somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প (A bed of roses)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুর রোদ। ক্লান্ত ঘামের গন্ধ চারপাশে। রাস্তার ধারে একটা সস্তার হোটেলে বসে একটা লোক দুপুরের খাবার খাচ্ছে। আইটেম তেমন কিছু না, ভাত, ডাল আর ভর্তা, তাও ডাল হোটেলের পক্ষ থেকে ফ্রী। পকেটের অবস্থা করুণ। বৃদ্ধার বয়স চলে যাবার মত। একসময় সবি ছিলো, এখন আর কিছুই নেই। কেবলি মরবার অপেক্ষা। পকেটটাকে ফাঁসি দেওয়া গেলে দুনিয়া থেকে হাহাকার কমতো। কিন্তু সেতো আর সম্ভব নয়। পেটের প্রয়োজনেই পকেটের প্রয়োজন। অথচো এই হাহাকার যতটা না পেটর, তার চেয়ে বেশী পকেটের।

লোকটা একমনে খেয়ে যাচ্ছে। আর ক'দিন ভাত জুটবে কে জানে? অমৃতের যতটুকু স্বাদ নেওয়া যায়।

কে একজন হোটেলে ঢোকে। ছায়া দেখা যায়। ছায়াটা এসে লোকটার টেবিলে, ঠিক লোকটার সামনে বসে। লোকটার সেদিকে তাকাবার ফুরসত নেই। একটা হোটেল বয় ছায়াটার কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে চলে গেল। ছায়াটা লোকটার দিকে তাকালো। লোকটা একমনে খেয়েই যাচ্ছে। প্লেটের ভাত শেষ হয়ে আসছে। লোকটার কেবল একটাই পার্থনা, ভাত যেন শেষ না হয়ে যায়। পেটে এখনো অনেক ক্ষুধা। চারিদিকে কেবল ক্ষুদার্ত মানুষের হাহাকার। কেউ ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে পেটের ভুড়ি বাড়িয়ে তুলছে, কারো পেটে আগুন জ্বলছে, চর্বি তো দূরে থাক, নাড়িভুঁড়ি পুড়ে যাচ্ছে। অথচো দুজনের পেটেই সমান ক্ষুধা। যে ভুড়ি বাড়িয়েছে, সে আরও বাড়াতে চায়। যার পেট পীঠের সঙ্গে গিয়ে মিসেছে, তারটা আরও ভেতরে সেঁধিয়ে যেতে চায়। কী সামাজিক ব্যবস্থা, দারুণ। লোকটার ঠোঁটের কোণায় তাচ্ছিলের হাল্কা হাসির আভা।

ছায়াটা একমনে দেখেই যাচ্ছে। ধ্যানির ধ্যান করার মত তাকিয়ে থাকে ওর ক্লান্ত মুখের দিকে। ছায়াটার মায়া হয়। ছায়াটা বলে- তোমার নাম কী গো?
এমনটা সাধারণত ছায়া করে না, অপরিচিত কারো সাথে এত সহজে কথা বলে না। কিন্তু আজ কী যে হল! নিজ থেকেই প্রশ্ন করে বসলো। কথাটা লোকটার কানে গেল, একটা নারী গলা কিন্তু প্রশ্নকারী কে? তা দেখার সময় হল না লোকটার। প্লেটের ভাত দূত শেষ হয়ে আসছে। লোকটা মুখ না তুলেই বললো- শয়তান।

ছায়াটার মনেহল, লোকটা তার সাথে ফাজলামি করছে। এমন ফাজলামি তাদের সাথে সবাই করে। কেউ ভালো মুখে দুটো কথা বলে না। এসবে তারাও অভ্যস্ত। গায়ে মাখে না। তাই বেহায়া ছায়াটা আবার বললো- মজা করছো কেন? তোমার সত্যি নামটা বলো?

ছায়াটা ভালো করে ভাবলে, মনেপড়ত লোকটা এখনো তার দিকে তাকিয়েই দেখেনি। সামনে মানুষ বসেছে না দানব, সেটা তার জানার কথা না। এই মাত্র কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলো এটা একটা মানুষ এবং সে একটা মেয়ে। লোকটা মুখ না তুলেই বললো- মজা করছি না, লোকে এই নামেই ডাকে। আচ্ছা যাও তোমার জন্য আযাযিল।

ছায়াটার আবার মনেহল লোকটা বাকি সবার মত তাছিল্যে কথা বলছে। তারা তো কেবল তাচ্ছিল্যেরই যোগ্য। এছাড়া কেউ তো কিছু দেয় না। সুতরাং পেতে পেতে তারাও অভ্যস্ত। এসবে তারা আর গায়ে মাখে না। কিন্তু লোকটার মুখের দিকে তাকালে মনেহয় যেন তাচ্ছিল্য করছে না, মিথ্যাও বলছে না। মনেহয় যেন সত্যি বলছে। সত্যিই তার নাম আযাযিল। ছায়াটা আর নামের দিকে গেল না। বুঝে নিয়েছে লোকটা তার আসল নাম বলবে না। আবার জানতে চাওয়া বৃথা। সুতরাং ছায়াটা বললো- থাকো কোথায়?
লোকটা: জাহান্নামে।
নির্ঝঝাট উত্তর। মানুষ মিথ্যা বলতে গেলেই ঝনঝার্ট বাধায়। মিথ্যা বলতে সময় লাগে। লোকটা যেভাবে উত্তর দিলো মনেহচ্ছে জাহান্নামটাই তার বাড়ি। মানুষ কে যেমন নিজ স্থায়ী বাড়ির ঠিকানা বলতে দ্বিতীয় বার ভাবতে হয় না। ঘুমের মধ্যেও গড়গড় করে বলে ফেলে।

ছায়াটা ভীষণ আকুল স্বরে বললো- সত্যি করে বলো না! ওমন করছো কেন? ছায়াটার স্বরে কী যেন একটা ছিলো, এতোটা আকুলতায় লোকটা কে কেউ কখনো কোন কিছু করার অনুরোধ করেনি। ছায়াটা ভীষণ মায়া নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। কন্ঠ আরো নরম করে বিদ্রুপ করে বললো- সেখানে কী করো?
লোকটার তেমনি একনিষ্ঠ উত্তর- শাস্তি ভোগ।
এমন ভাবে বললো যেন শাস্তির মাঝখানে খাবারের জন্য ছুটি নিয়ে এসেছে। খাওয়া শেষ করেই আবার ফিরে যাবে। নয়তো দোযখের প্রহরী দেরী করার অপরাধে তার মাইনে কেটে নেবে।

ছায়াটা ভীষণ অবাক হলো। পর মহূর্তে বুঝতে পারলো লোকটা এখানো তাচ্ছিল্য করছে। সবাই তাদের সাথে যা করে। এও ভালো মুখে কথা বলবে না। কিন্তু তাদের তো মানুষের সাথে মিশতে ইচ্ছে করে, কথা বলতে ইচ্ছেকরে। সম্পর্কে গড়তে ইচ্ছে করে, সম্পর্কে থাকতে ইচ্ছে করে৷ কিন্তু মানুষেরা তাদের শুধু তাড়িয়েই দেয়। কেউ বাড়িতে খেতেও ডাকে না, মুখে দুটো ভালো কথাও বলে না।

লোকটা খেয়ে উঠে চলে গেল। ছায়াটা বসেই রইল। তার খাবার এসে পড়েছে।



পর্ব-১
চলবে.........
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াতকে দেশপ্রেমিক শক্তি বলা ইতিহাসের নির্মম রসিকতা: আ স ম রব

লিখেছেন সহীদুল হক মানিক, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

‘জামায়াতে ইসলামীকে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি বলে আখ্যায়িত‘ করার প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাকরণবিদ ছাগশাবকগণ

লিখেছেন এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:২৭

একদিন দুইজন ব্যক্তি গল্প করছিল। উক্ত দুই ব্যক্তি অত্যন্ত জ্ঞানী ছিল। তারা ব্যাকরণ ভালো জানতেন। তারা হাঁটতে হাঁটতে দেখল দুইটি কাঁঠালপাতা পড়ে আছে। তখন তারা সেই দুইটি পাতা খেলো। তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান, আমেরিকা, জামাত-শিবির আমাদেরকে "ব্যর্থ জাতিতে" পরিণত করেছে।

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭



আজকে সময় হয়েছে, আমেরিকান দুতাবাসের সামনে গিয়ে বলার, "তোরা চলে যা, ট্রাম্পের অধীনে ভালো থাক, আমরা যেভাবে পারি নিজের দেশ নিজেরা গড়বো। চলে যাবার আগে তোদের পাকী... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হয়তো কখনো আমরা প্রেমে পড়বো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০০


পোস্ট দিছি ২২/১২/২১

©কাজী ফাতেমা ছবি

কোন এক সময় হয়তো প্রেমে পড়বো আমরা
তখন সময় আমাদের নিয়ে যাবে বুড়ো বেলা,
শরীরের জোর হারিয়ে একে অন্যের প্রেমে না পড়েই বা কী;
তখন সময় আমাদের শেখাবে বিষণ্ণতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান সরকার কেন ভ্যাট বাড়াতে চায় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:১০


জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ ছাত্রদের ডাকে রাস্তায় নেমে আসে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়। অবশ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×