Y ক্রোমোজোম বাঁচতেই(Survive)পারে না অর্থাৎ একটা ভ্রূণ তৈরি হয় না। অপর পক্ষে X ক্রোমোজোম যদি কোনো কারণে Y ক্রোমোজোমকে না পায় সে বাঁচতে (Survive) পেরে একটি নারীর জন্ম দিতে সক্ষম (যদিও Turner syndrome থাকতে পারে)।
আমরা দেখতে পাচ্ছি জন্ম রহস্যে বা বৈজ্ঞানিক সূত্রে একজন পুরুষ (Y) একজন নারীকে (X) যত ডমিনেটই করুক না কেন নারী ছাড়া তাঁর অস্তিত্ব থাকে না। আবার একজন নারী (X) পুরুষ (Y) দ্বারা ডমিনেটেড হলেও পুরুষ ছাড়া পরিপূর্ণ সুস্থ্য ভাবে না হলেও বেঁচে থাকতে সক্ষম।
পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে জন্ম রহস্যের এই প্রতিফলনই প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে ডমিনেট করলেও সে নারীর উপরে একান্ত ভাবে নির্ভরশীল।
আবার এ রকমও বলা যায় প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে নারীরাই পুরুষদের ডমিনেট করে, হয়তো বা নারীরা জানে তাঁদের ছাড়া পুরুষ চলতে পারে না বা অসম্পূর্ণ।
বাস্তব জীবনে স্ত্রীকে ভয় পায় না এমন পুরুষ খুব কমই আছে (স্বীকার বা না করুক)। এমনও দেখা যায় একজন স্ত্রী যদি আগে মারা যায় তাঁর স্বামী খুব অসহায় হয়ে পড়ে আর স্বামী হারানো একজন স্ত্রী কষ্টে হলেও নিজেকে চালিয়ে নিতে পারে।
আসলে পুরুষ এবং নারীর ডমিনেশন এবং নির্ভরশীলতা সৃষ্টির আদি রহস্যে নিহিত। সৃষ্টিকে উল্টানোর ক্ষমতা মানুষের হাতে কতটুকুই বা থাকে। আমাদের হাতে যা আছে এবং যে সব আমরা করতে পারি-- আমরা একে অপরের সুখ দুঃখ উপলব্ধি করে পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারি;
নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা দিয়ে বিশ্বাস বিষয়টি অটুট রাখতে পারি; কে বড় আর কে ছোটো নিত্যদিনের এই কোলাহল থেকে নিজেদের মুক্তি দিতে পারি।
মানব সৃষ্টির শক্ত বৈজ্ঞানিক এই রহস্যকে সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আবাসিক ডাক্তারের কাছে কৃতজ্ঞ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৪