somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি জল্লাদ শাহজাহানের প্রথম সাক্ষাতকার

০৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পৃথিবীর সবচেয়ে
দীর্ঘ সময়
কারাগারে বন্দি
জল্লাদ
শাহজাহানের
প্রথম সাক্ষাতকার
TODAY
নীরব মানবাধিকার লঙ্ঘন :
৩৩ বছর বন্দী জল্লাদ
শাহজাহান !!
অনেক ভাবেই তাকে
ডাকা যায়। তিনি সারা
পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে
দীর্ঘসময় (৩৩ বছর) ধরে
কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের সব
থেকে বেশি আসামীকে
(৩২ জনকে) ফাঁসি
দিয়েছেন। তিনি
বাংলাদেশের সকল
কারাগারের প্রধান
জল্লাদ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের ৫ ঘাতককে
ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের
কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ
শিকদার, জঙ্গি নেতা
বাংলাভাই, আতাউর রহমান
সানী, শারমীন রীমা
হত্যার আসামী খুকু মনির,
ডেইজি হত্যা মামলার
আসামী হাসানসহ বঙ্গবন্ধু
হত্যা মামলার আসামীদের
ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি
একমাত্র জল্লাদ যিনি
একরাতে দুই কারাগারে
চারজন আসামীকে ফাঁসি
দিয়েছেন। তিনি
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে
অভিনয় জগতে জল্লাদদের
আইডল। যুদ্ধাপরাধীদের যদি
ফাঁসি হয় তাহলে হয়তো
তিনিই তাদেরকে ফাঁসি
দিবেন। জল্লাদ
শাহজাহানের জীবনে
অনাকাঙ্খিত ভাবে অনেক
অর্জন থাকলেও তিনি কারও
সামান্যতম সহানুভূতি পান
না। পত্রিকায় তাকে নিয়ে
অনেক ভুল খবর প্রকাশিত
হলেও তা শুধরানোর পথ নেই
কারণ তার সাথে
যোগাযোগ করার সুযোগ খুব
কম লোকই পান। ফৌজদারী
৫৪ ধারার একটি মামলায়
কারাগারে গেলে তার
সাথে আমার পরিচয় হয় এবং
এবারই প্রথম তিনি কোন
সাংবাদিকের কাছে তার
প্রথম এক্সক্লুসিভ
সাক্ষাতকার দিলেন।
তিনি তার জীবনে ঘটে
যাওয়া অসংখ্য গল্প এবং
কারাগারের অনেক
অজানা চিত্র নিয়ে কথা
বলেছেন আমার সাথে।
অনুরোধও করেছেন পারলে
তার সম্পর্কে যেন কিছু
লিখি। মানবিক দিক
বিবেচনা করেই মূলতঃ
তাকে নিয়ে লিখতে
বসেছি।
জল্লাদ শাহজাহানের
পরিচয়
পুরো নাম মো: শাহজাহান
ভূঁইয়া। জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫০
সালের ২৬ মার্চ। জন্মস্থান
নরসিংদীর পলাশ
উপজেলার গজারিয়া
ইউনিয়নের ইছাখালী
গ্রামে। তিন বোন এক ভাই।
বাবার নাম হাসান আলী
ভূঁইয়া। মাতা সব মেহের।
পড়াশোনা করেছেন
এইসএসসি পর্যন্ত। তার
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম
খাস হাওলা ফ্রি
প্রাইমারি স্কুল, মাধ্যমিক
পড়াশোনা করেছেন
পারলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে
এবং সর্বশেষ উচ্চমাধ্যমিক
পড়াশোনা করেছেন
নরসিংদী সরকারি
কলেজে। ব্যক্তিগত জীবনে
তিনি অবিবাহিতি| ১৯৭৪
সালে তিনি এইসএসসি পাশ
করেন। তার জাতীয়
পরিচয়পত্র নাম্বার হচ্ছে-
২৬৯১৬৪৯১০৬১২৯|
সেনাবাহিনীতে ছিলেন
তিন বছর
ছোট থেকেই
সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড
তাকে খুব আকর্ষণ করতো।
বিশেষ করে তাদের
শৃঙ্খলাবোধ তার সব থেকে
বেশি ভালো লাগতো।
তাই মনে প্রাণে সব সময় স্বপ্ন
দেখতেন সুযোগ পেলেই
সেনাবাহিনীতে চাকরি
করবেন। বাবার মাধ্যমে
তিনি একবার খবর পান
সেনাবাহিনীতে লোক
নেওয়া হচ্ছে। এরপর
সেনাবাহিনীর চাকরির
জন্য অংশগ্রহণ করলে তিনি
টিকে জান। যথা সাধ্য তিন
বছর সেনাবাহিনীতে
থাকার পর বড় অফিসারদের
ধমকের কারণে জিদ করে
বাড়ি চলে আসেন। তিনি
বলেন অফিসারদের কমান্ড
আমার ভালো লাগতো না|
কারণ আমি তাদের থেকে
পড়াশোনা এবং
পারিবারিক দিক থেকে
অনেক এগিয়ে ছিলাম|
তিনি চাকরি করবেন না
বলে ১১ মাস কর্মস্থলে
অনুপস্থিত থাকলে তার
সেনাবাহিনীতে চাকরি
করার স্বপ্নের কবর এখানেই
রচিত হয়|
নরসিংদী জেলা
কমিউনিস্ট পার্টির
সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ
স্বাধীনতার যুদ্ধ জয়ের চার
বছর পর| তখন তিনি তরতাজা
তরুণ| এইসএসসি পরীক্ষা শেষ
করেছেন দুই বছর আগে| মনের
অজান্তে ভালো লেগে
যায় কমিউনিস্ট পার্টি|
সেখানে তার নাম
লেখিয়ে ফেলেন| তার
পারফরমেন্স দেখে কেন্দ্রে
থেকে তাকে ডেকে
পাঠানো হয়| তাকে
নরসিংদী জেলার
কমিউনিস্ট পার্টির
সভাপতির দায়িত্ব দিতে
চাইলে তিনি রাজি হয়ে
জান| ১৯৭৬ সালে
আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি
জেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন|
অপরাধ জগতে প্রবেশের
ইতিবৃত্ত
ছেলে হিসেবে
শাহজাহান খুবই ভালো
ছেলে ছিলেন| পারতপক্ষে
করও উপকার ছাড়া ক্ষতি
করার চেষ্টা করতেন না|
তবে সে প্রচন্ড বন্ধু পাগল
মানুষ ছিলেন| একবার তার
গ্রামে নারী ঘটিত একটি
ঘটনা ঘটে| শাহজাহানের
দুই বন্ধুসহ তার নামে
অভিযোগ ওঠে| গ্রামে
তাকে নিয়ে বিচারে বসা
হয়| সেই বিচারে তাকে
অপরাধী প্রমানিত করে
তাকে সাজা দেওয়া হয়|
এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্ততা
শুরু| তিনি অপমান সহ্য করতে
না পেরে সিদ্ধান্ত নেন
অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই
অপমানের চরম প্রতিশোধ
নিবেন| যেই সিদ্ধান্ত সেই
কাজ| তারপর অনেক লম্বা
ইতিহাস|
যেভাবে আটক হন
নারীঘটিত ওই ঘটনার পরে
তিনি বাংলাদেশের
একজন বহুল পরিচিত
সন্ত্রাসীর তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন|
তাছাড়া কমিউনিস্ট
পার্টিতে যোগদান করার
পর থেকে যেকোন
অপারেশনে তার চাহিদা
দিনকে দিন বৃদ্ধি পেতে
থাকলো| তার মধ্যে একটি
উল্লেখযোগ্য অপারেশন
করেছিলেন ১৯৭৯ সালে
মাদারীপুর জেলায়| এবং
এটাই ছিল তার জীবনে
সর্বশেষ অপারেশন|
সেখানে তার অপারেশন
শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে
ঢাকায় ফেরার চেষ্টা
করেন| গোপন সংবাদের
ভিত্তিতে পুলিশ জানতে
পারে শাহজাহানের দল
মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায়
যাবে| মানিকগঞ্জে পুলিশ
চেক পোস্ট বসালে
শাহজাহান তার ওই
এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে
তা জেনে জান| সব জেনেই
ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায়
ফেরার সিদ্ধান্তে অটল
থাকেন| রাতভর
মানিকগঞ্জে পুলিশের
সাথে বন্দুক যুদ্ধ করেন কিন্তু
পুলিশ তাকে ধরতে
পারেনি| এরপর ঢাকায়
পৌঁছে যখন নরসিংদীর
উদ্দেশ্যে রওনা হন
প্রতিমধ্যে পুলিশ তাকে
আটক করে ফেলে| তার
গতিময় জীবনের এখানেই
সমাপ্তি এবং এরপর থেকে
তার বন্দী জীবন শুরু|
৩৬ টি মামলা ১৪৩ বছরের
জেল !!
১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার
আগে ও পরে তার নামে
সর্বমোট ৩৬ টি মামলা হয়| এর
মধ্যে ১ টি অস্ত্র মামলা, ১
টি ডাকাতি মামলা এবং
অবশিষ্ট ৩৪ টি হত্যা মামলা|
বিচারকার্যে দেরি হওয়ার
কারণে সাজা ছাড়াই
তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে
১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১৭ বছর
হাজতি হিসেবে
কারাগারে থাকেন| ১৯৯৫
সালে তার সাজা হয় ১৪৩
বছর!! পরে ১০০ বছর জেল মাফ
করে তাকে ৪৩ বছরের জন্য
জেল দেওয়া হয়|
শাহজাহানের জেল থেকে
বের হওয়ার তারিখ তার
জেল কার্ডের ওপর লেখা
আছে “ডেইট অব রিলিজ
২০৩৫”| তিনি যখন ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারের
ভেতরে বসে তার রিলিজ
ডেইট আমাদের দেখালেন
তখন একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
কার্ডের দিকে তাকিয়ে
থাকেন| কারণ তার রিলিজ
ডেইটে বয়স হবে ৮৫ বছর|
ততদিনে তিনি বাচবেন
তো ? তখন মুক্ত আকাশের
দিকে তাকিয়ে তার
জীবনের কী কোন অর্থ
খুজতে পারবেন ?
জল্লাদ হিসেবে আত্ম-
প্রকাশ
জীবনের সোনালী সময়
গুলো তাকে এখানেই
কাটাতে অবে| তিনি
ভাবলেন জল্লাদ হিসেবে
সময় দিলে তার সাজা কিছু
দিনের জন্য হলেও কম হবে|
তাই নিজেকে অন্যভাবে
প্রস্তুত করার জন্য জেল
সুপারের কাছে জল্লাদের
খাতায় নাম লেখানোর
আগ্রহ প্রকাশ করেন| প্রথম ১৯৮৯
সালে তিনি সহযোগী
জল্লাদ হিসেবে
গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে
ফাসি দিয়ে তার জল্লাদ
জীবনের সূচনা করেন| এটাই
তার জীবনের প্রথম
কারাগারে কাউকে ফাঁসি
দেওয়া| তার যোগ্যতা
দেখে ৮ বছর পর ১৯৯৭ সালে
কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান
জল্লাদের আসন প্রদান করেন|
প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর
আলোচিত ডেইজি হত্যা
মামলার আসামী হাসানকে
প্রথম ফাসি দেন| তিনি
জানান একটি ফাসি দিতে
প্রধান জল্লাদের সাথে ৬
জন সহযোগী লাগে এবং
ফাসির রায় কার্যকর করলে
প্রত্যেক জল্লাদের ২ মাস ৪
দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ
করা হয়| এছাড়া
কারাগারে যারা জল্লাদ
হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে
থাকে কারা কর্তৃপক্ষের
মাধ্যমে শাহজাহান
তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে
থাকেন| উল্লেক্ষ্য, বিশেষ
দিনে কারা কর্তৃপক্ষ
মিডিয়াকে দেখানোর জন্য
বলে থাকেন এই দিনে একশত
থেকে প্রায় এক হাজার
বন্দীকে মুক্তি দেওয়া
হয়েছে| আসলে যারা
দীর্ঘদিন ধরে কারা ভোগ
করছে বা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন
তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার
কথা থাকলেও মূলতঃ
রাজনৈতিক বিবেচনায়
বন্দী মুক্তি দেওয়া হয়| কোন
কোন ক্ষেত্রে যাদের আর
মাত্র ২/১ দিন বা এক সপ্তাহ
কারাভোগের দিন বাকী
আছে তাদেরকে মুক্তি
দিয়ে অনেকে মহৎ মানুষের
পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করে
থাকেন!!
তার দেওয়া কিছু
উল্লেখযোগ্য ফাঁসি
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি
মাস পর্যন্ত তিনি সর্বমোট ৩২
টি ফাসি দিয়েছেন| যা
বাংলাদেশের ইতিহাসে
সবথেকে বেশি ফাসি
দেওয়ার রেকর্ড| তার
দেওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য
ফাঁসিগুলো হচ্ছে- ১৯৯৩
সালের জুলাই মাসে শহীদ
বুদ্ধিজীবী কন্যা শারমীন
রীমা হত্যা মামলার
আসামী খুকু মুনিরকে, ১৯৯৭
সালে বহুল আলোচিত
ডেইজি হত্যা মামলার
আসামী হাসানকে, ২০০৪
সালের ১০ মে খুলনা জেলা
কারাগারে এরশাদ
শিকদারকে, ২০০৪ সালের ১
সেপ্টেম্বর রংপুর জেলা
কারাগারে ইয়াসমিন হত্যা
মামলার আসামী এএসআই
মইনুল হক ও আবদুস সাত্তারকে,
২০০৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর
দিনাজপুরে ইয়াসমিন হত্যা
মামলার আরেক আসামী
পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত
লাল বর্মণকে, ২০০৭ সালের
২৯ মার্চ কাশিমপুর ও৯
ময়মনসিংহে জঙ্গি নেতা
সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে
বাংলা ভাই, আতাউর রহমান
সানি, আবদুল আউয়াল,
খালেদ সাইফুল্লাহ ও
ইফতেখার মামুনকে, ২০১০
সালের ২৭ জানুয়ারি
ঢাকা কেন্দ্রীয়
কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায়
মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি বজলুল
হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন,
সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান
শাহারিয়ার রশিদ খান ও
ল্যান্সার মহিউদ্দিন
আহমেদকে| শাহজাহান যখন
কাউকে ফাসি দেন তখন পত্র-
পত্রিকায় তাকে নিয়ে
অনেক লেখা-লেখি হয়|
তিনি যথা সম্ভব
কারাগারে বসেই ওই সব
পত্রিকাগুলোর কপি সংগ্রহ
করেন| তিনি নিয়মিত
ভাবে দৈনিক যুগান্তর
পত্রিকা পরেন বলে তার
সংগ্রহে যুগান্তরের
কাটিং সব থেকে বেশি|
পরিবারের সাথে
শাহজাহানের সম্পর্ক
শাহজাহান বাম রাজনীতি
করতো বলে তার বাবা
তাকে খারাপ চোখে
দেখত| জীবনের সোনালী
মুহুর্তে যখন তিনি
কারাগারে প্রবেশ করেন
তারপর থেকে তার বাবার
সাথে আর কোন দিন
যোগাযোগ হয়নি| মা
বেচে থাকা অবস্থায়
নিয়মিত দেখতে আসলেও
বাবা কোন দিন জেল
গেটে তাকে দেখতে
আসেনি| এমনকি বাবার
মৃত্যুর ২ মাস পর খবর পান তার
বাবা আর বেচে নেই|
বেচে আছেন তিন বোন|
তারা থাকেন বাবার
রেখে যাওয়া ঢাকার
এলিফ্যান্ট রোডের ১১২
নাম্বার বাড়ীতে| এখানে
শাহজাহানদের ৬ কাঠা
জমি আছে| তিনি অভিযোগ
করেন সব জমি বোনেরা
নিয়ে নিয়েছে| এই
বোনেরাও তাকে ১০/১৫ বছর
আগে একবার দেখতে
এসেছিলো| তারপর আর
কোন খবর নেই| তিনি
জানান সর্বশেষ দুই বছর আগে
একদিন তার বোনের ছেলে
দেখতে এসেছিলো| এই দুই
বছরে তারাও আর খবর
নেইনি|
জেলখানায় কেমন চলছে
তার দিন যাপন ?
জেলখানায় তিনি জল্লাদ
শাহজাহান নামেই খ্যাত|
এমনকি তার জগ-বালতি-
প্লেটের ওপরেও লেখা
জল্লাদ| হাজতীরা কয়েদী
হয়ে গেলে কারাগারে
তাদের মুল্যায়ন একটু বেশিই
থাকে| তাই তারও এখানে
মুল্যায়ন বেশি| অন্যদের
মতো তিনিও এখানে নতুন
হাজতীদের থাকা,
খাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা
করে থাকেন| বিনিময়ে
কিছু টাকা পান এবং তা
দিয়ে এখানে তিনি একটু
আরাম আয়েশে থাকতে
পারেন| এখন তার দায়িত্বে
প্রায় ২২ জন লোক থাকে|
তার মধ্যে ৫ জনকে ফ্রী
খাওয়ান এবং বাকীরা নতুন
হাজতী আসা-যাওয়ার মধ্যে
থাকে বলে তারা টাকা
দিয়ে থাকেন| নিয়ম
অনুসারে তার এই টাকা সিট
বিক্রেতা, সুবেদার,
জমাদার, জেলার থেকে শুরু
করে জেল সুপার পর্যন্ত ভাগ
পান| তাদের ভাগ দেওয়ার
পর যা বাঁচে তা দিয়ে
চৌকা থেকে ভালো কিছু
সবজি কিনে তাদেরকে
খাওয়ান| সপ্তাহে একদিন
পোলাউ গোস্ত খাওয়ার
ব্যবস্থা করেন| বর্তমান
তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয়
কারাগারের মেঘনা-২
ভবনে সিআইডির দায়িত্বে
আছেন| সপ্তাহে একদিন
করে দায়িত্ব পরিবর্তন করার
নিয়ম থাকলেও তিনি
বিশেষ অনুরোধে একটি
দায়িত্ব পালন করেই দিন
যাপন করেন| ভোর ছয়টার
আগে ফাইলে অংশগ্রহণ
করার জন্য অন্য সবার মতো
তিনিও ঘুম থেকে উঠে যান|
বাইরে থেকে ফ্রেশ হয়ে
রুমে এসে সকালের নাস্তা
করেন| দুপুর ১২ টায় বারো
গুনতির পর লাঞ্চ দেওয়া হয়|
শাহজাহান তার সংসারের
২২ জন লোক নিয়ে বসেন|
একে একে সবাইকে নিজ
হাতে খাবার বেড়ে
দেওয়ার পর তিনি খাবার
খান| দুপুরের পরে কারা
কর্তৃপক্ষের কোন কাজ
থাকলে তিনি তা করেন বা
নিজের মতো করে ঘুরে
বেড়ান| বিকেলে পাচটার
আগে সবাইকে ঘরে ফিরতে
হয় তখন তিনি তার কক্ষে
চলে আসেন| সন্ধার
নামাজের পর রাতের
খাওয়ার দেওয়া হয়| তখন
তিনি আবার সবাইকে
খাওয়ানোর পর নিজে খান|
খাওয়া শেষ হলে রাতের
বিছানা ঠিক করে সবার
ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন
তিনি| তার রুমে ৬২ জন
মানুষের থাকার ধারণ
ক্ষমতা সেখানে প্রতিদিন
গড়ে ২৭০ জন লোক থাকে|
তাদের প্রত্যেকের জন্য তার
দোড়ঝাপ একটু বেশিই করতে
হয়| এতো কিছুর মধ্যেও তার
রুম সব সময়ের জন্য পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন রাখেন| সম্ভব হলে
রাতে বিটিভির খবর
দেখেন তা না হলে তার বহু
পুরানো একটি রেডিওতে
নিয়মিত রাত সাড়ে দশটার
বিবিসির খবর শোনেন|
রাতে ঘুম না আসলে দাবা
অথবা তাশ খেলে সময়
কাটান| কখনও কখনও মধ্য
রাতে এফ এফ এ প্রচারিত
গান শোনেন| এভাবেই
একসময় তিনি ঘুমিয়ে পরেন|
পরের দিন ভোরে আবারও ঘুম
থেকে উঠে আগের রুটিনে
তার নিয়মিত পথ চলা|
বাংলাদেশের জল্লাদ ও
ফাসির পরিসংখ্যান
অভিযুক্ত কয়েদীদের মৃত্যুদণ্ড
ফাঁসিতে যেসব দেশে
কার্যকর করা হয় তার মধ্যে
বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১
সালে এ দেশ
পাকিস্তানের কাছ থেকে
স্বাধীনতা লাভ করে।
তারপর থেকে ৪ শতাধিক
মানুষকে এদেশে ফাঁসি
দেয়া হয়েছে এবং সারা
দেশের বিভিন্ন
কারাগারে বর্তমানে ১০১৬
জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদী
বন্দী আছেন। এর মধ্যে ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে
আছেন ১০৬ জন। কেন্দ্রীয়
কারাগার ছাড়াও দেশের
আরও ১৪টি কারাগারে
ফাঁসির মঞ্চ আছে | ফাসির
দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমান
ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের
আমলে ম্যানিলা থেকে ১০
হাজার ফাঁসির রশি
আমদানি করা হয়
বাংলাদেশে। এরপর আর
কোনো রশি আনা হয়নি। ওই
রশি দিয়েই মূলতঃ সবাইকে
ফাসি দেওয়া হয়|
বাংলাদেশের ৬৭টি
জেলে রয়েছে প্রায় ৭৫০০০
বন্দি। স্বাভাবিক ধারণ
ক্ষমতার চেয়ে এ সংখ্যা
তিন গুণ বেশি। এসব ফাসি
দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে
কয়েক ডজন জল্লাদ আছেন|
তার মধ্যে প্রসিদ্ধ (যারা
নূন্যতম পাচজন আসামীকে
ফাসি দিয়েছেন)
জল্লাদরা হচ্ছেন-
নরসিংদীর শাহজাহান
ভূঁইয়া, গাজীপুরের হাফিজ
উদ্দিন, কক্সবাজারের বাবুল
মিয়া (সম্প্রতি তিনি মুক্তি
পেয়েছেন), সাভারের
কালু মিয়া, গোপালগঞ্জের
শেখ মো. কামরুজ্জামান
ফারুক ও শেখ সানোয়ার,
ফরিদপুরের আবুল, জয়নাল
বেপারী ও মোয়াজ্জেম
হোসেন, ঢাকার মোহাম্মদ
মাসুম, তানভীর হাসান রাজু
ও মনির হোসেন,
নেত্রকোনার মোহাম্মদ
বাবুল|
জল্লাদ শাহজাহানের কিছু
অভিযোগ ও কিছু অনুরোধ
প্রধান এই জল্লাদ অভিযোগ
করেন, কারাগারে
বন্দীদের জন্য সরকার থেকে
যে খাবার দেওয়ার কথা
তা সাধারণত দেওয়া হয় না|
মোটা চাউলের ভাতে
প্রতি লোকমাতে আখরি/
খোয়া পাওয়া যায় যা
মানুষের খাওয়ার উপযোগী
না| ২৫০০ শত বন্দীদের ধারণ
ক্ষমতার কারাগারে প্রায়
দশ হাজার বন্দীদের রাখা
হয়েছে তাদের জন্য নতুন
কোন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে
না| যার কারণে বন্দীদের
এখানে কীভাবে রাখা হয়
তা সহজেই অনুমান করা যায়|
দশ হাজার লোকের জন্য
কারাগারে পানি
সাপ্লাই দিতে পুরনো দুটি
পানি তলার মেশিন
রয়েছে| যা অধিকাংশ সময়
নষ্ট থাকে| তাই পানির
অভাবে এখানে প্রতিনিয়ত
যুদ্ধ করতে হয়| এখানে
প্রতিটা ফোটা পানি
হিসেব করে খরচ করতে হয়|
চোখে না দেখলে
এখানকার অমানসিক
জীবনের বর্ণনা কেউই
অনুধাবন করতে পারবে না|
দুর্বিসহ এই জীবনে প্রতিটা
মুহুর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন
হচ্ছে| যার খবর মুক্ত আকাশের
পাখিরা ছাড়া আর কেউ
জানেন না| তিনি আরো
বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে
হত্যা করে ছিলো আমি
তাদেরকে ফাসি
দিয়েছি| আমি আশা করে
ছিলাম শেখের মেয়ে এখন
প্রধানমন্ত্রী সে আমার
দিকে একটু সুনজর দিবে|
কিন্তু কে রাখে কার খবর?
আমার কথা কেউ বিবেচনা
করলো না| নেলসন
মেন্ডিলা একসময় পৃথিবীর
সব থেকে বেশি সময় জেল
খেতে বিশ্ব রেকর্ড
করেছিলেন| আর এখন আমি
জীবনের ৩৩ টি বছর
কারাগারে কাটিয়ে
দিয়ে তার রেকর্ড ভেঙ্গে
দিলাম| এখন আমার অপরাধ
করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা
কোনটায় নেই| আমাকে
তিন দশকের অধিক সময় ধরে
কারাগারে অবরুদ্ধ করে
রাখা হয়েছে যা সুস্পষ্ট
মানবাধিকার লঙ্ঘনের
শামিল| মানবিক দিক
বিবেচনা করলে একটি মানুষ
জীবনের শেষ বয়সে এসে
আশার আলো দেখতে
পারেন| মানবাধিকার
সংস্থাগুলো যেন তার
সামান্যতম সহানুভূতি
দেখান সে ব্যাপারে
তিনি বিশেষ ভাবে
অনুরোধ করেন|
প্রথম লেখার সময়ঃ ২০ মার্চ
২০১২
মূল লেখা পড়তেঃ http://
blog.bdnews24.com/mmrsohel/7...


কপি পোষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×