বরাত কি?
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে
কতিপয় মূলনীতি উল্লেখ করছি
যা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে
বলে আমার বিশ্বাস।
(এক) যদি কোন একটা প্রথা যুগ যুগ
ধরে কোন অঞ্চলের মুসলিম
সমাজে চলে আসে, তাহলে তা
শরীয়ত সম্মত হওয়ার প্রমাণ বহন
করেনা। এটা বলা ঠিক হবে না
যে, শত শত বছর ধরে যা পালন করে
আসছি তা না জায়েয হয়
কিভাবে? বরং তা শরীয়ত সম্মত
হওয়ার জন্য অবশ্যই শর’য়ী দলীল
থাকতে হবে।
(দুই) ইসলামের যাবতীয়
বিষয়াবলী দু’ প্রকার (ক) আকীদাহ
বা বিশ্বাস (খ) ‘আমল বা কাজ।
কোন ‘আমল বা কাজ ইসলামের
শরীয়ত সম্মত হওয়ার জন্য অবশ্যই
কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এই
চারটির যে কোন একটি দ্বারা
প্রমাণিত হতে হবে। কিন্তু
আকীদাগত কোন বিষয় অবশ্যই কুরআন
অথবা সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত হতে হবে। ইজমা অথবা
কিয়াস দ্বারা আকীদাহর কোন
বিষয় প্রমাণ করা যাবে না।
(তিন) যে সকল হাদীস কিতাব
আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে
তার মধ্যে উল্লিখিত সবগুলো
হাদীস বিশুদ্ধ বা সহীহ নয়। হাদীস
বিশারদগণ যুগ যুগ ধরে গবেষণা
করে নির্ধারণ করেছেন কোনটি
সহীহ, কোনটি যয়ীফ (দুর্বল সূত্র),
কোনটি মওজু (জাল বা
বানোয়াট)। তাই সব ধরনের
হাদীস মোতাবেক ‘আমল করা
ঠিক নয়। হাদীসসমূহ থেকে শুধু
সহীহগুলি ‘আমলে নেয়া হবে।
যদি সব ধরনের হাদীস ‘আমলে
নেয়া হয় তাহলে শত শত বছর ধরে এ
বিষয় গবেষণা ও তা চর্চার
সার্থকতা কি?
(চার) দুর্বল বা জাল হাদীসের
উপর ভিত্তি করে ইসলামী
শরীয়তে কোন আকীদাহ ও ‘আমল
চালু করা যায় না। তবে কুরআন ও
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
কোন ‘আমলের ফাযীলাতের
ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণ করা
যায়।
(পাঁচ) কোন স্থান বা সময়ের
ফযীলাত কুরআন বা সহীহ হাদীস
দ্বারা প্রমাণিত হলে তা
দ্বারা সে স্থানে বা সে সময়ে
‘আমল (ইবাদাত-বন্দেগী) করার
ফযীলাত প্রমাণিত হয়না। যদি
‘আমল করার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র শরয়ী
দলীল থাকে তাহলেই ‘আমল করা
যায়।
‘শবে বরাত’ এর অর্থ
‘শব’ একটি ফারসী শব্দ এর অর্থ রাত।
‘বারায়াত’কে যদি আরবী শব্দ
ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হচ্ছে
সম্পর্কচ্ছেদ, পরোক্ষ অর্থে মুক্তি।
যেমন কুরআন মাজীদে সূরা
বারায়াত রয়েছে যা সূরা
তাওবা নামেও পরিচিত। ইরশাদ
হয়েছে :
ﺑَﺮَﺍﺀَﺓٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ (ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ১)
অর্থ : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ
থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার
ঘোষণা। (সূরা তাওবা, ১)
এখানে বারায়াতের অর্থ হল
সম্পর্ক ছিন্ন করা। ‘বারায়াত’
মুক্তি অর্থেও আল-কুরআনে
এসেছে যেমন :
ﺃَﻛُﻔَّﺎﺭُﻛُﻢْ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃُﻭﻟَﺌِﻜُﻢْ ﺃَﻡْ ﻟَﻜُﻢْ ﺑَﺮَﺍﺀَﺓٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﺰُّﺑُﺮِ .
( ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻘﻤﺮ :৪৩)
অর্থ : তোমাদের মধ্যকার
কাফিররা কি তাদের চেয়ে
শ্রেষ্ঠ? না কি তোমাদের মুক্তির
সনদ রয়েছে কিতাবসমূহে? (সূরা
কামার, ৩৪)
আর ‘বারায়াত’ শব্দক যদি ফারসী
শব্দ ধরা হয় তাহলে উহার অর্থ হবে
সৌভাগ্য। অতএব শবে বরাত
শব্দটার অর্থ দাড়ায় মুক্তির রজনী,
সম্পর্ক ছিন্ন করার রজনী। অথবা
সৌভাগ্যের রাত, যদি ‘বরাত’
শব্দটিকে ফার্সী শব্দ ধরা হয়।
শবে বরাত শব্দটাকে যদি
আরবীতে তর্জমা করতে চান
তাহলে বলতে হবে ‘লাইলাতুল
বারায়াত’। এখানে বলে রাখা
ভাল যে এমন অনেক শব্দ আছে যার
রূপ বা উচ্চারণ আরবী ও ফারসী
ভাষায় একই রকম, কিন্তু অর্থ ভিন্ন।
যেমন ‘গোলাম’ শব্দটি আরবী ও
ফারসী উভয় ভাষায় একই রকম
লেখা হয় এবং একইভাবে উচ্চারণ
করা হয়। কিন্তু আরবীতে এর অর্থ হল
কিশোর আর ফারসীতে এর অর্থ হল
দাস।
সার কথা হল ‘বারায়াত’
শব্দটিকে আরবী শব্দ ধরা হলে
উহার অর্থ সম্পর্কচ্ছেদ বা মুক্তি।
আর ফারসী শব্দ ধরা হলে উহার
অর্থ সৌভাগ্য।
আল-কুরআনে শবে বরাতের কোন
উল্লেখ নেই
শবে বরাত বলুন আর লাইলাতুল
বারায়াত বলুন কোন আকৃতিতে
শব্দটি কুরআন মাজীদে খুজে
পাবেন না। সত্য কথাটাকে
সহজভাবে বলতে গেলে বলা
যায় পবিত্র কুরআন মাজীদে শবে
বরাতের কোন আলোচনা নেই।
সরাসরি তো দূরের কথা আকার
ইংগিতেও নেই।
অনেককে দেখা যায় শবে
বরাতের গুরুত্ব আলোচনা করতে
যেয়ে সূরা দুখানের প্রথম চারটি
আয়াত পাঠ করেন। আয়াতসমূহ হল :
ﺣﻢ ﴿ ১ ﴾ ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴﻦِ ﴿ ২ ﴾ ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ
ﻣُﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨْﺬِﺭِﻳﻦَ ﴿ ৩ ﴾ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ
ﺣَﻜِﻴﻢٍ ﴿ ৪ ﴾ ( ﺍﻟﺪﺧﺎﻥ : ১-৪)
অর্থ : হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট
কিতাবের। আমিতো এটা
অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময়
রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই
রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়
স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, ১-৪)
শবে বরাত পন্থী আলেম
উলামারা এখানে বরকতময় রাত
বলতে ১৫ শাবানের রাতকে
বুঝিয়ে থাকেন। আমি এখানে
স্পষ্টভাবেই বলব যে, যারা
এখানে বরকতময় রাতের অর্থ ১৫
শাবানের রাতকে বুঝিয়ে
থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন
যা আল্লাহর কালাম বিকৃত করার
মত অপরাধ। কারণ :
(এক) কুরআন মাজীদের এ আয়াতের
তাফসীর বা ব্যাখ্যা সূরা আল-
কদর দ্বারা করা হয়। সেই সূরায়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﴿ ১ ﴾ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﻠَﺔُ
ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﴿ ২ ﴾ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ ﴿ ৩ ﴾ ﺗَﻨَﺰَّﻝُ
ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭﺡُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃَﻣْﺮٍ ﴿
৪ ﴾ ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﻫِﻲَ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﻄْﻠَﻊِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﴿ ৫ ﴾
অর্থ : আমি এই কুরআন নাযিল
করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি
জানেন লাইলাতুল কদর কি?
লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস
অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক
কাজের জন্য মালাইকা
(ফেরেশ্তাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয়
তাদের পালনকর্তার নির্দেশে।
এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজর
পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কাদর,
১-৫)
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল
কদর। লাইলাতুল বারায়াত নয়।
সূরা দুখানের প্রথম সাত আয়াতের
ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর। আর এ
ধরনের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আল-
কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা
অন্য আয়াত দ্বারা করা হল
সর্বোত্তম ব্যাখ্যা।
(দুই) সূরা দুখানের লাইলাতুল
মুবারাকার অর্থ যদি শবে বরাত হয়
তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাড়ায়
আল কুরআন শাবান মাসের শবে
বরাতে নাযিল হয়েছে। অথচ
আমরা সকলে জানি আল-কুরআন
নাযিল হয়েছে রামাযান
মাসের লাইলাতুল কদরে।
যেমন সূরা বাকারার ১৮৫ নং
আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল
‘আলামীন বলেন :
ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥُ .
অর্থ : রামাযান মাস, যাতে
নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন।
(তিন) অধিকাংশ মুফাচ্ছিরে
কিরামের মত হল উক্ত আয়াতে
বরকতময় রাত বলতে লাইলাতুল
কদরকেই বুঝানো হয়েছে। শুধু মাত্র
তাবেয়ী ইকরামা রহ. এর একটা মত
উল্লেখ করে বলা হয় যে, তিনি
বলেছেন বরকতময় রাত বলতে
শাবান মাসের পনের তারিখের
রাতকেও বুঝানো যেতে পারে।
তিনি যদি এটা বলে থাকেন
তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত
অভিমত। যা কুরআন ও হাদীসের
বিরোধী হওয়ার কারণে
পরিত্যাজ্য। এ বরকতময় রাতের
দ্বারা উদ্দেশ্য যদি শবে বরাত হয়
তাহলে শবে কদর অর্থ নেয়া
চলবেনা।
(চার) উক্ত আয়াতে বরকতময়
রাতের ব্যাখ্যা শবে বরাত করা
হল তাফসীর বির-রায় (মনগড়া
ব্যাখ্যা), আর বরকতময় রাতের
ব্যাখ্যা লাইলাতুল কদর দ্বারা
করা হল কুরআন ও হাদীস সম্মত
তাফসীর। সকলেই জানেন কুরআন ও
হাদীস সম্মত ব্যাখ্যার
উপস্থিতিতে মনগড়া ব্যাখ্যা
(তাফসীর বির-রায়) গ্রহণ করার
কোন সুযোগ নেই।
(পাচ) সূরা দুখানের ৪ নং আয়াত
ও সূরা কদরের ৪ নং আয়াত
মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়
যে, বরকতময় রাত বলতে লাইলাতুল
কদরকেই বুঝানো হয়েছে।
সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ),
ইবনে কাসীর, কুরতুবী প্রমুখ
মুফাচ্ছিরে কিরাম এ কথাই জোর
দিয়ে বলেছেন এবং সূরা
দুখানের ‘লাইলাতুম মুবারাকা’র
অর্থ শবে বরাত নেয়াকে
প্রত্যাখ্যান করেছেন।
(তাফসীরে মায়ারেফুল কুরআন
দ্রষ্টব্য)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর
তাফসীরে বলেছেন : “কোন
কোন আলেমের মতে ‘লাইলাতুম
মুবারাকাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল
মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাত)।
কিন্তু এটা একটা বাতিল
ধারণা।”
অতএব এ আয়াতে ‘লাইলাতুম
মুবারাকাহ’ এর অর্থ লাইলাতুল
কদর। শাবান মাসের পনের
তারিখের রাত নয়।
(ছয়) ইকরামা (রঃ) বরকতময় রজনীর
যে ব্যাখ্যা শাবানের ১৫
তারিখ দ্বারা করেছেন তা ভুল
হওয়া সত্ত্বেও প্রচার করতে হবে
এমন কোন নিয়ম-কানুন নেই। বরং
তা প্রত্যাখ্যান করাই হল হকের
দাবী। তিনি যেমন ভুলের উর্ধ্বে
নন, তেমনি যারা তার থেকে
বর্ণনা করেছেন তারা ভুল শুনে
থাকতে পারেন অথবা কোন
উদ্দেশ্য নিয়ে বানোয়াট বর্ণনা
দেয়াও অসম্ভব নয়।
(সাত) শবে বরাতের গুরুত্ব বর্ণনায়
সূরা দুখানের উক্ত আয়াত উল্লেখ
করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ
আকীদাহ বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে,
শবে বরাতে সৃষ্টিকূলের হায়াত-
মাউত, রিয্ক-দৌলত সম্পর্কে
সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ও লিপিবদ্ধ
করা হয়। আর শবে বরাত
উদযাপনকারীদের শতকরা
নিরানব্বই জনের বেশী এ
ধারণাই পোষণ করেন। তারা এর
উপর ভিত্তি করে লাইলাতুল
কদরের চেয়ে ১৫ শাবানের
রাতকে বেশী গুরুত্ব দেয়। অথচ
কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ
বিষয়গুলি লাইলাতুল কদরের
সাথে সম্পর্কিত। তাই যারা শবে
বরাতের গুরুত্ব বুঝাতে উক্ত
আয়াত উপস্থাপন করেন তারা
মানুষকে সঠিক ইসলামী আকীদাহ
থেকে দূরে সরানোর কাজে
লিপ্ত, যদিও মনে-প্রাণে তারা
তা ইচ্ছা করেন না।
(আট) ইমাম আবু বকর আল জাসসাস
তার আল-জামে লি আহকামিল
কুরআন তাফসীর গ্রন্থে
লাইলালাতুন মুবারাকা দ্বারা
মধ্য শাবানের রাত উদ্দেশ্য করা
ঠিক নয় বলে বিস্তারিত
আলোচনা করার পর বলেন :
লাইলাতুল কদরের চারটি নাম
রয়েছে, তা হল : লাইলাতুল কদর,
লাইলাতু মুবারাকাহ, লাইলাতুল
বারাআত ও লাইলাতুস সিক।
(আল জামে লি আহকামিল কুরআন,
সূরা আদ-দুখানের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
লাইলাতুল বারাআত হল
লাইলাতুল কদরের একটি নাম।
শাবান মাসের পনের তারিখের
রাতের নাম নয়
ইমাম শাওকানী (রহ.) তার
তাফসীর ফতহুল কাদীরে একই
কথাই লিখেছেন।
(তাফসীর ফাতহুল কাদীর : ইমাম
শাওকানী দ্রষ্টব্য)
এ সকল বিষয় জেনে বুঝেও যারা
‘লাইলাতুম মুবারাকা’র অর্থ
করবেন শবে বরাত, তারা
সাধারণ মানুষদের গোমরাহ করা
এবং আল্লাহর কালামের
অপব্যাখ্যা করার দায়িত্ব
এড়াতে পারবেন না।
শবে বরাত নামটি হাদীসের
কোথাও উল্লেখ হয়নি
প্রশ্ন থেকে যায় হাদীসে কি
লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত
নেই? সত্যিই হাদীসের কোথাও
আপনি শবে বরাত বা লাইলাতুল
বারায়াত নামের কোন রাতের
নাম খুজে পাবেন না। যে সকল
হাদীসে এ রাতের কথা বলা
হয়েছে তার ভাষা হল ‘লাইলাতুন
নিস্ফ মিন শাবান’ অর্থাৎ মধ্য
শাবানের রাত্রি। শবে বরাত বা
লাইলাতুল বারায়াত শব্দ আল-
কুরআনে নেই, হাদীসে রাসূলেও
নেই। এটা মানুষের বানানো
একটা শব্দ। ভাবলে অবাক লাগে
যে, একটি প্রথা ইসলামের নামে
শত শত বছর ধরে পালন করা হচ্ছে
অথচ এর আলোচনা আল-কুরআনে
নেই। সহীহ হাদীসেও নেই। অথচ
আপনি দেখতে পাবেন যে,
সামান্য নফল ‘আমলের ব্যাপারেও
হাদীসের কিতাবে এক একটি
অধ্যায় বা শিরোনাম লেখা
হয়েছে।
ফিকহের কিতাবে শবে বরাত
শুধু আল-কুরআনে কিংবা সহীহ
হাদীসে নেই, বরং আপনি
ফিক্হের নির্ভরযোগ্য
কিতাবগুলো পড়ে দেখুন,
কোথাও শবে বরাত নামের কিছু
পাবেন না। বাংলাদেশসহ
ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বীনি
মাদ্রাসাগুলিতে ফিক্হের যে
সিলেবাস রয়েছে যেমন
মালাবুদ্দা মিনহু, নুরুল ইজাহ,
কদুরী, কানযুদ্ দাকায়েক, শরহে
বিকায়া ও হিদায়াহ খুলে দেখুন
না! কোথাও শবে বরাত নামের
কিছু পাওয়া যায় কিনা! অথচ
আমাদের পূর্বসূরী ফিকাহবিদগণ
ইসলামের অতি সামান্য
বিষয়গুলো আলোচনা করতেও
কোন ধরনের কার্পণ্যতা
দেখাননি। তারা সূর্যগ্রহণ,
চন্দ্রগ্রহণের সালাত সম্পর্কেও
অধ্যায় রচনা করেছেন। অনুচ্ছেদ
তৈরী করেছেন কবর যিয়ারতের
মত বিষয়েরও। শবে বরাতের
ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর
সামান্যতম ইশারা থাকলেও
ফিকাহবিদগণ এর আলোচনা
মাসয়ালা-মাসায়েল অবশ্যই
বর্ণনা করতেন।
অতএব এ রাতকে শবে বরাত বা
লাইলাতুল বারায়াত অভিহিত
করা মানুষের মনগড়া বানানো
একটি বিদ’আত যা কুরআন বা
হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয়।
শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত
আকীদাহ বিশ্বাস ও ‘আমল
শবে বরাত যারা পালন করেন
তারা শবে বরাত সম্পর্কে যে
সকল ধারণা পোষণ করেন ও
উহাকে উপলক্ষ করে যে সকল কাজ
করে থাকেন তার কিছু নিম্নে
উল্লেখ করা হল।
তারা বিশ্বাস করে যে, শবে
বরাতে আল্লাহ তা’আলা সকল
প্রাণীর এক বছরের খাওয়া
দাওয়া বরাদ্দ করে থাকেন। এই
বছর যারা মারা যাবে ও যারা
জন্ম নিবে তাদের তালিকা
তৈরী করা হয়। এ রাতে বান্দার
পাপ ক্ষমা করা হয়। এ রাতে
ইবাদাত-বন্দেগী করলে
সৌভাগ্য অর্জিত হয়। এ রাতে
কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ
হতে প্রথম আকাশে নাযিল করা
হয়েছে। এ রাতে গোসল করাকে
সওয়াবের কাজ মনে করা হয়। মৃত
ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায়
তাদের সাবেক গৃহে আসে। এ
রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে
নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া
হয়। বাড়ীতে বাড়ীতে মীলাদ
পড়া হয়। আতশবাযী করা হয়।
সরকারী- বেসরকারী ভবনে
আলোক সজ্জা করা হয়। সরকারী
ছুটি পালিত হয়। পরের দিন
সিয়াম (রোযা) পালন করা হয়।
কবরস্থানগুলো আগরবাতি ও
মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা
হয়। লোকজন দলে দলে কবরস্থানে
যায়। মাগরিবের পর থেকে
মাসজিদগুলি লোকে পরিপূর্ণ
হয়ে যায়। যারা পাঁচ ওয়াক্ত
সালাতে ও জুমু’আয় মাসজিদে
আসেনা তারাও এ রাতে
মাসজিদে আসে।
মাসজিদগুলিতে মাইক চালু করে
ওয়াজ নাসীহাত করা হয়। শেষ
রাতে সমবেত হয়ে দু’আ-মুনাজাত
করা হয়। বহু লোক এ রাতে
ঘুমানোকে অন্যায় মনে করে
থাকে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একশত
রাকাত, হাজার রাকাত ইত্যাদি
সালাত আদায় করা হয়।
লোকজন ইমাম সাহেবকে
জিজ্ঞেস করে ‘হুজুর! শবে
বরাতের সালাতের নিয়ম ও
নিয়্যতটা একটু বলে দিন।’ ইমাম
সাহেব আরবী ও বাংলায়
নিয়্যাত বলে দেন। কিভাবে
সালাত আদায় করবে, কোন্
রাকা’আতে কোন্ সূরা
তিলাওয়াত করবে তাও বলে
দিতে কৃপণতা করেননা।
যদি এ রাতে ইমাম সাহেব বা
মুয়াজ্জিন সাহেব মাসজিদে
অনুপস্থিত থাকেন তাহলে
তাদের চাকুরী যাওয়ার উপক্রম
হয়।
শবে বরাতের সম্পর্ক শুধু ‘আমলের
সাথে নয়
শবে বরাত সম্পর্কে
উপরোল্লিখিত কাজ ও
আকীদাহসমূহ শবে বরাত
উদযাপনকারীরা সকলেই করেন
তা কিন্তু নয়। কেহ আছেন
উল্লিখিত সকল কাজের সাথে
একমত পোষণ করেন। আবার কেহ
আতশবাযী, আলোক সজ্জা পছন্দ
করেন না, কিন্তু কবরস্থানে
যাওয়া, হালুয়া-রুটি, ইবাদাত-
বন্দেগী করে থাকেন। আবার
অনেক আছেন যারা এ রাতে শুধু
সালাত আদায় করেন ও পরের দিন
সিয়াম (রোযা) পালন করেন। এ
ছাড়া অন্য কোন ‘আমল করেন না।
আবার অঞ্চল ভেদে ‘আমলের
পার্থক্য দেখা যায়।
কিন্তু একটি বিষয় হল, শবে বরাত
সম্পর্কে যে সকল ধর্ম বিশ্বাস বা
আকীদাহ পোষণ করা হয় তা কিন্তু
কোন দুর্বল হাদীস দ্বারাও
প্রমাণিত হয় না। যেমন
ভাগ্যলিপি ও বাজেট প্রনয়নের
বিষয়টি। যারা বলেন : ”আমলের
ফাযীলাতের ক্ষেত্রে দুর্বল
হাদীস গ্রহণ করা যায়, অতএব এর
উপর ভিত্তি করে শবে বরাতে
‘আমল করা যায়, তাদের কাছে
আমার প্রশ্ন : তাহলে শবে
বরাতের আকীদাহ সম্পর্কে কি
দুর্বল হাদীসেরও দরকার নেই?
অথবা এ সকল প্রচলিত আকীদাহর
ক্ষেত্রে যদি কোন দুর্বল হাদীস
পাওয়াও যায় তাহলে তা দিয়ে
কি আকীদাহগত কোন মাসয়ালা
প্রমাণ করা যায়? আপনারা শবে
বরাতের ‘আমলের পক্ষ সমর্থন
করলেন কিন্তু আকীদাহর
ব্যাপারে কি জবাব দিবেন?
কাজেই শবে বরাত শুধু ‘আমলের
বিষয় নয়, আকীদাহরও বিষয়। তাই এ
ব্যাপারে ইসলামের দা’য়ীদের
সতর্ক হওয়ার দাওয়াত দিচ্ছি।
শবে বরাত সম্পর্কে এ বিশ্বাস
পোষণ করা যে, আল্লাহ তা’আলা
এ রাতে আল-কুরআন অবতীর্ণ
করেছেন, তিনি এ রাতে
মানুষের হায়াত, রিয্ক ও
ভাগ্যের ফায়সালা করে
থাকেন, এ রাতে ইবাদাত-
বন্দেগীতে লিপ্ত হলে আল্লাহ
হায়াত ও রিয্ক বাড়িয়ে
সৌভাগ্যশালী করেন ইত্যাদি
আকীদা কি আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের প্রতি মিথ্যা
আরোপ করার মত অন্যায় নয়?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা
বলেন :
ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﻇْﻠَﻢُ ﻣِﻤَّﻦِ ﺍﻓْﺘَﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏَ . ( ﺍﻟﺼﻒ :
৭)
অর্থ : তার চেয়ে বড় যালিম আর
কে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা
আরোপ করে? (সূরা সাফ, ৭)
শাবানের মধ্যরজনীর ফযীলত
সম্পর্কিত হাদীসসমূহের
পর্যালোচনা
১ নং হাদীস
১- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﻨﻴﻊ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻫﺎﺭﻭﻥ
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﺃﺭﻃﺎﺓ ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻛﺜﻴﺮ
ﻋﻦ ﻋﺮﻭﺓ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﻘﺪﺕ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻓﺨﺮﺟﺖ
ﻓﺈﺫﺍ ﻫﻮ ﺑﺎﻟﺒﻘﻴﻊ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻛﻨﺖ ﺗﺨﺎﻓﻴﻦ ﺃﻥ ﻳﺤﻴﻒ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻚ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ؟ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻚ
ﺃﺗﻴﺖ ﺑﻌﺾ ﻧﺴﺎﺋﻚ .
ﻓﻘﺎﻝ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻨﺰﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ
ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻷﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﺪﺩ ﺷﻌﺮ
ﻏﻨﻢ ﻛﻠﺐ .
ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻋﻴﺴﻰ : ﺣﺪﻳﺚ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻻ ﻧﻌﺮﻓﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ
ﺍﻟﻮﺟﻪ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ، ﻭﺳﻤﻌﺖ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﻳﻘﻮﻝ
ﻳﻀﻌﻒ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ، ﻭﻗﺎﻝ : ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﻟﻢ
ﻳﺴﻤﻊ ﻣﻦ ﻋﺮﻭﺓ، ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻊ ﻣﻦ
ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﻛﺜﻴﺮ، ﺍﻧﺘﻬﻰ ﻛﻼﻣﻪ، ﻓﻬﺬﺍ ﺍﻟﺴﻨﺪ ﻣﻨﻘﻄﻊ
ﺑﻮﺟﻬﻴﻦ .
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন :
আমাদের কাছে আহমাদ ইবনে
মুনী’ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে
তিনি ইয়াযীদ ইবনে হারূন
থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে
আরতাহ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া
ইবনে আবি কাসির থেকে,
তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি
উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি
বলেছেন : আমি এক রাতে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
বিছানায় পেলাম না তাই আমি
তাকে খুঁজতে বের হলাম, ‘বাকী’
নামক কবরস্থানে তাকে পেলাম।
তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন : তুমি কি
আশংকা করেছো যে আল্লাহ ও
তার রাসূল তোমার সাথে অন্যায়
আচরণ করবেন?
আমি বললামঃ হে আল্লাহর
রাসূল! আমি মনে করেছি আপনি
আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে
গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মধ্য
শাবানের রাতে দুনিয়ার
আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর
কালব গোত্রের পালিত বকরীর
পশমের পরিমানের চেয়েও
অধিক পরিমান লোকদের ক্ষমা
করেন।
ইমাম তিরমিযী বলেন : আয়িশা
(রাঃ) এর এই হাদীস আমি
হাজ্জাজের বর্ণিত সনদ (সূত্র)
ছাড়া অন্য কোনভাবে চিনি
না। আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম
বুখারী) বলতে শুনেছি যে,
তিনি হাদীসটিকে দুর্বল
বলতেন। তিরমিযী (রহঃ) বলেন :
ইয়াহ্ইয়া ইবনে কাসীর উরওয়াহ
থেকে হাদীস শুনেননি। এবং
মুহাম্মদ (ইমাম বুখারী) বলেছেন :
হাজ্জাজ ইয়াহ্ইয়াহ ইবনে
কাসীর থেকে শুনেননি।
এ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম
বুখারী ও ইমাম তিরমিযীর
মন্তব্যে প্রমাণিত হয় যে,
হাদীসটি দুটো দিক থেকে
মুনকাতি অর্থাৎ উহার সূত্র থেকে
বিচ্ছিন্ন।
অপর দিকে এ হাদীসের একজন
বর্ণনাকারী হাজ্জাজ ইবনে
আরতাহ মুহাদ্দিসীনদের নিকট
দুর্বল বলে পরিচিত।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যারা শবে
বরাতের বেশী বেশী
ফাযীলাত বয়ান করতে অভ্যস্ত
তারা তিরমিযী বর্ণিত এ
হাদীসটি খুব গুরুত্বের সাথে
উপস্থাপন করেন অথচ যারা
হাদীসটির অবস্থা সম্পর্কে ভাল
জানেন তাদের এ মন্তব্যটুকু গ্রহণ
করতে চাননা। এ হাদীসটি
‘আমলের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য
হওয়ার জন্য ইমাম তিরমিযীর এ
মন্তব্যটুকু কি যথেষ্ট নয়? যদি তর্কের
খাতিরে এ হাদীসটিকে বিশুদ্ধ
বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে কি
প্রমাণিত হয়? আমরা যারা
ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসজিদে
একত্র হয়ে যেভাবে শবে বরাত
উদযাপন করি তাদের ‘আমলের
সাথে এ হাদীসটির মিল
কোথায়?
বরং এ হাদীসে দেখা গেল
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন,
আর পাশে শায়িত আয়িশা
(রাঃ) কে ডাকলেন না।
ডাকলেন না অন্য কাউকে।
তাকে জাগালেন না বা
সালাত আদায় করতে বললেন না।
অথচ আমরা দেখতে পাই যে,
রামাযানের শেষ দশকে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম নিজে রাত
জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন
এবং পরিবারের সকলকে
জাগিয়ে দিতেন। বেশী
পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী
করতে বলতেন। যদি ১৫ শাবানের
রাতে কোন ইবাদাত করার
ফাযীলাত থাকত তাহলে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন
আয়িশাকে (রাঃ) বললেন না?
কেন রামাযানের শেষ দশকের মত
সকলকে জাগিয়ে দিলেন না,
তিনি তো নেক কাজের প্রতি
মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে
আমাদের সকলের চেয়ে
অগ্রগামী ছিলেন। এ ব্যাপারে
তিনি তো কোন অলসতা বা
কৃপণতা করেননি।
২ নং হাদীস
২- ﻋﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺃﻥ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ
ﻗﺎﻟﺖ : ﻗﺎﻡ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ
ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻳﺼﻠﻲ، ﻓﺄﻃﺎﻝ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ، ﺣﺘﻰ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻪ ﻗﺪ
ﻗﺒﺾ، ﻓﻠﻤﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﺫﻟﻚ ﻗﻤﺖ ﺣﺘﻰ ﺣﺮﻛﺖ ﺇﺑﻬﺎﻣﻪ
ﻓﺘﺤﺮﻙ ﻓﺮﺟﻌﺖ ﻓﻠﻤﺎ ﺭﻓﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﻓﺮﻍ
ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻪ ﻗﺎﻝ: ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻭ ﻳﺎ ﺣﻤﻴﺮﺍﺀ ﺃﻇﻨﻨﺖ ﺃﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻗﺪ ﺧﺎﻥ ﺑﻚ؟ ﻗﻠﺖ ﻻ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ،
ﻟﻜﻨﻲ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻚ ﻗﺒﻀﺖ ﻟﻄﻮﻝ ﺳﺠﻮﺩﻙ، ﻓﻘﺎﻝ
ﺃﺗﺪﺭﻳﻦ ﺃﻱ ﻟﻴﻠﺔ ﻫﺬﻩ؟ ﻗﻠﺖ: ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﺃﻋﻠﻢ. ﻗﺎﻝ:
ﻫﺬﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ
ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﻄﻠﻊ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ
ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻠﻤﺴﺘﻐﻔﺮﻳﻦ ﻭﻳﺮﺣﻢ ﺍﻟﻤﺴﺘﺮﺣﻤﻴﻦ
ﻭﻳﺆﺧﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﻘﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ. ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ
ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ، ﻭﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﻣﺮﺳﻞ ﻷﻥ ﻋﻼﺀ ﻣﺎ
ﺳﻤﻊ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ )
অর্থ : আলা ইবনে হারিস থেকে
বর্ণিত, আয়িশা (রাঃ) বলেন : এক
রাতে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম দাঁড়িয়ে সালাত
আদায় করছিলেন। সিজদাহ এত
দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা
করলাম তিনি ইন্তেকাল
করেছেন। আমি এ অবস্থা দেখে
দাড়িয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুল ধরে
নাড়া দিলাম, আঙ্গুলটি নড়ে
উঠল। আমি চলে এলাম। সালাত
শেষ করে তিনি বললেন : হে
আয়িশা অথবা বললেন হে
হুমায়রা! তুুমি কি মনে করেছ
আল্লাহর নবী তোমার সাথে
বিশ্বাস ভংগ করেছেন? আমি
বললাম : আল্লাহর কসম হে রাসূল!
আমি এমন ধারণা করিনি। বরং
আমি ধারণা করেছি আপনি না
জানি ইন্তেকাল করলেন! অতঃপর
তিনি বললেন : তুমি কি জান
এটা কোন রাত? আমি বললাম :
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল
জানেন। তিনি বললেন : এটা মধ্য
শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ
তা’আলা তার বান্দাদের প্রতি
মনোনিবেশ করেন। ক্ষমা
প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন
এবং রাহমাত
প্রার্থনাকারীদের রহম করেন।
আর হিংসুকদেরকে তাদের
অবস্থার উপর ছেড়ে দেন।
(বাইহাকী তার শুয়াবুল ঈমান
কিতাবে বর্ণনা করেছেন)
হাদীসটি মুরসাল। সহীহ বা বিশুদ্ধ
নয়। কেননা বর্ননাকারী ‘আলা’
আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেননি।
৩ নং হাদীস
৩- ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ :
ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ
ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ﻭﺻﻮﻣﻮﺍ
ﻧﻬﺎﺭﻫﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻨـﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻟﻐﺮﻭﺏ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺇﻟﻰ
ﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﺃﻻ ﻣﻦ ﻣﺴﺘﻐﻔﺮ ﻓﺄﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﺃﻻ
ﻣﻦ ﻣﺴﺘﺮﺯﻕ ﻓﺄﺭﺯﻕ ﻟﻪ ﺃﻻ ﻣﻦ ﻣﺒﺘﻠﻰ ﻓﺄﻋﺎﻓﻴﻪ ﺃﻻ ﻛﺬﺍ
ﺃﻻ ﻛﺬﺍ ﺣﺘﻰ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻔﺠﺮ. (ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ،
ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ. ﻭﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺿﻌﻴﻒ
ﻷﻥ ﻓﻲ ﺳﻨﺪﻩ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﺒﺮﺓ ﻭﻫﻮ ﻣﻌﺮﻭﻑ ﺑﻮﺿﻊ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ. ﺍﻟﻤﺮﺟﻊ : ﺗﺤﻔﺔ ﺍﻷﺣﻮﺫﻱ
ﺑﺸﺮﺡ ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ ﻧﺎﺻﺮ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ
ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺇﻧﻪ ﻭﺍﻩ ﺟﺪﺍً )
অর্থ : আলী ইবনে আবী তালেব
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : যখন মধ্য শাবানের রাত
আসে তখন তোমরা রাত জেগে
সালাত আদায় করবে আর দিবসে
সিয়াম পালন করবে। কেননা
আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের পর
দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে
বলেন : আছে কি কোন ক্ষমা
প্রার্থনাকারী আমি তাকে
ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিয্ক
প্রার্থনাকারী আমি রিয্ক দান
করব। আছে কি কোন বিপদে
নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে
সুস্থ্যতা দান করব। এভাবে ফজর
পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। (ইবনে
মাজাহ ও বাইহাকী)
প্রথমতঃ এ হাদীসটি দুর্বল।
কেননা এ হাদীসের সনদে
(সূত্রে) ইবনে আবি সাবুরাহ
নামে এক ব্যক্তি আছেন, যিনি
অধিকাংশ হাদীস বিশারদের
নিকট হাদীস জালকারী
হিসাবে পরিচিত। এ যুগের
বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন
আল-বানী (রহঃ) বলেছেন,
হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে
একেবারেই দুর্বল।
দ্বিতীয়তঃ অপর একটি সহীহ
হাদীসের বিরোধী হওয়ার
কারণে এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য
নয়। সে সহীহ হাদীসটি হাদীসে
নুযুল নামে পরিচিত, যা ইমাম
বুখারী ও মুসলিম তাদের
কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি হল :
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻳﻨﺰﻝ ﺭﺑﻨﺎ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ
ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺇﻟﻰ ﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺣﻴﻦ ﻳﺒﻘﻰ ﺛﻠﺚ ﺍﻟﻠﻴﻞ
ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻣﻦ ﻳﺪﻋﻮﻧﻲ ﻓﺄﺳﺘﺠﻴﺐ ﻟﻪ ﻭﻣﻦ
ﻳﺴﺄﻟﻨﻲ ﻓﺄﻋﻄﻴﻪ ﻭﻣﻦ ﻳﺴﺘﻐﻔﺮﻧﻲ ﻓﺄﻏﻔﺮﻟﻪ. ( ﺃﺧﺮﺟﻪ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ )
অর্থ : আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : আমাদের রব আল্লাহ
তা’আলা প্রতি রাতের এক
তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে
দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন ও
বলতে থাকেন : কে আছ আমার
কাছে দু’আ করবে আমি কবুল করব।
কে আছ আমার কাছে চাইবে
আমি দান করব। কে আছ আমার
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে
আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী ও
মুসলিম)
আর উল্লিখিত ৩ নং হাদীসের
বক্তব্য হল আল্লাহ তা’আলা মধ্য
শাবানের রাতে নিকটতম
আকাশে আসেন ও বান্দাদের দু’আ
কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন।
কিন্তু বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এই
সহীহ হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ
তা’আলা প্রতি রাতের শেষের
দিকে নিকটতম আকাশে অবতরণ
করে দু’আ কবুলের ঘোষণা দিতে
থাকেন। আর এ হাদীসটি সর্বমোট
৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন
এবং বুখারী এবং মুসলিম ও
সুনানের প্রায় সকল কিতাবে
এসেছে। তাই হাদীসটি প্রসিদ্ধ।
অতএব এই মশহুর হাদীসের
বিরোধী হওয়ার কারণে ৩ নং
হাদীসটি পরিত্যাজ্য হবে।
কেহ বলতে পারেন যে, এই দু
হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ
নেই। কারণ ৩ নং হাদীসের বক্তব্য
হল আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার
আকাশে অবতরণ করেন মধ্য
শাবানের রাতের শুরু থেকে। আর
এ হাদীসের বক্তব্য হল প্রতি
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে
আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার
আকাশে অবতরণ করেন। অতএব দু
হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ
নেই যে কারণে ৩ নং হাদীসকে
পরিত্যাগ করতে হবে।
আমি বলব আসলেই এ দু হাদীসের
মধ্যে বিরোধ আছে। কেননা আবূ
হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত বুখারী ও
মুসলিমের হাদীসের বক্তব্য হল
আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের
শেষ অংশে দুনিয়ার আকাশে
আসেন। আর প্রতি রাতের মধ্যে
শাবান মাসের পনের তারিখের
রাতও অন্তর্ভুক্ত। অতএব এ হাদীস
মতে অন্যান্য রাতের মত শাবান
মাসের পনের তারিখের রাতের
শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ
তা’আলা দুনিয়ার আকাশে
আসেন। কিন্তু ৩ নং হাদীসের
বক্তব্য হল শাবান মাসের পনের
তারিখের রাতের প্রথম প্রহর
থেকে আল্লাহ তা’আলা
দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন।
৪ নং হাদীস
৪- ﻋﻦ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ: ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ
ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻧﺎﺩﻯ ﻣﻨﺎﺩ : ﻫﻞ ﻣﻦ ﻣﺴﺘﻐﻔﺮ
ﻓﺄﻏﻔﺮﻟﻪ، ﻫﻞ ﻣﻦ ﺳﺎﺋﻞ ﻓﺄﻋﻄﻴﻪ ، ﻓﻼ ﻳﺴﺄﻝ ﺃﺣﺪ ﺇﻻ
ﺃﻋﻄﻲ ﺇﻻ ﺯﺍﻧﻴﺔ ﺑﻔﺮﺟﻬﺎ ﺃﻭ ﻣﺸﺮﻙ. ( ﺃﺧﺮﺟﻪ
ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻭﺿﻌﻔﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ
ﺿﻌﻴﻒ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺭﻗﻢ ৬৫২)
অর্থ : উসমান ইবনে আবিল আস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : যখন মধ্য শাবানের রাত
আসে তখন একজন ঘোষণাকারী
ঘোষণা দেয় : আছে কি কোন
ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি
তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেহ
কিছু চাইবার আমি তাকে তা
দিয়ে দিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
মুশরিক ও ব্যভিচারী বাদে সকল
প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল
করা হয়। (বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন
আল-বানী (রহঃ) হাদীসটিকে
তার সংকলন ‘যয়ীফ আল-জামে’
নামক কিতাবের ৬৫২ নং
ক্রমিকে দুর্বল প্রমাণ করেছেন।
শবে বরাত সম্পর্কে এ ছাড়া
বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীস
সম্পর্কে ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ)
বলেন : এ মর্মে বর্ণিত অন্য সকল
হাদীসই দুর্বল।
সম্পুন্ন পোষ্টি কপি
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০৪