The South American Football Confederation - যা CONMEBOL নামে পরিচিত ১৯১৭ সালের ৯ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় । এটি পৃথিবীর সবচাইতে পুরোনো ফুটবল ফেডারেশন যা ফিফা কর্তৃক স্বীকৃত । CONMEBOL সাউথ আমেরিকার ১০ টি দেশের ফুটবল এ্যাসোসিয়েসন এর সমন্বয় যা সদস্য সংখ্যার দিক দিয়ে ফিফা'য় সর্বনিম্ন ।
এই সংস্থার অধীনস্ত সদস্যগুলো বিগত ১৯টি বিশ্বকাপের ৯টি ঘরে তুলেছে (ব্রাজিল ৫বার, আর্জেন্টিনা ২বার, উরুগুয়ে ২বার ) । ফিফা আয়োজিত ২২টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কারের সাথে ৪টি ক্লাব বিশ্বকাপ এবং আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের ১টি করে অলিম্পিক গোল্ড মেডাল সংস্থাটির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে ।
[ল্যাটিন আমেরিকান দেশের তালিকা ]
' ।
[ বিশ্বকাপের সাফল্যের চিত্র ]
এই অঞ্চলের স্বাতন্ত্র শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি প্রমাণ হলো 'কোপা আমেরিকা । প্রথম কোপা আমেরিকা অনুষ্ঠিত হয় ১৯১৬ সালে অর্থাৎ প্রথম বিশ্বকাপেরও ১৪ বছর আগে !!!! দর্শক আগ্রহের দিক দিয়ে কোপা হলো বিশ্বের তৃতীয় সেরা টুর্নামেন্ট ।
[ফিফা কনফেডারেশন কাপে সাফল্য ]
সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা, দারিদ্রতা, অস্থিতিশীল রাজনীতি, অশিক্ষা, এইডস ... এরকম আরো অসংখ্য প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখানে এতো ভালো ফুটবলার তৈরি হলো কি করে ? তারা এতো সফলই বা হোলো কি করে ? ব্রাজিলের 'জোগো বোনিতো' (সুন্দর ফুটবল) ধারনা এলোই বা কি করে ???
একসময় ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবলের বৈশিষ্ট্য ছিল ব্যাক্তিগত শিল্পনৈপুন্য, সাটাসট ড্রিবলিং , এক দেড়ফুট জায়গার উপরেই অবিশ্বাস্য সব টার্ন , টুকটাক শর্ট পাস আর ডামি খেলে ডিফেন্সের মাম্মি কা ড্যাড্ডি এক করে দিয়ে গোল করা , গায়ে সেঁটে থাকা একটা, ইন সাম কেসেস একাধিক মার্কার নিয়েও সাপের মত শরীরকে হেলাতে দোলাতে পায়ের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়া , উইং থেকে ইনসাইড ডজ মেরে মাখনের মধ্যে ছুরি চালানোর মত করে চকিত শট …
এসব ছিল , মানে পেলে-গারিঞ্চা, মারাডোনা হয়ে রোমারিও-বেবেতো ,বাতিস্তুতা এমন কি রোনাল্ডো পর্যন্ত এইসব ব্যাপার ছিল । যার জন্যে সুদূর এই বঙ্গদেশের কোন কোণায় বসে লাল চা আর লাঠি বিস্কুট গিলতে গিলতে মফিজ মিস্ত্রিও এই কদিনের জন্যে #হলুদ হয়ে যেতো। ক্রিকেটে চোখমুখ বন্ধ করে পাকিস্থানকে সাপোর্ট করা নওশাদ হাজি'ও এ ক'দিনের জন্যে #নীল সাদা। বাবা-চাচারা 'মারাডোনা'কে চিনতে চাইতেন, বড় ভাই- সমবয়সীরা 'রোনাল্ডো'কে।
কিন্তু সেসব শিল্প এখন আর নেই। নেই মানে একেবারেই নেই। ইউরোপিয়ানদের কাঠকাঠ কম্পিটারাইজড টীমগেমের সাথে শিল্প মারাতে গিয়ে যখন আর পেরে ওঠা গেল না ,
জাগালো বল্লেন - "জেতার জন্যে খেলছি , পাবলিককে খুশী করার জন্যে নয়। "
ভাতকাপড়ের জন্যে ইউরোপীয় ক্লাবগুলোতেই বারোমাস পড়ে থাকতে হলো , শিল্প আর আধুনিকতা মিলে তৈরি হলো ‘ফিউশন’। সেটা না চিরায়ত লাতিন আমেরিকার ধারার সাথে মেলে , না কম্পিঊটারাইজড ইউরোপিয়ান ধারার সঙ্গে। কিছু ক্লাব আবার এটাকে কাজে লাগিয়েই ক্লাব ফুটবলে খাপে খাপ মর্জিনার বাপ হয়ে গেলো। একই দলে দুনিয়ার তারার সমাবেশ হলে যা হয় আর কি! সেখানে মেসিও ফাটিয়ে দিলেন , নেইমারও কম গেলেন না। মার্সেলো,মাচেরানোরা তেড়ে খেল্লেন , হিগুয়েন গোলের পর গোল করে গেলেন,আগুয়েরো হয়ে গেলেন স্টার।
এখন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। বিশ্বায়নের যুগে ফ্রান্সিস সুন্দরীর গায়ে উঠছে জামদানি শাড়ি , লজ্জাবনতা বঙ্গললনার গায়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ডিজাইনার'স টপ। সেখানে ফুটবল মাঠে এক আধটু তেলে-জ্বলে হলে তেমন ক্ষতি ছিলোনা। কিন্তু বাদ সাধলো চোখ।
যে চোখ ফুটবলের নামে অনির্বচনীয় যাদুকরী উপভোগ করে এসেছে তাদের প্রত্যাশার পারদ নামতেই চায়না।
মেসির পায়ে বল পড়ছে , দুম করে ফ্লাশব্যাকে চলে আসছে বেঁটে মারাডোনার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ঐশ্বরিক গোলের রিপ্লে। নেইমারকে দেখালেই লোকে রোনাল্ডো বা রোমারিওকে খুঁজছে। আর পাচ্ছেনা বলেই ফ্রাস্টেশনের চূরান্তে পৌঁছে গিয়ে হলুদ নীলসাদাকে গালাগালি করছে কিংবা ভাইসভার্সা।
ইউরোপের দেশগুলো পিওর আবেগহীন ফুটবল খেলে মাত করে দিচ্ছে। কিন্তু তাতে বাঙালীর পোষাবে কেন?
কথায় কথায় শোষকের কালো হাত ভেঙে দেওয়া বিপ্লবী স্পিরিটের রোমান্টিসিজম ঠিকঠাক বাজার পাচ্ছেনা। ধনী দেশ ,ওয়ার্কিং ক্লাস ফুটবল এইসব টার্মস আসছে পাছা বাঁচাতে। কেউকেউ আবার ফুটবলবহির্ভূত কারণ দেখাচ্ছে। গরীব দেশ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরে বাবা গরীবিকে সাপোর্ট করবি তো নাইজেরিয়া-ঘানা প্রভৃতি আফ্রিকান দেশগুলোকে কর। আর খেলার উত্কর্ষতার জন্যে করবি তো যে ভালো খেলছে তাকেই কর। নাহলে যত্তসব *লের যুক্তি!
তবুও "আশায় খাটে চাষা"র আপ্তবাক্য মেনে ক'দিন এই আশায় বসে থাকতে হবে যে , ফ্রান্স , জার্মানি , হল্যান্ড হঠাত্ করে বাজে খেলতে শুরু করবে। অন দ্য আদার হ্যান্ড তেলে-জ্বলে মেশানো ফুটবল নিয়ে লাতিন আমেরিকার দুগ্ধপোষ্যরা ম্যাজিক দেখাতে শুরু করবেন!
করলে অবশ্য মন্দ হয়না। ওদের বাপদাদারা ফুটবল বড় ভালো খেলতেন যে।
# জাগতে রাহো ..... হেক্সা আসছে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬