ট্রেন ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু যদি বলি ঘন্টায় ৭০০ মাইল বেগের ট্রেনে কেউ ভ্রমণ করেছেন তাহলে অনেকেই বলবেন না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রথমে নিয়ে এসেছিলো কয়লায় চলা ট্রেন। এরপর তারা যুগে যুগে উন্নত থেকে আরও উন্নততর করেছে এই যানবাহনটিকে। এখন তারা মনোযোগ দিয়েছে কিভাবে এই যানটিকে আরও দ্রুততর করা যায়। সেই প্রতিযোগিতাই শুরু হয়েছে বিশ্বে। বিশ্বের কিছু দ্রুতগামী ট্রেন সম্পর্কে কিছু তথ্য,
প্রথমেই যাই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালীর আবিষ্কারক ইলোন মাস্ক ঘন্টায় ৭০০ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম এমন এক ট্রেন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ট্রেনটি সৌরশক্তির মাধ্যমে চলাচল করবে। এটি লসএঞ্জেলস থেকে সিলিকন ভ্যালীতে পৌঁছবে মাত্র ৩০ মিনিটে।
এবার আসা যাক চীনের দিকে। চীনে রয়েছে দুইটি দ্রুতগামী ট্রেন, সাংহাই মাগরেড, সিআরএইচ ৩৮০।
সাংহাই মাগরেড ট্রেনটির ঘন্টায় গতিবেগ ২৬৮ মাইল। শুধু তাই নয়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী চৌম্বক শক্তির ট্রেন। গতির দিক দিয়ে ফর্মুলা ওয়ান রেইস কারকেও হার মানায় এই ট্রেন। দ্রুতগামী এই ট্রেনটি সাংহাই মেট্রোসিস্টেমের পুডং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর লংইয়াং রোড স্টেশনের মধ্যে চলাচল করে। এই ট্রেনটি সম্পর্কে জানতে প্রতিদিনই চীনের লংইয়াং স্টেশনের মাগরেড মিউজিয়ামে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।
সিআরএইচ ৩৮০ ট্রেনটির ঘন্টায় গতিবেগ ২১৭ মাইল। চলার পথে এই ট্রেনটিকে পাড়ি দিতে হয় ৫,৮০০ মাইল পথ। সারা বছরে এই ট্রেনটি ৫০ কোটি যাত্রী পরিবহন করে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম ট্রেনের খেতাবটিও সিআরএইচ ৩৮০ এর দখলে। চীনের ব্যস্ততম নগরী বেইজিং, সাংহাই, গুয়াংঝু, ইউহান, নানজিং ও হ্যাংঝু দিয়ে চলাচল করে এই ট্রেনটি।
জাপানিরা কেনো পিছিয়ে থাকবে। তাদের রয়েছে ‘শিংকানসেন ই-৫’ নামের একটি দ্রুতগামী ট্রেন। এই ট্রেনটির ঘন্টায় গতিবেগ ১৯৯ মাইল। এই ট্রেনটিকে ‘ডাব-বিলড প্লাটিপাস’ নামেও ডাকা হয়। কারণ এর সামনের দিকটা প্লাটিপাস প্রাণীর আকৃতির মতো। শুধু গতির ঝড়ই নয়। এর ভেতরে রয়েছে বিদ্যুৎ চালিত ৪৫ ডিগ্রি কোণে ঘুরতে সক্ষম গ্র্যান ক্লাস লেদার শেল চেয়ারসমূহ। এটা হনশু দ্বীপের উত্তরাঞ্চলীয় আওমরি ও টোকিওর মধ্যবর্তী ৪১৯ মাইল ব্যাপী টি হকু চলাচল করে।
জার্মানীতে রয়েছে ‘আইস-থ্রি’ নামে একটি দ্রুতগামী ট্রেন। এটিরও ঘন্টায় গতিবেগ ১৯৯ মাইল। তবে এর রেকর্ড স্পিড ২২৯ মাইল। এই ট্রেনটি রাইন উপত্যকা, মিউনিখ ও ব্যাভেরিয়ার ন্যুরেমবার্গ হয়ে ফ্রাংকফুর্ট ও কোলন নগরীর মধ্যে চলাচল করে।
ঘন্টায় ১৯৯ মাইল গতিবেগ সম্পন্ন একটি ট্রেন ফ্রান্সেও রয়েছে। ফ্রান্সের এই ট্রেনটির নাম ‘টিজিভি পোস’। ১৯৮১ সালে চালু হওয়া এই ট্রেনটি চালু হয়। ২০০৭ সালে এটিকে আধুনিকায়ন করা হয় এবং পরীক্ষামূলকভাবে চলাকালে ঘন্টায় ৩৫৭-২ মাইল অতিক্রম করে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে ঘন্টায় ১৯০ মাইল গতিসম্পন্ন ‘কেটিএক্স-টু’ নামের একটি ট্রেন। তবে এটির রেকর্ড গতিবেগ ঘন্টায় ২১৭ মাইল। হিউন্দে কোম্পানীর এই ট্রেনটি ৭ মিনিটের মধ্যে ০ থেকে ১৯০ মাইল গতিতে চলতে সক্ষম এবং ১.২ মিনিটের মধ্যে থামতে সক্ষম। দ্রুতগামী এই ট্রেনটি মাত্র ৩ ঘন্টারও কম সময়ে সিউল থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী বুশান ও মকপোতে পৌঁছতে পারে।
তাইওয়ানে রয়েছে ‘টিএইচএসআর ৭০০টি’ নামের ঘন্টায় ১৮৬ মাইল গতিসম্পন্ন একটি ট্রেন। এই অ্যারোডিনামিক্যালী অপটিমাইজড্ অর্থাৎ রকেট শক্তির ট্রেনগুলো দ্বীপদেশটির রাজধানী তাইপে ও শিল্পনগরী কাওশিউংয়ের মধ্যে চলাচল করে। এতে সময় মাত্র ৯০ থেকে ১০০ মিনিট।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মধ্যে চলাচলকারী ‘ইওরোস্টার ক্লাস-৩৭৩’ ট্রেনটির ঘন্টায় গতি ১৮৬ মাইল। এই দীর্ঘতম ও দ্রুতগামী ট্রেনটি ব্রিটিশ দ্বীপসমূহ সহ ছাড়াও চ্যানেল টানেল দিয়ে তিনটি আন্তঃদেশীয় সুন্দর স্টেশনের মধ্যে চলাচল করে। স্টেশনসমূহ হচ্ছে লন্ডনের সংস্কারকৃত ‘প্যাংক্রাস স্টেশন’, প্যারিসের ‘গেয়ার দ্যু নর্দ’ এবং ব্রাসেলসের ‘সাউথ স্টেশন।’ এছাড়া ট্রেনটি প্যারিসের ভিজনী ল্যান্ড-এ থামে। অ্যাভিগনন ও ফ্রেঞ্চ আপ্লস-এ এর মৌসুমী রুটও রয়েছে।
‘এইভ সিরিজ ১০৩’ নামের ঘন্টায় ১০৩ মাইল গতিবেগ সম্পন্ন একটি দ্রুতগামী ট্রেন রয়েছে স্পেনে। তবে এর রেকর্ড স্পীড ২৫০ মাইল। স্পেনের এক সময়ের সবচেয়ে শ্লথ ও কম দক্ষ রেলওয়ে এখন ইওরোপের সর্ববৃহৎ দ্রুতগামী নেটওয়ার্ক-যা ১৯০০ মাইল ব্যাপী চলাচল করে। স্পেনের সবচেয়ে বড়ো নগরীতে তার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত।
তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট।