৩০৬, সালাম ভবন, একুশেহল।
আধখানা সিগারেটটা বিরক্তিতে জানালার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল মেহেদী। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। 'ধুর শালা ! আজকাল বেনসনও নকল করা শুরু করলো নাকি !, দুই এক টান দিলেই এমন গা গুলিয়ে আসে ক্যান্'।
ভার্সিটিতে প্রথম যখন ভর্তি হয় তখন ছিলো চারটাকা করে এখন চলে ছয়টাকা করে। প্রতিবার বাজেট আসলে এই একটা জিনিষ অর্থমন্ত্রীর রোষের শিকার হবেই। বাজে অভ্যাস বলতে ওই একটাই, সিগারেট খাওয়া, তাও শান্তিতে খাবার উপায় নাই। এক প্যাকেট কিনলে অর্ধেক আবার বন্ধু বান্ধবের ফুসফুসেই চলে যায়। শালারা ফাউল সব ! এক একজন চেইন স্মোকার ! সিগারেট খাওয়া দেখলে মনে হয় মায়ের পেট থেকে বাইর হইয়াই সিগারেটে টান দিছে এক একজন। কিন্তু সিগারেট কেনার বেলায় নাই। হালকা ঘুম দিয়ে উঠে হিন্দী গান শুনতে শুনতে কই আয়েশ করে টান দিবে, তার উপায় নাই। সিগারেট পড়ে গেছে ড্যাম। মুখটাই তিতা হয়ে গেল। সন্ধ্যার এই সময়টা রুমের কর্ণারে নিজের বেডটাতে বসে থাকতে বেশ ভাল্লাগে। রুমে কেউ থাকে না ঐসময়। হালকা আবছা আলোর মধ্যে লো ভলিউমে গান শুনতে ভালোই লাগে। খাটের একপাশে দেয়াল, মাথার দিকটাতে জানালা। আর পায়ের দিকটাতে বিশাল এক আলমারী। আর অন্যপাশে দুইটা টেবিল দিয়ে মোটামোটি রুমের মধ্যে নিজের আরেকটা রুমের মতো। ওই খাটেই আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি, কার্ড খেলা, মুভি দেখা, দুই তিনজন একসাথে ঘুমানো। একটা এক্সাম শেষ হলো গতকাল, ৩ দিন পরেই আবার Automata Theory । পড়া হয়নি কিছুই, সিলেবাসটা আর বই নিয়ে বসে পড়লো। সাজিয়ে রাখা যায় যতোদূর। দুই নবাবজাদার তো এসে আবার সব রেডি পাওয়া লাগবে !
২১৪, ফজলুল হক হল।
মাত্রই মুনির ভাইকে ঝাড়ি দিয়ে কাঁথাটা আরেকবার মুড়ি দিয়ে ফসফস করতে করতে ওপাশ ফিরলো রুবেল। ঝাড়ি দেয়ার কারণটা মুনির ভাইয়ের কাছে তখনও পরিষ্কার না। এটা বুঝতে পারছিলো যে রুবেলের ঘুমের ডিস্টার্ব করা হয়েছে। দেড়দিন ধরে যে ঘুমাচ্ছে ফিসফিস করে পড়া তার ঘুমের কতটুকু ব্যাঘাত ঘটাতে পারে তা নিয়েই আপাতত গভীর চিন্তায় মগ্ন।আগামী মাসের ১৫ তারিখ বিসিএস প্রিলি। ২২০ টা সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রথম প্রকাশের তারিখ, শেষ প্রকাশের তারিখ মুখস্ত করে শেষ করতে হবে সন্ধ্যার মধ্যেই। বিড়বিড় করতে করতে বিরক্তি নিয়ে একবার তাকালো তার কুম্ভকর্ণ রুমমেটের দিকে। লুন্গিটা খুলে খুলে করতেছে দেড়দিন ধরে, খুলেও না ! ইচ্ছে করে টান দিয়া খুলে ফেলতে, একটা শিক্ষা হইতো !....
'হুমমম..মেহেদী বল্', বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলো রুবেল।
'হুমম....আসবো তো। আজকে থেকেই ফাইট শুরু।'
'আরে না না দেরি করবো না, আধঘন্টার মধ্যেই তোর রুমে আসতেছি।'
বিরক্তি নিয়ে ফোনটা অফ করে আবার ঘুম দিলো ।
২২২, এক্স-২, শহীদুল্লাহ হল।
টিউশনি থেকে মাত্রই ফিরলো আজাদ। আর্টসেলের গান ছেড়ে আর সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে রুবেলকে ফোন দিলো, ফোন অফ।
মেহেদীকে ফোন দিলো।
'কিরে কয় চ্যাপ্টার শেষ করলি ?'
'সব শেষ ? গুড! আইতাছি, সব রেডি কর। আমারে পড়াবি !'
মেজাজটা হাল্কা খারাপ, ফাউলটা সব শেষ কইরা বইসা আছে একবার কইলোও না !
সিগারেটটা রমের মধ্যেই ছুড়ে মারলো বিরক্তিতে, কই যেনো গিয়া পড়লো, পোড়া পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে। ধুর শালা ! সিগারেট খাইয়াও শান্তি নাই , ফালাইতেও পারুম না ইচ্ছামতো, বা.....।
গেন্জির উপর গিয়া পড়ছে, গেন্জি শুদ্ধ ফেলে দিলো দুইতলা থেকে নিচে !