somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর শরীরে ১৮টি গুলি লেগেছিল।

১৬ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্গবন্ধুর গায়ে ১৮টি গুলি লেগেছিল তবে মুখে কোন গুলি লাগেনি। দুপায়ের গোড়ালীর ২টি রগই ছিল কাটা মৃত্যুর পরেও গায়ের পাঞ্জাবীর বুক পকেটে চশমা, সাইড পকেটে তার প্রিয় পাইপ এবং গায়ে সাধারণ তোয়ালে জড়ানো ছিল। মিলিটারীরা রক্তাক্ত কাপড় চোপসহ বিনা গোছলে লাশ কবর দেয়ার নির্দেশ দিয়েচিল। এই কথাগুলো বলেছিলন মৌলভী শেখ আবদুল হালিম। তিনি বলেন, মর্মান্তক সংবাদটা শুনি ১৫ই আগষ্ট সকালে রেডিওতে। ঐ রেডিওতে ঘোষণা করা হয়, স্বেরাচারী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। সমগ্র দেশবাসীর মতো আমরাও স্তম্ভিত হয়ে যাই। হতভম্ব হয়ে পড়ি, মনে হল অবিশ্বাস্য। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। পরদিন দুপুর ১২টার সংবাতে জানায়,শেখ মুজিবের লাশ টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১৬ তারিখ সকালেই থানার ওসি ডেকে বলেছিলেন, আপনি তেরটা কবরের বন্তোবস্ত করেন।

চলে এলাম। কবর খুড়লাম। তবে একটা, তেরোটা নয় ভাবলাম তেরোটি খুড়ে কি হবে। আগে তো একটি খুড়ি। তারপর দেখা যাবে যা হয়। ৯টা সাড়ে ৯টায় কবর খোড়া শুরু করি আর ভাবি এখানেই বঙ্গবন্ধুর দাফন হবে। যদি তাই হয় এবং আমি যদি তাকে কবর দিতে পারি। তবে ধন্য হই। দুপুর বারটার আগেই কবর খোড়া শেষ হয়। তার পরপরই দ্বিতীয় ঘোষণাটা শুনি রেডিওতে। নিশ্চিত হই, বঙ্গবন্ধুকে এখানোই সমাহিত করা হবে। বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক গোরস্থানে প্রথমে রয়েছে তার মায়ের কবর, তারপর বাবার, বাবার কবরের পশ্চিমে সবদিকে একটু জায়গা ছেড়েই বঙ্গবন্ধুর কবর খুড়ি। অন্যান্যদের মধ্যে মদেল ফকিন (চৌকিদার) আবদুল মান্নাফ, ইমাম উদ্দিন গাজী কবর খোড়ায় সাহায্য করে। তারপর বেলা দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধুর লাশ হেলিকপ্টার যোএগ টুঙ্গিপাড়া ডাক বাংলায় পৌছে। একজন মেজরের নেতৃত্বে ১৩জন সৈনিক লাশের কফিন বয়ে আনে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। ডাকবাংলায় অবশ্য আরো ১২/১৩ জন সৈনিক ছিল। ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর পাশে রাস্তায় ব্যাপক বীড় জমে যায়। যদিও কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মেজর সাহেব স্থানীয় মৌলভীকে ডেকে আনার সংবাদ দিলে আমি চলে আসি। মেজর জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি এখানকার মৌলভী? উত্তরে বললাম, জ্বি হ্যা। এরপর তিনি আমাকে লাশের জানাজার নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন। মেজর সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, কার জানাজার ব্যবস্থা করবো? মেজর উত্তরে বললেন, শেখ মুজিবের ডেড বডি। তখন আমি ইংরেজীতে বললাম- ইজ দ্য ডেড বডি অব শেখ মুজিব? উত্তর দিলো- হ্যা। উদ্দেশ্য ছিলো কফিন খুলবো। বঙ্গবন্ধুকে দেখবো তারপর মাটি দেব। কিন্তু মেজর সাহেব আমাকে বলেছিলেন কফিনসহই জানাজা পড়ে মাটি দিতে। যদিও আমি তা চাইছিলাম না। মেজর সাহেবকে আবার বললাম- আই মাষ্ট সী দ্য ডেড বডি। মেজর সাহেব বললেন, ডু ইউ নট বিলিভ আস? আমি বললাম- আই বিলিভ ইউ, বাট ওয়ান্ট টু সি ফর মাই স্যাটিসফেকশন। তারপর মেজর কফিনের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন, ২-৩জন্য সৈন্য তা খুলে দেয়। প্রথমেই দেখলাম মুখ রক্তাক্ত। কফিনের বাহিরে অবশ্য কোন রক্তটক্ত ছিলো না।

তারপর মেজর সাহেবকে বলি, ওনাকে তো গোসল দেয়া হয়নি। বিনা গোসলে কোন মুসলমানের জানাজা পড়ার জায়েজ নেই। মেজর জিজ্ঞাসা করেন, বিনা গোসলে মুসলমানের জানাজা হয় না? বললাম, হয় কেবল মাত্র শহীদের লাম বিনা গোসলে জানাজা করা য়। তবে সম্ভব হলে তাও গোসল করানো উচিত। মেজর তারপর লাশের গোসলের নির্দশে দিলেন। সময় দিলেন ২ মিনিট। আমি পুনরায় বললাম, গোসল করাতে আমার কজন লোক লাগবে। তিনি আমাকে বললেন, সর্বাধিক ৮জন নিতে পারেন।

বেলা তখন ২টা। আমি ৮জন লোক ডাকটি এদের মধ্যে পূর্বের ওরাও ছিলেন। সবাই মিলে কফিন থেকে লাশ নামাই। রাখি তক্তার ওপর তক্তা যোগাড় করি বঙ্গবন্ধুর বাড়ী হতেই। একটা ছেলেকে পাঠাই টুঙ্গিপাড়া সাহেরা খাতুন হাসপাতালে। আমার দ্বিতীয় পূত্র ষ্টোর ইনচার্জ শেখ আব্দুল হাসিবের কাছে সাবান, গরম পানি ও কাফনের কাপড়ের জন্য। অল্পক্ষণের মধ্যেই একখানা ৫৭০ সাবান রেডক্রসের ৪ খানা সাদা পাড়ওয়ালা শাড়ী নিয়ে ছেলেটি ফেরত আসে তড়িঘড়ি। পেছনের কাজ সেরে আমরা কাপড় পড়ালাম। খালি গা উল্টেপাল্টে সব দিকই দেখছি। পেটের নীচে পিছন দিক হতে একটি গুলি ঢুকে সামনের দিকে তলপেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ৯টা গুল বা বুকের নীচের দিয়ে চক্রাকারে ঢুকেছে তবে বের হয়নি। বা হাতে তর্জনীতে একটি গুলি লেগেছে এবং আঙ্গুলটি প্রায় ছিন্ন ও থেতলানো। দুই বাহুর উপরিভাগে আছে দুইটা ও আরেকটি সম্ভবতঃ ডান হাতের তালুতে। দুই পায়ে ৪টি, দুটি হাটুর এবং ওপরে নীচে দুট অর্থাৎ ১৮টি গুলি বঙ্গবন্ধুর শরীরে লাগে। তাছাড়া দুই পায়ের গোড়ালীর দুটি রগই কাটা ছিল। মুখে বা বুকে কোন গুলির চিহ্ন ছিলো না।

লাশ ঢাকা ছিল সাদা চাদর দিয়ে। পরনে চেক লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জী, সাদা পাঞ্জাবী গায়ে ছিল। তারপর জানাজা হয়। জানাজায় সর্বসাকুল্যে জন পচিশেক লোক অংশ নেয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তার কবর পাহারা দেয়ার জন্য সরকার ১০/১৫ জন পুলিশ মোতায়েন করেন। এরা দিবা-রাত্র পালা করে পাহারা দিত। বাড়ীর লোক ছাড়া কাউকে বাড়ীতে ঢুকতে দেয়া হত না। বঙ্গবন্ধুর দাফনের চারদিনের দিন বাড়ীর মসজিদে মিলাম পড়তে দেয়া হয়নি পুলিশ বাধা দেয়। কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুর গৃহে একজন মৌলভী ডেকে মিলা পড়ানো হয়েছিল। টুঙ্গিপাড়ার অন্যান্য মসজিদে মিলাদের ব্যবস্থা হয়েছিল।

(মৌলভী শেখ আব্দুল হালিম স্থানীয় মসজিদের ইমাম। তিনিই বঙ্গবন্ধুর লাশ নিজ চোখে দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। এবং তার সাহসিকতা ও প্রচেষ্টায় লাশের গোসল সুসম্পন্ন হয়েছিল। ১৯৯৩ ইং সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই সাক্ষাৎকারটি তার মৃত্যুর পর্বে দেয়া, পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:২৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×