মতো এবারো নববর্ষ উপলক্ষে
পঞ্চগড়ে ভারত-বাংলাদেশ
সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুই
বাংলার মিলন মেলা। কড়া
নজরদারি আর বিজিবি
বিএসএফের বাঁধা উপেক্ষা করে
প্রিয় স্বজনদের সাথে এক পলক
দেখা করতে সীমান্তে লাখো
মানুষের ঢল নামে। মুহূর্তে ওই
সীমান্ত দুই বাংলার মিলন
মেলায় পরিণত হয়।
প্রতি বছর বাংলা নতুন বছরের
প্রথম দিন জেলা সদরের
অমরখানা সীমান্তের
নোম্যান্সল্যান্ডে এই মিলন
মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে
এবার ভারতের বিধানসভা
নির্বাচনে পঞ্চগড়ের
পার্শ্ববর্তী সীমান্তের
ওপারের এলাকাগুলোতে ভোট
অনুুষ্ঠিত হওয়ায় পহেলা
বৈশাখের আগের দিনই
সীমান্তে দুই পাড়ে জড়ো হতে
থাকে লাখো মানুষ। বুধবার
সকাল থেকেই পঞ্চগড়সহ
পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন
প্রান্তের নারী পুরুষ ও শিশুদের
নিয়ে ওপারের স্বজনদের সাথে
দেখা করতে অমরখানা
সীমান্তের কাছে এসে জড়ো
হয়। বেলা ১ টার সময় বিজিবি ও
বিএসএফ দুই বাংলার মানুষদের
সীমান্তের কাঁটা তারের
কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ওই সীমান্তের ৭৪৪ নং মেইন
পিলারের ১ থেকে ৭ নং সাব-
পিলার পর্যন্ত প্রায় ৫
কিলোমিটার নো-ম্যান্সল্যান্ড
এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার
দুই পাশে পঞ্চগড় জেলার
অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা ও
বোদাপাড়া এবং ভারতের
জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ
থানার খালপাড়া, ভিমভিটা,
গোমস্তাবাড়ি ও বড়ুয়াপাড়া
গ্রামসহ উভয় দেশের বিভিন্ন
বয়সী লাখো মানুষ মিলনমেলায়
অংশ নেয়। এই মিলন মেলায়
লাগেনা কোন ভিসা বা
পাসপোর্ট।
কাঁটা তারের বেড়ার ফাঁকা
দিয়েই প্রিয় স্বজনদের এক পলক
দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন
অনেকেই। পুড়ো সীমান্তে এক
আবেগ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ
সময় কেউ স্বজনদের হাত ছুঁয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন আবার কেউ
স্বজনদের জন্য আনা উপহার
সামগ্রী বিনিময় করে। এবার
কেউ কেউ নববর্ষ উপলক্ষে
ভারতীয় স্বজনদের ইলিশ মাছ
উপহার দেয়। আত্মীয় স্বজন না
থাকলেও মিলন মেলার মহোৎসব
দেখতে আসে তরুণ প্রজন্মের
ছেলে মেয়েরাও। কেউ কেউ
আবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
মিলন মেলার কাঁটা তারের
সাথে সেলফিও তোলে।
জানা যায় ৪৭’এ পাক-ভারত
বিভক্তির পূর্বে পঞ্চগড় জেলার
পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও
দেবীগঞ্জ উপজেলা ভারতের
জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে
ছিল। পাক-ভারত বিভক্তির পর
এসব এলাকা বাংলাদেশের
অর্ন্তভূক্ত হয়। দেশ বিভক্তের
কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের
আত্মীয়-স্বজন দুইভাগে বিভক্ত
হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন
হওয়ার পরও দুই দেশের নাগরিকরা
তাদের আত্মীয় স্বজনের
বাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ
পেলেও ভারত সীমান্ত এলাকায়
কাঁটাতারের বেড়া নির্মান
করায় অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে
যায়। পরবর্তীতে উভয় দেশের
নাগরিকদের অনুরোধে প্রায়
একযুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের
সহযোগিতায় অমরখানা
সীমান্তে দুই বাংলার
মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এবছরও ভারত-বাংলাদেশের
নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর জড়ো হয়
সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে
বিজিবি-বিএসএফ সদস্যদের
হিমশিম খেতে হয়। বেলা ১ টায়
বিএসএফ বিজিবি একমত হয়ে
কাঁটাতারের বেড়ার কাছ
যাওয়ার অনুমতি দিলে
বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো
ঊভয় দেশের বিভিন্ন বয়সি
মানুষজন নোম্যান্সল্যান্ডে
প্রবেশ করে। আবেগ, কান্না,
¯েœহ ভালোবাসায় ভরে উঠে
পুড়ো সীমান্ত।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার
ভাউলাগঞ্জ থেকে এসেছেন
সরদিনী রাণী (৫০)। ওপারে
জলপাইগুঁড়ির কাশিবাড়ি
এলাকায় তার মেয়ে সরস্বতীকে
বিয়ে দিয়েছেন ৮ বছর হলো।
কিন্তু অর্থকড়ি না থাকায়
পাসপোর্ট ভিসা করে মেয়েকে
দেখতে যেতে পারেন না।
কিন্তু বছরে একবার এইভাবে
মেয়েকে দেখার সুযোগ হয়।
মেয়ে ও নাতি সবাইকে
আর্শিবাদ করেন সরদিনী। এ সময়
তিনি একবার মেয়েকে ছুঁয়ে
আদর করেন। সীমান্তে কাঁটা
তারের বেড়ায় সে আবেগ
ছাপিয়ে যায়।
তার মতো পঞ্চগড়ের টুনিরহাট
থেকে জগদিস চন্দ্র রায় এসেছেন
ভারতের শিলিগুড়িতে থাকা
আপন ভাই ফনিভূষণকে দেখতে।
শত আবেগ আর প্রিয় স্বজনদের এক
পলক দেখার লোভে লাখো
বাঙালি প্রতি বছর দুই বাংলার
এই মিলন মেলায় যোগ দেয়। এ সময়
তারা ওই সীমান্তে একটি
সীমান্ত হাটের দাবি জানান।
কপি পোষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১৬