রাষ্ট্রধর্ম ইস্যুতে কিছু কিছু নাস্তিক 'শিক্ষিত' হয়ে উঠছেন। এজন্য বেশ ভালো বোধ করছি।
আজ তারা দেখতে পেয়েছেন পৃথিবীর অন্তত ৫৫ টি আধুনিক রাষ্ট্রেও রাষ্ট্রধর্ম আছে। অন্তত একাত্তর টিভির মত জালিয়াতির আশ্রয় না নিয়ে তারা পোস্ট করেছেন অন্যান্য দেশে রাষ্ট্রধর্মের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে।
কিন্তু আমার দাদা বলেন- 'নাস্তিক তো নাস্তিকই। তারা আবার সভ্য হল কবে?' আমি এতে কান দিই না।
কিন্তু কিছু বিষয় দেখে আমিও বিস্মিত হচ্ছি।
এবার রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে ফেসবুকে চালু করা ইভেন্টে তাদের দাবি তুলেছে- রাষ্ট্রধর্ম থাকলে বিশ্বধর্মও থাকতে হবে!!!
উনারা এবার রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি দিলেন বটে তবে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বই ত্যাগ করে এলেন! এখন তারা বিশ্বনাগরিক।
জানেন তো? কারা যেখানে সেখানে নিজের ঘর গড়ে তোলে?
হ্যাঁ। ঠিকই ধরেছেন। যাদের কোন ঘর আশ্রয় নাই তারা। আজ (তাদের ভাষায়) মৌলবাদীদের হাতে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করার পর তারা কি নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাদের কোন রাষ্ট্রীয় স্থান নেই? সত্য কথায় কোন আধুনিক রাষ্ট্রেই তাদের মত অযৌক্তিক 'গ্যাং' এর স্থান হবেনা। তাই তারা নিজেদেরকে বিশ্বনাগরিক বানিয়ে ফেললেন। যেখানে সেখানে থাকার লোক হয়ে গেলেন! অথচ রাষ্ট্রধর্ম থাকার পরেও ঐসব দেশে অন্যান্য সম্প্রদায় ও মতবাদের মানুষ পরম নিশ্চিন্তে তাদের ধর্ম ও যুক্তি পালন করে যাচ্ছেন! এটা এমন কোন বিষয় নয় যে এর মাধ্যমে অনযান্য ধর্ম নিষিদ্ধ বা সংকীর্ণ হবে! ঠিক রাষ্ট্রভাষা বাংলার মানে এই নয় যে এখানে অনযান্য ভাষাভাষীরা সংকীর্ন অধিকার ভোগ করবেন। উপরন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ও রাষ্ট্রভাষার সাথেই এই বিষয়টি স্পষ্ট করে লেখা আছে। যা অন্যান্য অনেক দেশেই নাই! সেদিক থেকে বাংলাদেশের সংবিধান অনেক বেশি আধুনিক ও মানবিকতা ধারন করেছে!
এবার দেখি, বিশ্ব ভবঘুরে এইসব নাস্তিকদের অবস্থান কোথায়?
নাস্তিক মানেই ধর্মমুক্ত মানুষ। কিন্তু (ব্যাক্তিগত ভাবে আমার পর্যবেক্ষণ বলে,) তারা ইসলামকে যতটা ঘৃণা করে অন্য ধর্মে তাদের তত অপত্তি নাই। 'যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা' বলে একটা কথা আছে।
ইউরোপে ধর্মের নামে নিপীড়ন চালু হবার প্রেক্ষিতে যে নাস্তিকতা ও বাম রেনেসার উদ্ভব, সেই নাস্তিকতা দারুন ভাবে মার খেয়েছে মুসলিম দেশগুলোতে গিয়ে। কারন খ্রিষ্টানিটির মত নিছক কোন ধর্ম নয় ইসলাম। বরং পুরো একটা জীবন সমাধান। তাই এখানে অবশ্যম্ভাবী রুপে অর্থনৈতিক সমাধানও রয়েছে।
খ্রিষ্টান ধর্ম সহ অনেক ধর্মেই এই অর্থনৈতিক সমাধান নাই। আর এজন্যই নাস্তিকদের অর্থনীতি ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে দেখা যায়। যেহেতু তারা অর্থনীতি দিয়েই ধর্ম বা খ্রিষ্টানিটিকে পরাজিত করেছে; সেহেতু তারা মুসলিম দেশগুলোতেও অর্থনীতি নিয়েই চ্যালেঞ্জে আসতে বাধ্য হয়েছে।
আর স্বভাবতই পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেব আল্লাহ প্রদত্ব অর্থনৈতিক সমাধানের কাছে মার খেয়েছে। ফলে এপাড় ওপাড় করে তাদের রাজনীতি করতে হয়। সরাসরি কুরআন-হাদীস স্টাডি করে ইসলামের মর্মবাণীর সাথে চ্যালেঞ্জে আসার সাহস করেনা কখনই। ফলে, মুসলিম প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে প্রধানত মুহাম্মাদ সঃ কে গালি দেয়া, ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করার মত অসভ্যতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তাদের যাবতীয় নাস্তিক্য চর্চা।
শত বার স্বীকার করবো যে, নাস্তিকদের মাঝে একটা উদার শ্রেণী আছে। কিন্তু এঁদের মাঝে কুরআনী সমাধান জ্ঞানের পূর্নতা নেই। ফলে ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবেই অন্ধকারে থেকে 'মন্দের ভালো' হিসেবেই তারা মুক্তবুদ্ধি ও বিবেককে ধারন করে নাস্তিক হতে পছন্দ করে। কিংবা তাদের ধারনা হল, একটি নির্দিষ্ট ধর্ম পালন করে সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সাম্য প্রতীষ্ঠা সম্ভব নয়! কিন্তু এই মানুষগুলো যখনই সাম্প্রদায়িক নাস্তিকদের গালাগাল, অপপ্রচার, ভন্ডামোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান তখনই চরম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের কাছে এঁরা অপমানিত হন। আর এই ধাক্কার কারনেও বহু সাবেক নাস্তিকই ইসলামের আলো ও সহনশীলতার সূত্র আবিস্কার করতে স্বক্ষম হন। ফলে তারা ইসলামের কাছাকাছি আসতে থাকেন।
এবার আসি রাষ্ট্রীয় নাগরিক্ত্ব ত্যাগী ও বিশ্বনাগরিক হয়ে ওঠা নাস্তিকদের অবস্থা নিয়ে।
তারা এবার বিশ্বধর্ম হিসেবে খ্রিষ্টানিটিকে গ্রহণ করার আহ্বান করেছে। দেখুন অবস্থা! ধর্মই যাদের চক্ষুশূল, বিশেষত যে খ্রিষ্টান ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে পূঁজি করে নাস্তিক্যবাদের জন্ম, সেই নাস্তিকরাই আবার খ্রিশটানিটির আশ্রয়ে যেতে চাচ্ছে। তাও আবার সেই ইসলামের কাছে যুক্তিতে হেরে!
মনে আছে? তারা সবসময় বলে যুক্তির কাছেই তারা মাথা নত করে? কিন্তু তারা যে মিথ্যা বলে তার প্রমাণের জন্য এখন, রাষ্ট্রধর্ম ইস্যুতে বাংলাদেশী বামদের দেখিয়ে দেয়া যায়।
বিশ্বে এখনও খ্রিষ্টান মেজরিটি থাকায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া বামরা খ্রিটান ধর্মে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বভাবতই আপনি আশা করবেন, ভবিষ্যতে ইসলামকে বিশ্বের মেজরিটি মানুষের ধর্ম বলে যে স্টাডি করা হল। সেক্ষেত্রে এই ঘরহারা বামরা কি ইসলামকেও ভবিষ্যত বিশ্বধর্ম হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত হবেন?
উত্তর কিন্তু এখনই পেতে পারেন।
রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যখন অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্তের কাছে তারা পরাজিত হলেন, তখনই তারা বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠলেন। এর আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতীর 'অভিভাবক' হিসেবে (তাদের দাবি) রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর এখন কিনা রষ্ট্রীয় যুক্তি পেরিয়ে বিশ্বধর্ম প্রবর্তনের দাবি করেন! মানে হল, ধর্মকে মর্যাদা দেয়ার ব্যাপারেও আপনি আস্তিক হয়ে কোন ডিউসিশন নিতে পারবেন না, আপনাকে অন্যান্য অমুসলিম রাষ্ট্রের উদাহরন দিয়ে তা করতে হবে! অথচ নাস্তিক হয়েও তারা সেই ডিসিশন নিয়ে নিলেন! বিশ্বধর্ম প্রতীষ্ঠার উদ্যোগ নিলেন! অথচ, ঐ বিশ্ব আদালতেও (লোল!) ইসলাম যখন বিশ্বধর্ম হয়ে যাবে তখনও তারা একই আচরন করবেন।
মোট কথা তারা সব মানবেন, কেবল ইসলাম মানবেন না। টাখনুর ওপর কাপড় থাকলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের পর আপনি কি ভেবেছিলেন? -বিজ্ঞানমনস্ক না হবার কারনে আপনি সুন্নতি পোশাক না-ও পড়তে পারেন, কিন্তু বিজ্ঞানমস্ক বামরা ঠিকই এখন থেকে সুন্নতি পোষাক পড়বে? মোটেও না।
বিজ্ঞান যেদিন সম্মিলিত ভাবে ইসলামের পক্ষে রায় দেবে নাস্তিকরা ঠিক সেদিন থেকে অবৈজ্ঞানিক চিন্তার পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরবে।
অথচ আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা পছন্দ না হলে তারা যেন আল্লাহর বিশ্ব ব্যবস্থা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়!
নির্লজ্জ উগ্রপন্থীরা জানেও না যে, এই বিশ্ব সিস্টেম সৃষ্টি ও মেন্টেনেন্সের পেছনে কারো হাত থাকতে পারে! যুক্তিও মানে না- একাকী কোন সিস্টেম তৈরি হতে পারেনা।
আবার নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনা দাবী করে! অথচ তারা বিজ্ঞানমনা নয়। একই ভাবে তারা সুনাগরিকও নয়। তাই আজ তাদের জেদ প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলেই এবার রাষ্ট্রধর্মের যুক্তিকে স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার না করে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের অপমান করার মাধ্যমে বিশ্বধর্ম প্রতীষ্ঠার দাবি করে বসতে, তাদের একটুও সময় লাগেনি।
অথচ রাষ্ট্রভাষার যুক্তিতে রাষ্ট্রধর্মের প্রাসঙ্গিকতা বুঝতেই এতদিন লাগিয়ে দিলো!
শেইম অন ইউ গাইজ!!
(রাজনৈতিক ভাবে বামদের অবস্থান নিয়ে যুক্তি নির্ভর ব্লগ হিসেবে প্রস্তুতকৃত। এটি কোন ভাবেই ধর্মীয় আবেগ থেকে লেখা নয়।)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৮