মাঝ দুপুরে হঠাত সেদিন
আচমকা সব পড়লো মনে...
অতঃপর তার ফিসফিস করে বলে যাওয়া কথার মানে আমি বুঝতে পারি। একটা বছর পেরিয়ে গেলো তাহলে সত্যি!
পুরনো সব বন্ধুদের কথা মনে হয়। অথবা বন্ধুতা কি পুরনো হয় আদৌ?
তাহলে কি পুরনো হয়? সময়টা?
হবে হয়তো। সেই পুরনো সময় অথবা বন্ধুদের কথা আমার খুব মনে হয় - স্কুলের ভীষন দুরন্তপনার দিন অথবা কলেজে “খুব বড় হয়ে গেছি” ভাবের সময়টা। একটা একটা ক্ষুদ্র স্মৃতির সাথে কি গভীরভাবে যে জড়িয়ে থাকে আরো অজস্র অনুষঙ্গ!
স্কুল মানে তাই সবুজ জামা, সাদা পাজামা-ওড়না, দুই বেনী, ঘুম ভেঙ্গে ছুটতে ছুটতে মর্নিং শিফটের ক্লাস ধরা, আমাদের দশজনের পুরো ক্লাস দাপিয়ে বেড়ানো, ক্লাসের ফাঁকে অপ্রয়োজনে পানি খাবার ছুতোয় হাত ধরে আমাদের কলের পাড়ে ছুট, সেখানে কিচিরমিচিরের ঠেলায় রুম থেকে বেরিয়ে আসা এসিস্ট্যান্ট হেড মিস্ট্রেসের কোমরে হাত দিয়ে চিতকার, অতঃপর মুখ চেনা ভালো ছাত্রী বলে পাড় পেয়ে যাওয়া, আমার জন্মদিনে ফার্স্টগার্ল তন্বীর আবদার “স্যার, আজকে আমাদের জন্মদিন, ক্লাস করব নাআআআ”-কাজেই ক্লাস বন্ধ, জন্মদিনে উপহার হিসেবে প্রতিদিনের টিফিন বা রিক্সাভাড়া থেকে বাঁচানো মহামূল্যবান ৩৫ বা ৪০ টাকা দিয়ে একটা ক্যাসেট নয়তো তিন গোয়েন্দা বা হুমায়ুন আহমেদ এবং সাথে স্কুলের গাছ থেকেই চুরি করা ফুলের তোড়া, সব ক্লাস-ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্টের দিনে হাসরের ময়দানের অনুভূতি নিয়ে দোয়া পড়া....এবং স্কুলের শেষ দিনে গান গাইতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সংগী হিসেবে কঠিনতম টিচারেরও অশ্রুসজল চোখ দেখা...আহ, আমার মধুরতম কিশোরবেলা!
কলেজের কথা ভাবলেই কেন যেন সব ছাপিয়ে আমার কেবল মনে পড়ে অনেক অনেক গাছের ছায়া আর বিশাল পুকুর পাড়ের মুগ্ধতা...কি টানে আটকা পড়েছিলাম আমরা জানি না, গ্রুপের সবাই তথাকথিত ভালো ছাত্রী হলেও ক্লাস যেন আর তেমন টানতো না, পড়াশুনায় মন নেই এক বিন্দু, কি জানি এক উদাসীনতায় কেবল পুকুরপাড়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকা। “আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর, তাজা তাজা মনে অসহ্য যন্ত্রণা...” একদিনের কথা খুব বেশি মনে পড়ে, শেষ ঘন্টার একটু আগে রোদেলা আকাশ হঠাত ঘন কালো হলো, টিপটিপ করে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা একটু একটু করে আরো বড় হলো...আমরা বসেই আছি। বিষন্ন আকাশ, বিষন্ন পুকুরঘাট, আঠারো বছরের বিষন্ন কিছু তাজা প্রাণ--মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম পুকুরের পানিতে বৃষ্টির আশ্চর্য সুন্দর নাচ! সেদিন আমরা ভিজেছিলাম, কেন যেন কেঁদেছিলাম...।
উচ্ছ্বল এবং বিষন্ন বন্ধুময় জীবনের প্রতিটা মোড়ে থমকে দাঁড়িয়ে কেন যেন বিদায় দিতে হয়। এ-ই বুঝি প্রকৃতির নিয়ম।
সামহোয়ারইনব্লগ - আমার বন্ধুময় জীবনে আরেক সংযোজন। আমি খুব মুগ্ধতা নিয়ে এখানে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পড়া, লেখা, সমমনা কিছু মানুষ, চমতকার একটা পরিবেশ।
দিন অবশ্য এক রকম যায় না। ভাবনার জগতেও ছেদ পড়ে। চমতকার সুরেলা গানের মাঝেও হঠাত তাল কেটে যায় কখনও কখনও অপ্রত্যাশিতভাবে। কেটে যাওয়া তাল, বেসুরো সুরের মাঝেও তবু কেন যেন টিকে থাকে ভালোবাসা। “উইড়া যায় রে বনের পক্ষী, পইড়া থাকে মায়া”...?
অনেক অপ্রাপ্তি, অনেক অনাকাংখিত বেদনার মাঝে তবু এখনও জ্বলজ্বল করে পাওনাগুলো। কোন এক দুপুরে সময়ের ফিসফিসানিতে নিজের অজান্তেই উঁকি মারে সামহোয়ারইনের জন্য তুলে রাখা ভালোবাসা। আজ সামহোয়ারইনে আমার লেখা শুরুর ঠিক এক বছর পরে খুব ছোট্ট পরিসরে জানান দিচ্ছি এই ব্লগটির জন্য আমার শুভকামণা।
আবার বলি, সব অশুভ দূর হয়ে যাক।

আলোচিত ব্লগ
মাতরুল
ক্লাস নাইনের কথা বলছি। পিঠে পাখা গজিয়েছে মাত্র। স্যার- ম্যাডামেরা রাগ করে বলতেন পাখা কাটতে নাকি তাদের সময় লাগবে না। এই পাখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাত্রদের কারা মাইনাস করতে চায় ?
আজ তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম 'কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা' শিরোনামে ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, ইন্টেরিম সরকারের ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। তাই ইচ্ছা করলেই ছাত্র-জনতার সকল দাবী পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শুধুমাত্র চোর এবং কাপুরুষরাই রাতে আক্রমণ করে
ভারতের সম্প্রতি হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সম্প্রতি একটি আবেগঘন বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন "শুধুমাত্র চোর এবং কাপুরুষরাই রাতে আক্রমণ করে। যদিআ... ...বাকিটুকু পড়ুন
নবীজির জন্মের আগে আরবে গজব অবস্থা ছিলো
নবীজির জন্মের আগে আরবে বেশ কিছু ধর্ম ছিলো।
ধর্ম না বলে কুসংস্কার বলা ভালো। সেই সময় মানুষ রসিকে সাপ মনে করতো। মগজহীন মানুষ দিয়ে ভরা ছিলো আরব। সেই... ...বাকিটুকু পড়ুন