আজ গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী খ্রিস্টীয় নববর্ষ। অনেকে বলেন ইংরেজী নববর্ষ। দীর্ঘদিন বৃটিশ দ্বারা শাসিত থাকার অভ্যাসের কারণে সম্ভবতঃ আমরা ইংরেজি নববর্ষ বলি। খ্রিস্টীয় নববর্ষ হিসেবে ১ জানুয়ারিকে উদযাপনের সংস্কৃতি শুরু হয় কয়েকশ’ বছর আগে। কিন্তু এটি শুরু হওয়ার পেছনে রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস।
সর্বপ্রথম নববর্ষ উদযাপন শুরু হয় খ্রিস্টের জন্মেরও দুই হাজার বছর আগে। সে সময় ১ মার্চকে নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। কারণ আদি রোমান দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছরের ১ মার্চ ছিল নববর্ষের প্রথম দিন। ওই সময় বছর গণনা করা হতো ১০ মাসে। মার্চ মাস থেকে শুরু হতো নতুন বছর। আর দিনপঞ্জিকায় জানুয়ারির অন্তর্ভুক্তি হয় খ্রিস্টের জন্মের ১৫৩ বছর আগে। তখন রোমে প্রথমবারের মতো ১ জানুয়ারিতে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। রোমের দ্বিতীয় রাজা নুমা পন্টিলাস দিনপঞ্জিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন নতুন দুটি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। যদিও তখনও অনেকে ১ মার্চ নববর্ষ উদযাপন করত। খ্রিস্টের জন্মের ৪৬ বছর আগে জুলিয়াস সিজার প্রাচীন রোমান দিনপঞ্জিকায় একটি বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন দিনপঞ্জিকা চালু করেন। এই দিনপঞ্জিকায় ১ জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। মধ্যযুগীয় সময়ের ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে এসে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষের প্রথম দিন থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর পরও বিভিন্ন জায়গায় নানা সময়ে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। এ সময় ইউরোপের কোথাও ২৫ ডিসেম্বর, কোথাও ১ মার্চ আবার কোথাও ২৫ মার্চ নববর্ষ উদযাপন করা হতো। তবে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। এরপর ১ জানুয়ারি নববর্ষ হিসেবে আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ১৭৫২ সাল থেকে আমেরিকা ও ব্রিটেন ১ জানুয়ারিতে নববর্ষ পালন করা শুরু করে। তবে এটি কোনো ইংরেজি নববর্ষ নয়। কারণ ব্রিটিশরা যেহেতু পার্লামেন্টে আইন পাস করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকেই নিজেদের ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে, তাই এ ক্যালেন্ডারকে কোনোমতেই ইংরেজি ক্যালেন্ডার বলা যাবে না।যে নামেই আমরা এ নববর্ষকে অভিহিত করি না কেন, এ নববর্ষের আনন্দ-উল্লাসে তাতে ঘাটতি পড়ে না।
নববর্ষকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ নববর্ষ আমাদের নতুন ভাবনায়, নতুন সাধনায় সামনে এগিয়ে চলার পথনির্দেশ দেয়। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ও অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই আমরা সর্বপ্রকার অন্ধকারকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারি আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে। আর এ জন্য অতীতের ভুল-ভ্রান্তির চুলচেরা বিশ্লেষণই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন কঠোর ও নির্মোহ আত্মসমালোচনার মাধ্যমে খোলাখুলি নিজ নিজ দায়বদ্ধতা স্বীকার করে ভবিষ্যৎ চলার পথকে প্রশস্ত করা। প্রয়োজন সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাসহ সব মানবতাবিরোধী চিন্তা-চেতনা পরিহার করা এবং যা কিছু অন্যায় ও অমঙ্গলকর, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বলাবাহুল্য, বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কথাগুলো বলা যত সহজ, সেগুলো বাস্তবে রূপ দেয়া ততটাই কঠিন।
খ্রিস্টীয় নববর্ষ আমাদের সবার নববর্ষ। ধর্ম, জাতি, রাষ্ট্রিক ধ্যান-ধারণা নির্বিশেষে খ্রিস্টীয় নববর্ষ এখন আন্তর্জাতিক নববর্ষে পরিণত হয়েছে। সর্বব্যাপী হতাশা সত্ত্বেও এই নতুন বছরে আমরা আশা করব, হিংসা ও বিদ্বেষের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার পথে দেশ এগিয়ে যাবে। ২০১৫ সালটি সবার জন্য সুসংবাদ বয়ে আনুক। নববর্ষে সকলকে শুভেচ্ছা।