মাথার মধ্যে ভোঁ ভোঁ করতাছে । দুনিয়াডা মনে হইতেছে লাডুমের মত ঘুরতাছে। ঘরের কোনায় ৪০ পাওয়ারের লাইটটা মনে হয় ভাইঙ্গা চোখের মধ্যে কাচের টুকরার মত খোচাইতেছে ।
বমিগুলো দুইবার গিলছি। আবার গলার ধারে আইছে। আর মনে হয় গিলতে পারমুনা । কিন্তু এইহানে বমি করা যাইবেনা । ধুইতে ফাতেমা ছেরির বহুত কষ্ট হইবে । তাছাড়া এই ঝগরাইট্যা ছেরি কমহইলেও দুইদিন ঘরে ডুকতে দেবে না ।
ঘর বলতে আর কি একটা টিনের বেশ্যাপাড়ার মধ্যে একখান খুপরি । হার্ডবোর্ডের বেড়া দেওয়া একটা ছোট্ট রুম । এর মধ্যে একটা পাতলা ক্যাতা দেওয়া একটা চহি । এই চহির উপ্রেই আমি ছটফট করতাছি। এই চকিটাই প্রায় ঘরের অর্ধেকের বেশি দহল কইরা আছে । ঘরের কোনায় একটা চেয়ারের উপরে একটা সাদাকালো ১৪ ইঞ্চি টিভি।তার পাশে আরেকটা চেয়ারে একটা ভিসিডি ও কয়েকটা ব্লু সিডি ।
এই টিনের ঘরটায় ১২ জন মাইয়া থাহে । এইয়ার একজন হইল ফাতেমা । আমি অর লগেই থাহি । মাইয়াডা এমনে ভালো, কিন্তু ঝগড়াইটা । নাইলে প্রায় দুই মাস আমি কোন কাম কাইজ় করতে পারিনা হের পরও আমারে খাওয়াতেছে , রাখতেয়াছে, আবার মাঝে মাঝে পুরিয়ার পোডলা কেনারও টাহা দেয় । এছাড়া আমার জইন্যে অনেক জ্বালাও সহ্য করে । এই তো হেদিন আমাগো পাসের রুমের নাছিমার মোবাইল সেটাটা নিয়া বেচছি । আমি সেট চুরি করছি নাছিমা আচঁ করতে পাইড়রা ফাতিমার লগে কোন ঝগড়া।
আর ঝগরা টগরা কইররা ফাতিমা আইয়া কানতে কানতে আমারে গাইল-টাইল দিয়া ঘর দিয়া বাইর কিইররা দিছে । আমি অর পাও ধইররা মাপ চাইছি , কইছি আর করমু না , শান্তিতে থাকমু । আমার নিজের কাছেও খারাপ লাগে । কিন্তু আমি তো পারি না নেশার টান উঠলে গা-গোতর কাপে , মাথা খালি খালি মনে হয়, তখন কোন কিছুর ঠিক থাহে না । বহুত দিনের অব্যাস ।
এই মোকামে আমিই একলা ক্যাডার আছালাম । মাগিবাড়ীর মধ্যে মানষেরে ঠ্যক দেতাম ,গাজা হিরোইন বেচতাম , বহুত ইনকাম করতাম । আর খরচও করতাম হেইরম । তখন প্রথম ফাতিমারে প্রথম এই পাড়ায় আনছে। তার প্রথম ছয় মাস আমিই আছালাম একলা কাস্টমার । সে মাগিপাড়ায় থাইক্কাও প্রথম মাগির জ্বালা টের পায় নাই । তারপর ধরছি রেহেনারে । আর মাগির লগে লগে খাইতাম মাল ।
সিরিঞ্চ দিয়া খোচাইতে খোচাইতে হাতের ড্যানাডা একেবারে ঝাঁঝরা কইররা ফেলাইছি । আস্থে আস্থে কঠিন হিরোইঞ্চি হইয়া গেছি ।সারা দিন এখানে ওখানে পইররা থাকি । ঠেক দেওয়ার পোলাপাইনগুলাও আর নাই । ঠেক দেতে যাইয়া কয়েকবার পাবলিকের মাইর খাইছি । আগের মত আর শরীলে বল পাই না । প্রায় হারাদিন ফাতেমার বিছানায় শুইয়া থাকি । মাঝে মাঝে ফাতেমা দুই এক পোডলা আইন্যা দেয় । হেইদিন রাইতে এই এলাকার প্রইমারি স্কুলের ঘন্টা চুরি কইরা বেইচ্চা দুই পোডলা খাইছি।
তয় কাইল হইতে আর খামু না । সিরিঞ্চ দিয়াও শরীলডারে আর গুতামুনা । ফাতেমার এই ঘরেও আর থাকমুনা । ফাতেমা কাস্টমার লইয়া আইয়া যখন আমারে বাইরে যাইতে কয় তখন আমার খারাপ লাগে । হেইদিন এক হালায় ভদ্দোললোক আমারে দেইখ্যা আর ঘরে আয় নাই । ফাতেমা তাই আমার লগে রাগারাগি করছে ।
মাথার মধ্যে ভোঁ ভোঁ টা আবার বারছে । সিরিঞ্চ মিরিঞ্চ না পাইয়া আইজ় আধ বোতল চোলাই খাইছি । যে হালাগো ধার দিয়া চোলাই আনছি হালারা হইল চরম খোর । চোলাইয়ের মধ্যে ট্যাবলেট মিশাইছে । আমার চউখটা লাইটের মধ্যে হাইন্দা রইছে । আর মাথার মধ্যে মগজটা যেন শুকাইয়া কাড হইয়া রইছে । শরীরে কাপন উঠছে , দিক-বিদিক কিছু বুঝতাছিনা , চোখে
সোন্দর একটা বাড়ী দেখতাছি । আমাগো নেতা আসলাম সিকদারের বাড়ীর মতন । সোন্দর দোতালা একটা বাড়ী । আমি এই বাড়ীর মধ্যে কখনো ঢুকি নাই ,শুধু বৈঠকখানায় ঢুকছি ।
কিন্তু এখন আমি দেখতাছি আমি এই বাড়ীর ভিতরে একটা রুমে একটা বড় খাটের উপ্রে আধাশোয়া অবস্থায় আছি ।চাইরপাশে কোন মানুষজন নাই। কিন্তুক আসলাম সিকদারের বাড়ি সব সময় দুনিয়ার মানুষজনে একসাথ থাকে ।
আমি খাটের সাথে ঠেশ দিয়া ঝিমাইতেছি , আর আসলাম সিকদারের বউ খাটের পাশে দাড়াইয়া আমার মাথায় বিলি দিতছে । আহারে কি সোন্দর বউ! কি সোন্দর শাড়ি! কি সোন্দর সোনা-গয়না দিয়া সাঝছে ! গাড়িতে চড়া বড় লোকের বউ এর মত ।
বউডার মুখটা এত চেনা চেনা লাকতাছে কেন।এত চেনা।
হহ আমি দেখতাছি বউরে । আমাগো ফাতেমারে দেখতাছি । ফাতেমা আসলাম সিকদারের বউ হইয়া গেছে । আর আমি আসলাম সিকদার হইয়া গেছি ।
আনেকক্ষুন যাবত আসলাম সিকদারের বউরূপী ফাতেমা আমার মাথায় বিলি দেওয়া রাইখা আমারে ধাক্কাইতেছে । আমার মাথা ধইরা ঝাকরানি দিতেছে ।
"ও বউ হুদাই ধাক্কাও কেন " আমি বিরক্ত হইয়া বলি।
" ওই, আমি তোর বউ হই! ওঠ একঘন্টার লাইগ্যা বাইরে যা কাস্টমার আইছে " ফাতেমার চিৎকারে আমার বুক ধরপর করে উঠে , আমি আসলাম সিকদারের সোন্দর ঘর থেকে ফাতেমার খুপরিতে আইয়া পরি ।
বমি মুখের মধ্যে জমা হয়ে আছে । এখন উঠে কোন মতে বাইরে যাইতে পারলে হয় । আমি উঠতে পারিনা দেখে ফাতেমা আমাকে ধরে;
" হালার ঝামেলা , প্রতেকদিন গু-মুত খায় আর আমারে জ্বালায়, কাস্টমার আইজ একটা পাইছি ভালোই বড়লোক , আর তুই হালা এইখানে বইয়া সং লইছ, হালা তাড়াতাড়ি ঘর দিয়া বাইরা ।"
আমি ফাতেমারে ধইরা খাড়াইতে চেষ্টা করি কোনমতে, পারি না ।
এরপর বমি কইরা দেই ফাতেমার কোলে।গর গর করে প্রায় দুই সের বমি করি । ফাতেমার কোলসহ সারা ঘর বমিতে একাকার ।
আমি এই বিরাট ভুলের জন্য অসহায় চেহারায় ফাতেমার দিকে চাইতে চেষ্টা করি ।
ফাতেমার আগুন চোখ ছাড়া কিছুই দেখিনা ।
আমি খালি বলি " বউ আমারে মাপ কইররা দেও। "
ফাতেমার আগুন চোউখ কেমন জানি অন্যরকম হইতে থাকে ।
এর মধ্যে কে যেন ঘরে ডুকে ।
ফাতেমা তারে বলে "ওনারে নাসিমার ঘরে পাঠাইয়া দে , আমি আইজ কাম করমু না ।"
আমি অবাক হইয়া নিশ্চিন্তে শুইয়া পরি। ফাতেমা কাম না করা মানে আমার রুম থেকে যাওয়া লাগবে না । রাস্তায় শুইয়া থাইক্কা মশার কামড়ও খাওয়া লাগবে না ।
ফাতেমা বমিতে ভেজা গাও লইয়া আমার পাশে বয়। এক্ষুনি মনে হয় গালাগালি শুরু করবে ।
কিন্তু সে চুপচাপ বসে থাকে।
বমি করার পর কেমন যেন আমার শরীরডাও একটু শান্ত হইছে। কাপুনি কমছে ।
" এই তুই আমরে বউ ডাকলি কা, তুই আমারে বিয়া করবি।"
ফাতেমার কথা শুইন্যা আমি অবাক হই । বউ কইছি দেইখ্যা মাইয়াডা এত গইল্যা গেছে । আগে জানলে কবেই কইতাম। এতদিন এত গাইল শুনতাম না, এত কষ্টে থাকতাম না ।ওরে যে আমি ভালো পাই এইডা কইতেই তো কোনদিন সাহস হয় নাই ।
ফাতেমা কানতাছে , আমি বুঝি না সে কি জন্য কানতাছে। আমি কিছু না বুইঝাই তার মাথা আমার বুকের কাছে টাইন্যা আনি । তার মুখ আমার বুকের মধ্যে । তার চুল আমার নাকে মুখে চুল থেকে নারকেল তেলের সোন্দর গন্ধ । নারকেল তেলের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারতাম না।
কিন্তুক তার চুলের নারকেল তেলের গন্ধ আমার কাছে সব সময় সর্গের গন্ধ মনে হয়।
আমি আবার মাতাল হওয়া শুরু করছি । নারিকেল তেলের সর্গিয় গন্ধে আমি আইজ এমন মাতাল হ্মু, যে মাতাল, পৃথিবীর কোন মহান নেশারমাল মানুষরে কোন দিন করতে পারে নাই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:০৮