somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Virginia O Virginia...

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আমার লেখাটি ডেডিকেট করছি আমার সব (Virginia), বন্ব্ধু দের , আমার কাজের co-workerder, কিছু মানুষ যারা হচ্ছেন কেলী(আমার এক্স ম্যানেজার, এনায়েত ভাই(ক্লাসমেইট),লামা এবং তার বউ, যারা আমাকে অনেক ভাবে সাহায্য করেছে, আমাকে অনেক ভালবাসা দিয়ে, এই শহড়টির প্রতি অসম্ভব ভাল লাগা তৈরী করেছে, যাদেরকে আমি কখনো ভুলবনা।)

আর কিছুদিন পরেই আমাকে ফিরে যেতে হবে আমার এই পরিচিত শহড় ছেড়ে। খুব বেশিদিন হইনি আমি এই শহড়(Virginia) এ এসেছিলাম। বলতে পার আমার কোন প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু হুট করে আসা শহড় টি খুব অল্প কদিনে আমার অনেক আপন হয়ে গেল। এতটাই আপন, আমার বার বার মনে হয় আমি এখানেই বিলংস করি। অনেক খারাপ, ভাল
অভিঙতা নিয়ে আমার ভাল লাগা এই শহড় টিকে ঘিরে।

মনে পড়ে প্রথম যেদিন, বাসা থেকে বিদায় নিয়ে, এখানে এসে পৌছুলাম, জানলাম আগে থেকে ভাড়া করা বাসাটি দিয়ে দেয়া হয়েছে আরেকজনকে। সেদিন সারাদিন ক্লাশের পরে যখন এই খবর টা পেলাম, আমি তো একেবারেই চিন্তায় পরে গেলাম। এখন কি করবো। সকালে চার ঘন্টা ড্রাইভ করে এসে ক্লাশ করার এনার্জি যা ছিল সবই খতম হয়ে গেছে ইতিমধ্যে, আবার চার ঘন্টা ড্রাইভ করে বাসায় ফিরে যাব সেটাতেও মন সায় দিচ্ছে না কারন পরের দিন সকালে আবারো ক্লাশ। এরকম অসহায় মুখ করে যখন বসে বসে ভাবছি, তখন কোথা থেকে উদয় হলেন এনায়েত ভাই,উনি একি ক্লাশের স্টুডেন্ট। আমাকে ক্লাশে নুতন দেখে, কথা বলার আ্গ্রহ হলেন। তাই কথায় কথায় যখন উনি যানতে পারলেন, আমার অভস্থার কথা, বললেন, যদি সমস্যা না থাকে তাহলে উনার একটা পরিচিত বাসা আছে, ভাড়া খুজছে, সেখানে ট্রাই মেরে দেখতে পারি। আমি ভাবলাম কেন নয়? সো উনি আমাকে একজন বাংলাদেশী পরিবারে নিয়ে গেলেন। বেশ সুন্দর বাসা। আন্টি কথা বললেন আমার সাথে, জানি না কেন, উনি আমাকে বললেন, তোমার যতদিন খুশি এখানে থাক, কোন সমস্যা নেই আমাদের। মন টা হুট করেই ভাল হয়ে গেল। এক দিকে থাকার চিন্তা, অন্যদিকে, পরিবারে সবাই আমাকে পছন্দ করাতে বেশ সাচ্ছন্দ বোধ করলাম। সেই থেকে আমার পরিচিতি এই শহড়টির সাথে। দিন যেতে লাগল, আমার ভাল লাগা ততই বেড়ে গেল। অনেক ছোট ছোট ভাল, খারাপ ঘটনা নিয়ে কেটে যেতে লাগল আমার দিন গুলো।

একবার মনে পরে, খুব বড় গাড়ী এক্সিডেন্ট করলাম। হাইওয়ের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে শুধু গাড়ী আর গাড়ী। এত মানুষের মাঝেও, নিজেকে কেমন অসহায় মনে হল। মনে হল, এখন কি করবো? কল করলাম, আমার খুব অল্প দিনের পরিচিত এক বন্ব্ধুকে। বেচারা সব শুনে কাজ ফেলে আমাকে উদ্ব্ধার কর‌তে এগিয়ে এল। আমাকে আপসেট দেখে সেই সব সামলে নিল, ইনসুরেন্স কোম্পানি তে কথা বলা, পুলিশের সাথে কথা বলা, সব করলো। তারপর আমাকে বাসায় নিয়ে ওর ফেমিলির সবাইকে বললো আমার এই অবস্থা, সবাই কেমন অস্থির হয়ে গেল, আমার কোন কিছু হয়েছে কিনা জানার জন্য। খুব অবাক হয়েছিলাম, এই ভেবে, ওরা তো আমার কেও না তবুও এত কেয়ার। যেটা ভেবে মনে হল, পৃথিবীতে একা পথ চলাটা খুব একটা কষ্টের কাজ না।

এভাবে দিন গড়িয়ে গেল, আমার ক্লাশ শেষ করে জবের জন্য চিন্তা। বাবা বাসা থেকে সরাসরি বলে দিয়েছেন, আমাকেই কিছু করে নিতে হবে কারন, টাকা দিয়ে হেল্প করার আর সম্ভব না। কি করা যায়। হন্যে হয়েই একটা কাজ খুজছি। যেকোন জব। যাইহোক কিছু দিন পরেই পেয়ে গেলাম একটা। খুব সাধারন কাজ, তবুও আমার ম্যানেজারের (কেলী) কাজ করাটা আরো ইজি করে দিল। আমার সব কথা শুনে। আমার এই শহড়ে আসার উদ্দ্যেশ, আমার পরিস্থি তি সব শুনে বললেন, কোন সমস্যা নেই, আমি যেন আমার সুযোগ মত কাজটা চালিয়ে যাই সেই সাথে যখন যা প্রয়োজন যেন তাকে জানাতে হেজিটেট না করি। আমার জীবনে অনেক মানুষকেই আমি এমন কথা বলতে শুনেছি, কিন্তু প্রয়োজনে, আমি খুব কমই তাদের কাছে পেয়েছি। কিন্তু কেলী ছিল সম্পূর্ন অন্যরকম। সে তার কথা রেখেছে। আমার যেকোন প্রয়োজনে, সে সবসময় আমাকে হেল্প করার চেষ্টা করেছে। একজন আমেরিকান হয়েও আমার সব সমস্যাগুলো নিজের করে ভাবতে পেরেছে। যা আমি অনেক সময় আমার খুব কাছের মানুষদের কেও বোঝাতে পারিনি।কাজ ছেড়ে দেবার দিন, সে প্রায় কেদেই ফেলল, আমাকে বললো, প্রমিজ মি, জীবনে, অনেকে তোমাকে ছোট করবে, কষ্ট দিবে, কিন্তু নিজেকে কখনো হারিয়ে ফেলবে না। আমি কি বলবো বুঝতেই পারছিলাম না, মানুষের ভালবাসা এমন কেন? যাকে আমি এক বছর আগে চিনলাম, আবার আজকে চলেও যাচ্ছি, সে মানুষ কেন আমাকে এতটা টান দেখাবে? সে মানুষ কেনই বা আমাকে নিয়ে এত টা ভাববে। সত্যি অবাক হই।

আমার দুবছরের সফর এই শহড় টিকে ঘিরে কত ঘটনা, কত মানুষ, কত জায়গা। মনে পরবে, যখন তখন বন্বধুদের (ঝরনা, মিরা, সাইফুর)বাসায় চলে যাওয়া। গিয়ে আন্টির হাতে মজার রান্না খাওয়া, বাসার সবার সাথে আড্ডা মারা। মনে পরবে, কোন অনুষ্ঠানে সবাই মিলে কেমন শাড়ি পরবো, কেমন করে সাজবো, কেমন করে সবার সাথে খুব হৈ
,চৈ করবে.সব..সব মনে পরবে। আরো মনে পরবে ক্লাশের সবাই মিলে, লান্চে গিয়ে আড্ডা দেয়া, নুতন নুতন ছেলে মেয়ে দের সাথে পরিচিত হওয়া, মাঝে মাঝে হারিয়ে যাওয়া ক্লাশমেটদের সাথে দেখা হওয়া।

ভাবতেই খারাপ লাগছে এত কিছু এই দুবছরে, এত ভাল লাগা, এত ভালবাসা সব ফেলে ফিরে যেতে হবে। হ্য়তো জীবনটাই এমন, প্রয়োজনের তাগিদে এগিয়ে যেতে হয়, আবার অজানা কোন জায়গায়, অজানা মানুষদের ভিরে।

তবে যেখানেই যাই , আমি বার বার ফিরে আসতে চাই এখানে। আমার এই ছোট্ট প্রিয় শহড়টিতে।


১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×