somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের অনুষ্ঠানে ক্যাচাল-অবশেষে মন কষাকষি-বিয়ে ভন্ডুল। একটি জ্ঞানী সচেতনতামূলক পোস্ট।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শামীম-লীনার পাঁচ বছরের প্রেম। কলেজ লাইফ থেকে তাদের পরিচয়। এক সময় মন দেয়া-নেয়া। পাঁচ বছর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় নিজ নিজ পরিবার কে জানানোর। প্রথমে যথারীতি দুই পক্ষের অভিভাবকদের প্রবল আপত্তি। কিছুতেই তাদের প্রেমের সম্পর্কে মেনে নেবে না তাদের পরিবার। ছেলে পক্ষের ধারণা, তাদের ছেলে বিরাট গুণী, মেয়ের অভিভাবক রা তাদের কম গুণী মেয়েকে ছেলের পেছনে লাগিয়ে তাকে রাজী করিয়েছে। মেয়ে পক্ষের ধারণা, তাদের মেয়ের জন্য লন্ডনের রাজপরিবারের কেউ অপেক্ষা করে আছে। এই ছেলে, তাদের মেয়ের কাছে কিছুই না।

যাই হোক, শামীম আর লীনা নানা রকম বুদ্ধি বের করে তাদের অভিভাবকদের কে রাজী করানোর। দুজনের কেউই চায় না তাদের কারণে তাদের বাবা-মায়েরা দুঃখ পাক বা তাদের সম্মানহানী হয়। বহুদিনের চেষ্টার পর দুই পক্ষই কোনরকম গররাজী হবার মত করে রাজী হয়। কিন্তু মনে মনে পরস্পরের পরিবারের প্রতি ক্ষুব্ধ, ছেলে-মেয়েদের কে নিয়ে তাদের বিকল্প স্বপ্ন-সুযোগগুলো নষ্ট হবার জন্য।

তবে প্রেমের বিয়ে ছাড়াও পারিবারিকভাবে বিয়ের সময় ও নীচের ঘটনাগুলো প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায় আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির ভেতরে।

ছেলে-মেয়ের অভিভাবকেরা আলোচনায় বসে বিয়ের দিন-ক্ষণ ঠিক করতে। দিন-ক্ষণ ঠিক হয়।

ঝামেলা টা বাঁধে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর সময় থেকে। সেটা হতে পারে, এনগেজমেন্ট, পানচিনি, গায়ে হলুদ, কলেমা-কাবিন বা বৌভাতে।

অঞ্চলভেদে ক্যাচাল লাগার উপকরণ গুলি আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে সচরাচর ক্যাচাল বাধার উপকরণগুলো নিম্নে দেয়া হলো

১। বিয়ের দেনমোহর

বহু বিয়ের আলোচনা ভেঙে যেতে শুনেছি, দেনমোহর নিয়ে বনিবনা না হওয়ায়।

২। পরস্পর পক্ষের কত জন অতিথী আসবে

এখানে একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা দেখা যায়। ছেলেপক্ষ যদি বলে বিয়েতে ৮০ জন বরযাত্রী আসবে, মেয়ে পক্ষ বলে ১০০ জন আসবে বৌভাতে--এই রকম। এই নিয়ে কথা চালাচালি-বাকবিতণ্ডা-মন কষাকষি।

৩। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কি কি উপহারের আদান-প্রদান হলো।

সাধারণতঃ হলুদের দিনে ছেলের বাড়ীতে ছেলের জন্য জামা-কাপড়, পাঞ্জাবী, কসমেটিকস ইত্যাদি এবং ছেলের খুব কাছের আত্মীয় (মা, ফুফু, চাচী) দের জন্য শাড়ী ইত্যাদি পাঠানো হয়। আর মেয়ের বাড়ীতেও এইসকল জিনিষ সাথে বিয়ের গহনা পাঠিয়ে দেয়া হয়।

আমার দেখা মতে এইটাই ক্যাচাল লাগার সবচেয়ে সেন্সিটিভ ইস্যু। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন পক্ষেরই উপহারের কোয়ালিটি পছন্দ হয় না। আত্মীয়-স্বজনেরা নানা রকম টীপ্পনি কাটা শুরু করেন---

উদাহরণঃ

মেয়ের চাচীঃ এইটা কি শাড়ী দিয়েছে। এইরকম শাড়ী তো আমার কাজের বুয়াও পরে না।

ছেলের ফুফুঃ ছি ছি দেখি লাক্স সাবান দিয়েছে। আমরা পাঠালাম বিদেশী সাবান, এরা দেখি লাক্স সাবান পাঠিয়েছে। একেবারে ছোটলোক। কোথায় আত্মীয়তা করছিস রে ছোটন।

এই রকম তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা। এর পরের সাক্ষাতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া।

৪) বিয়ের দিনে

সাধারণঃত বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলেই খাবার-দাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার কোয়ালিটি, পরিবেশন এইগুলো নিয়ে বরপক্ষের লোকের সাথে কনেপক্ষের লোকদের প্রায়ই কথা চালচালি করতে দেখা যায়।

তবে বিয়ে পড়ানোর আগেই প্রধানতঃ আত্মীয়-স্বজনদের বাকা কথা, বিদ্রূপ, কোন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিয়ের আসরেই বেঁধে যেতে পারে হট্টগোল। হলুদের অনুষ্ঠানের পরপর ই, এই বিয়ের দিনে হট্টগোল লাগার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। এইরকম পরিস্থিতিতে বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যায়।

ভীলেন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে ছেলে-মেয়ের বড় ভাবী, দুলাভাই, চাচী-মামী।

আমি একটি বালকের দুষ্টুমির মাধ্যমে শুরু হয়ে বয়স্কদের হাতাহাতি পর্যন্ত করতে দেখেছি বিয়ের অনুষ্ঠানে। বলা বাহুল্য এটা ছিল দুটি শিক্ষিত পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠান।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসমস্ত তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে শুরু হয় কথা কাটাকাটি, ঝগড়া, মনোমালিন্য, অপমানজনক আচরণ, এমনকি মারামারি এবং সর্বোপরী বিয়ে ভন্ডুলের মত বেদনাদায়ক ঘটনা।

এই রকম তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে জীবনের শুরুটাই হয় একটা অপ্রত্যাশিত ঝামেলার মাধ্যমে যার রেশ দুজনকেই টানতে হয় ক্রমাগত লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধ্য দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে শামীম-লীনার মত দুটি তরুন-তরুণীর স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায় চিরতরে।

বেদনায় নীল হয় দুটি হৃদয়।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৫
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×