নীতুদি আপনাকে এই হিম সকালে বড্ড মনে পড়ছে।এমনই এক সকালে কাগজ পুড়ানো আগুনে আমি আর রুদ্রদা শীত ঢেকেছিলাম।
সে বেশ আগের কথা। আমার বেড়ে ওঠার বয়সের গল্প।সেই ভোর থেকে রাত অবধি আমার অর্থহীন সময়গুলো কেটে যেত আপনার মুখ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টায়। আপনার ন্যাওটা হয়ে থাকতেও তাই তেমন কিছু আপত্তি করতাম না। কিছুদিন পর আপনার ডাকপিয়নের চাকরি নিলে রুদ্রদার সাথেও সখ্যতা গড়ে ওঠে।আপনার চিঠিগুলো কী সযত্নে হাফপ্যান্টের পকেটে লুকিয়ে নিয়ে রুদ্রদার হাতে তুলে দিতাম।কী বেকুব আমি! অন্যের চিঠি কেউ এভাবে যত্ন করে! মনে আছে,একদিন বলেছিলাম, দিদি তুমি ঐ গাল ভর্তি বিশ্রী দাড়ি ভরা লোকটাকে শুধু লিখ কেন? একদিন আমাকেও লিখবে।তুমি গালে টোল ফেলে বলেছিলে,তুই বড় হ।তোকেও লিখব। দিদি তুমি আমাকে আজও লিখোনি।জানি আর লিখবেও না।
তবে,দিদি তোমার দুটো চিঠি আমি লুকিয়ে পড়েছিলাম।তখন অনেকট লজ্জা আর কিছুটা আনন্দ পেয়েছিলাম।আজ বড় হাসি পাচ্ছে।ও হ্যাঁ, অার যে চিঠিতে তেইশটি বেলী ফুল দিয়েছিলে সেখান থেকে দুটি লুকিয়ে ছিলামও। সারারাত ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে বুক ভরে গন্ধও শুঁকেছিলাম।জানি না, তুমি টের পেয়েছিলে কিনা।সমবয়সীরা যখন রাজা রাণী খেলায় রাণী বানাত সহপাঠিনীদের, আমি সবসময় অবিবাহিত রাজকুমারই থেকেছি। কেন থেকেছি?তা ভাবলে বড্ড হাসি পায়।
তুমি আমায় দক্ষিণা স্বরূপ ল্যাংড়া খোকনের বরফি খাওয়াতে নিয়ে গেলে আমি বরফির বদলে তোমার সঙগটাই বেশি উপভোগ করেছি।আমার শেষ সীমানার শৈশব চোখে পূর্ণতার আরেক নাম নীতুদি।রোজ রোজ চিঠি ফেরি করা কারই ভালো লাগে বলো?তবু আমি কেন যেতাম?আজ বড্ড হাসি পায়।থাক সেসব।
নীতুদি অস্ট্রেলিয়ায়সেটেলড।বর বড় বেতন পাওয়া ডাক্তার।বিয়ে করেই বউ নিয়ে পালিয়েছে।কিছুদিন পরেই রুদ্রদা সব চিঠি পুড়িয়ছে।চুল দাড়ি ছেটে ব্যাংকে মাঝারি বেতনের ফুলবাবু সেজেছে।সেও বেশ ক'বছর আগের কথা।নীতুদি মাঝে দুবার এসেছিল।আইসক্রিম পার্লারে পেটচুক্তি ঠাণ্ডা খাইয়েছে।আমার তবু ভালো লাগেনি একদম।
আমাকে এখনো টানে আড়াই টাকার বরফিতে কেনা শেষ বিকেল আর রুদ্রদার দেশলাই কাঠিতে জ্বালানো ধোঁয়ায় ধোঁয়াময় সকালগুলো।
নীতুদিরা ভালো থাকে
রুদ্ররা জ্বলে পুড়ে