টিকেট ব্ল্যাকার কালাম। ফোন দিলেই ওয়েলকাম টিউনে বেশ কিছুক্ষণ ৭ মার্চের ভাশন শুনতে হয়। তারপর ৩৫০ টাকার টিকেট ১০০০ টাকা দিয়ে নেয়ার জন্য টাকা আগেই বিকাশ করতে হয়। দাম নিয়ে বার্গেন করার কোনো স্কোপ তো নাই-ই ঐ ধরনের কিছু বলার চেষ্টা করার আগেই ফোন কেটে দিবে। টাইম কই তার , কাস্টমারের তো অভাব নাই। ফোন দিয়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে তাকে তেল দিতে হয় যাতে পরেরবার ফোনটা ধরে। নিজেকে মনে হয় নরকের কীট। ইন্ডিয়ান এমবেসির ভিসার ডেট (ভিসা না) পাওয়ার জন্য ২০০০ টাকা আগেই দিতে হয় ব্ল্যাকারদের । ১০ কিলো যাওয়ার জন্য সিএনজি চায় ২৫০ টাকা, তাও গেলে নিজেকে ধন্য মনে হয়।
ব্যাগে ল্যাপটপ থাকে তাই রিকশায় ব্যাগ পেছনে নিয়ে বসতে পারি না। পেছন থেকে ব্যাগ কেটে ল্যাপটপ নিয়ে যায়, সামনে কোলের উপর রাখলেও বিপদ - বাইক নিয়ে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিটা মূহুর্তে প্যানিকড্ থাকতে হয় এদেশে, থাকতে হয় সজাগ। সিএনজি তে বসে বসে মোবাইল ব্রাউজ করছিলাম, উপর থেকে সিএনজির পর্দা কেটে আমার আইফোন টান দিয়ে নিয়ে গেলো। আমার ৫ মিনিট লাগলো কি হলো তা বুঝতে। ততক্ষণে আমার মোবাইল হাপিস। দোড় দিলাম চোর ধরতে। এসে দেখি আমার ব্যাগ সহ সিএনজি হাপিস। মুখটা তিতা হলো। দেশকে একটা গালি দিলাম। আর কি করতে পারি।
একটা মৃতদেহেরও কি নিস্তার আছে এই দেশে। পেপারে দেখলাম ডা: শামারুখের মৃতদেহ তোলা হয়েছে পুন:তদন্তের জন্য। হয়তো মৃত্যুর পরপরই পুলিশ বা প্রাশাসনের কাউকে ম্যানেজ করে বুঝ্ দেয়া হয়েছিলো দাফন হয়ে গেলেই মামলা ডিসমিস, শামারুখের পরিবার এরপর হয়তো আরো বড় কাউকে অবশেষে কনভিন্স করতে পেরেছে, যেজন্য আবার পুন:তদন্ত । যে ডাক্তার বলেছিলো আত্মহত্যা সেই হয়তো এখন আবার বলবে হত্যা। মাঝখানে ওপার থেকে শামারুখ অভিশাপ দিবে এই দেশটাকে, তার পরিবারকে - কেন তাদের এত দেরি হলো কেউ একজনকে ম্যানেজ করতে ! পুন: তদন্তের জন্য লাশ তোলা এদেশে তো একটা নৈমিত্তিক ঘটনা। কিছুদিন ধরে আব্বা আম্মা আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে প্রচন্ড প্যানিক্ড। খালি বলে বাবা বাইরে কারো সাথে তর্ক করিস না, পুলিশের সাথে তো নাই-ই। নতুন কালচার শুরু হয়েছে দেশে - গুম হওয়া। আর গুম না করতে পারলে জেএমবি বা আইএসআই। আমার চাচার শ্শ্রুমন্ডিত ছেলেকে একমাস জেলে থাকতে হয়েছে কোনো কারণ ছাড়া। পরে সরকারী দলের এমপির লিখিত এন্ডোর্সমেন্ট লেগেছে যে তার পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাদের পারিবারিকভাবে চেনেন !
আমার বাসার সামনে গত এক সপ্তাহে দুইজন ইউনিভার্সিটির ছাত্রকে হত্যা করা হলো রোড এক্সিডেন্ট এর নাম করে। বাস-ড্রাইভার পলাতক, পাবলিকের বাস ভাংচুর, রোড-ব্লক। এই তো ! কয়দিন পরেই সেই ড্রাইভার পলাতক জীবন ছেড়ে আবার কারো জীবন নেবে। মন্ত্রী বলবে এটা স্রেফ দুর্ঘটনা। তারা কি জানে একটা স্বজন হারানোর বেদনা ? তাদের ছেলেরা কি পাবলিক বাসে চড়ে ? একটা মৃত্যু একটা পরিবারের সারা জীবনের সুখ কেড়ে নেয়, এটা কি তারা জানে ? কয়দিন আগে এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারের নাবালক ছেলে গাড়ি দিয়ে পিষে ফেল্ল একজন সাধারণ মানুষকে। গ্রফতার পর্যন্ত করা যায় না। কারণ তার বাপ পুলিশের এডিজি। অফিস থেকে বাড়ি ভাড়ার ২৫০০০ টাকা ব্যাগে নিয়ে গুলশান মানারতের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। তন্য তন্য করে ব্যাগ চেক করা হলো, মানিব্যাগ শোঁকা হলো।কিছু না পেয়ে চোখ পড়লো আমার টাকার উপর। আমাকে ২ ঘন্টা পেইন দিলো। পড়ে আমার এক ম্যাজিস্ট্রেট ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে ছাড়া পেলাম। আবার একটা গালি দেশটাকে। সব রাগতো একটা জায়গাতেই দেখাতে পারি। দেশটার যে মুখ নাই, থাকলে হয়তো সেও ঘুষ চেয়ে বসতো।
অদ্ভুত একটা দেশ আমার। চট্টগ্রামের রেলওয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক যে ঘুষ ছাড়া কাজ করে না এটা ওখানকার রাস্তার ধুলোবালিও জানে। তার বাসায় হলো ডাকাতি। পুলিশ ধরলো সেই ডাকাতদের। মজাটা শুরু হলো এরপর। পুলিশের প্যাদানি খেয়ে তারা বললো ৮০ লাখ টাকা তারা চুরি করে। টাকাও উদ্ধার করা হলো। সে বলে সে একজন সরকারি কর্মচারী এত টাকা তার বাসায় কোথেকে আসবে ! তার বাসায় টাকা ছিলো ৫ লাখ ! ল্যাও ঠেলা । ডাকাতি করে সত্য স্বীকার করলেও বিপদ ! কয়দিন আগে দেখলাম দুদক আবার তারে দায়মুক্তিও দিলো। আমার ছোটভাই এইচএসসি পাস করলো এবার। গোল্ডেন এ পাওয়া স্টুডেন্ট কিন্তু টিকতে পারছেনা কোথাও। সেও বুঝতে পারছেনা তার সমস্যা কোথায়। সে তো দেশের সর্বোচ্চ ফলাফল ধারী ছাত্র ! ক্লাস ফাইভের বাচ্চারাও এখন পরীক্ষার আগের রাতে কোশ্চেনের জন্য ফোন করে বেড়ায়। এরা কি আর বের হতে পারবে এই অভ্যাস থেকে ?
আশার কথা ভালোবাসার কথা বলুক আমার ফ্রেন্ডরা যারা জীবনের প্রয়োজনে বা ক্যারিয়ারের পতাগিদে দেশ ছেড়ে গেছে। অথবা বলুক ড: জাফর ইকবাল যিনি ব্যস্ত যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কিংবা ড: ইউনুস যিনি ব্যস্ত গণতন্র নিয়ে। আমরা মারা খাই। আমার ভাইয়া থাকে দেশের বাইরে। সরকারী চাকুরে, গাড়ি-বাড়ি সব কিছু তার ফ্রেশ। আমার বিদেশে যাওয়ার কথা শুনতে পারে না। চিৎকার করে। শুধু বলে এখানে আমাদের সব আছে কিন্তু তারপরও আমরা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন, তোরা যতটা খারাপই থাকিস না কেনো দেশটা তোদের, তোরা ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন। আমার ভাইকে কে বোঝাবে এই দেশে ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন হতে হলে রাজনীতি বা সরকারী বড় পদস্থ কর্মকর্তার ছেলে হতে হয় অথবা সেনাবাহিনীতে পরিবারের কেউ একজনকে থাকতে হয় ? বাকিরা সবাই ফোর্থ ক্লাস সিটিজেন । ভাইয়া, তোমার ঐ দেশে একটা কুত্তারও যে সিকিউরিটি আছে এদেশে একজন সাধারণ পাবলিকেরও তা নাই।