তিলুর চোখে আজ এক ফোটা ঘুম নেই। প্রায়-ই ওর এমন হয়। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা ওকে ভাবিয়ে তুলতো। কিন্তু ইদানিং ঘুম না আসাটাই ওর কাছে আনন্দের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ঠিক এই একটা সময়, গভীর রাতে ভাবনার পাখা গুলো ডানা মেলে ওঠে। বসে বসে অনেক কিছু ভাবে, নিজের সাথে কথা বলে, মাঝে মাঝে দু চারটা সুখ স্মৃতি ওর মনে এসে ভীড় করে, তখন নিজেকে খুব সুখী মনে করে তিলু।
দুজনের সংসার ওদের।শুভ-র সাথে বিয়ে হয়েছে বছর দু্য়েক হল। তেমন ঘটা করে বিয়ে নয়। বাবা , মা কেও-ই রাজি ছিলেন না এতে। শুভ-র বাড়ী নেই, খুব ভাল জব-ও সে করেনা, যা দিয়ে একজন রমনীর সমস্ত আবদার পূর্ন হতে পারে।তবু-ও তিলু সবাইকে উপেক্ষা করে শুভ কেই বিয়ে করেছে। তিলু বা শুভ দুজনেই ছোটবেলা থেকে বেশ সাচ্ছন্দ্যেই মানুষ হয়েছে। বাবা, মা সব আবদারই পূরন করেছেন ওদের। দুজনের জীবনে শুধু একটি জিনিসের অভাব ছিল ওদের , সেটা ছিল ভালোবাসা। কি জানি কে জানতো কোন একদিন বিধাতা এই দুটি আত্মাকে এভাবে এক করবে।
প্রথম পরিচয়েই অনেক কথার ফুলঝুরি ছুটেছিল দুজনের। শুভ খুব মুখচোরা স্বভাবের। কখনো নিজের কষ্টের কথা কারো সাথে বলবে না। কিন্তু ঠিকই কার কি সমস্যা হচ্ছে, কার কোথায় কি লাগবে সেইসব ব্যাপার গুলো খুবই চিন্তিত করে ফেলে ওকে। তিলুর সাথে প্রথম পরিচয়ে হরবর করে মনের সব গোপন ব্যাথাগুলো বলে ফেলেছিল সেদিন। আর তিলুও যেন কোথায় খুজে পেয়েছিল তার ছোটবেলাকে এই মানুষটির মাঝে। দুজন মানুষের জীবন ধারা কেমন করে এত মিলে যেতে পারে, তা ওর কাছে সত্যি ভীষন আশ্চর্যের বিষয় ছিল।
শুভ কে দেখেই ওর মনে হয়েছিল, এই কি সেই মানুষ যাকে বটবৃক্ষের সাথে তুলনা করা যায়। যার ছায়ায় বসে সে একটু প্রাণ জুড়োবে অনেক ক্লান্তির পথ হেঁটে এসে। যার কাছে থাকলেই মনে হয় পৃথিবীর আর কোন অপবিএতা ওকে ছুঁতে পাবে না। শুধু এই একটি মানুষ যার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে ভুলের কোন হিসাব করতে হবে না। তিলু অনেক কিছুই মেলাতে পারে না আসলে। কেন এমন হবে? কি করে কাওকে এভাবে ভালবাসতে পারে ও? কি করে সম্ভব অনেক কষ্টের পরেও শুধু শুভ র কথা ভেবে সব ভুলে যাওয়া। সত্যি মেলাতে পারে না ও।
শুভ যেমন ভালোবাসা হীন পরিবেশে মানুষ , তিলু-ও তাই। কথায় আছে যে যা কখনো পায় না সেটা সে কখনো দিতে পারে না। তাই শুভ র সাথে পরিচয়ের আগে কখনোই ভাবতে পারত না ও কখনো কাওকে নিয়ে সংসার করতে পারবে। শুভ -ও তাই। বিয়ের পরেও দুজনেই মাঝে মাঝে দুরত্ব অনুভব করে। তবে সেই দুরত্ব ভালবাসার দুরত্ব নয়। মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা চাপা বেদনা গুলো যেন ওদের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কেমন অচেনা মনে হয় নিজেদের। তারপর ক্ষানিক পরেই যেন ভালবাসার অথই নদী পারি দেয় দুজন। তিলুর খুব কান্না পায় তখন, মনে হয় যুগ যুগ ধরে শুভ-র কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ও। বুকের মধ্যে জমে থাকা দীর্ঘনিশ্বাস গুলো একেক টা প্রবাল ঢেউ য়ের মত আছরে পরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫১