somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাহেলা(চতুর্থ এবং শেষ পর্ব)

২৮ শে মে, ২০০৭ রাত ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার সংসারে প্রবেশ করলো রাহেলা। বহুদিন পর কর্তৃত্ব হাতে পেলো। তার ছয় বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে নতুন স্বামী অনাদর করলো না মোটেই। নিজের ওই বয়েসী নাতি আছে, সমস্যা কি! নতুন চার ছেলেমেয়ের সাথে পরিচিত হলো রাহেলা। ছোট মেয়েটা ছাড়া বাকি প্রত্যেকেই তার চেয়ে বয়েসে অন্তত পাঁচ-ছ বছরের বড়। ছোটটা তার সমবয়েসী। বড় ছেলে একমাত্র খুশি হলো বাপের বিয়েতে, বাপের সাথে থাকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলো যে সে! কিন্তু বাকি ছেলেমেয়েরা বিরক্তিতে চোখ কুঁচকে তাকায় রাহেলা আর তার মেয়ের দিকে। তাদের মন রক্ষা করার জন্য কি করবে ভেবে পান না রাহেলা বেগম। এটা রাঁধেন, সেটা রাঁধেন। সারা দিন তাদের খেদমতেই পার করে দেন। অবশেষে "খালা" সম্বোধনের সম্মান পান তিনি মেয়েদের কাছ থেকেও। বাপের বিয়ের পরের কটা দিন ভাব গতিক বুঝে একদিন ছেলেমেয়েরা চলে গেলো যার যার নিজের বাড়িতে।

রাহেলা নিজের সংসার পেলেন পরিপূর্ণভাবে। না, তার কোন অভিযোগ নেই বৃদ্ধ স্বামীর উপর। আগের স্বামীর সাথে তুলনা করলে রীতিমতন ফেরেশতা বলা যায়। কেবল কিছু বাড়তি শাসন, সেগুলোও গায়ে মাখেন না রাহেলা বেগম। বরং স্বামীর পরামর্শে এখন বোরকা পরেন, পান খান যাতে বয়সটা একটু বেশি মনে হয় লোকের কাছে। আবার তারই পছন্দে চোখে কাজল পরেন ঘরের ভেতর! একসাথে টিভি দেখেন। মজা আর রোমান্সও করার চেষ্টা করেন।

রাহেলা বেগমের ছোট্ট মেয়ে নীলা প্রথম কদিন এই নতুন বাড়িতে তাদের অবস্থান ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি। তাকে শেখানো হলো নানার মত দেখতে এই লোকটাই এখন থেকে তার বাবা, ধীরে ধীরে সে বুঝে নিলো এটা এখন তাদেরই বাড়ি। সে তার ইচ্ছামত ঘোরে ফেরে। স্কুলে যায়, কেউ তাকে কিছু বলে না, কেবল তার নতুন বাবার বড় বড় ছেলে মেয়েগুলো এ বাড়িতে এলে তাকে খুব চুপচাপ থাকার নির্দেশ দেয় তার মা। রাহেলার ভয় কোন দিন যদি তাকে বাড়তি মনে করে ঝেড়ে ফেলে দিতে বলে তারা! রাহেলা ভাবে কোনভাবে যদি তার নামে বুড়োর কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়া যেতো। কবে দুম করে মরে যাবে তখন কি আর এই ছেলেমেয়েরা তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখবে? ভেবে ভেবে মেয়েদের আর বুড়ো স্বামীকে পটানোর নতুন বুদ্ধি করতে থাকেন তিনি মনে মনে...।

সহসা পোড়া গন্ধে চমকে ওঠেন রাহেলা বেগম। ইশ, ভাতটা লেগে গেলো হাঁড়ির তলায়। রান্না শেষ। নতুন করে আর রান্না না করে এই ভাতটাই খাবেন ঠিক করলেন তিনি, নইলে যে দেরী হয়ে যাবে। সদ্য রাঁধা ভাতের দিকে তাকিয়ে রাহেলার হঠাত মনে হয়,এই তো বেশ দেখতে - সাদা, কেবল একটু পোড়া গন্ধওয়ালা!


[অনলাইন ম্যাগাজিন "বীক্ষণ"-এ প্রকাশিত, সামান্য পরিবর্তিত।]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৭ রাত ২:৩৬
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:১১

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

বিএনপি নেতারা ডক্টর ইউনূসের দেখা করতে সময় চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছেন। কিন্তু ইনটেরিম প্রধানের শিডিউল- ই পাচ্ছেনা। আর ওদিকে নাহিদ শুনলেন, ডক্টর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইমাম মেহেদী

লিখেছেন কিরকুট, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

ইমাম মাহদী (আ.) কে?

ইমাম মাহদী (আ.)-এর পূর্ণ নাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আল-আসকারি (আ.)। তিনি দ্বাদশ ইমাম এবং একমাত্র ইমাম যিনি এখনো জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। তার পিতা ছিলেন একাদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×