আজাদের সাথে প্রথম দেখা ইশরাকের খালার বাসায়। খালা ফ্যামিলি নিয়ে থাকে ইউ,এস,এ।বাসাটা আমাদের দখলে। সন্ধ্যা ছয়টায় পরিচয়, রাত দশটায় আমার সর্টস নিয়ে টানাটানি !!!!অনেক কষ্টে বাথরুমে গিয়ে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা। তার সাথে হিমেল অনেকদিন কথা বন্ধ রেখেছিলো সে ওয়াশরুমে থাকা অবস্হায় উঁকি দেয়ার অপরাধে!!! কি দেখেছিলো তা আজাদও বলে না, হিমেলও না কিন্তু দুইজনের কথা বন্ধ!!
থার্ড ইয়ার ফাইনাল চলে। এলগরিদম পরীক্ষা।সবাই কুত্তা পড়া দিচ্ছে, মুখ দেখাদেখি বন্ধ।ম্যাক্স ফ্লো থেকে কোয়েশ্চান আসবে নিশ্চিত কিন্তু কিছুই পারি না। রাত একটায় দিলাম আজাদকে ফোন।
-ম্যাক্সফ্লো পড়ছিস ?।
"দেখছি মোটামোটি"
- কি অবস্হা ?
"অবস্হা ভাল না, ১০ টার দিকে আসলাম টিউশনি থেকে, অনেককিছু বাকি...."
- ম্যক্সফ্লো যে কিছুই পারি না।
"রুমে আয় বুঝায়া দেই"
- এই শীতের রাতে শহীদুল্লাহ হল যাবো কেমনে?
"হারামজাদা, সিগারেট রেডি রাখ , আমি আসতেছি!!!!"
পরীক্ষার আগের দিন রাতে আমার রুমে এসে আমাকে ২/৩ ঘন্টা টাইম দিয়ে গেছে, এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার। প্রতিদানে হালকা কিছু গালি আর সিগারেট !!!আমিও কিছুই না বুঝার ভান করে আব্দার করে যেতাম। যেন এগুলা আমার দাবী!!!মনে আছে পি,এল,সি এক্সামের আগে ২ দিন ঘুরে বেড়িয়েছি, তৃতীয়দিন এসে ডিসিশান নিলাম ইম্প্রুভমেন্ট রাখা হবে। আমরা তখন ইশরাকের বাসায়।আজাদ, মেহেদী,ইশরাক পড়ছে সমানে আর আমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছি।পরীক্ষার আগের দিন রাত দশটায় খেলাম আজাদের ঝাড়ি, "....য়া .গী, (ছাপার অযোগ্য) আর সাব্জেক্ট পাইলি না ইম্প্রুভ রাখার ? শাহেদ স্যরের কোয়েশ্চন আর পাবি ? আমার মোটামোটি পড়া শেষ, আয় পড়ায়া দেই।" রাত দশটায় বসলো আমাকে নিয়ে উঠলো পাঁচটায়। পিএলসি পরীক্ষায় পেলাম আজাদের চেয়ে এক বেশী, এবার বেচারা হতাশ......
আজাদের হতাশার কোনো সীমা পরিসিমা ছিলো।সবকিছুতেই ও হতাশ হয়। সবচেয়ে বেশী হতাশ হতো মেহেদীর উপর।একসাথে পড়তে বসতাম, মেহেদী চালাতো তুফান মেল। ৩০ মিনিটে এক চাপ্টার শেষ করে সিগারেট খেতে চলে গেছে, এসে নেট গুতাগুতি করছে। আর আজাদের তখনও অর্ধেক বাকি, চোখমুখ গম্ভীর।কারো সাথে কথা নাই। ঐ সময় কিছু বলা যাবে না, বল্লেই ঝাড়ি।
পড়া শেষ করে আমাদের জেরা করা শুরু করতো আর স্বাভাবিক ভাবেই আমরা পারতাম না কারণ ওর মতো খুটিয়ে কেউ পড়তো না, সবাই পড়তো কোনোভাবে এক্সামে লিখার জন্য।কিছুক্ষণ ব্যর্থ চেষ্টা করে যখন স্বীকার করে নিতাম আমাদেরটা ভুল তখন তার মুখে বিজয়ীর হাসি। মনের সুখে সিগারেট টান দিতো আর কি কি বুঝছে বুঝাইতো...............
আজাদের ফেমাস ডায়ালগ ছিলো, "আমি তো গরীব !!"
-কিরে শরীর খারাপ ?
গরীবের আবার শরীর !!!
- মার্কস কেমন আসছে ?
"গরীবের আবার মার্কস !!"(যদিও আমাদের মধ্যে নম্বর ওরই সবচেয়ে বেশী)
খাইলি কেমন ?
গরীবের আবার খাওয়া !!(যদিও তার পাশের দুই একজনের প্লেট থেকে প্রায়ই এটা ওটা সরে যেতো)
তার বদ্ধমূল ধারণা ছিলো তার সাথে সকল হোটেলের সার্ভ বয় এর শত্রুতা ছিলো।সবচেয়ে ছোট টুকরাটা নাকি তার প্লেটেই পড়তো। এমনও হয়েছে একদিন সে চারবার মাটন পিস চেন্জ করায়ছিলো.....শেষে শুকনা মুখে লাস্টের টা দিয়ে খাওয়া শুরু করলো।আর বিড়বিড় করে বলছিলো, "শালার এই হোটেলের ছাগলটাই ছোট !!!অন্য হোটেলে যাওয়া দরকার ছিলো"
আজাদের গানের গলা ততোটাই ভালো ছিলো যতটাই খারাপ ছিলো তার ক্রিকেট খেলা!!তারপরও তারপরও তার ওপেনিং এই নামা চাই এবং ওপেনিং এই বল করা চাই। শুরুতেই আউট হয়ে আসতো আর মাথা নাড়তে নাড়তে ব্যাট বাড়ি দিতে দিতে নয়তো আম্পায়ার নয়তো পিচের গুষ্টি উদ্ধার করতো!!ডিপার্টমেন্টের কতজনের নাক আজাদ ফুটবল খেলতে গিয়ে ফাটিয়েছিলো সেটা গবেষণার দাবিদার।খেলার সময় বলের চেয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের ঠ্যাং ই তার বেশী প্রিয় ছিলো!!হলে আমরা টেবল টেনিস খেলতাম, সবসময়ই উদ্যোক্তা থাকতো আজাদ।সবাইকে ফোন টোন করে গেমস্ রুমে জড়ো করতো।আর খেলার শুরুতে এমন একটা ভাবে থাকতো জে আজকে সবার খবর আছে!!খেলা শুরু হলে যেই লাউ সেই কধু!!!ডাবল্স হলে পার্টনার আর সিংগেল্স হলে টিটি ব্যাট আর টেবল তার রোষের শিকার হতো!! তার জোকস্ বলা ছিলো আরও মারাত্মক, এক এক টা জোকস্ বলতো আর আমরা হতাশ হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম!!!
সন্জয় এর "মনে পড়ে" আর লিনকনের "দু্:খবিলাস" এর চেয়ে আমাদের আজাদের কম্পোসিশন ই বেশী প্রিয় ছিলো। তার গলায় শিরোনামহীনের "হাসি মুখ" শুনতে শুনতে ভাবতাম ভুল জায়গায় ভুল একজনের জন্ম হয়েছে। কতো রাতের পর রাত আমরা কাটিয়েছি তার গান শুনতে শুনতে, মুগ্ধ হয়ে শুনতাম সবাই।অনেকদিন হলো তার গান শুনি না, তার মুখের অমৃত গালিও শুনি না, তার হা-পা ও চলে না গায়ের উপর !! বড্ড মিস্ করি ছেলেটাকে। এখনও মাঝে মাঝে মনে হয় কান পাতলেই শুনি, "বন্ধুরে , তোরে ছাড়া আমি অন্ধুরে !!!!"
বি:দ্র: এটা কোনো এপিটাফ নয়, ঘটনার নায়ক এবং পাত্র-পাত্রি সকলেই জীবিত এবং বহাল তবিয়তেই আছে। আর এখানে কোনো কিছুই অবাস্তব ও কল্পাপ্রসূত নয়, সবকিছুই বাস্তব এবং ঘটে যাওয়া কাহিনী । কারো কারো চরিত্র হনন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই এটা লিখা হয়েছে এবং এজন্য ব্লগ স্বত্তাধিকারী কারো ধার ধারে না....। (সোজা বাংলায় পুছে না )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:৪০