somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালার অব প্যারাডাইস - একটি চমৎকার ইরানী মুভি

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বিনোদনের জন্য চলচিত্র তৈরি হচ্ছে হরহামেসা। তবে পৃথিবিতে মাঝে মাঝে এমন কিছু চলচিত্র নির্মিত হচ্ছে যা জীবন থেকে নেয়া। আর তখনই সেটা পরিণত হয় শিল্পে। নির্মাতা তার মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যকে, কঠিন বাস্তবতাকে সামনে তুলে আনেন। আমাদের মন সত্যকে মানতে চায় না। ইচ্ছে করে পরিচালক হয়ে সত্যকে বদলে দিয়ে লাখো মানুষেকে খুশি করি। কিন্তু জীবন চলে তার নিজস্ব নিয়মে। তাকে পরিচালিত করে এক অদৃশ্য শক্তি। সেই অদৃশ্য শক্তি এতই পরাক্রমাশীল যে তাঁর দ্বারা নির্ধারিত নিয়তিকে এড়ানোর সাধ্য আমাদের নেই। আমরা এতটাই অসহায়। কালার অব প্যারাডাইস ছবিটি এমনই একটি ছবি।

গল্পের প্রধান চরিত্র রয়েছে বাবা আর তার অন্ধ ছেলে মোহাম্মদ। অন্ধত্ব ছাড়া আর তার অন্য কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। সে অন্ধদের স্পেশাল স্কুলে ব্রিয়াল পদ্ধতিতে পড়াশুনা করে। প্রকৃতির ভাষা তাকে কাছে মুগ্ধ করে। পাখিদের কিচির মিচির ভাষা তাকে আনন্দ দেয়। বোনদের অসম্ভব ভালবাসে আর ভালবাসে তার দাদীকে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় সামারে তিন মাসে জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। সব বাবা মায়েরা তাদের ছেলেদের নিতে আসে কেবল আসেনি মোহাম্মদের বাবা।

মোহাম্মদের মা স্বর্গীয় হয়েছেন অনেক আগে। তার বাবা অজানা ভবিষ্যতের আশংকায় পুনরায় বিয়ে করতে চান। তবে শংকা হয় মেয়ে পক্ষ হয়ত মোহাম্মদের প্রতিবন্ধিকতার বিষয়টি জেনে তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে না। তাই সে মোহাম্মদকে যথা সম্ভব দুরে দূরে রাখতে চান। সামারের বন্ধে স্কুল থেকে বাড়ী নিয়ে যেতে তাই তার অনীহা। শত অনীহা সত্বেও তাকে আসতে হয় এবং ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

মোহাম্মদকে পেয়ে কেবল তার দাদীই নয় এলাকার অন্য সব ছেলে মেয়েরাও অনেক খুশী। এখানে বলে রাখা দরকার যে তাদের গ্রামটি একটি বিশাল পাহাড়ের উপর। গ্রামের প্রতিটি দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হবে যেন আমাদেরই গা। মোহাম্মদের বাবা নিজের জন্য বিয়ে ঠিক করে এবং বাড়ি ফিরে মহাম্মদকে নিয়ে এক কাঠ মিস্ত্রীর দোকানে কাজ শিখাবার জন্য রেখে আসে। অন্যদিকে তাঁর দাদীমা এই শোকে বেহেস্তবাসি হন। একই সুত্রে মোহাম্মদের পিতার বিয়েও ভেংগে যায়।

এইবার বাবার বোধ ফিরে আসে। সে বুঝতে পারে খোদা তাকে যে নিয়তি লিখে দিয়েছে তাকে ফিরাবার পথ নাই। বরং নিয়তি ঠিক করতে গেলে অন্যদিকে বিরাট সমস্যা এসে উপস্থিত হয়। বোধের উদয়ের সাথে সাথে সে মোহাম্মদকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে যায়। ফিরার পথে ঘোড়ার পিঠ থেকে মোহাম্মদ পানিতে পরে যায়। ছেলেকে হারিয়ে বেহুশ পিতা পানিতে ঝাপ দেয়। প্রচন্ড স্রোতের কারনে ছেলেটিকে সে উদ্ধার করতে ব্যার্থ হয়। একসময় সে নিজেকে উদ্ধার করে এক চরে। দুরে তাকিয়ে দেখতে পায় তার ছেলে পরে আছে। দ্রুত সেখানে গিয়ে বুকে তুলে নেয়। ইতোমধ্যে মোহাম্মদ পাড়ি দিয়েছে অন্য ভুবনে? নাকি পাখীর কলকাকলিতে নড়ে উঠা হাত বলে সে এখনো বেঁচে আছে। আমার অভিজ্ঞতা বলে পরিচালক মোহাম্মদের হাত থেকে হাল্কা আলো বের হচ্ছে দেখিয়ে আমাদের বুঝাতে চেয়েছেন ছেলেটি অন্য ভুবনের বাসিন্দা হয়েছে।

ছবি দেখে যদি আপনার মনে হয় লেখক ও পরিচালক মাজেদ মাজেদি সত্যিকার অর্থে তার ছবিতে প্রকৃতির কারিশমা তুলে ধরতে চেয়েছেন তাহলে আপনি ঠিক ধরেছেন। চলচিত্রে তিনি তুলে ধরেছেন ‘ধর্মিয় শৈল্পিকতা’। বুঝাতে চেয়েছেন সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছার কাছে আমরা কতটাই অসহায়। তবে প্রতিটি দৃশ্য এত যত্ন করে, এত মমতা দিয়ে তিনি তুলেছেন যা অন্য কোন চলচিত্রে আমি দেখিনি। তার আগে নির্মিত চিল্ডেন অব হেভেন ছবিটি কেউ যদি দেখে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন আমি কোন শক্তিবান মাজেদ মাজেদির কথা বলছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×