somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তী ঢাকার মসলিন (পর্ব-৩)

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিংবদন্তী ঢাকার মসলিন (পর্ব-১)
কিংবদন্তী ঢাকার মসলিন (পর্ব-২)


মসলিন ছিল নানা রকমের। এর পার্থক্য নির্ণীত হত সুতার সূক্ষ্মতা, বুনন আর নকশা বিচারে। সবচেয়ে সূক্ষ্ম সুতার তৈরি, সবচেয়ে কম ওজনের মসলিনের কদর ছিল সবার চেয়ে বেশি, দামটাও ছিল সবচেয়ে চড়া। "মলবুস খাস" ছিল সবচেয়ে নামী, সেরা মসলিন। সম্রাটের জন্য তৈরি হত এই মসলিন।

আঠারো শতকের শেষদিকে মলবুস খাস সম্রাটের দরবারে পাঠানো বন্ধ হলে তৈরি হয় "মলমল খাস"। দশগজ লম্বা আর একগজ চওড়া মলমল খাসের ওজন হত মাত্র ছয় তোলার মতো, যা অনায়াসে ছোট্ট একটা আংটির ভিতর দিয়ে গলে যেত! মলবুস খাসের সমগোত্রীয় আরেকটি মসলিন "সরকার-ই আলা"। দশগজ লম্বা আর একগজ চওড়া 'সরকার-ই আলা'-র ওজন হত দশ তোলার মতো। ঝুনা মসলিনে সুতার পরিমান থাকতো কম- দেখতে হত অনেকটা জালের মত। ঝুনা হিন্দী শব্দ যার অর্থ 'সূক্ষ্ম'। নকশা করা মসলিনকে বলা হতো জামদানি, কিন্তু আজকের জামদানির সাথে আদি জামদানির আকাশ-পাতাল তফাৎ।

মসলিন তৈরির প্রক্রিয়াটা এত জটিল আর সময় সাপেক্ষ ছিল যে সম্রাটদের জন্য উন্নত মসলিন তৈরি করেই দিন কাটতো তাঁতিদের- বাড়তি মসলিন তৈরি করার সময় মিলতো তাই কম।

যতদূর জানা যায়, ঢাকা শহরে 'মলবুস খাস' তৈরির কারখানা ছিল বর্তমানের নাজিমুদ্দিন রোডে। ১৭৭২ সালের এক হিসাব থেকে দেখা যায় যে ওই বছর সম্রাটকে পাঠানো হয় একলক্ষ টাকার 'মলবুস খাস' আর বাংলার নবাবকে পাঠানো হয় তিনলক্ষ টাকার 'সরকার-ই-আলি'। ওলোন্দাজ ব্যবসায়ীরা ইউরোপে রপ্তানীর জন্য ১৭৮৭ সালে একলক্ষ টাকার মসলিন রপ্তানী করে। ইংরেজ কোম্পানী ওই বছর সংগ্রহ করে তিন লাখ টাকার মসলিন।

১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজরা যখন বাংলার বর্তা হয়ে ওঠে তখন তারা বছরে আট লাখ টাকার মসলিন রপ্তানী করতো। সেই সময়ে ফরাসিরা কিনেছিলো প্রায় তিন লাখ টাকার মসলিন। এরা ছাড়াও ইরানি, তুরানি, আর্মেনীয়দের পাশাপাশি দেশী ব্যবসায়ীরাও এ নিয়ে ব্যবসা করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সে আমলে ঢাকা আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানীর জন্য কেনা হয়েছিল প্রায় ঊনত্রিশ কোটি টাকার মসলিন।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:০৫
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৫

লিবিয়ায় এক হজযাত্রীর ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল—"আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো কিছুই হয় না!"
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
একজন হজযাত্রী পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে যান, ফলে তাকে ছাড়াই বিমান উড়াল দেয়। তিনি কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত: ব্ল্যাক হর্স নাকি তুরুপের তাস?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্তি, এনসিপির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক—সব মিলিয়ে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে?


বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বড়শি

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭


পুকুরে গোছল করা একদম নিষেধ ছিল আমার। কানের অসুখ,তাই গোছলের সময় তুলার ভেতর সামান্য নারিকেল তেল ভিজিয়ে নিয়ে দুই কানে সিপি দিয়ে গোছল করতে হতো। সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের পাঁঠারা দুধ দেবে, বীজ দেবে, গাভী-ছাগীদের চাকরি খাবে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:১২


গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া আর জয়পুরহাট - তিন জেলার তিন পাঁঠা মিলে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এই পাঁঠারা শুধু প্রজননেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এখন দুধ দিচ্ছে, এমনকি গাইবান্ধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনাদের মতামত জানতে চাই।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:০২

প্রিয় ব্লগার,
আশা করি আপনারা ভালো আছেন।
বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সামহোয়্যারইন ব্লগ শুধু একটি লেখার প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের লেখালেখির মাধ্যমে সামাজিক সংলাপ তৈরির জায়গা—যেখানে গড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×