[গত ১৮ অক্টোবর আওয়ামী মন্ত্রীসভার বৈঠকে “ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও নিষিদ্ধ করা হবে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও থাকবে” – বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে। বন্ধু নুরুজ্জামান মানিক এবিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে একটা পোষ্ট দিয়েছেন। Click This Link
ঐ পোষ্ট আর মন্তব্য-জবাবগুলো পড়তে পড়তে যে কথাগুলো ভাবছিলাম তাই এখানে আলাদা পোষ্ট আকারে তুলে ধরলাম।]
ভন্ড ও ছদ্ম সেক্যুলারঃ
নুরুজ্জামান লিখছেন, এই "পোষ্টের বিষয় লীগ আর দালাল বুদ্ধিজীবিরা এতদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যা বলেছে তার সাথে আজকের পত্রিকার ঐ খবর সাংঘর্ষিক কিনা এবং যদি তাই হয় তবে লীগকে ভন্ড ও ছদ্ম সেক্যুলার বললে ভূল হবে কিনা ?" – এটা পোষ্টের পাঁচ নম্বর মন্তব্যে দেয়া জবাব থেকে নেয়া।
এই জবাব লিখে মানিক পোষ্টের ডিরেকশন কী সে সম্পর্কে পাঠকের জন্য একটা গাইড হাজির করেছেন। মুল পোষ্ট পড়ার পর থেকে অনেক দিকেই ভাবনা তাড়িত হচ্ছিল। ফোকাস হাতড়ে ফিরছিলাম। এই মন্তব্য আমাকে সাহায্য করেছিল। সেখান থেকে কথা শুরু করছি।
"লীগ আর দালাল বুদ্ধিজীবিরা" - এদেরকে মানিক "ভন্ড ও ছদ্ম সেক্যুলার" বলেছেন। কিন্তু আওয়ামী 'বুদ্ধিজীবিরা" বলতে যদি ধরেন শাহরিয়ার কবীরের কথা মনে ভেসে উঠে তবে আমার মনে হয় তাঁর প্রতি একটা অবিচারে লীগ দলের সাথে এক দড়িতে ফাঁসি দেয়া হয়ে গেল। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে সেকুলার চিন্তাধারার প্রতীক শাহরিয়ার কবীরের বা তাঁর মত যারা ভাবেন, তারা সবচেয়ে বেশি হতাশ ক্ষুব্ধ হবেন। হয়ত পরবর্তীতে আমরা প্রকাশ্যে সে হতাশা ক্ষোভের কথা আমাদের জানাতে দেখব।
মানিক বা এখানকার অনেক পাঠক যারা এই খবর শুনে কষ্ট পেয়েছেন জানাচ্ছেন এদের সবার চাওয়া শাহরিয়ার এখনও প্রতিনিধিত্ত্ব করেন, অতীতে করেছেন। অন্তত টকশোতে আপনাদের সেক্যুলারিজম ধারণাকে প্রতিনিধিত্ত্ব করে শাহরিয়ার কথা বলেছেন, আমরা দেখেছি। আওয়ামী লীগ যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তিনি হয়ত জানতে পেয়ে আগেই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অবস্থানের বিরুদ্ধে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শাহরিয়ারের সেক্যুলারিজম ধারণা চিন্তা আমার ঠিক মনে না হলেও সত্যতার খাতিরে আমার কাছে এটা মানিকের অবিচার, এক দড়িতে ফাঁসি দেয়া বলে ভাবতে হচ্ছে।
লীগের সাথে শাহরিয়ার কবীরদের মত চিন্তার সম্পর্কটা হলো, লীগ এসব "বুদ্ধিজীবীদের" পৃষ্টপোষকতা দিবে, নিজের দলের পক্ষে ব্যবহার করবে, ওদের তৈরি আবহটা কাজে লাগাবে; কিন্তু এটা লীগের অবস্থান সিদ্ধান্ত মনে করবে না। অজুহাত জানিয়ে এখন হয়ত শাহরিয়ারদেরকে বলবে, “সরকার চালাতে গেলে এত চরমপন্থা হলে চলে না” এজাতীয় কিছু একটা ভাষ্য।
তবে এর পাশাপাশি “প্রধানমন্ত্রী ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে সরকার মতবিনিময় করবে বলেও মন্ত্রীদের জানিয়েছেন” – পত্রিকার এই খবরটা খুবই তাৎপর্যপুর্ণ মনে হয় আমার কাছে। এর মানে কী জামাতের সাথেও আওয়ামী লীগের কথা হবে? আমরা জানি না। দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এবার সত্যতার কথা ছেড়ে অন্য দিক থেকে মুল পাঠ বিচারে যাব।
মানিকের লেখার "বুদ্ধিজীবীদের" কথা বাদ দিলে "ভন্ড ও ছদ্ম সেক্যুলার" থাকে কেবল মুল দল আওয়ামী লীগ। মানিকের লীগকে ভন্ড বলার দুটো কারণ হতে পারে। এক, আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে সমর্থকদের তাতিয়ে, ব্যবহার করেছে আর এখন, কথা দিয়ে কথা রাখেনি সে জন্য। দুই, সেক্যুলারিজম ধারণাটা নিজেই ভন্ড, বাস্তবায়ন অযোগ্য, অপ্রয়োজনীয়, ধর্ম বিদ্বেষী এক অলীক ধারণা সে জন্য; সেটাই মন্ত্রীসভায় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রকারান্তরে প্রমাণ ও প্রকাশিত হলো।
মানিক সম্ভবত প্রথম কারণটাকে মিন করে ভন্ড বলছেন। আমি দ্বিতীয়টা। এই অর্থে সেক্যুলারিজম ধারণাকে প্রতিনিধিত্ত্বকারী শাহরিয়ার কবীর মত চিন্তাকে আমি বাস্তবায়ন অযোগ্য অবাস্তব, ধর্ম বিদ্বেষী বলে বিপদজনক ভাবনা মনে করি।
একটু সময় হাতে নিয়ে সাহস করে একান্তে দুদন্ড যদি নিজের সাথে নিজে আমরা ভাবতে বসতে পারি তাহলে টের পাব এই ভাবনাটাও নিজেই একটা সাম্প্রদায়িক ভাবনা। আমাদের অনেকের ধারণা ধর্মের নামে বিভেদ ভেদবুদ্ধি টানলেই কেবল সেটাকে সাম্প্রদায়িক বলে। ধারণাটা ঠিক না; একটা দিক মাত্র। কারণ সাম্প্রদায়িকতা ধর্মের নামে না হয়ে, বসনিয়ার অথবা রুয়ান্ডার মত জাত জাতীয়তা হতে পারে, গায়ের রঙ হতে পারে, শ্রমিক এলাকায় মানুষের দেশভুগোলে নোয়াখাইল্যা-কুমিল্লা ধরণের খাড়া করা বিভেদ হতে পারে - এক কথায় মানুষকে বিভেদমুলক যতধরণের চিহ্ন পরিচয় খাড়া করে ভাগ করা যায় তার যেকোন একটা বেছে নিয়ে যখন পরস্পর পরস্পরকে খতম, মেরে কেটে সাফ করা ছাড়া বিরোধের আর কোন সমাধান নাই মনে করে ঝাপিয়ে পড়া হয় এর সবধরণের রূপই সাম্প্রদায়িক চিন্তা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ইংরাজীতে এর ভাল একটা প্রতিশব্দ চালু হয়েছে ক্লিনজিং; মেরে কেটে বিনাশ সাফা পরিস্কার করা। জামাতের ১৯৭১ সালের অপরাধের বিচার দেখতে চাই। দেখা দরকারও বটে। কিন্তু মুখে বিচার বলছি বটে কোর্টকাচারী ধরণের কিছু একটা, কিন্তু আসলে কী তা চাচ্ছি? নিজেই নিজের মনের ভিতর ঝাক মারতে পারলে হয়ত দেখব আমাদের অনেকের মনই একটা ক্লিনজিং দেখতে চাচ্ছে। জামাত ক্লিনজিং। রাস্তায় পিটিয়ে মেরে সাফ করা। তার মানে কী নিজের অজান্তে আমরা একেক জন সাম্প্রদায়িক চিন্তা রাজনীতির বাহক? সমাজ থেকে জামাতের বিনাশ লোপ পাওয়া মানে কী, একটা ক্লিনজিং চাইছি? হাতে ক্লিনজিং এর রক্তের দাগ?
আমার মনে হয় ঘটনা ঘটিয়ে পরে কয়েক প্রজন্ম ধরে পস্তানোর আগে আমাদের সাহস করে নিজের সাথে নিজের এবিষয়ে মোকাবিলা করা জরুরী। আওয়ামী মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্তে কেউ হতাশবোধ করেন বা না করেন অসুবিধা নাই, কিন্তু এটা খুবই গুরুত্ত্বপুর্ণ।
২। রাষ্ট্র ও সেকুলারিজম[/sb
সেকুলারিজম থেকে একটু সরে চলে গেছিলাম বোধহয়। ফিরছি আবার।
১৯৭২ সালের আমাদের সেকুলারিজমের ভাবনা তাগিদ বাস্তবতা, এমন কী আশির দশকের সেকুলারিজমের ভাবনার সাথে ২০০১ সালে ৯/১১ এর পরে ওয়ার অন টেরর এর আমেরিকান সেকুলারিজম বা বুশের সেকুলারিজমকে এক কথা ভাবা, মিলিয়ে ফেলা বিপদজনক। কারণ, আমেরিকান সেকুলারিজম - অদ্ভুত ভাবে সেটা সেকুলারিজমের নামে এক ধর্মযুদ্ধ, ক্রুসেডের লড়াই। ক্রুসেড লড়েও যদি নিজের সাম্রাজ্য, সভ্যতা আর ওর বড়াই রক্ষা করা যায় তবে তাই সই। আমাদের পুরানো ১৯৭২ বা আশির দশকের সেকুলারিজম অন্তত আর যাই হোক কোন ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ, ক্রুসেডের লড়াই লড়েও কোন সাম্রাজ্য, সভ্যতা রক্ষার লড়াই ছিল না। এই প্রসঙ্গে আমার এই পোষ্টটা Click This Link পাঠক দেখেছেন কী না জানি না। ওখানে ১৪ নম্বর মন্তব্য থেকে একটা আলোচনা আছে দেখতে পারেন।
১৯৪৭ সালের দাঙ্গার চিহ্ন এতদিন পার হলেও আমাদের নতুন প্রজন্ম চাইলেও এর বাইরে থাকতে পারছে না। আমরা সব পারের সবাই নানা ভাবে এইসব দাগ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বয়ে বেরাচ্ছি। দেশ ভাগাভাগির পর এই অঞ্চলের কমিউনিষ্ট পার্টি এঘটনাকে মুল্যায়ন করে যে, সমাজে ধর্মের বিভেদে আছে এটাই এই নৃশংস দাঙ্গার মুল কারণ। ফলে সমাধান হলো, এমন এক সমাজের কথা ভাবা কল্পনা করা যেটা ধর্মবিহীন। ব্যাক্তিগত জীবনাচারে সেটা শুরু করতে হবে, যথেষ্ট না পারলে অন্তত ইউরোপের মত নকলে রাষ্ট্র থেকে ধর্ম দূরে রাখতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক চিহ্ন বিহীন মানুষ কী সম্ভব? আর সব বাদ দিলাম আমরা দৈনন্দিন যেসব শব্দ ব্যবহার করে কথা বলি সেগুলো থেকে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক চিহ্ন বিহীন বেছে বাদ দিয়ে কথা বলব – এটা কী সম্ভব? আর এর চেয়ে বড় কথা কোনটা ধর্মীয় সাংস্কৃতিক চিহ্ন তা নির্ধারণের উপায় কী? সে প্রশ্ন আছে। এছাড়া গুরুতর প্রশ্ন ধর্ম কী? কেবলই জীবানাচার নাকি তা চিন্তাও বটে? ফলাফলে ধর্মবিহীন সমাজ এক অলীক কল্পনা হয়ে থেকে গেছে।
তবু কমিউনিষ্ট পার্টির এই ভাবনা প্রগতিশীল বলে জায়গা করে নিতে পেরেছিল। এখন ভাটির সময় হলেও অনেকে এটা এখনও বহন করেন; বিশেষত আমেরিকাসহ সারা পশ্চিমের ধর্মযুদ্ধের আমলের প্রভাবে মলিন সে চিন্তায় আবার শান পড়ছে। এখন ঘটবা হলো, ঐ ধর্মবিহীন এক কাল্পনিক সমাজের কথা ভাবা শুধু নিজগুণে অলীক তাই নয়, কমিউনিষ্ট পার্টির দেশভাগ, দাঙ্গা বিষয়ে ঐ মুল্যায়নটাও ছিল ভিত্তিহীন। সমাজে ধর্ম ছিল বলে ধর্মের কারণে দেশভাগ বা দাঙ্গা হয় নাই। বৃটিশ-ভারত থেকে নিজেদেরকে নতুন রাষ্ট্রে আমাদের রূপান্তরের সময় সেই আসন্ন রাষ্ট্রে জনগোষ্টির সব অংশের স্বার্থ প্রতিনিধিত্ত্ব নিশ্চিত করে এমন একটা চিন্তায় আমরা নিজেদেরকে পুনর্গঠিত হয়ে এক রাষ্ট্রে হাজির হতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। [জনগোষ্ঠিকে নতুন ভাবনায় রিকনষ্ট্রাকশনে সংগঠিত পুনর্গঠন করা আর নতুন রাষ্ট্র কনষ্টিটিঊট করা একই কথা দুই দিক থেকে বলা ] ফলাফলে বিরোধী দুটো স্বার্থ আকারে তা হাজির হয়েছিল। এখন এই বিরোধ বাইরে কী ডাকনাম বা নিক নামে নিয়ে হাজির হবে? মানুষে মানুষের বিভেদমুলক যে কোন চিহ্ন পরিচয় তা হতে পারে; ধর্ম সেখানে একটা চিহ্ন পরিচয় মাত্র। আমাদের ক্ষেত্রে সে অমীমাংসিত স্বার্থ বিরোধ ঘটনাক্রমে তা "ধর্ম" এই ডাকনামে হাজির হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে জনগোষ্ঠি স্বার্থগত বিরোধ মানেই আসলে তা ধর্মের বিরোধ রূপে হাজির হবেই একথা সত্য নয়, একথার ভিত্তি নাই। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর পুরানো রাষ্ট্রে চেপে রাখা অমীমাংসিত স্বার্থ বিরোধ, প্রতিনিধিত্ত্বের বিরোধ জাতিগত একেক জাতের ডাকনামে নিজেকে বাইরে হাজির করেছে, ধর্মের ডাকনামে নয়। ভারতের আসাম পাঞ্জাবের বিরোধ, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বিরোধ ধর্মের বিরোধ নামে প্রকাশিত হয়নি, হয়ে নাই। বিরোধের গোড়া আর বিরোধের ডাকনাম, অর্থাৎ কী নামে তা হাজির হবে দুটো এক জিনিষ নয়। এই গোলমালে পড়া যাবে না। চিন্তায় এই গোলমাল করেছি বলে ধর্মকে রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক সমস্যা মনে হচ্ছে।
কাজেই ধর্মের কারণে দেশভাগ হয়েছে এইকথা সত্যি নয়, ভিত্তি নাই। এমনকি আমরা যখন বলতে শুনি, “ওখানে ঐ দেশে জাতিগত বিরোধ দাঙ্গা চলছে” – একথাটাও আপাত চোখে দেখা ভুল।
জনগোষ্ঠির মধ্যে জাত ভিন্নতা আছে। থাকতে পারে; কিন্তু সেটা থাকার জন্যই কোন জাতিগত বিরোধ দাঙ্গা ঘটছে এই দেখাটা ভুল। বরং জনগোষ্ঠির সব অংশের স্বার্থ, প্রতিনিধিত্ত্ব নিশ্চিত করে রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক সিষ্টেম প্রতিষ্ঠান রূপে হাজির হতে পারে নাই বলে, মানুষের বিভেদমুলক কোন না কোন একটা চিহ্ন ধারণ করে, যেমন জাতিগত ভিন্নতাকে বাইরের ডাকনাম হিসাবে গ্রহণ করে ঐ অমীমাংসিত স্বার্থ বিরোধ, প্রতিনিধিত্ত্বের বিরোধ ওখানে বাইরে হাজির হয়েছে। ফলে যেটাকে জাতিগত বিরোধ নামে আপাতভাবে মনে হচ্ছে ওটা জাতিগত নামে না হাজির হয়ে, ১৯৪৭ সালে আমাদের বেলায় যেমন ধর্মীয়, সাঊথ আফ্রিকার বেলায় যেমন গায়ের রং, বসনীয়া রুয়ান্ডার মত দেশের বেলায় জাতিগত ইত্যাদি যে কোন ডাকনাম গ্রহণ করে হাজির হতে পারত।
এবার ঊপরের এই কথাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা ধরিয়ে দেই।
সমাজে ধর্ম আছে বলে সমাজে আমরা দাঙ্গা দেখেছি, আগামিতেও দেখব কাজেকাজেই রাষ্ট্রকে সযত্নে ধর্ম থেকে দূরে রাখতে হবে – উপরে আমরা দেখলাম একথার ভিত্তি নাই। ধরা যাক কোন সমাজে কোন ধর্ম নাই; তাহলেও ঐ সমাজ রাষ্ট্রে অমীমাংসিত স্বার্থ বিরোধ, প্রতিনিধিত্ত্বের বিরোধ থাকলে পরে তা জাতিগত বা অন্য কোন বিভেদমুলক চিহ্ন পরিচয়কে আকড়ে ধরে হাজির হবেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তা প্রকাশিত হবার সম্ভাবনা ওর থেকেই যাবে। কাজেই সেকুলারিজম রাষ্ট্রের গায়ে থাকতে হবে তা নিশ্চিত করলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটার সম্ভাবনা কারণ নষ্ট হচ্ছে না। আপতিকভাবে চোখে দেখা বসনিয়া রুয়ান্ডার জাতিগত দাঙ্গা, ভারতের আসাম পাঞ্জাবের বিরোধ, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বিরোধ সাঊথ আফ্রিকার গায়ের রং এর বিরোধ, ইত্যাদি ঐ দেশগুলোর রাষ্ট্রকে “সেকুলার রাষ্ট্র” বানিয়ে ফেলে কোন সমাধান পাওয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখতে পাওয়া এড়ানো অসম্ভব। আমাদের পাহাড়ি সমতলী বিরোধে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একেবারে আদর্শ সেকুলার বানিয়ে ফেললেও কোন সমাধান হবে না। দাঙ্গা অনিবার্য। যতক্ষণ না রাষ্ট্র অমীমাংসিত স্বার্থ বিরোধ, প্রতিনিধিত্ত্বের বিরোধ মিটাতে পুনর্গঠিত নতুন রাষ্ট্র না হয়ে উঠতে পারে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে মুল সমস্যাটা ধর্মের সাথে রাষ্ট্রের নয়, জনগোষ্ঠির সব অংশের স্বার্থ প্রতিনিধিত্ত্ব নিশ্চিত না করে দাঁড়িয়ে থাকা রাষ্ট্রের। আর এদিকে এটা যদি ফেলে জিইয়ে রাখি তবে এটা গোদের উপর বিষ ফোড়া হলো ঐ সমস্যার উপর বাইরের প্রভাব। যেমন আমেরিকার ক্রসেড লড়াইয়ে আমাদেরকে সামিল করে নিতে, ওদের নিজের তৈরি সমস্যা আমাদের কাঁধে ফেলতে আমেরিকান সেকুলারিজমের বয়ান আওয়াজ তুলে আমাদের উস্কানি দিচ্ছে। এতে আমাদের পুরানো অমীমাংসিত সমস্যাগুলো তাল মিলিয়ে যা আগে মারমুখী ছিল না সেগুলো জেগে উঠতে চাইছে। এতে সেকুলার আর ইসলামী বলে শার্প দুভাগে জনগোষ্ঠির ভাগ হয়ে উঠা মারাত্মক বিপদজনক হবে। যার মানে ১। দাঙ্গা ক্লিনজিং এর ভাবনা সম্ভাবনা কাধে নিয়া আমরা ঘুরছি। ২, নিজেদের সমষ্টিগত গণস্বার্থ এর ভিত্তিতে এক্কাট্টা দাড়াতে না পারার কারণে বিভক্তিতে বিদেশী স্বার্থের গোলামী রাস্তা মুখ্য হয়ে উঠছে।
সেকুলারিজম না হলে আমাদের চলবে না এভাবে ভাববার আগে আমাদেরকে এদিকগুলো নিয়ে গভীরে ভাবতে হবে। আমরা অনেকে যারা ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তা পছন্দ করি না তাদেরকে এই চিন্তাকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে নিজের চিন্তার মুরোদ অর্জন ও সক্ষমতা দেখাতে হবে। শুধু গায়ের জোরে এটা পরাস্ত হবে না। পরাস্ত করার সেটা পথও না।
আমরা যদি অন্তত আমেরিকান সেকুলারিজম বাইরের এই প্রভাব থেকে এই মুহুর্তে নিজেদের দূরে রাখতে পারি তবে শ্বাস নেবার কিছু সময় মিলতে পারে। আমাদের পুরানো চিন্তার সমস্যা, রাষ্ট্রে জনগোষ্টির সব অংশের স্বার্থ, প্রতিনিধিত্ত্ব নিশ্চিত করে এমন এক পুনর্গঠিত রাষ্ট্র করে নিতে সময় পাব। নইলে কী হতে পারে তা ভাবতে পারি না।
১. ২০ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:০২ ০