বিডিআর-বিএসএফের চিফ, মহাপরিচালক বা ডিজি পর্যায়ে ছয়দিন ব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন ঢাকার পিলখানায় শেষ হয়েছে গতপরশু ২৭ সেপ্টেম্বর। শেষ দিনে উভয় প্রধানের এক যৌথ প্রেস বিফ্রিং এ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁরা।
বিডিআরের দিক থেকে আলোচনার মুখ্য ইস্যু ছিল বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা বা আহত করা, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম, বাংলাদেশের জমিতে জোরপূর্বক চাষাবাদের চেষ্টা, অবৈধভাবে গ্রেপ্তার-অপহরণ ও সীমান্তে মাদক বিশেষত ফেন্সিডিল চোরাচালান বন্ধ করা।
আর বিএসএফের এজেন্ডা ছিল সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিডিআর-বিএসএফের “যৌথ টহল” – এর স্বপক্ষে বাংলাদেশকে একমত হতে বাধ্য করে "যৌথসম্মত বিবরণী’তে সই করিয়ে নেয়া। অর্থাৎ যে কাজটা ভারতীয়রা তাদের পছন্দের আগের বিডিআর প্রধানের আমলেই আনঅফিসিয়ালী বিচ্ছিন্নভাবে শুরু করে দিয়েছিল সেটার পক্ষে সিল মোহর যোগাড় করা। যথারীতি তাই ঘটেছে। প্রথম আলো জানাচ্ছে, “সীমান্তে হত্যা এবং সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে সমন্বিত টহল জোরদার করতে তাঁরা সম্মত হয়েছেন। বৈঠক শেষে দুই পক্ষ ‘যৌথসম্মত বিবরণী’তে সই করে।
বাংলাদেশের মিডিয়ায় বলা এজেন্ডাগুলোতে যা আছে এর ঠিক উলটা ভারতের অবস্থানের পক্ষ নিয়ে তাতে একমত জানিয়ে ‘যৌথসম্মত বিবরণী’তে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এতে এখন থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতের পাখির মত বাংলাদেশী নাগরিক মারা বন্ধ করার দাবী তুলে সুরাহার চেষ্টা দূরে থাক “যৌথ টহল” এর কারণে সে পথ শুধু বন্ধ করাই হলো না, ভারতের মানুষ মারার অপরাধের দায়ভার উলটা বাংলাদেশেরও ঘাড়ে চড়িয়ে দিয়ে গেল বিএসএফ প্রতিনিধি দল।
এই সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফের প্রতিনিধিত্ত্ব করছিলেন ডিজি রমন শ্রীবাস্তব আর বাংলাদেশের বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলাম। প্রেস ব্রিফিংয়ে আত্মবিশ্বাসী রমন শ্রীবাস্তব নিজের কুটনৈতিক বিজয়ের খুশি ধরে রাখতে পারছিলেন না। তিনি সাহস করে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্য ভাষা শিখানোর এক প্রোগ্রাম খুলে বসেন।
বিগত প্রায় চার বছর ধরে সীমান্তে নির্বিচারে সরাসরি হত্যা, মাঠে কাজেরতদের উপর দুর থেকে গুলি, অপহরণ, ধরে নিয়ে গিয়ে ইলেক্ট্রিক টর্চার, আট-নয় বছরের বাচ্চাদের ধরে যাওয়া, সিলেটে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় খাসিয়াদের দিয়ে জোরপূর্বক চাষাবাদের চেষ্টার নামে বহু আগেই নিস্পত্তি হওয়া “গুরুত্ত্বপুর্ণ” ভুমি দখলের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে মিডিয়াকে সরব থাকতে দেখা গেছে। অসহায় মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয় হিসাবে আলোচনার ইস্যুতে যেসব পয়েন্ট তুলেছেন তাতে মিডিয়ায় প্রকাশিত জনগণের, বিশেষত সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ্গুলোকেই অন্তত স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এটা রফিকুল ইসলাম এর দিক থেকে নিজের প্রতিষ্ঠান বিডিআরকে এককাট্টা ধরে রাখার স্বার্থ এবং বিডিআরকে জনগণের চোখে সম্মানজনক অবস্থানে রাখার এক অক্ষম প্রচেষ্টা। তিনি ভাল করেই জানেন তিনি কতটা অসহায়, কারণ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষে নাই, জনগণের উদ্বেগগুলোর পক্ষে হাসিনা সরকারের সমর্থন নাই, ফলে বিডিআর সে তো অনেক দুরের ব্যাপার। সিলেটে সীমানার ভিতরে প্রবেশ করে বিএসএফের পাহারায় যখন তথাকথিত জমিচাষ চলছিল তখন অসহায় মাঠের জওয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছিল তাঁরা জনগণের জানমাল রক্ষায় কিছু করতে পারছে না, ঢাকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে কেবল। গতকালকে ঢাকার সিদ্ধান্ত হলো, জবরদখলকারীর সাথেই মিলেই নাকি এখন থেকে "মিলিতভাবে" তথাকথিত সীমান্ত-পাহারা দিতে হবে। এতদিন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যর পর সে লাশটা অন্তত ফেরত দিতে পতাকা বৈঠকে বিএসএফের গরিমশি, পাত্তা না দেওয়া দেখেছে বিডিআর। এখন ঐ ধরণের হত্যার ঘটনার দায়ভার নিশ্চয় "যৌথ টহ্ল" এর হবে। ফলে নিজের নাগরিক হত্যার দায়ভারের ভাগীদার কী বিডিআরের জওয়ান বা কমান্ডার নিবে নাকি এমন কিছুই ঘটেনি বলে বেমালুম অস্বীকার করবে?
এর মানে ভারতের নির্বিচারে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করার জন্য যে আইনী, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এর দায়ভার এখন থেকে বিডিআরকেও ভাগীদার হতে হবে। শুধু তাই না, কোন আদালতে এনিয়ে মামলা হলে বিডিআর প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ওর জওয়ান বা কমান্ডাররাও ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন। এসবের নিট ফলাফলে আমরা সম্ভবত দেখব কোন সীমান্ত হত্যায় বিডিআরও নিজেকে মুক্ত রাখতে এক "যৌথ টহ্ল" এর বিবৃতি - বলা হবে কোন হত্যার ঘটনাই ঘটে নাই। আর ওদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে বিএসএফ। এটাই ছিল এই সফরে ভারতীয় কুটনীতির উদ্দেশ্য। অথাকথিত সীমান্ত সম্মেলনের নাম ভারতকে সেই উদ্দেশ্য হাসিলের ব্যবস্থা করে দিল মন্ত্রী সাহারা ও হাসিনার সরকার। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে অসহায়ত্ত্বের কথা বলছিলাম তা মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলামের নয়, খোদ সরকারের; হাসিনার নেতৃত্ত্বে রাষ্ট্রের যে রাজনৈতিক ক্ষমতা তৈরি হয়ে আছে তার। পাঠক এখানে স্মরণ করে দেখতে পারেন, , ভারত যে দৃষ্টিতে নিজের স্বার্থ দেখে তা হাসিলে বাংলাদেশে কী ধরণের একটা শিখন্ডি সরকার সহায়ক হবে, সে ধরণের এক সরকার কায়েমের তাবত বন্দোবস্ত কায়েম করে দিয়ে ১/১১ এর সরকার নিজের দুস্কর্ম শেষ করেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে হাতমোচরানী দিয়ে বাংলাদেশপচ্ছন্দসই এক রাষ্ট্র-সরকার কায়েমের এমন ক্ষমতা ভারত শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরেও পায়নি। কারণ, বড় মামু আমেরিকার ক্ষমতাকে যাতা দেবার কাঠি হিসাবে অন্য রাষ্ট্রের উপর অবাধ ব্যবহারের সুযোগ ভারত এর আগে কখনও পায়নি। এমনকি অন্য রাষ্ট্রের সরকার কেমন হবে তা হাত মোচর দিয়ে কায়েম নির্ধারণের ক্ষমতা, ওর স্বাদ কেমন তা নিয়ে ভারত অভিজ্ঞতা এই প্রথম; এতদিন যা আমেরিকার একচেটিয়া বলে দুনিয়া শুনেছিল, ভারতও এতদিন যা দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছিল।
সার কথায়, যেমন ক্ষমতার সরকার তেমনই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এক মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলামকে দেখছি আমরা। কিন্তু এত গেল ক্ষমতার কারবারিদের হিসাবের কথা। শেষ বিচারে জনগণের চোখে মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলাম ও বিডিআরের ইজ্জত সম্মান কেমন হবে? নিজের সামরিক কেরিয়ার, প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিডিআর এর ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিশ্চয় আমরা আগামীতে দেখব।
এই প্রদত্ত পরস্থিতিতে বিপরীতে রমন শ্রীবাস্তব কে আমরা বিজয়ী দেখব স্বভাবতই। তবে ঊনার কৃতিত্ত্ব অতটুকুই যে সই করা ‘যৌথসম্মত বিবরণী’ টা দিল্লীতে তিনিই বয়ে নিয়ে যাবেন। বাকি যা কিছু তা তো পুর্বনির্ধারিত, রমনের ব্যাক্তিগত কৃতিত্ত্ব দাবী করার কিছু নাই, উনি নিজেও জানেন। কিন্তু ঐ স্বাক্ষরকৃত কাগুজে দলিল দেখে অতি আত্মবিশ্বাসী রমন শ্রীবাস্তব নিজেকে সামলাতে পারেননি। যে কথা তুলেছিলাম, রমন শ্রীবাস্তব এর সাংবাদিকদের জন্য ভাষা শিখানোর প্রোগ্রাম; তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেছেন, সীমান্তে ভারতের নির্বিচার গুলি ছুড়া নিয়ে রিপোর্ট লেখার সময় এখন থেকে যেন ভারতের বিএসএফের “হত্যা” ('killing') বলা না হয়। বলতে হবে ভারতের বিএসএফের হাতে মৃত্যু (death) হয়েছে। আগ্রহী পাঠকেরা দেখতে পারেন ডেইলি ষ্টার জানিয়েছে, He urged journalists in Bangladesh to use the word 'death' instead 'killing' while reporting incidents of shooting in the bordering areas - শ্রীবাস্তব এর এই বয়ান। এই শঠতায় ভরা বাকচাতুরি থেকেই তিনি সদর্পে ঘোষণা করলেন, বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে না। শঠতার এই চমক দেখে বাংলাদেশের প্রায় সব মিডিয়া, বাংলাভাষায় পরিচালিত জর্মান ওয়েব মিডিয়া ‘ডয়েচে ভেলে’ সহ সবার কাছেই রিপোর্টের শিরোনাম হিসাবে পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর এটাকেই বেছে নেয়া হয়েছে। ব্যতিক্রম প্রথম আলো; উলটা বাংলাদেশকে অভিযুক্ত করে প্রথম আলোর শিরোনাম হলো, “সীমান্তে রাতে কারফিউ দিতে চায় না বাংলাদেশ”। ঠিক ভারতের প্রস্তাবটাই, যেন কলকাতার কোন দৈনিক দেখছি আমরা।
রমন শ্রীবাস্তব এখানেই থামেন নি। তিনি এতই সাহসী হয়ে উঠেছেন যে, বাংলাদেশিদের গুলি করে মারার ন্যায্য, ঠিক কাজ – বাংলাদেশে বসে তিনি এটাই আমাদেরকে বলে গেলেন।
তিনি দাবী করে বলেছেন, যাদেরকে সীমান্তে ভারত গুলি করে মারে "ওরা চোরাকারবারি, অবৈধ প্রবেশকারী। তাঁরা অপরাধী" ৷
ধরে নেয়া যাক, ওরা সবাই অপরাধী। কিন্তু কোন অপরাধীকে গুলি করে মারার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক আইন বিধি বিধান, বাংলাদেশের কনষ্টিটিউশন এমনকি ভারতের কনষ্টিটিউশন – কোথাও রমন শ্রীবাস্তবকে হত্যার অনুমোদন দেয়নি। বরং এই ধরণের অপরাধকে ক্রিমিনাল অপরাধ হিসাবে গণ্য করে। ফলে সেই বিচারে রমন শ্রীবাস্তব নিজেই একজন ক্রিমিন্যাল, শ্রীবাস্তবের নিজের ভাষায় 'criminals,' । একজন 'criminal,' সদর্পে নিজের স্বপক্ষে মিথ্যা সাফাই দিয়ে গেলেও আমরা উনার মুখের উপর কাউকে বলতে দেখতে পেলাম না যে “আপনি নিজেই একজন স্বঘোষিত 'criminal'।
মজার ব্যাপার হলো, আমাদের RAB এর মত রমন শ্রীবাস্তব ওদের জঙ্গি বলে দাবী করেন নি। উনি নিজেই বলেছেন এরা চোরাকারবারি 'criminals,' । অর্থাৎ কোন ধরণের রাজনৈতিক অপরাধী নয়। তবে ওরা কী সশস্ত্র হয়ে চোরাকারবারিতে লিপ্ত? এমন কোন অভিযোগের রমন শ্রীবাস্তব করেন নি; করতে পারলে তিনি নিশ্চয়ই তা ছাড়তেন না আমরা অনুমান করতে পারি। ভারতের মিডিয়া বা প্রথম আওলোও আজ পর্যন্ত কখনও এমন রিপোর্ট লিখে নি। তাহলে রমন শ্রীবাস্তব একজন কথিত চোরাকারবারির উপর ‘অতিরিক্ত বা মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগকারী, আইনের ভাষায় যাকে excessive, imbalance overpower বলা হয়; যা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ, ক্রাইম। রমন শ্রীবাস্তব এই বিচারেও নিজেই একজন স্বঘোষিত ক্রিমিনাল।
আচ্ছা ওরা যে চোরাকারবারী তা কীভাবে রমন শ্রীবাস্তব দাবি করছেন, এর ভিত্তি কী? কারণ, রমন শ্রীবাস্তবের বিএসএফ তো কোন কিছু প্রমাণের আগেই নির্বিচারে গুলি করে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করছেন। কিন্তু মারা গেলেই সব শেষ হয় না। এর পরেও ভারতেরই আইনী ব্যবস্থায় মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে কোন আইনী তদন্ত করে দেখা হয় নাই, ফলে প্রমাণের কোন তোয়াক্কা নাই। তাহলে কীসের ভিত্তিতে স্বঘোষিত ক্রিমিনাল রমন শ্রীবাস্তব দাবী করছেন মৃত বাংলাদেশি একজন চোরাচালানি বা ক্রিমিনাল ছিল?
সোজাসাপ্টা বললে, এটা রমন শ্রীবাস্তব, একজন ঠান্ডা মাথার খুনীর হোটেলের শীতল করিডরে দাঁড়িয়ে খুনের পক্ষে সাফাই।
বাস্তবে, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া রিপোর্টগুলো দেখলে আমরা পাই, দিনাজপুরে ৮-৯ বছরের পাঁচ বাচ্চাকে অপহরণ করে নেয়া হয়েছে; পতাকা বৈঠকেও তাদের ফেরত আনতে পারেনি বিডিআর। জামাই শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে পথঘাট ভুলে বিএসএফের শিকার হয়েছে। মাঠে কাজ করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছে এরপর হাতের তালুতে ইলেকট্রিক শকের ফ্যাকাসে দাগ নিয়ে মৃত লাশ হয়ে পতাকা বৈঠকে হস্তান্তর হয়েছে। মাছ ধরতে গিয়ে বিএসএফের স্পিড বোট ধাক্কা দিয়ে দিয়ে মাথা চুর্ণ করে দিয়েছে, লাশ পাওয়া গেছে চারপাঁচ দিন পরে। এগুলো ঠান্ডার মাথার ধর্ষকামী খুনীর খুন ছাড়া আর কী? দিনাজপুরের অপহৃত ৮-৯ বছরের পাঁচ বাচ্চারাও কী চোরাচালানী? এই বাচ্চাদেরকে চোরাচালানী বলে দাবী করে গেলেন স্বঘোষিত খুনী রমন শ্রীবাস্তব?
মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলাম অন্তত দাবি করতে পারতেন না যে ঠিক আছে খুনী রমন শ্রীবাস্তবের খুনের অধিকার আছে কী নাই সে বির্তক থাক, আমরা প্রমাণ চাই যে বিএসএফের হত্যাকৃত ব্যাক্তি চোরাচালানী, অপরাধী। এর আগে কোন বাংলাদেশির হত্যার দায়িত্ত্ব থেকে আপনাকে রেহাই দিতে পারব না।
আমার টিভিতে নিউজ দেখা হয় নাই, দৈনিকগুলোতে খবর পড়েছি। ফলে জানা নাই ঐ সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলাম সামরিক উর্দি পোষাকে ছিলেন কিনা। ধরে নিচ্ছি তিনি ছিলেন, কারণ সরকারী অফিসিয়াল অনুষ্ঠান। যে কোন সামরিক পেশাদারের কাছে উর্দি নিজের জীবনের চেয়ে বেশি মুল্যবান। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে, সীমান্তে নিজ দেশের নাগরিককে হত্যা করার স্বপক্ষে খুনির সাফাই শুনতে তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন। তাঁর ঊর্দি কী মৃদু কেঁপে উঠেছিল?
এখানে ধর্ষকামী কথাটা ব্যবহার করেছি সচেতনে। বাংলাদেশে ১৯৮২ সাল থেকে ফেন্সিডিল নামে তথাকথিত কফের ওষুধ বে-আইনী ও ওষুধনীতি-বিরুদ্ধ বলে উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়। সেই থেকে সারা সীমান্ত জুড়ে ভারতে ফেন্সিডিল প্রস্তুতের কারখানা বসা শুরু হয়। বাংলাদেশ হয়ে উঠা ফেন্সিডিল চোরাচালানের বাজার। আমরা নিশ্চয় ভারতের ‘র’ ইত্যাদি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতাকে নজর আন্দাজ করতে পারি না যে তাঁরা জানে না এই কারখানাগুলো কোনটা কোনটা, কারা চালায়, বাংলাদেশে কী পরিমাণ কোন পথে চোরাচালান করে, ভারতের কারা জড়িত ইত্যাদি। তাহলে আমরা কী মনে করতে পারি না যে আসলে ভারতের পররাষ্ট্রের সীমান্ত নীতি আসলেই চোরাচালান বন্ধ করতে চায় না। সিরিয়াস নয়, কারণ চোরাচালানকে ভারত-রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য এখনও হুমকি মনে করা হয় না। সীমান্তে চোরাচালানের কারণে ভারত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, জঙ্গিরা চোরাচালানের অজুহাতে মুম্বাইয়ের মত ঘটনায় রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে – এমন কোন শঙ্কা আছে বলে ভারতের জাদরেল রাষ্ট্রনিরাপত্তা বিশারদরা কোন হুমকি বলে বিশ্বাস করে না। যদি নুন্যতমও করত তবে সবার আগে একটা চোরাচালানী পণ্য বন্ধ করে অন্তত কিছু রিক্স কমানোর ব্যাপারে আমরা উদ্যোগী ভারতকে দেখতাম। সবচেয়ে বড় কথা এটা বন্ধ করা ‘র’ ইত্যাদি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তুড়ি বাজিয়ে করে ফেলার মত কাজ। আগে থেকেই চিহ্নিত কারখানাগুলোতে 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে" বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দেয়াই যথেষ্ট। ভারতের ফেন্সিডিল বাংলাদেশে পাচার এতে চোরাচালানীরই লাভ এথেকে রাষ্ট্রের কোষাগারে কিছু যায় না – এটা একেবারেই পেটি সংকীর্ণ কিছু গোষ্ঠি স্বার্থ এখান থেকে লাভালাভ পায় যার তুলনার ভারত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা স্বার্থের কথা হাজার হাজার গুণ গুরুত্ত্বপুর্ণ – এটা বুঝবার মত ক্ষমতা ‘র’ ইত্যাদি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলো ও ভারতের জাদরেল রাষ্ট্রনিরাপত্তা বিশারদের নাই তা আমরা ধরে নিলে আমরাই বেকুব বলে প্রমাণিত হবে। তাহলে ভারতের কিছু পেটি স্বার্থের জন্য বাংলাদেশকে ফেন্সিডিলে ডুবিয়ে রাখার ভারতের নির্লিপ্ত নীতির ব্যাখ্যা কী? বাংলাদেশের তরুণসমাজের একটা অংশ যদি ভারতে সরকারী নীতির অপ্রত্যক্ষ সহায়তায় ফেন্সিডিলে চুঁড় হয়ে থাকে ভারতের নীতি এর কোন দায় বোধ করে না। সবচেয়ে বড় কথা, ভারত-বাংলাদেশের চোরাচালানকে ভারতের নীতি নির্ধারকেরা এখনও ভারতরাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা হুমকি মনে করে না।
তাহলে চোরাচালানের নামে বিএসএফের ছদ্মভাবে মরিয়া দেখানে একটাই সুবিধা। দেখিয়ে সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যার করা যায়; বাংলাদেশের সীমান্তে নিরন্তর ডিষ্টার্বেন্স তৈরি করে সবসময় একটা চাপের মধ্যে রাখার দায়দায়িত্ত্বহীন এক কৌশল এটা। নোংরামি ঘেটে ফয়দা হাসিল করা।
আমাদের বিডিআর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তিন দিন আগে সৌজন্য সাক্ষাতকার হিসাবে রমন শ্রীবাস্তব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা-টুকুর সাথে দেখা করতে যান। যে নিগোশিয়েট করা ক্ষমতায় সাহারা মন্ত্রী হয়ে বসে আছেন এর ওজন কত হাল্কা তিনি জানেন। কিন্তু সস্তায় বাজিমাত করে জনগণ ভজানোর লোভ তিনি সামালাতে পারেন নি। ভেবেছিলেন কেঊ সেসব বুঝবে না। তিনি আহ্লাদ করে রমন শ্রীবাস্তবকে আবদার করে বলেছিলেন, “সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধ করতে হবে”। পরেরদিনের মিডিয়ায় ফলাও করে সে কথা স্বরাষ্ট্র সচিবের বরাতে প্রচারিত হয়, ব্যাপক প্রচার পায়। রমন শ্রীবাস্তব যাবার দিনে সন্ধ্যায় সারা বাংলাদেশকে অপমান করে এর প্রতিশোধ নিয়েছেন।
ঘরের মধ্যে প্রেমিকের ভালবাসা দেখানো আর পাবলিকলি তা অস্বীকার করে উলটা রুস্তমী ভাব দেখানো, রমন শ্রীবাস্তবকে বিপদে ফেলার পাল্টা ঝাপ্টা ব্যক্তি সাহারাকে যেমনি লাগুক সারা বাংলাদেশের সামনে সীমান্তে বাংলাদেশীদের খুন করা যে ন্যায্য, সদর্পে তাই তিনি সাহারার ঐ একই মিডিয়ার সামনেই সবাইকে লা-জবাব করে দিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত সরকার, মন্ত্রী, সচিব, মেজর জেলারেল এম রফিকুল ইসলাম সবাইকে সেকথা হজম করে বোবা হয়ে আছেন।
বিএসএফের সাথে “যৌথ টহল” এর সম্মতিতে স্বাক্ষর করার পর "সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধ করতে হবে" – এসব টাল্টিফাল্টি ফুটা করে দেয়া ছাড়া রমন শ্রীবাস্তব এর আর কী বা করার ছিল!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৫