জনাব মাহাথির, আপনি কিভাবে মাহাথির হলেন ? এমন একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করার কথা আমি ভাবিনি। বরং অন্য ক’টি প্রশ্ন তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য নোট করেছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন করার সুযোগ যখন এলো আমি তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘আপনি কিভাবে মাহাথির হলেন’! মাহাথির মুহাম্মদ সাথে সাথে জবাব দিলেন ‘সীইং বিগ পিকচার এন্ড প্লানিং ফর ফিউচার।’
একটু থামলেন মাহাথির। আমাদের সকলের দিকে তার কোমল দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলেন।
পুত্রাজায়ায় তাঁর অফিস ভবনের দোতালার হল রুমে বড় একটি টেবিলের চার পাশে সমবেত আমরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট হাউসের কর্মকর্তা।
এশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে বিশ্বমানের নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাহাথির মুহাম্মদের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর লীডারশীপ ইন ফিন্যান্স (ইকলিফ)। ‘গ্লোবাল লীডারশীপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ নামক এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ব্যাংক নেগারা) এই পার্শ্ব প্রতিষ্ঠান।
চার পর্বে বিন্যস্ত এ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে আমরা প্রথম সপ্তাহ কাটিয়েছি ভারত মহাসাগরের মালাক্কা প্রণালীতে বিখ্যাত পাঙ্কর লাউত দ্বীপে। দু’মাস পর আজ ২০০৬ সালের ১৫ জুন প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা মাহাথির মুহাম্মদ-এর অফিস থেকে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাজানো হয়েছে মাহাথির মুহাম্মদ-এর ব্যক্তিগত নির্দেশনা অনুযায়ী। মাহাথির মুহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পরও ইকলিফের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও নেতৃত্ব উন্নয়নের এ কর্মসূচীর অন্তত একটি সেশন তিনি নিজে পরিচালনা করেন।
নেতৃত্ব উন্নয়নের এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর অংশ হিসাবেই আমরা এশিয়ার এ সময়ের সবচে সফল নেতার মুখোমুখি।
‘আমি আমার জাতির ইতিহাস পাঠ করেছি’
আমার প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বললেন: মালয়েশিয়াকে প্রায় শূণ্য থেকে বর্তমান পর্যায়ে আনতে আমাদেরকে অনেক বড় পরিবর্তনের স্বপ্ন রচনা করতে হয়েছে। স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে হয়েছে। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অনেক কাজ করতে হয়েছে।
একটু থেমে মাহাথির বললেন ঃ ‘আমি আমার জাতির ইতিহাস পাঠ করেছি। ইতিহাস পাঠ থেকেই আমি আমার বর্তমান কর্তব্যের নির্দেশনা পেয়েছি। ইতিহাসের জ্ঞানই আমাকে উন্নয়নের অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে। অতীত ইতিহাসের বহু ঘটনা আমাকে এগিয়ে চলার সাহস যুগিয়েছে। ইতিহাস থেকে জেনেছি, আমাদের কিছু কিছু সময় এমন চলে গেছে যখন উন্নয়নের চালিকা শক্তিরূপে এ জাতির শক্তিশালী কোন সংগঠন ছিল না। জনগণের সামনে কোন বড় স্বপ্ন আর বড় লক্ষ্য তখন তুলে ধরা হয়নি।
মাহাথির তাঁর নিকট অতীতে ডুব দিলেন। বললেনঃ ‘আড়াইশ বছরের উপনিবেশিক শাসন মালয়েশিয়ার জনগণকে নানাভাবে দুর্বল করেছে। এ শাসন আমাদেরকে আত্মশক্তি ভুলিয়ে দিয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সংকুচিত ও কোণঠাসা করে ফেলে। এরপর ১৯৫৭ সালে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা একটি ছোট্ট বেসামরিক প্রশাসন কাঠামো পাই। ব্রিটিশ অফিসারদেরকেও আমরা আরো দু’-তিন বছর আমাদের দেশে রেখে দেই। আমাদের নেতা টুংকু আবদুর রহমানের নেতৃত্বে সেসব বিদেশী সংগঠকের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখার চেষ্টা করি। এরপর ধীরে ধীরে আমাদের প্রশাসন যন্ত্র শক্তি অর্জন করে। আমাদের রাজনৈতিক শক্তিও খুব একটা সংহত ছিল না। রাজনৈতিক সংগঠন ছিল অত্যন্ত দুর্বল। আর তা ছিল দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন। আমরা সব কিছুকেই নতুনভাবে সংগঠিত করি। এভাবেই আমাদের দেশের উন্নয়নের চাকা ঘুরতে শুরু করে। আর এ ক্ষেত্রে আমিও কিছু অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছি।’
কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ’
মাহাথির বলেনঃ ‘যে কোন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর কাজটা কিভাবে এগুবে তার একটা নিখুঁত ওয়ার্ক ফ্লো চার্ট দরকার। কে কোন্ কাজটি করবে তারও পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজন কাজের গতি সঞ্চালনের একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া। একজন পাইলট হিসাবে আপনি ভুল করলে উড়োজাহাজ কিন্তু আপনাকে ক্ষমা করবে না। কাজেই আপনাকে উড়োজাহাজ চালনার ফ্লাইট চার্ট অবশ্যই সঠিকভাবে অনুসরন করতে হবে।’
মাহাথিরের মতেঃ ‘নেতার কর্তব্য হলো কাজের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সাথে তার লোকদের সম্পৃক্ত করা। সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাতে হবে ‘কী’ তাদেরকে করতে হবে এবং ‘কেন’ করতে হবে। কাজের প্রতিটি স্তর ও পদক্ষেপ সম্পর্কে লোকদের অবহিত করাও নেতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এভাবেই নেতা সকলের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন।’
চাকা যাতে ঘুরে সেটা নিশ্চিত করা নেতার কাজ’
মাহাথির বলেনঃ ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, সরকারী অফিসাররা সাধারণত পরিবর্তনের পক্ষ-শক্তি (চৎড়-পযধহমব) হিসাবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ নন। তারা বিদ্যমান অবস্থাকেই কঠোরভাবে আঁকড়ে থাকতে চান। এই অবস্থায় জাতিকে উন্নয়ন ও গতিশীলতার পথে পরিচালনার জন্য নেতা বা মন্ত্রীদেরকে নিজ নিজ বিষয়ে জ্ঞানী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। পরিবর্তন আনার শক্তি আর স্বাধীনতা তাদের থাকতে হবে। মন্ত্রী হিসাবে আপনি একটি আদেশ দিলেন। তারপর ধরে নিলেন যে কাজটি হয়ে যাবে। তা কখনোই নয়। নির্দেশ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে আপনাকে সদা জাগ্রত ও সক্রিয় থাকতে হবে।’
মাহাথির মুহাম্মদ এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার কে এল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন ঃ ‘এই বিমান বন্দরের ভবনগুলি শুধুমাত্র নির্দেশের জোরে গড়ে ওঠেনি। বহু বার নির্দেশের কাগজপত্র হারিয়ে গেছে। কাজ অনেকবার থমকে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি অতিক্রম করে কাজটি এগিয়ে নিতে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফলো আপ ও হস্তক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেবিনেটের কাছে মন্ত্রীর নিয়মিত রিপোর্টিং ও জবাবদিহির ব্যবস্থাও থাকতে হবে। মন্ত্রীসভা অনুমোদন দিল, আর ক্রেন চলতে শুরু করলো, এ ভাবে মালয়েশিয়ার উন্নয়ন ঘটেনি। এতে নেতৃত্বের একটা বড় ভূমিকা ছিল। চাকা যাতে ঠিকমতো ঘুরে, সেটা আমরা বরাবর নিশ্চিত করেছি।’
‘আমি সব সময় বড় ছবি দেখেছি’
মাহাথির আবার প্রশ্নটির মূলে ফিরে গেলেন। তিনি কৌতুকের ভঙ্গিতে বললেন ঃ ‘জাপানীরা চায় তাদের দেশের সব নাগরিকই অন্তত একবার প্রধানমন্ত্রী হবার সুযোগ পাক। এ জন্য তারা প্রতি দু’ বছর পর পর সরকার পরিবর্তন করে। রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বা ধারণা অর্জনের আগেই প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। নেতাকে তার ভূমিকা পালন ও অবদানের চিহ্ন রাখার জন্য অবশ্যই সময় পেতে হবে। পর্যাপ্ত সময় না দিলে তিনি কাজ করবেন কিভাবে?’
মাহাথির এ ব্যাপারে নিজের সম্পর্কে বললেনঃ ‘আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। বাইশ বছর আমি নেতৃত্বের শীর্ষে থেকে সব কিছু দেখার, জানার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পেয়েছি। কাজ করতে গিয়ে আমি ভুল করেছি। সে ভুল সংশোধন করার সময়ও পেয়েছি। আমি সব সময় বড় পর্দায় চোখ রেখেছি। বড় ছবি দেখেছি। বড় ছবির সাথে জাতির অন্তর্দৃষ্টিকে জুড়ে দিতে কাজ করেছি।’
বিমান বন্দর হাইওয়ে ও পেনাং ব্রীজ
মালয়েশিয়ার উন্নয়নের কয়েকটি মাইল ফলকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাহাথির মুহাম্মদ বলেন ঃ ‘কুয়ালালামপুরের পাশে সুবাং-এ আমাদের একটি ছোট্ট বিমান বন্দর ছিল। এই বিমান বন্দরে বছরে চৌদ্দ মিলিয়ন যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ ছিল। আমরা স্বপ্ন দেখলাম, ভবিষ্যতে আমাদের বিমান বন্দরে বছরে একশ পঁচিশ মিলিয়ন যাত্রী উঠা-নামা করবে। সেজন্য একটি বিরাট অত্যাধুনিক বিমান বন্দর প্রয়োজন। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম। অনেক বিরোধিতা মুকাবিলা করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে গেলাম। কোন দেশের বিমান বন্দর হলো বিদেশীদের চোখে সে দেশের মুখচ্ছবি। আমাদের নতুন বিমান বন্দর বিদেশীদের কাছে মালয়েশিয়ার ইমেজ বাড়িয়েছে। হংকং-সিঙ্গাপুর অভিমুখী অনেক ব্যবসা এর ফলে মালয়েশিয়ার দিকে ছুটে এসেছে। নতুন বিমান বন্দর আমাদের জনগণের মাঝে এ উপলব্ধি জাগ্রত করেছে যে আমরা বড় কিছু করতে পারি।’
মাহাথির বলেন ঃ ‘মালয়েশিয়ায় আগে বড় কোন হাইওয়ে ছিল না। আমরা দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছয়-লেন বিশিষ্ট একটি হাইওয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিলাম। পাহাড়-জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বিস্তীর্ন এই হাইওয়ে নির্মাণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে কেউ কেউ বললেন যে, এটা একটা তুগলকি চিন্তা। আমরা বললাম ঃ আমরা পরিকল্পনা করছি শুধু বর্তমানের জন্য নয়; বরং ভবিষ্যতকে সামনে রেখে। আমরা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে গেলাম। পাহাড় কেটে জঙ্গল সাফ করে গড়ে ওঠা এই হাইওয়ে সমগ্র মালয়েশিয়াকে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত জুড়ে দিলো। মহা সড়কের দু’পাশে ধীরে ধীরে গড়ে উঠলো অসংখ্য টাউনশীপ। জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলগুলো ফল-ভার সজ্জিত সাজানো বাগানে পরিণত হলো। উন্নয়নের গতি সঞ্চালিত হলো সব খানে। আর জাতির মনে সঞ্চারিত হলো নতুন প্রত্যয় ঃ ‘আমরাও পারি’।’
তিনি বলেন ঃ ‘এই হাইওয়ে নির্মাণ করা না হলে দেশের ক্রমবর্ধমান ট্রাফিক চলাচল আজ স্তব্ধ হয়ে যেতো। এখন তো আমরা এ ধরনের আরো হাইওয়ে নির্মাণের কথা ভাবছি। কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভবিষ্যত চাহিদাকে সামনে রাখতে হবে।’
পেনাং দ্বীপের সাথে মালয়েশিয়ার মূল ভূখন্ড জুড়ে দিয়ে প্রথম ব্রীজ নির্মাণ সম্পর্কে মাহাথির বলেন ঃ ‘ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলো। কিছু লোক হৈ চৈ করে উঠলেন। ফেরী পারাপারের মাধ্যমে সব কিছু তো ঠিকঠাকই চলছে। সেখানে আবার ব্রীজ কেন? কিন্তু পরিবর্তন ছাড়া উন্নয়ন আসবে কোত্থেকে? আমরা প্রথমে একটি ব্রীজ নির্মাণ করলাম। সুপ্রাচীন বাণিজ্য বন্দর পেনাং আগের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। এর পর দেখতে দেখতে সেখানে দ্বিতীয় ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিলো। সেটিও বাস্তবায়ন হলো।’
পেট্রোনাস টাওয়ার ও পুত্রাজায়া
মাহাথির মুহাম্মদ এর পর পেট্রোনাস টাওয়ার নির্মাণ সম্পর্কে বললেন ঃ ‘মালয়েশিয়ার জনগণের মাঝে একটি বড় স্বপ্ন ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যাশা নিয়ে কুয়ালালামপুরের প্রাণকেন্দ্রে আকাশ ছোঁয়া পেট্রোনাস টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলাম। পৃথিবীর সবচে উঁচু ইমারতের আদলে একটি উন্নয়নশীল দেশের রাজধানীতে সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণের স্বপ্ন দেখা সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা ছাড়া কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এ বড় কাজে আমরা অগ্রসর হলাম। প্রায় প্রতিদিন আমি ব্যক্তিগতভাবে এ কাজের অগ্রগতি তদারক করেছি। তার পর একদিন পেট্রোনাস টাওয়ার নির্মাণের কাজ শেষ হলো।’
‘সমগ্র জাতি এখন এই টাওয়ার নিয়ে গর্ব করে। সারা দুনিয়া থেকে পর্যটক আসছেন এই টাওয়ার দেখতে। আর্থিক মূল্যেও আমরা ইতিমধ্যেই এই টাওয়ারের রিটার্ন পেয়ে গেছি। আর সবচে বড় কথা, জাতির আত্মবিশ্বাস এর ফলে অনেক বেড়ে গেছে। কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টাওয়ার-এর চারপাশে বহু দূর পর্যন্ত নব নির্মিত ভবনগুলিতে এ বড় কাজের প্রভাব দেখতে পাবেন। এই সুউচ্চ ইমারত সমগ্র জাতির মধ্যে বড় কিছু করার স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছে।’
মাহাথির মুহাম্মদ বলেন ঃ পুত্রাজায়ায় আধুনিক মালয়েশিয়ার উপযোগী প্রশাসনিক কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলাম। পুত্রাজায়ার নির্মাণকালেও অনেক কথা হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে। কেউ কেউ এ পর্যন্ত গেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর ছয় সন্তানের বসবাসের জন্যই এ উপশহর। এ সব সমালোচনা আমাদের গতিপথ রুখতে পারেনি। আমাদের সামনে ছিল এক অগ্রসরমান মালয়েশিয় জাতির ভবিষ্যত চিন্তা।’
মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ প্রসঙ্গে মাহাথির বলেন ঃ ‘দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক সেতু নির্মাণের জন্য আমরা উদ্যোগ নেই। আমরা মনে করেছি, এর ফলে দুই প্রতিবেশী দেশ আরো কাছাকাছি হবে। এর ফলে দুই দেশই উপকৃত হবে। সিঙ্গাপুর আমাদের উদ্যোগে সাড়া দেয়নি। তবে আমরা ভবিষ্যতের দিকে চোখ রেখে আমাদের অংশের কাজ শেষ করে তাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে রেখেছি।’
প্রশিক্ষণ কোর্সের সমন্বয়কারী লিংকেজ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট সিঙ্গাপুরের নাগরিক স্যামুয়েল ল্যামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাহাথির বললেন, ‘আশা করি সিঙ্গাপুর আমাদের শুভেচ্ছার মূল্য এক সময় উপলব্ধি করবে।’
‘জাতির মাঝে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছি’
মাহাথির মুহাম্মদ এবারে একটু থেমে প্রতিটি শব্দের ওপর জোর দিয়ে স্বগতোক্তির মতোই উচ্চারণ করলেন ঃ ‘আমি সব সময় আমার জাতির জন্য বড় স্বপ্ন দেখেছি। জাতির মাঝে সে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছি। আমি বড় ছবি দেখেছি। জাতিকে বড় ছবি দেখাতে চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যত মালয়েশিয়ার চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনা রচনা করেছি। তা বাস্তবায়নে সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছি। বাঁধা, সমালোচনা এসব তো থাকবেই। পরিবর্তন সহজ কাজ নয়। সে কাজে ধীর-স্থীর-দৃঢ়ভাবে লেগে থাকতে হয়।’
‘গর্বাচেভ ও জেমিন বড় পরিবর্তনকারী নেতা’
মাহাথির মুহাম্মদের কাছে সর্বশেষ প্রশ্নটি ছিল লিংকেজ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্যামুয়েল ল্যাম-এর। হংকং-এ জš§গ্রহণকারী চীনা বংশোদ্ভুত স্যাম মাহাথিরকে প্রশ্ন করলেন ঃ সফল নেতৃত্বের একটি বেঞ্চমার্ক হিসেবে আপনি নিজেকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন। আপনি আপনার দীর্ঘ নেতৃত্বকালে বিশ্বের অনেক বড় নেতাকে দেখেছেন। তাদের মধ্যে আপনি কাকে সবচে বেশী ‘এডমায়ার’ করেন?
মাহাথির বললেন ঃ ‘বেশ ক’জন বড় নেতার কথাই আমি এখানে উল্লেখ করতে পারি। তবে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় আমি মূল্যায়ন করি চীনের জিয়াও জেমিন এবং রাশিয়ার গর্বাচেভকে। তাঁরা বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। এ পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের উভয়কে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কৌশলে অগ্রসর হতে হয়েছে। গ্লাসনস্ত আর পেরেস্ত্রয়কার বিষয়ে কে জি বি শুরুতে টের পেলে গর্বাচেভকে তারা সাথে সাথে ধ্বংশ করে ফেলতো।’
মেইলে প্রাপ্ত, আমাদের দেশীয় রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রেক্ষাপটে ঈষৎ সংক্ষেপিত।
সৌজন্যঃ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড