somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোজন বিলাস

২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে হুট করে চোখ পড়লো একটা গ্রুপ "CSEDU FOOD LOVERS". হঠাত মনে হলো লিখে ফেলি আমাদের নষ্টালজিক খাওয়া-দাওয়ার কাহিনী। আমাদের মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে মিত-আহারী ছিলো আজাদ (জানি না শব্দ চয়নটা ঠিক হলো কিনা,মিত-ব্যয়ী থাকতে পারলে মিত-আহারীও থাকতেই পারে)।খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কখনই তার রুচি ছিলো না (নিজেরটা খাওয়ার ব্যাপারে)। অন্যেরটা টেনে-হেচঁরে খেয়েই তার পেট ভরতো। আজাদের প্রিয় খাবার কি ছিলো তা বলার চেয়ে বরং বলা ভালো কোন খাবারটা তার অপ্রিয় ছিলো। গুলশানের একটা হোটেলে সবজি বুফে খাওয়া যেত।আমরা মাঝে মাঝে শুধু সবজি দিয়ে ভাত খাওয়ার জন্যে সেখানে যেতাম। সবজি দিয়ে ভাত খেতে খেতে তার উপলব্ধি, সবজি্-ভর্তাই তার প্রিয় খাবার। "কি সব খাই, খাওয়ার আসল টেষ্ট এসব সবজি-ভর্তাতেই"। আবার ষ্টারে খাসির গিলাচি বা লেগ রোষ্ট চিবুতে চিবুতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেতে তুলতে বলতে শুনতাম, এই জিনিষের উপর খাবার নাই। চানখারপুলের নান্না বা মামুন বিরিয়ানী খাইতে খাইতে স্বগর্বাসী নান্না বা দুনিয়াবাসী মামুন তার কতো দোয়া পেয়েছে সে কথা বলাই বাহুল্য।সাদিকের ভাইয়ের বিয়ে আর মনিরুল ভাইয়ের বোনের বিয়ে খেতে গিয়ে জানা গেলো কাচ্চি বিরিয়ানীই তার ফেভারিট খাবার। ফোর্থ ইয়ারে দেখলাম তার প্রিয় খাবার হয়ে গেলো এনার্জি ড্রিংক স্পীড। প্রতিদিন রাতেই দেখা যেতো একটা ছেলে একুশে হলের সামনে গম্ভীর মুখে গোল্ডলিফে টান দিচ্ছে আর স্পীড খাচ্ছে। একদিন বল্লাম, তুই কি সিক্‌ নাকি ? মানুষ দিনের পর দিন কিভাবে এই জিনিষ কিভাবে খায়। "একটা বিশেষ পরিস্হিতিতে আমার এটা ভাল লেগে গেছে, তুই বুঝবি না" - গম্ভীর মুখে বল্লো!! সবাই মিলে একসাথে কোথাও খেতে গেলে আজাদের পাশে যে দুইজন থাকবে মোটামোটি তাদের দুইজনের কিছু না কিছু খোওয়া যাবেই। প্রত্যেকটা দিনই একটা জিনিষ কমন থাকতো, মানুষের কাছ থেকে টানা হেচঁরা করে নিয়ে টিয়ে শেষে আর আজাদের খেতে না পারা। চিলের মতো ছো মেরে লোটাসের পাত থেকে মাংস তুলে নিয়ে আজাদের ডায়লগ , "অনেক্ষণ ধইরা খেয়াল করতাছি জিয়ায় রাখছোস!!" - এখনও চোখে ভাসে। আজাদের আক্রমন আর খাওয়া দাওয়া কাড়াকাড়ি করা আমরা সবাই মোটামোটি মেনে নিলেও মেহেদী তাকে কোনো ছাড় দিতোনা। তার সাথে মেহেদীর প্রচুর মারামারিও হয়েছে খাওয়া কাড়াকাড়ি নিয়ে। পরবর্তীতে মেহেদী নতুন এক স্ট্র্যাটেজি ধরলো। সে তার খাবার পাওয়ার সাথে সাথেই পুরো প্লেটের উপর থুতু দিয়ে চুপ করে বসে থাকতো। তার প্লেটে আর কারো হাত পড়তো না। এই জিনিষ আবার আমাদের সবার ভালো লেগে গেলো (স্বাভাবতই আজাদ ছাড়া)। পরে পরে ওয়েটারেরা অবাক হয়ে দেখতো খাবার সার্ভ করার সাথে সাথেই একজন ছাড়া বাকি সবাই যার যার প্লেটে থুতু দিতে ব্যস্ত !! আর একটা ছেলে হতাশ চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে !!!

ডিম কতো ভাবে বানানো যায় এই জিনিষ শিখলাম হলে উঠে। ডিম ওমলেট (ডিম ফেটে তার মাঝে চিনি দিয়ে ভালোভাবে নাড়া, এরপর কড়াইতে ভাজা), ডিম মামলেট (পেয়াঁজ মরিচ কুচি করে তা কাচা ডিমে ছেড়ে দিয়ে নাড়ানো হতো, এরপর তেলে ভাজা), ডিম-পোজ (ডিম শুধু তেল দিয়ে ভাজা, উল্টানো যাবে না !), ডিমের ঝাল-ফ্রাই (আগে কড়াইতে ডিম ছেড়ে এরপর তার মাঝে পেঁয়াজ মরিচ ছেড়ে দিতে হবে, এরপর উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ভাজতে হবে), ডিমের-ঝুরি (ডিম তেলে দিয়ে একটু পরে চামচ দিয়ে গুড়োগুড়ো করে দিতে হবে), ডিম-বার্গার ( ডিম ভেজে বনরুটির মাঝে দিয়ে খাওয়া)!! সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিলো লটপটি। এটা হচ্ছে ডিম আর সবজি দিয়ে কায়দা করে বানানো একটা আইটেম।কড়াইয়ে ডিম ছেড়ে দিয়ে তার উপর সবজি ছেড়ে দিয়ে ঘুটানি দেয়া হতো !!হয়ে যেত লটপটি।প্রতি রাতে এফ,এইচ আর শহীডুল্লাহ হলের সামনে লাইন দিয়ে পোলাপান পরোটা দিয়ে লটপটি খেতো।

আমরা যারা হলে থাকতাম একুশে হলের সামনে গাজি হোটেলের রান্নার ফ্যান ছিলাম। প্রায়ই শুধু ডিম ভাজি আর ঘন ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে আসতাম। নিরব হোটেলের ঝালঝাল শুটকি ভর্তা আর হরেক রকমের ভর্তার স্বাদ এখনো মুখে ভাসে। মিতালীতে গরুর কালো ভুনা খাওয়ার জন্য প্রায়ই যেতাম আর সোহাগের গরুর চাপ। পকেটে টাকা বেশি না থকলে আমি আর পাশা মিলে শেয়ারে কালো ভুনা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তলতে তুলতে হলে ফিরতাম। বিউটির লাচ্ছি ফালুদা আর নাজিরাবাজারের হাজির বিরিয়ানী খেয়েছি বারবার।আরেকটা প্রিয় জিনিষ ছিলো রয়েলের বাদামের শরবত আর চিকেন কাবাব। গুলিস্হানের রাজধানি হোটেলের ফালুদা আর মতিঝিলের হীরাঝিল রেস্টুরেন্টের ফালুদা কোনোটা কোনোটার চেয়ে কম ছিলো না। ঘরোয়ার স্পাইসি খিচুরী আর বড় বড় মালাইকারীর স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে।স্টারের কাচ্চি, ফালুদা, চিকেন কাবাব, বটি কাবাব - সে এক অসাধারণ অভিগ্গতা। ডাকসুর খিচুরী, সাইন্স ক্যাফেতে দ্বিতীয়বার ভাত নিতে গেলে চোখ রান্গানী আর টি,আস,সি র ১৮ টাকার মিলে অনুবীক্ষণ যণ্ত্র দিয়ে বড় মুরগীর টুকরো খোঁজা - আগুলো তো লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স !

একসময় রুটিন হয়ে গিয়েছিলো প্রতিদিন সকালে স্টারে গিয়ে খিচুরী খাওয়া।দুপুরে রাতে খিচুরী ছিলো ৬৫ আর ভোরে ৩৩। সাথে সেদ্ধ ডিম না খেলে ২৮। আমরা হল থেকে ৫/৬ জনের গ্রুপ রোজ রোজ দল বেধে স্টারে যেতাম খিচুরী খেতে। আমার রুমমেট মারুফ ৪/৫ প্লেট পর্যণ্ত খেতে পারতো। হলের পাশে বংগবাজারের একটু সামনে ছিলো 'রাজশাহী মিস্টি বাড়ী'। মারুফের রুটিন ছিলো প্রতিদিন বিকেলে ওখানে গিয়ে ৭/৮ টা মিষ্টি সাবাড় করা। আমাদেরকেও নিয়ে যেত রেগুলার। একদিন আমার সাথে বাজি ছিলো সে একটানা এক কেজি চমচম খেতে পারবে। যথারীতি আমিই বাজিতে হেরেছিলাম। ওর পরিচয় এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে তাকে তারা বাকিতেও মিষ্টি খেতে দিতো। কিছুদিন পরপর পে করতো। আরেক রুমমেট নোয়াখালির ছেলে রিয়াদ ছিলো খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ফ্রিক ।(ও ওর নাম বলতো ডিয়াদ, ওর র কে ড, প কে ফ, গ কে ঘ উচ্চারণে আমরা রুমমেট রা যে কতো নির্মল বিনোদন পেয়েছি তার হিসেব নেই)। রিকসা করে যাচ্ছি একসাথে, একটা দোকানের সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে বল্লম, বল দেখি কি লিখা ? সে গম্ভির ভাবে সময় নিয়ে কষ্ট করে উচ্চারণ করলো "ফ্রিন্স পার্নিচার" (Prince Furniture !)। প্রথম টিউশনিতে যাচ্ছে। দেখলাম হেভি সাজগোজ দিয়ে যাচ্ছে। জিগ্গেক করলাম, কিরে বিয়ে করতে তো যাচ্ছিস না , যাচ্ছিস তো টিউশনিতে। "শোন, প্রথমে ধর্শনদারী, তারপরে ঘুনবিছারী - তুই বুঝবি না !" - তার উত্তর। লাস্টে অবশ্য ঐ ছাত্রীর সাথে তার প্রেমও হয়। গার্লফ্রেন্ডের নাম ইভা। সে বলতো "জান্নাত নুশরাত ইবা !" - কই যাবো!! পেপার দিয়ে মারুফ জিগ্গেস করতো , বল দেখি কি লিখা , "ঘাইবান্দায় গরু ডাকাতি, ৪ ডাকাত গণপিঠুনীতে নিহত !!" যাই হোক সরল মনের আমার এই ফ্রেন্ডটা প্রতিদিন রাতে যেতো নাজিরাজারে খাসি বিরিয়ানি খেতে। ওর সন্গী আমি আর মারুফ (ওর মারুপ দা !)। তিন ফ্রেন্ড সাঁটিয়ে দিয়ে আসতাম পেট পুরে !!

চা সিগারেট খেতে বসলে এক একজন এক একরকম চায়ের অর্ডার করত। ইশরাক অর্ডার করতো কম চিনির দুধ চা। কিছুদিন পরে চিনি খাওয়া বন্ধ। এরপর কন্ডেন্সড মিল্কও বন্ধ। শুধু লিকার ! ওর নামই দিয়ে দিয়েছিলাম আমরা 'লিকার ইশরাক'। আমরা অপেক্ষা করতাম কখন ও শুধু গরম পানি খাবে। সেটা অবশ্য হয়নি।

খাওয়ার অবশ্য আরও রকমফের ছিলো। কার্ড খেলতে বসলে স্পেড ট্রামে ফয়সাল শুধু সর্ট খেতো। ৬ ফিট হাইটের ওর নামও আমরা দিয়ে দিয়েছিলাম 'সর্ট শিকদার !!'। বান্না খালি ছ্যাকা খেতো। আর যাদের গার্লফ্রেন্ড ছিলো তারা পালা করে ফোনে পেইন খেতো।

আর সিএসই ডিউর স্টুডেন্ট হিসেবে আমরা সবাই প্রতি বছর বাই ডিফ্ল্ট 'ইম্প্রুভ' খেতাম!!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৯
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×