অদ্ভুত উঠের পিঠে চলেছে স্বদেশ। কথাটি কবি যথার্থই বলেছেন। আমরা ধরেই নিয়েছি আমাদের রাজনিতিবিদ্গন খারাপ কোন সুচিন্তা তাদের কাছে আশা করা বোকামি। তারা ব্যাস্ত পরস্পরের সাথে কামড়াকামড়িতেই তাই তাদের কাছে তেমন কিছু আশা করেনা কেউ। কে আর বারবার আশাহত হতে চায়। কিন্তু এদেশের শিক্ষিত সুশীল সমাজ তাদের কাছেও কি আশা করা যাবে না কিছু? জানি তারাও বিভক্ত লাল, নীল, সাদা, কালোয়। কিন্তু যেখানে স্বার্থ নেই প্রাপ্তির আশা নেই সেখানেও কি তাদের কাছে চাওয়ার থাকতে নেই? বাংলা একাডেমীর হর্তাকর্তারা কি বুদ্ধিজীবী নন তারা কি ভালবাসেন না বাংলা সাহিত্যকে। তবে কেন বই মেলা থেকে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে রবি ঠাকুর, শরৎ বাবু, বিভূতিভূষণের মত লেখকেরা। কি স্বার্থে নিষিদ্ধ দিবারাত্রির কাব্য বা আরণ্যক?
অমর একুশে বইমেলা, প্রাণের মেলা সমগ্র বাংলাজাতির। এটা বাংলা সাহিত্যের মেলা। সেই চর্যাপদ থেকে শুরু করে যে বাংলার বিকাশ তার সবটুকু নিয়েই তো আমাদের বাংলা সাহিত্য। এর কি ভাগ আছে, ভাগ করা যায় একে সীমান্তের কাঁটা তার দিয়ে? হ্যাঁ এতো দিন পর আবিষ্কার করলাম ভাগ করা যায়। কলমের এক খোঁচায় রবীন্দ্রনাথ কে পর করে দেয়া যায়। আস্তাকুরে ফেলে দেয়া যায় সুকুমারকে নজরুল কেউ ফেলে দেয়া যেত শুধু ভাগ্যিস নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছিল,তাই বেঁচে গেলেন বিদ্রোহী।
এই যে সিদ্ধান্তটি নেয়া হল তা নিয়েছেন বাংলা একাডেমীর গুণীজনেরা। কিন্তু কেন নেয়া হল? আমাদের লেখকগণ কি এতোয় অথর্ব হয়ে পড়েছেন যে বুড়ো রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকতে না পেরে তাঁদের নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলা একাডেমী চত্বরে অনশন করেছিলেন আমরণ? নাকি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এদেশের বই পড়ুয়া ছেলে মেয়ে এই সব লেখকের বই পড়ে? যাইহোক এটা মনে হয় বলে দেয়া যায় বাংলা একাডেমী চলে গেছে কিছু উর্বর(!) মস্তিষ্কের বুদ্ধিজীবীদের জিম্মিতে। যারা চিন্তার কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে। যারা সিদ্ধান্ত নেই কোন কিছু চিন্তা না করে বরং এটা দেখাতে যে দেখ তারা কত ক্ষমতার অধিকারী। তারা চিন্তা করে না কতশত ছেলে মেয়ে এই বই মেলায় আসে সেই সব লেখকের বই কিনতে যাদের খণ্ডিতাংশ পড়ে তারা তাদের পাঠ্যপুস্তকে। তারা পড়তে চাই শুধু ‘নতুন ‘দা’ কে না তারা পড়তে চাই ইন্দ্রজিৎ শ্রীকান্তের পুরো গল্পটাই। এদেশের কত শত পাঠক রয়েছে যারা সুকুমার, উপেন্দ্রকিশোর পড়েই শিখেছে বই পড়া, সত্যজিতেই শিখেছে রহস্য উন্মোচন করতে। কিন্তু আজ কলমের জোরে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে পর করে দিলো এইসব লেখকদের। কারণ তারা বাংলায় লিখলেও তারা বাংলাদেশি নন। জানিনা ইনারা কি ক্ষতি করছিলেন আমাদের মেলার, লেখকগণের বা পাঠকের। কিন্তু সমস্যা যে করছিলেন তা আমরা না বুঝলেও ওই সব পণ্ডিতরা বুঝেছিলেন তাই উদ্ধার করলেন এই পতিত জাতিকে। খবর টি এমন একদিন পেলাম যেদিন এদেশের বিপিএল উদ্বোধনীতে সয়লাব হিন্দি উর্দু গান, ভিনদেশীদের মাংসের তুফান। বুঝি এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা নেই শ’য়ে শ’ইয়ে ভারতীয় চ্যানেলে ভরে গেলে দেশটা, সমস্যা নেই বাংলাকে ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা উচ্চারণ করলে। আসলে এগুলো তো নষ্ট করে না আমাদের সংস্কৃতি কে। নষ্ট করে ওই পাজি মাণিক, বিভুতিরা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় কোন কিশোর যদি কোন দোকানে চাই একটি ‘পাগলা দাশু’, একটি তরুণ যদি চায় ‘শেষের কবিতা’ বা একজন পাঠক যদি চাই ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ কি জবাব দিবেন ওই দোকানদার? ‘বাবা এই বইটা তো নিষিদ্ধ এই বই পড়ো না।’