somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসঃ প্রাসঙ্গিকতা ও প্রত্যাশা

১৫ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পরিবার ও পরিবার দিবসঃ আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৯৩ সালে গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী ১৫ মে কে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষও ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘগ এবং পরবর্তীতে ১৯৯৫ সাল থেকে সমগ্র বিশ্বে প্রতি বছর এ দিনটি আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পারিবারিক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ়ীকরণ ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূলত এ দিবস পালনের প্রয়াস নেয়া হয়। ছোটবেলায় পরিবারের সংজ্ঞা শেখা আছে সবারই। মা-বাবা,ভাই-বোন, দাদা-দাদী – সবাইকে নিয়েই গঠন হয় পরিবারের।

সমাজের মৌলিক ভিত্তি হলো পরিবার। একটি পরিবার একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই মানুষ পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ নির্দেশনা। জীবন আসলে গড়ে ওঠে এখান থেকেই। মানুষের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠও বলা হয় পরিবারকে। পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও দৃঢ় বন্ধনের মাধ্যমে পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ সমাজের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে থাকে। পরিবার তাই মানুষের জন্য স্বপ্নডাঙ্গা। মানুষের জীবনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

International Day of Families: Theme 2017- "Families, Education and well-being".

বিশেষজ্ঞদের চোখে পরিবারঃ সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে পরিবার ও এর ভুমিকা বিধৃত করেছেন। ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের প্রমাণ বহন করে।

তবে সমাজ ভেদে, সংস্কৃতিভেদে পরিবারের গঠন, কাঠামো, কার্যক্রম ও সার্বিক ভূমিকা ভিন্ন হয়ে থাকে। সময়ের সাথে, সভ্যতার বিকাশের সাথে আর টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে সমাজে ও রাষ্ট্রে পরিবাবের ভূমিকা যেমণ পরিবর্তিত হচ্ছে; সাথেসাথে পারিবারিক কাঠামো আর মূল্যবোধেও আসছে ভিন্নতা।

যৌথ পরিবার ভাঙ্গার কারণঃ অনেক কারণেই যৌথ পরিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও ক্রমেই কমে কমে বিলুপ্তির পথে এখন। অর্থনৈতিক কারণ এদের মধ্যে অন্যতম। সমাজবিজ্ঞানী ফলসমের মতে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার বৃদ্ধির কারণ প্রধানত:

* অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নতি;
*স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা;
* অলাভজনক শিশুশ্রম এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার;
* ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ।

পরিবারের গুরুত্বঃ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষের জীবনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারের অনেক মৌলিক কাজ রয়েছে ।

যেমণঃ
* জৈবিক;
*মনস্তাত্ত্বিক;
*অর্থনৈতিক,;
* শিক্ষাদান;
* শিশুর সামাজিকীকরণ;
* সংস্কৃতির সংরক্ষণ;
*মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ;
* সমমর্যাদার নিশ্চয়তা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমঅধিকার
*সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবন মান উন্নয়ন।

আজকের শিশু ভবিষ্যতের আগামীর দক্ষ নাগরিক। এই শিশুকে উপযোগী করে গড়ে তোলে পরিবার । শিশুর মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে। পরিবারের ধরন, প্রথা-রীতিনীতি এ সবের ওপর ভিত্তি করে শিশুর জীবন-আচরণ গড়ে ওঠে। তাই চারিত্রিক সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা এবং সর্বোপরি সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুণাবলী আসলে পরিবারেই গ্রথিত হয়।

বাস্তবতাঃ

পরিবার – আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেমন? এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, আমাদের দেশেও পরিবারের কাঠামো আগের মতো নেই। সময়, জীবন, জীবিকা, মানসিকতা ও মূল্যবোধের দ্বান্দ্বিক কারণে আমাদের পরিবারগুলো ভেঙ্গে একক পরিবারে রূপ নিচ্ছে। মা-বাবা, ভাই বোন, দাদা দাদি – সবাই মিলে যে সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ ছিলো তা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা, স্বার্থের দোলাচলে আমরা অনেকেই ভুলে যাই- পরিবারের আপনজনদের কথা। এমনকি বাবা-মায়ের খোঁজও নেয়া হয় না। আমাদের সমাজেও তাই দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা যাচ্ছে বেড়ে।

এমনকি ছোট পরিবারেও সহনশীলতা আর পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় অশান্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। এর প্রভাব সরাসরি সংশ্লিষ্ট সদস্যদের ওপর পড়ছে; পাশাপাশি সেই পরিবারের শিশুরা বেড়ে উঠছে বিরূপ পরিবেশে। সুস্থ মানসিক ও মানবিক বোধ গঠন হচ্ছে বাধাগ্রস্থ।

যৌতুককে কেন্দ্র করেও অশান্তি লেগে থাকে অনেক পরিবারে।

পারিবারিক অশান্তির কারণে ঘটছে না না ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পরিবারে সৌহার্দের অভাবে, সন্তানের হাতে বাবা-মায়ের খুন, বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু বা ‘বৃদ্ধ বাবা-মাকে’ অবহেলার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পারিবারিক অশান্তির জন্য মানুষের মানসিক ও মানবিক বোধের অবক্ষয় হচ্ছে।

সুন্দর পরিবারের জন্য করণীয়ঃ


পারিবারিক সুখ-শান্তি যাতে বিনষ্ট হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবাইকে। ঘর বা পরিবার এক পবিত্র আশ্রয়। সব পাখি দিন শেষে যেমন তার নীড়ে ফিরে আসে মানুষও সারাদিনের কর্মব্যস্ততার শেষে ঘরে ফিরে আসে। তবে ঘরে অবশ্যই শান্তি থাকতে হবে। হতে হবে সুইট-হোম। পরিবারের মধ্যে ভালোবাসায় ভরপুর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। আগে নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে হবে, তারপর দেশকে ভালোবাসতে হবে। কারণ নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে না পারলে নিজের দেশকে ভালোবাসা সম্ভব হবে না। পরিবার শক্তিশালী হলে সমাজ এগিয়ে যাবে আরে দেশ হবে শক্তিশালী।

পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। দুজনের ভূমিকা ও অধিকার হতে হবে সমান্ ও সম্প্রীতির। অন্যসব সদস্যেরও থাকতে হবে সমান অধিকার। মর্যাদা হবে যথাযোগ্য। সবার আবেগের মূল্যায়ন করতে হবে যৌক্তিকভাবে সময়ের নিরিখে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ পরিবারের কাঠামোকে করতে পারে মজবুত।

শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে সবার খোঁজ নেয়া উচিত। পরিবারের সবার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। মিথস্ক্রিয়া সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক। মাঝেমধ্যে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া- ফ্যামিলি ডে আউট – অনেক ফলদায়ক হতে পারে।

পরিবারের জেষ্ঠ্য সদস্যদের সম্মানের চোখে দেখা একান্ত প্রয়োজন। এতোটুকু কথা বা খোঁজ নেয়া অনেক সুন্দর মানবিক প্রভাব ফেলতে পারে তাঁদের মনে।

আত্মীয়-স্বজনকে সমান চোখে দেখা জরুরি। নিজের ভাই-বোন, মা-বাবাকে অনেকে প্রাধিকার দেয়। পক্ষান্তরে, স্বামী বা স্ত্রীর আত্মীয়কে ভিন্ন চোখে দেখা অনেক পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।

শেষকথাঃ

এটা ঠিক যে, শুধু দিবস পালন করে পরিবারকে সুখী বা শান্তিময় করা সম্ভব নয়। তদুপরি, আমাদের দেশে পরিবার দিবসের পরিচিতিও নেই সেভাবে। তবে একটি সুন্দর পরিবার, সুখী পরিবারের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। যার যার স্থান থেকে। কারণ সমাজ বিনির্মাণে আর রাষ্ট্র পরিচালনায় যে সুন্দর মনের যোগ্য ও দক্ষ মানুষ দরকার – সে মানুষ গড়ে ওঠে পরিবারে। পরিবার সে অর্থে একটি রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম ইউনিট।

সেই পরিবারের ভালবাসা ও মমতার বন্ধনে বেঁচে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে পরিবর্তন হবে অনেক কিছুর; পরিবারেরও। সেটিই স্বাভাবিক । এরই মাঝে, সবার সচেতন কন্ট্রিবিউশিনের মধ্যদিয়ে পরিবার হয়ে ওঠতে পারে সুখের আধার। কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়। শান্তির নীড়।

__

Photo credit: UN website

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×