গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় পরিবারের ব্যবহারের জন্য নেটগিয়ারের একটা রাউটার (Netgear R6230) সাথে করে নিয়ে গিয়েছি। বড় ভাই বহুদিন ধরেই তার ২.৪ গিগা হার্টজের রাউটার ব্যবহার করছেন বাসায়। মাঝে মধ্যেই অভিযোগ করছেন যে স্পীড ভালো পাচ্ছেন না। বাসায় অনেকগুলো মোবাইল ডিভাইস, স্মার্ট টিভি, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু রাউটারের আর কোন অগ্রগতি হচ্ছে না দেখেই মূলত ভালো একটা রাউটার নিয়ে যাওয়া। নতুন রাউটার সেটআপ দিয়েই ২.৪ গিগা হার্টজে অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত ডিভাইস যুক্ত করে দিয়ে বাকিগুলো ৫ গিগা হার্টজে নিয়ে যাওয়ার পর সমস্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
আমি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ষষ্ঠ প্রজন্মের ওয়াই-ফাই সমৃদ্ধ Netgear AX1800 কিনেছিলাম এবং এতে আমি যথেষ্ট খুশি। আমার ৩০০ মে.বাইটের কানেশানে রাউটারটি বেশ ভালো কাজ করছে। তবে সত্যি কথা বলতে কি, মনের মধ্যে বরাবরই এন্টারপ্রাইজ ক্লাস রাউটার ব্যবহারের একটা ইচ্ছে ছিলো। অবশেষে সেটাও হাতের নাগালে এলো। সম্প্রতি Mikrotik hAP ac রাউটারটি ক্রয় করেছি একটা উদ্দেশ্য মাথায় নিয়ে যা পরে কখনো আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। যদিও এটিতে ষষ্ঠ প্রজন্মের ওয়াই-ফাই ফিচার নেই তবুও অনেকটা হাত পাকানোর উদ্দেশ্যেই কেনা। এই রাউটারটিতে ব্যবহৃত RouterOS -ই মূলত আমার শেখার বিষয়। এটি এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যা মূলত মাইক্রোটিকের রাউটারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেটা থেকে রাউটারের সমস্ত ফিচার নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়।
স্বাভাবিকভাবে বাসায় ব্যবহৃত নেটগিয়ার, ডি-লিঙ্ক, টিপি-লিঙ্ক, নেটিস, হুয়াওয়ে ইত্যাদি রাউটারগুলোতে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব হয় না। মূলত বাসায় ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্য করে রাউটারগুলো বানানো হয় বলে তুলনামূলক কিছুটা জটিল বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশে আপনারা যাদের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করছেন, খুব সম্ভবত তারা সবাই মাইক্রোটিকের প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। তুলনামূলকভাবে এন্টারপ্রাইজ ক্লাস রাউটারের মধ্যে মাইক্রোটিক বেশ শাস্রয়ী এবং অনেক ফিচার সমৃদ্ধ হওয়ার কারনেই মূলত নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারগণ এই ধরনের রাউটার ব্যবহার করেন।
মাত্র ৪.৫x ৫.৪ x ১.১ ইঞ্চি আকারের এই গিগাবিট রাউটারটিতে কোন বাহ্যিক এ্যান্টেনা নেই। এটা এতটাই ছোট যে প্রায় বড় কোন জ্যাকেটের পকেটে ভরে রাখা যাবে। রাউটারটিতে আছে ২.৪ এবং ৫ গিগা হার্টজ ওয়াই-ফাই সুবিধা। সাথে চারটি ১ গিগা বাইটের ইথারনেট পোর্ট, যার সবগুলোকেই বন্ধ বা চালু করা যায়। এমনকি চাইলে প্রতিটি পোর্টের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসের ব্যান্ডউইডথ নির্ধারন করে দিতে পারবেন। আছে ইউ.এস.বি পোর্ট যেটাতে মোবাইল ইন্টারনেটর ব্যবহারের জন্য মডিউল কিনে ব্যবহার করা যাবে। এটিতে ৮০০ মেগা হার্টজের প্রসেসর ব্যবহার করা হলেও স্বাভাবিকভাবে ৭২০ মেগা হার্টজে চলে, তবে চাইলে প্রসেসরের গতিও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। সাথে পাচ্ছেন তাদের অপারেটিং সিস্টেমের আজীবন লাইসেন্স। এটিতে একটি এস.এফ.পি পোর্ট দেয়া হয়েছে (১ গি.বা.) যা ব্যবহার করে আপনি ইন্টারনেট কানেকশান (ট্রান্সরিসিভার/মডিউল ক্রয় করতে হবে) অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোতে শেয়ার করতে পারবেন বা রেগুলার ডিভাইস টু ডিভাইস কানেকশান তৈরী করতে পারবেন।
এই ডিভাইসটির এ্যাডমিন প্যানেল থেকে ফায়ারওয়াল, বিভিন্ন রুলস/ফিল্টার, ব্রিজ তৈরী করতে পারবেন। এগুলো অনেক টেকনিক্যাল মনে হলেও সারমর্ম দাঁড়াছে এই রাউটারগুলো তুলনামূলকভাবে কম দামী এবং বেশ উচ্চ মান সম্পন্ন। অন্তত আপনার ব্যবহৃত স্বাভাবকি রাউটারের তুলনায় অনেক বেশী উপযোগী আর সক্ষম। এই ডিভাইসটির এম.টি.বি.এফ বা গড়পড়তা লাইফটাইম হিসেবে ২ লাখ ঘন্টা বা ২২ বছর বলা হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারের পক্ষ থেকে। সবচেয়ে বড় কথা ব্যক্তিগতভাবে আমি এই রাউটারটি ব্যবহার করে বেশ খুশী। আমার ৩০০ মে.বাইটেরে কানেশনের পুরোটাই ব্যবহার করতে পারছি এই ছোট্ট ডিভাইসটি দিয়ে। বাসায় একাধিক এক্সেস পয়েন্ট থাকলে তো আর কথাই নেই। সাথে যদি একটু ভালো মানের কানেকশান থাকে, তাহলে এই রাউটারটি হতে পারে আপনার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। ধন্যবাদ।