বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনকে ভারতভূক্ত্ করার চক্রান্ত নতুন না। এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় সম্পদ রয়েল বেঙ্গল টাইগার গহীন অরন্য প্রবন হওয়ায় বহু আগ থেকেই ভারতমূখী হয়েছে। কেন? কারন, সুন্দরবন যেভাবে বাংলাদেশ অংশে ধ্বংস হচ্ছে ঠিক একই ভাবে ভারতীয় অংশে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। ঠিক যেন পাট শীল্পের দশা। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের একমাত্র রপ্তানিকারক বৃহত পন্য পাটকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র ছিলো সুদূর প্রসারী। ঐ ষড়যন্ত্র সফল হলেও জনবহুল বাংলাদেশ বৈদেশিক রেমিটেন্সে এগিয়ে যেতে পেরেছে। অথচ, পুরোপুরি জনসংখ্যা নির্ভর অর্থনীতিকেও ধ্বংসেরও পরিকল্পনা হয়েছে।
রাতারাতি এদেশের পাটশিল্প যখন আগুনে পুড়ছে ঠিক তখন কলিকাতায় পাটশীল্প ফ্যাক্টরি নির্মান হচ্ছিলো। তৎকালীন বিশ্বে প্লাস্টিক ব্যাগ আবিস্কার ও প্রচলন না হওয়ায় ইউরো-আমেরিকায় পাটজাত ব্যাগের কদর ছিলো একমূখী। ফলে বিদেশী বায়াররা অতি প্রয়োজনীয় পাটের বিকল্প বাজার হিসেবে পার্শবর্তী ইন্ডিয়ার কলিকাতায় চলে যায়! যদিও আল্লাহর মাইর অন্য স্থানে। ভারতীয় পাট গুনে-মানে পূর্বাঞ্চল তথা বাংলাদেশের পাটের কাছাকাছিও ছিলোনা। ফলে সামান্য পরিমানে হলেও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশী পাটের চাহিদা সবসময় ছিলো। সোনালী আঁশ বলার কারন হল, পাটের চাহিদা বাংলাদেশের জন্য ঠিক সোনার চাহিদার ন্যায় ছিলো।
সোনালী পাট ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের সাথে সাথে অসংখ্য নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীমাত্রিক দেশের সর্বনাশ ঘটানোর ষড়যন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতির সুন্দরবন বাংলাদেশ অংশের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র খুব স্পষ্ট। দেশের বনমন্ত্রী যখন বলেন বাঘেরা ভারত ঘুরতে গেছে, তখন স্পষ্ট হয় ঘুরার জন্য বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে নেই। ফলে ওই মন্ত্রীরাও যেকোন সময় 'ভারত ঘুরার' লাইসেন্স করে রেখেই যে দেশের সর্বনাস করছেন, তা বুঝতে বিশ্লেষক হবার কোন প্রয়োজন নেই।
শুধু এপ্রিলের এই একটা মাসেই সুন্দরবনে উপর্যুপরি চার চারটি অগ্নিকান্ড ঘটানো হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনের তথ্য বলছে, সর্বশেষ অগ্নিপ্রজ্জলনে একসাথে ১২ স্থানে পড়ানো হয়েছে বনকে। ঘুরতে যাওয়া বাঘ কখনোই যেন বাংলাদেশে ফেরত আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা স্বরূপ ঠিক সুন্দরবনেই কয়লা ভিত্তিক বিষাক্ত বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মান হচ্ছে ভারতীয় স্বার্থে! সুন্দরবন ধ্বংসের পরিকল্পিত উদ্যোগ এই অগ্নিকান্ড! গোটা বিশ্ব এই বিষাক্ত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত বন্ধ করে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে। অথচ সমূদ্র তীরবর্তী বাংলাদেশ জনবায়ু ক্ষতির শিকার হবার কথা বলে তাদের কাছ থেকে যে সময় ক্ষতিপূরণের দাবি করছে, ঠিক তখনই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা সুন্দরনকে ধ্বংস করা হচ্ছে ওই সমূদ্রের তীরেই! দুনিয়ায় এমন নির্লজ্জ আত্মঘাত কল্পনাও করা যায়না!!!
একটি দেশের সরকার কী পরিমান বিদেশী তাবেদার হতে পারে বাংলাদেশে এই সেশনের 'অনির্বাচিত' আওয়ামীলীগ সরকার তার জ্বলন্ত প্রমাণ!
বাংলাদেশের বৈশ্বিক পরিচয়- রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও সুন্দরবনকে ধ্বংসের ভারতীয় চক্রান্ত রুখে দেয়ার সুযোগ কোন ভাবেই হাতছাড়া করা যাবেনা। অন্তত এক্ষেত্রে দেশের বামপন্থী অংশকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। তারা দীর্ঘদিন থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপন আনু মুহাম্মাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এখন এই আন্দোলনকে স্বার্বজনীনতা দেয়ার সময় এসেছে। সংখ্যাগুরু মুসলিম বাঙ্গালীর অংশগ্রহন ছাড়া এই আন্দোলন স্বার্থক হতে পারবে না। দেশের পক্ষে সুন্দরবন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঁচানোর আন্দোলনে শরীক হওয়া আমাদের নাগরিক দ্বায়িত্ব। একই সাথে চিরোবৈরি ভারতের বিরুদ্ধে মুসলিম বাঙ্গালীদের ইমানী আন্দোলনও বটে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭