কুরবানির পশুর অপ্রোয়োজনিয় অংশ
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আর মাত্র কয়েক দিন পর সাড়ম্বরে উদ্যাপন হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে জড়িত বিশ্বাসীদের আদি
পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পবিত্র স্মৃতি। একই সঙ্গে এটি এমন
এক উৎসব ও ইবাদত, যা মানব জাতির ঐক্য এবং বিশ্বশান্তির পথ দেখাতে পারে। অনুমিত হিসাবে সাড়ে ৪ হাজার বছর
আগে আল্লাহ নবী হজরত ইবরাহিম
(আ.)-কে তার প্রিয় বস্তু কুরবানির নির্দেশ দেন। আল্লাহর প্রতি সংশয়াতীত আনুগত্যে হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রিয় পুত্র ইসমাইল
(আ.)-কে কুরবানির সিদ্ধান্ত নেন। অপত্য স্নেহ যাতে ঐশী নির্দেশ পালনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করতে নিজের চোখ
বেঁধে প্রিয় পুত্রকে কুরবানির প্রাক্কালে আল্লাহর ইচ্ছায় ইসমাইল (আ.)-এর বদলে একটি দুম্বা কুরবানি হয়। ফেরেশতা হজরত ইবরাহিমকে জানান, আল্লাহ তার আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়েছেন। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এ মহিমান্বিত স্মৃতি অনুসরণে
হাজার হাজার বছর ধরে পালিত হচ্ছে কুরবানির প্রথা। বস্তুত
কুরবানি নিছক পশু জবাই নয়। মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকে
যে অহংবোধের হীনমন্যতা, তা বিসর্জন দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়াই হলো কুরবানির শিক্ষা। এ বিষয়ে আল্লাহর ঘোষণা_ পশুর
রক্ত বা মাংস নয়, তার কাছে পেঁৗছে বান্দার তাকওয়া। সত্য,
সুন্দর ও কল্যাণের উৎস_ মহান আল্লাহ।
আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী জীবন গড়ার মধ্যেই রয়েছে কুরবানির আসল মাহাত্ম্য। তা উপেক্ষা করে কুরবানির নামে অহংবোধের প্রকাশ ঘটলে তা
হবে পশুহত্যার নামান্তর। এ মনোভাব ধর্মীয় দৃষ্টিতেও পরিত্যাজ্য। ঈদুল আজহা বা কুরবানির জন্য সারা দেশে এখন চলছে প্রস্তুতি। কুরবানিতে পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সচেতনথাকতে হবে। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। জবাইকৃত পশুর রক্ত ও বর্জ্যে যাতে পরিবেশ দূষিত না হয় তা নিশ্চিত করা আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য।
কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং
নগরীর পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। কুরবানিদাতারা কুরবানির পর যদি বর্জ্যগুলো নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করেন তাহলে পরিবেশ
নষ্ট হবে না। আর এটা না করলে এর
জন্য কষ্ট ভোগ করতে হবে আমাদেরই। কিন্তু আমরা তো অন্তত নিজের এলাকারপরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতে পারি।
পশুর যেসব অংশ ফেলে দিতে হবে সেগুলো এভাবে যত্রতত্র ফেলে না রেখে বড় কোন ব্যাগে ভালোভাবে বন্ধ করে
নির্দিষ্ট স্থানে বা ডাস্টবিন এ রাখলে তা সমাজের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে পশু কুরবানি করার কারণে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হওয়া নতুন কিছু নয়। পশুর হাট বসা থেকে পশু কুরবানি করা পর্যন্ত
রাজধানীতে বর্জ্য জমতে থাকে। এর সঙ্গে ঘর-গৃহস্থালির আবর্জনা যুক্ত হয়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি
বর্জ্যের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সিটি করপোরেশনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। কুরবানির পশুর চামড়া ও বর্জ্য নিয়েও কিছু করণীয় রয়েছে।
কুরবানির পশু জবাই করার ফলে
যাতে পরিবেশ বিন্দুমাত্রও
দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল
রাখতে হবে। রক্ত আর অন্যান্য
বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্যে
প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা
নিয়েছে, তার সঙ্গে সহযোগিতা করা দরকার। কুরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনারউন্নতি হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এখনো দেশের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বর্জ্যের সঠিক
ব্যবস্থাপনা করা গেলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়ার
সুযোগ রয়েছে। আর চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরণে সচেতন থাকতে হবে। চামড়া মূল্যবান অর্থকরী সামগ্রী। চামড়া পাচার রোধে
কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত হবে বলে আশা করা যায়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্বের সবার শান্তি ও মঙ্গল কামনা করি।
পোষ্টি সংগ্রিহিত
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯