‘গ্রেপ্তার হবো- কল্পনাই করিনি। তাইলে আগেই চাপাতি আড়াল করতাম। ক্যামেরায় ধরা দিতাম না।’ গতকাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা বলেছে রফিকুল ইসলাম শাকিল ওরফে চাপাতি শাকিল। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়,হাইকমান্ডের নির্দেশে মিছিলে গিয়েছি। চাপাতি দিয়ে ৬-৭ কোপ দিয়েছি। কয়েকটি কোপ মিস হয়েছে। তবে জায়গামতো লেগেছে ২-৩টা। শাকিল আরও বলেছে, ঘটনার দিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে মিছিল নিয়ে বের হই রাস্তায়। মিছিলে ছিলেন জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি। হঠাৎ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে বিশ্বজিৎকে ধরার নির্দেশ দেন নেতারা। তখনই ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী একযোগে দৌড়ে গিয়ে ধরে মারধর শুরু করে। তবে তার আগেইরাজন, ইউনুস ও মোস্তফা ভাই ছুরি মেরে সাইড কেটে চলে যায়। রাজন ভাইয়ের মুখ ছিল রুমালে ঢাকা। এরপর আমাদের নাগালে পাই বিশ্বজিৎকে। বড় ভাইদের দেখাদেখি আমিও চাপাতি দিয়ে কোপাই। রড দিয়ে পেটায় নাহিদ, লিমনসহ আরও অনেকে। কিন্তু আমার কোপই ফোকাস হয়েছে। বার বার ক্যামেরায় দেখানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলে, জবিতে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। এখন শুনতেছি, আমরা দলের সক্রিয় কর্মী না। আসলে বিপদে পড়লে কেউ এগিয়ে আসে না। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বজিৎকে মারার আগেও একাধিক মারামারি ও সংঘর্ষে চাপাতি ব্যবহার করেছে শাকিল। তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। তবে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল বিশ্বজিৎকে মারার আগে মাত্র একবার চাপাতি ব্যবহার করেছিল বলেস্বীকার করেছে। তখন জবি ছাত্রলীগও সেক্রেটারি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। শাকিল জানায়, বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে নেয়ার পরপরই মৃত্যুর সংবাদ পাই। তখন সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে রক্তমাখা শার্ট খুলে পরিত্যক্ত ড্রেনের মধ্যে ফেলে দিই। চাপাতিওলুকিয়ে ফেলি। রাতে চলে যাই এক নিকটাত্মীয়র বাসায়। ওই বাসার টেলিভিশনের খবরে বিশ্বজিৎকে কোপানোর দৃশ্যে বারবার আমাকে দেখাচ্ছিল। তখন কয়েকজন আত্মীয় আশঙ্কা করে বলেন, তুই ধরা খেয়ে গেছিস। আর বাঁচতে পারবি না। এসব কথা শুনেই আমার ভয় হতে থাকে। একপর্যায়ে পালিয়ে যাই বাড়িতে। আমার বাবা একজন সহজ-সরল মানুষ। এ কোপানোর দৃশ্য দেখার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। এখন বুঝতে পেরেছি, আমি বড় পাপ করে ফেলেছি। বাবার কবরটাও দেখতে পেলাম না। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজুররহমান নাহিদ জানায়, সবার দেখাদেখি আমিও রড দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেছি। কিন্তু আমার আঘাতে বিশ্বজিৎ মরেনি। মরেছে শাকিলের চাপতির কোপে, রাজন এবং মজনু ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে। সূত্র জানায়,বিশ্বজিতের শরীরে প্রথম ছুরিকাঘাত করে রাজন, মোস্তফা ও ইউনুছ। ওই দৃশ্য গণমাধ্যমের ক্যামেরায় পুরোপুরি ধরা পড়েনি। এর দ্বিতীয় দফায় শাকিলের চাপাতিরকোপ ও অন্যদের রড লাঠির আঘাত ধরা পড়েছে। প্রথমে শিবির সন্দেহে ছুরি মেরেছে। পরে ছাত্রদলের কর্মী সন্দেহে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। শাকিল জানায়, বিশ্বজিৎনাম শোনার পর ছাত্রদল মনে করেছি। তার আগেই শিবির সন্দেহে রক্তাক্তকরেছে তাকে।
মামলার তদারকি কমকর্তা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যদিয়েছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি পলাতক আসামিেদর গেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৫ই ডিসেম্বর বরগুনা জেলার বেতাগী থানার বিবিচিনি এলাকার দেশান্তরকাঠি গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার বাড়ি থেকে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওইদিন সন্ধ্যা ৭টারদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটিড্রেন থেকে বিশ্বজিৎকে কোপানোর কাজে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৪ই ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ সিলেটের জাফলং এলাকার একটি রেস্টহাউজ থেকে শনাক্ত হওয়া আসামি জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন (২৪) ও রাজধানীর উত্তরা থেকে সাইফুল ইসলাম (২৪)-কে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের সবাইকে আদালতে হাজির করে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে গত ৯ই ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানাধীন জজ কোর্টের সামনে নিরপরাধ পথচারী বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা।