somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাহার (স্মোকারদের) জন্য প্রযোজ্য !

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত বাজে একটা, চ্যাপ্টার বাকি ৫ টা, বেনসনের প্যাকেটটা উল্টে দেখলাম শলাকা আছে ৪ খানা। চ্যাপ্টার প্রতি ধরলেও একটা কম পড়ে। কি আর করা, চ্যাপ্টার শেষ করে সিগারেট ধরানোর আশায় চেপে ধরে পড়ায় দিলাম টান। রাতের পর রাত জেগে থাকার অভ্যাসটা ইউনিভার্সিটির হল-জীবন থেকেই, বন্ধু-বান্ধবের বাইরে একমাত্র সন্গী সিগারেট। দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাসটা ছাড়তে পারলাম না আর চাকরী করতে এসেও, রাত হলেই মাথাটা খোলে বেশি, লজিকগুলো খাপমতো বসে, হাতে থাকে সিগারেট, জটিল কোনো সমস্যার সমাধানে বিব্রত : একটা সিগারেট-ব্রেকের চেয়ে কার্যকরী আর কিছুই হতে পারে না। সকালে কড়া লিকারের সাথে দিনের প্রথম সিগারেটটা খাওয়ার আগ পর্যন্ত মাথাটা যেন ঠিক খেলে না, আবার রাতে ভরপেটে খাওয়ার পর সিগারেট না হলে ডিনারটা পুরোয় না। যতবেশি গুরুপাক ততবেশি সিগারেটের তৃষ্ণা !! কফির সাথে সিগারেটের এক স্বাদ আবার লেবু চায়ের সাথে আরেক স্বাদ। সিগারেটটা যেন প্রত্যেকটা খাবারের উপরে একটা আলাদা আলাদা টপিং দিয়ে নতুন স্বাদ এনে দেয়।

অনেক কষ্টের রাতের গুমোট কোনো অভিমানের একমাত্র সন্গী এই সিগারেট। নিজের সবগুলো কথা প্রকাশ করে দেয়া যায় খুব সহজে, সযতনে সে ছড়িয়ে দেয় দু;খগুলোকে চারপাশে। আবার আনন্দের উৎযাপনে একটু কার্বণ-ডাই-অক্সাইড ফুসফুসের প্রাপ্য বৈকি। টেনশন রিলিফ করার জন্য একজন স্মকারের কাছে এর চেয়ে বড় দাওয়াই বোধকরি আর কিছু হতে পারে না । টেনসন গুলো বেনসনকে দিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ানো যায় অনায়েসে !!রিক্সায় করে অফিসে যাওয়ার সময় ট্রাফিক জ্যামের মাঝে ঘন্টার-পর-ঘন্টা বিরক্তিকর সময়টাকে উপভোগ্য করে দেয় সিগারেট। যেকোনো ট্রানজিটে নতুন কোনো এয়ারপোর্টে নেমেই প্রথমে খুজে নেই স্মোকিং জোন। ট্রানজিটের বাজে সমটার সন্গী তো আছে সাথেই । অপেক্ষা করাটা নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের কাজ, একজন স্মোকারের জন্য তা কখনই না যদি না সেখানে থাকে স্মিকিং ডিটেক্টর । ১২ ঘন্টার দু:সহ বিমান ভ্রমণের ঝক্কিটা এক মূহুর্তেই কেটে যায় মুক্ত বাতাসে কিছু দূষিত বাতাস ছাড়ার সাথে সাথেই। আবার ৮ ঘন্টার বাস জার্নির ফাঁকে একটা সিগারেট খাওয়ার ব্রেকটা কাজ দেয় টনিকের মতো। ট্রেনে সিট থেকে উঠে দুই প্ল্যাটফর্মের মাঝে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়াটাতো রীতিমতো শিহরণ জাগানো অনূভুতি।

খাবারের মতো আবহাওয়াটাও যেন সিগারেটের স্পর্শে নতুন একটা ফ্লেভার পায়। অসলোর ঠান্ডা কিংবা দোহার গরম, সিগারেটটা জমে সবখানেই। বন্ধুহীন অসলো শহরে একমাত্র বন্ধুই তো বেনসন এন্ড হেজেস গোল্ড। একাকিত্বটা গায়ে ঘেষতে দেয়না। এক এক দেশের ফ্লেভারটাও যেন তার নিজস্ব সিগারেটের মাঝে নিহিত থাকে - ঠিক যেমনটা থাকে চকলেটে। অসলোর বেনসনের এক স্বাদ, আবার স্টকহোমের বেনসনের আরেক স্বাদ, এক কলিগের কাছ থেকে নিয়ে খাওয়া প্যারিসের বেনসনের স্বাদটাও কিন্তু প্যারিসের মতোই !


নতুন বন্ধু জোড়াতে আর বন্ধুত্বটাকে টেকসই করতে সিগারেটটা কাজ করে সুতোর মতো। প্যাকেটের একটা সিগারেট কিংবা ঠোটের আধখানা সিগারেটটা শেয়ার করার সাথে সাথেই সহজ হয়ে যায় অনেক কিছু। একজন স্মোকারের বন্ধুর সংখ্যাও বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আবার বন্ধুর মান ভান্গাতেও সিগারেট কাজ করে চমৎকার, শুধু নিজের আধ-খাওয়া সিগারেটটা বাড়িয়ে দিলেই হলো, ব্যস ঝামেলা শেষ। আবার দিনশেষে যে ম্যানেজার বা প্রফেসর আমার প্যাকেটের একটা সিগারেটে ভাগ বসাবে তার সাথেই জমবে ভালো, এটাই স্বাভাবিক। অনেক কথাই বলে ফেলা যায় অপ্রাসন্গিকভাবে ইনফরমালি। একজন নন-স্মোকার যা মিস করে হরহামেশাই ! নতুন কোনো অফিসে (সেটা দেশে বা বিদেশে) নিজেকে পরিচিত করতে কখনই খুব বেশি সময় লাগে নি কারণ স্মোকিং-মেটরা আছেই -বাকিটা তারাই করবে । আর যতগুলো স্মোকার ম্যানেজার পেয়েছি এ পর্যন্ত, সবার সাথেই অফিসের বাইরেও একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়েছেই - যার সূত্রপাত ও গড়ে ওঠাটা সিগারেটের কল্যাণেই।

বন্ধুদের সাথে ধুন্ধুমার কার্ড খেলার ফাকে সিগারেটে টান দেয়াটা যেন ক্লিন্ট ইস্টউডের ওয়েসটার্ণ মুভিগুলোরই পালস আর ফিল এনে দেয়। ভালো কার্ডের সাথে সুখ ছড়ানো টান আর বাজে কার্ডের সাথে দীর্ঘশ্বাসযুক্ত ধোয়াগুলো বের করে দেয়া । ভালো কোনো মুভির এপিক কোনো দৃশ্যে সিগারেটের সংযুক্তি মুভিটার আবেশ ও মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। পুরোনো কোনো পথ ধরে হেটে যেতে কিংবা পুরোনো কোনো বন্ধুর সাক্ষাতে সিগারেটটা যেন নষ্টালজিক করে দেয় আরও বেশি।

পুরো ব্যাপারটাই মানসিক কিন্তু এই মানসিক শক্তিটাই বা কয়জন দিতে পারে। একজন স্মোকার কখনও একা হতে পারে না, পারে না নির্জনতায় ভুগতে। সেলিব্রেশন কিংবা সেপারেশন - এর চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই। সব সময়ই সে কাছে টেনে নেয় - জানতে চায় না উপলক্ষটা !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×