নিত্যদিন ঠিক যেমন কাজের ব্যস্ততায় পার হয় সময়। আজও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এককথায় বলা যায় এই’ই রোজনামচা। অনেকটা সময় একান্ত অনিচ্ছায়ও মন চাইলেও কারোর সাথে যোগাযোগ করা হয়ে উঠে না। যখন নিজের বেলায় হয় তখন আমরা মুখ ফুটে বলে দেই “কঠিন বাস্তবতা” নামক অতি পুরানো শব্দটি। এমনও কি, কেউ কোন ম্যাসেজ পাঠালো বা ফোনে কল দিল যা সঠিক সময়ে দেখা হলো না বা উঠানো হয় না বা পরবর্তীতে তার উত্তর দেওয়ার কথা ভূলে যাই। এমনটি হয় একান্ত অনিচ্ছাকৃত। তারপরও কেউ মনে করে নেয় কি এর সব’ই হয় বা হচ্ছে ইচ্ছাকৃত। এমন কোন প্রতিশব্দ নাই যা খেসারতের বিণিময় হিসাবে প্রযোজ্য, কারণ “দুঃখিত” বেশ পুরানো হয়ে গেছে। এতে এখন চলে না। হঠাৎ’ই বলা যায় একারণে আজ কাল আর ডাক চলে না বলেই, তো বিকেল তখনও অল্প স্বল্প বাকি আছে হারাতে ঠিক তখন হাতে পেলাম আদি’র চিঠি। আদি লিখেছে -
“ কতদিন ধরে লিখতে চাইছি কিন্তু পারছি না। মনে হচ্ছে কোথায় যেন কি নেই। কি নেই তাও বুঝতে পারি না কিন্তু মনেও সাহস আসে না। আজ লিখতে বসে ভাবছি আজ যে বিকাল দেখলাম বা সেদিন সকালে উঠে যে রাস্তায় হেটে বেড়ালাম তাই নিয়েই লিখি। প্রতিদিন বিকাল হচ্ছে আমি তো দেখছি। নতুন তো নয় তবে কেন আমার কাছে খারাপ লাগল। আজ বিকালে কি আমার মনে আকাশের নিলাজ সুন্দর রঙ বা মেঘের আড়ালে থাকা কোন পুরানো স্মৃতি আমায় সব ভুলিয়ে দিতে পারলো না? আমি কি খুব বেশি কিছু চেয়েছি? নাকি সবার আড়লে থাকা পুরানো বইয়ের মত থাকতে চাওয়াই অপরাধ হয়ে গেলো? আজ রাতে কোন রুপকথা না থাকুক কিছু টুকরো স্মৃতি তো থাকতে পারতো? কেন নেই? এই কেন'র উত্তর আমি জানি না। না জানা কিছু উত্তর আর জানা কিছু প্রশ্নের মাঝে আমি যেন ঘুরে বেড়াচ্ছি। দেয়ালে ঝুলানো পুরানো দিনের দিনপঞ্জিকা আর আমার প্রশ্নের উত্তর দুটোর মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া কি খুব কঠিন কিছু? আমাদের জীবনটা খুব ছোট কিন্তু সম্পর্কগুলো বিশাল। কারো জায়া, কারো পত্নী, কারো মাতা বা কারো প্রেমিকা , এই রকমই হয় নারী জীবনপথ। সব সম্পর্কই নানা ধাপে নানা পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যায়। পরীক্ষায় সাফল্য আসে, জীবনে পরিপূর্ণতা আসে । সম্পর্ক মজবুত হয়, জীবন পূর্ণতা পায় না শুধু, পায় প্রাণ, পায় এগিয়ে চলার ইচ্ছে। জীবন এর কিছু বিকালে হয়ত তাই না চাইতেই মেঘের দেখা পাওয়া যায়। আর একার একটি একলা সকাল কিছু দেখালো নতুন করে। বাসার সামনে একটা বিশাল পুকুর থাকায় হাঁটাহাটির শখ ভালোই পূরণ হয়। বেরসিক মা যখনি এসে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় তখন সব সপ্ন মনে হয় পেঁজা তুলোর মত উড়ে গেল। জানালার বাইরে বা গেটের বাইরে যে জগত তা মায়ের শাসনের মাঝেই আটকা পরে যায়। এটাও তো ভালবাসা। সবার ভালবাসা অগ্রাহ্য করা যায় নাহ। আমার সাধারণ মা তার সাধারণ চিন্তার বাইরেও যে আমাকে শাসন করেন তার চোখ দিয়ে, গান আছে না.... “চোখের সে ভাষা বুঝতে হলে, মনের মত মন থাকা চাই”.... হা হা হা। আমি কিন্তু বুঝি তার চোখ দেখেই কখন কি বুঝায়। এটাই সম্পর্কের না বলা কথা বলে যায়। কোনো টেলিফোন কখন যে বেজে যায় কেই বা জানে আর কখন ই বা আমার মনঃবীণা কোন সুরে বেজে গেছে। সুর অনেক হয়, সুরের সাধনাও অনেক নিয়মেই করা যায় তবে আমার মনের সুর যে কোন রাগাশ্রয়ী তা তো আমি নিজেই বুঝলাম নাহ। আর আমার সকাল আমার বিকেল আমার নিয়মেই হয়। হয়ত তোমাদের নিয়মেও হয় কিন্তু আমার টা তো আমারই। আমার আমি র বাইরে চিন্তা খুব কম করি যা সাধারণ আর কেউ করে কি না জানি নাহ কিন্তু আমি করি। একি সাথে ভাবি আমি এত সার্থপর কেন? চাই নাই হতে কিন্তু এমন জীবনপথ যে হয়ে যাচ্ছি। যা করতে চাই নাহ তা করি নাহ তাই খামখেয়ালি উপাধি বহু ছোটবেলা থেকেই প্রাপ্ত। তাই তো আমি পালাতে চাই। পালাতে যেয়ে বার বার নানা মায়ায় বাধা পরে যাই। মায়ার বাঁধন কাটাতে গেলে যত মোহ কাটাতে হয় কাটাতে পারি নাহ। আজ এটুক’ই।
ভাল খেকো।”
চিঠির আদ্যেপান্তো বেশ ক’বার পড়লাম তবে কিছুই বুঝলাম না। ইচ্ছে ও করছে না একবার জিজ্ঞেস করি এসব কি। তবে বলতে ইচ্ছে হয় -
তোর জন্যে হাজার পরিক্রমা,
নিঃশ্বাস ভরিয়া নিই তোর’ই সৌরভ-
পথের বাঁকে তোর ছায়াতে বসেই হাসি আপন মনে,
কখনও তোর হাতের আঁছড় দগ্ধ হওয়া ঐ বালুচর।
ঘোমটা টানায় নাকের নোলক, সূর্য সম তোর নাকফূল।
মিষ্টি হাসির যাদুর পরশ-
দুর্বাঘাসে চপল পায়ে তোর পথের ঐ ধারায় বয়ে-
শিহরিত শিশির দানা,
বৃষ্টি সমেত মেঘের খোলস
উড়াই ধুলো ঘুর্ণি করে -
তোর হাসিতে ঝরছে ধারায় বৃষ্টি হয়ে ঝুমঝুমিয়ে -
তোরই জন্যে ফুলের পরাগ
তোর কান্নায় রাগ-অভিমান।
বাড়িয়ে দেওয়া অলস হাতের -
চমকানো সে হৃদ আলিঙ্গন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৩