somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু পরাজিত হবে, জয়ী হবে শিবলী

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যু পরাজিত হবে, জয়ী হবে শিবলী

খালেদ হোসাইন, সুমন রহমান, কাজী শাহীদুল ইসলাম, পারভেজ চৌধুরী


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঠারোতম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ শিবলী আমাদের কারো বন্ধু, কারো স্নেহভাজন ছোট ভাই, কারো ছাত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্ত্রী ও এক বছর বয়েসী একমাত্র সন্তানটিকে ঢাকায় রেখে অধিকাংশ সময় সিলেটেই অবস্থান করতো। গত ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে হবিগঞ্জের কাছে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে শিবলীকে বহনকারী গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় । তারপর থেকে আজ অবধি জ্ঞান ফেরেনি ওর।

মৃত্যু পরাজিত হবে, জয়ী হবে শিবলী, এইটুকু আশা শুধু, সেই আশাতেই এই লেখা। ডিপ কোমায় আছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। ডাক্তাররা বলেছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ যেহেতু বন্ধ হয়েছে, নলের মাধ্যমে খাবার যখন দেওয়া গেছে তখন সব আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। স্কয়ার হাসপাতালে কাঁচের দেয়াল ঘেরা নির্জন কক্ষে প্রাণ-চঞ্চল শিবলী লাইভ সাপোর্ট নিয়ে শুয়ে আছে, এই দৃশ্য মানা যায়না, ভাবাও কঠিন, তারপরও আশা নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আরতো কোনো বিকল্প নেই।

আমরা যারা শিবলীকে অনেক দিন থেকে চিনি, কাছ থেকে যারা দেখেছি শিবলীকে তারা জানি কী প্রচণ্ড প্রাণশক্তির অধিকারী এই ছেলেটা। হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও মুখে ওর হাসি থাকতো সারাক্ষণই, যখন ছাত্র ছিল তখনও, পরিণত বয়েসেও। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যে যখনই সিলেট গেছে, ঘুরতেই হোক আর পেশাগত কারণেই হোক, শিবলী তাকে সময় দেয়নি বা তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি, এমনটি ঘটেনি কখনো। না ঠেকে নয়, স্বত:প্রণোদিত হয়ে এই কাজটি করতো শিবলী। বন্ধুদের পেলে মেতে উঠতো আড্ডায়। স্বউদ্যোগে খুঁজে বের করতো পুরনো বন্ধুদের। এতোটা বন্ধু-বৎসল, বন্ধু-পাগল ছেলে আমাদের বন্ধুদের মধ্যেও বিরল। আজ সেই বন্ধুরা ভীড় করছে হাসপাতালের বারান্দায়। শিবলী কথা বলছেনা। শিবলী অচেতন হয়ে শুয়ে আছে।

সব সময় শিবলী ভেবেছে আমাদের নিয়ে। আজ শিবলী ভাবনাহীন। যেন আর কিছু ভাববার দায় নেই ওর। অথচ শিবলীর স্ত্রী কামরুন্নেছা সেলিনার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলনা। স্কয়ারে ভর্তি করানোর সময় ভালো ট্রিটমেন্টের কথাটাই মাথায় ছিল, স্কয়ারের খরচার কথাতো মাথায় ছিলনা সেলিনার। দিনে ৪২ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ভাবা যায়! আমাদের অনেকের মতো শিবলীর পরিবারের পক্ষেও এই ব্যয় নির্বাহ করা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব! ঠিক এমন একটি সময়ে আমরা কি চুপ করে বসে থাকবো? আমরা কি একবার চেষ্টা করে দেখবো না কিছু করা যায় কিনা ? আমরা যারা শিবলীর বন্ধু কিংবা আমাদের বন্ধু যারা সবাই মিলে একটু উদ্যোগী হলেতো অন্তত চিকিৎসাটা নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালানো যায়।
এমনই এক দুর্ভাগা দেশের মানুষ আমরা যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে স্বাভাবিক ঘটনার মতো। যেমন আগে থেকে বলে দেওয়া যায় ঈদে পত্র-পত্রিকা তিন দিন বন্ধ থাকার পর প্রথম যেদিন পত্রিকা বেরুবে সেদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় বেশ কয়েকটা বড় বড় দুর্ঘটনার সংবাদ থাকবে এবং অনেকেই মারা যাবে স্রেফ বিনা চিকিৎসায়। আমরা কি চাই আমাদের বন্ধু শিবলী বিনা চিকিৎসায় মারা যাক?

আমরা নিশ্চয়ই তা চাই না। ব্যস্ত সময়ে দূর-দূরান্তে থাকা অনেক বন্ধুর পক্ষেই হয়তো হাসপাতালে এসে শিবলীকে দেখে যাওয়া সম্ভব হবে না। তা এই মূহুর্তে অতোটা জরুরীও নয়, তার চেয়ে অনেক বেশী জরুরী আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা। আমরা জানি শিবলীর সংকটাপন্ন অবস্থার কথা জানা মাত্র দেশ-বিদেশে থাকা আমাদের বন্ধুরা ওর দ্রুত আরোগ্য কামনায় অস্থির হয়ে উঠবে। সহযোগিতার হাত যে বাড়াবে তাতে কোনো সংশয় নেই।
অর্থ পাঠাবার সুবিধার জন্য শিবলীর স্ত্রী কামরুন্নেছা সেলিনার দুটো ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিয়ে দেওয়া হলো : ১৩০ ১০১ ৪৫৭১৪, সুইফট কোড: dbbl bddh , ডাচ-বাংলা ব্যাংক লি:, জয়পাড়া শাখা, দোহার, ঢাকা এবং ২৮৯৬/৫, অগ্রণী ব্যাংক লি: , ধানমন্ডি, সাত মসজিদ রোড শাখা।
শিবলী ও সেলিনার একমাত্র সন্তান বাবাই। যেদিন মেয়েটার বয়েস এক বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ঠিক তার আগের দিনই ঘটলো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাবাই সারাদিন পথ চেয়ে ছিল বাবা আসবে বলে। আসেনি। আজ শুধু এইটুকু চাওয়া- মৃত্যু পরাজিত হোক, আবার শিবলীর কোলে উঠে হাসুক বাবাই। আবারও পূর্ণ উদ্যোমে ও ঝাপিয়ে পরুক ওর কাজ নিয়ে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বড় বেশি নিসর্গ পাগল হয়ে উঠেছিল ও। হাকালুকি হাওড়, হাওড়ের পাখি, কুলাউরার বিস্তির্ণ চা-বাগান, জাফলং- মাথার মধ্যে এইসবই ছিল সারাক্ষণ। আমাদের মধ্যে যারা সাংবাদিকতা করে তাদের সঙ্গে দেখা হলেই হাকালুকিতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতো। উদ্বেগ প্রকাশ করতো জীববৈচিত্র নিয়ে। পরিবেশের উপর পাথর ভাঙ্গার বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখতে বলতো। বুনো ভাল্লুক যে নিশ্চিন্ন হয়ে যাচ্ছে সেইসব গল্প আমরা শুনতাম শিবলীর কাছেই। ক’জন মানুষ দেশের পরিবেশ নিয়ে এমন করে ভাবে আমরা জানি না। শুধু জানি শিবলীর হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু ওর পরিবারের ক্ষতি নয়, ক্ষতি আমাদের সবার, পুরো দেশের।
.................................................................................................
যোগাযোগ : কামরুন্নেছা সেলিনার ফোন নম্বর: 0171 162 9146 & 0155 23 72348
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৯
৮২টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×