১৪ই মার্চ, শুক্রবার, ১৮৭৯ সালে সকাল সাড়ে এগারটায় জার্মানীর উলমে জন্ম নিল একটি ছেলে বাচ্চা। সুস্থ, স্বাভাবিক, সব কিছুই ঠিক ঠাক। মায়ের অতি আদরের ছেলেটি আস্তে আস্তে অন্যান্য সব বাচ্চাদের মতই বেড়ে উঠতে লাগল। বাচ্চাটির বয়স যখন দেড় কি দু’ বছর তখন সবাই আস্তে আস্তে খেয়াল করল অন্যান্য সব বাচ্চারা যখন এ বয়সে কট্ কট্ শব্দে বিভিন্ন অদ্ভুৎ উচ্চারণে সমস্ত বাড়ি ব্যতিব্যস্ত করে রাখে তখন এ ছেলে কিনা একেবারেই চুপ! সারাক্ষণ চুপচাপ ব্যস্ত নিজের খেলনাগুলো নিয়ে! আরে বাবা এ কি বোবা হয়ে জন্মালো নাকি?
ছেলেটির বয়স তখন চার হবে, এই সময়ে একদিন সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে। সবার সাথে ছেলেটিও আছে। মা এই প্রথম একটি ভুল করে ফেললেন – স্যুপের বাটিটা সহ্য করার মত ঠান্ডা না করেই ছেলেটির সামনে দিয়ে ফেলেছেন। এতদিনে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত যে, ছেলেটি বোধ হয় কোনদিন কথা বলতে পারবে না। এদিকে যে ঘটনাটি ঘটল তা হচ্ছে - স্যুপের বাটিটিতে হাত দেয়া মাত্রই সবাইকে অবাক করে দিয়ে একেবারে নির্ভুল উচ্চারণে ছেলেটি বলে উঠল, “ স্যুপটা অনেক গরম”।
সবার এবার খাদ্য খাওয়া বাদ দিয়ে ভিড়মি খাওয়ার যোগাড়, “আরে! তুমি তো বাপু দিব্যি কথা বলতে পার, তাহলে এতদিন বলনি কেন?”
“বা রে, কেন বলব? এতদিন তো সব কিছু ঠিকঠাক মতই ছিল!”- এক্কেবারে যুক্তিযুক্ত উত্তর ছেলেটির। আর হবেই না বা কেন? এ কি আর সাধারণ ছেলে? এরকম ছেলে কি ঘরে ঘরে জন্মায়?
এ-আলবার্ট আইনস্টাইন! বিশ্বের সর্ব কালের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম, থিওরি অফ রিলেটিভিটির জনক!
আপনারা জানেন? তিনি এত বড় বিজ্ঞানী কিন্তু তার কোন গাড়ি ছিল না! এমন কি কোনদিন গাড়ি চালানোও শিখেন নি! কোথাও যেতে হলে তিনি হেটে অথবা সাইকেলে চড়ে যেতেন। খুব দরকার হলে তিনি বন্ধুদের বা আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে গাড়ি ধার নিয়ে ব্যবহার করতেন, তাও ড্রাইভার সহ।
আসলে গাড়ি তার মোটেই পছন্দ ছিল না, তার পছন্দ ছিল বোট। তিনি বোট কিনেছিলেন এবং মাঝে মাঝেই বোটে চড়ে ঘুরতে বেরুতেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা ছিল, তিনি সাঁতার জানতেন না, তার উপর কোন সময়েই লাইফ জ্যাকেটও পড়তেন না। তার বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর সময়টা তার পরিবারের কাছে ছিল রীতিমত আতংকের সময়।
তিনি হেঁটে বেড়াতেও পছন্দ করতেন, হাঁটতে হাঁটতে তিনি ঘাস ফড়িং খুঁজতেন। ভাগ্যক্রমে দুই একটা জুটে গেলে অমনি মুখে পুরে চ্যাবাৎ! অর্থাৎ একেবারে দাত দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতেন!
তিনি ছিলেন খুব শান্তি প্রিয় মানুষ, পাখি দেখতে খুব পছন্দ করতেন। মিউজিক তাকে খুব টানত, মিউজিকের করুণ সুরগুলোতে তিনি অঝোর ধারায় কাঁদতে পারতেন।
অসাধারণ প্রতিভাবান এই বিখ্যাত ব্যাক্তিটি অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতই পাপারাৎজিদের অন্তর থেকে ঘৃণা করতেন। পাপারাৎজিদের তার ছবি তুলতে দেখলেই তিনি জিহ্বা বের করে চেহারাকে কিম্ভুতিকামার করে ফেলতেন।
সোমবার, ১৮ই এপ্রিল, ১৯৫৫ সালে ৭৬ বছর বয়সে আমেরিকার নিউ জার্সির প্রিন্সটনে একটি হসপিটালে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডঃ থমাস এস হার্ভে নামক একজন গবেষক গবেষণা করার জন্য কারও অনুমতি ছাড়াই তাঁর মাথা থেকে মগজ অপসারণ করে ফেলেন।
এত কিছু জানার পর পাঠক কি তাঁর কবর দেখার জন্য কোন আগ্রহ বোধ করছেন? যদি আগ্রহ বোধ করেন তাহলে বলে দেই, তাঁর কোন কবর নেই। আইনস্টাইনের অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ পুড়িয়ে অজানা কোন স্থানে তাঁর দেহ ভস্ম ছিটিয়ে দেয়া হয়, এটা কোথায় তা কেউ জানে না, জানবেও না কোন দিন।
আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)
জার্মানীতে জন্মগ্রহণকারী থিওরিটিকাল ফিজিসিস্ট। থিওরি অফ রিলেটিভিটি’র জনক।
জন্মঃ ১৪ই মার্চ, ১৮৭৯, উলম, জার্মানী
মৃত্যুঃ ১৮ই এপ্রিল, ১৯৫৫, প্রিন্সটন, নিউ জার্সী, ইউনাইটেড স্টেটস্।
চলবে-
এই সিরিজের অন্যান্য পোষ্টগুলিঃ
১। কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১
২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-২
৩।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৩
৪।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৪
৫।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৫
৬।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৬
৭।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৭
৮।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৮
৯।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৯
১০।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১০
১২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১২