রান্না নিয়ে লিখুন। ভ্রমণ নিয়ে লিখতে পারেন। কিংবা স্বাস্থ্য নিয়ে ব্লগ নির্মাণ করুন। আপনি বুঝতে পারবেন না যে কতগুলো গ্যাং আপনার পাশ দিয়ে নিরবে চলে গেল! বুঝতেও পারবেন না, আপনি এখানে কতটা সৌভাগ্যবান!
২,
হঠাৎ পেপারে দেখলেন দেশের টাকা পাচার, এক মাস ধামাচাপা থাকার পর থাইল্যান্ড থেকে আপনাকে জানানো হয়েছে আপনার টাকা আর আপনার একাউন্টে নাই। আপনি প্রতিবাদী হলেন। শ্রমনির্ভর বাংলাদেশী হিসেবে আপনার শ্রমিক মন দাউ দাউ করে উঠলো! সেই ভাবনাগুলো এবার প্রকাশ করলেন। আপনি আপনার হারানো প্রশ্নগুলো হাজির করলেন...
এ দৃশ্যে আপনি কখনই আপনার রান্না বিষয়ক ব্লগের পরিনতি আশা করতে পারবেন না। কারন ঐসব ব্লগের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ভয়ংকর সাইকোরাই এবার আপনার মেহমান! ব্লগবাড়িতে হানা দেবে। কটু নির্যাস ঢেলে আপনাকে অপদস্ত করবে।
অনলাইনে এদের তৎপরতা পরিচালিত হয় গ্যাং ভিত্তিক। এরা বিচ্ছিন্ন ভাবে অপকর্মের সাহস করেনা। এদের ঠিকানা আছে। হোক ফেইসবুক গোপন গ্রুপ কিংবা অন্য কোন অনলাইন প্লাটফর্ম। রীতিমত ঘোষণা দিয়ে ও ইনবক্সে আহ্বান করে তারা যেকোন স্থানে , যেকোন মতামতের বিরুদ্ধে ঘৃণা উস্কে দেয়ার আয়োজন ডাকে। ভাবতে পারেন!?
৩,
মুক্তমত প্রকাশ, মানুষের জন্মগত অধিকার। সেই অধিকারকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস এই বাংলাদেশে দমন করা হচ্ছে। এতটাই জঘন্য সে গ্রুপিং তৎপরতা যে, যেকোন ভদ্র ও সভ্য মানুষ লজ্জায় মুখ লুকাবেন! ঠিক এই দিকটিকে ভিত্তি করেই কতিপয় নোংরা মানুষের গ্যাং গুলো গড়ে ওঠে।
এরা কটুকথা ও গালিগুলো শতমুখে একসাথে বর্ষণ করতে শুরু করে, যেন টার্গেটকৃত লেখক/ব্লগার বাধ্য হয়ে মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে নিজের মতামত উইথড্র করে নিতে বাধ্য হন! সেই গালাগাল ও নোংরা অপকর্মের ভিত্তিকে শক্ত করতে বরাবরের মতই এই অপরাধী চক্র কিছু সার্বজনীন সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে থাকে। সেটা হতে পারে দেশপ্রেম, হতে পারে জাতিগত মর্যাদাবোধ, ইতিহাসের কোন ঘটনা, এমনকি ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট!
এসব ক্ষেত্রে একতরফা আক্রান্ত হয়ে থাকেন মতপ্রকাশক। ফলে এই নোংরা অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহ হারান তিনি। কারন, পরিবর্তিত এমনতর নোংরা পরিবেশে তাকে একদিকে আত্মসম্মান রক্ষার দিকে নজর দিতে হয়, সাথে সাথে সার্বজনীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার 'একক যোদ্ধা' হিসেবে আবির্ভূত হতে হয়। ফলে পলায়নপর ঠুংকো সম্মানবোধ সম্পন্ন সমাজের কারনেই মতপ্রকাশক হয়ে পড়েন নিরাশাগ্রস্থ ও সহায়হীন।
৪,
আমরা জানি, যেকোন স্বৈরাচারী শাসক প্রচলিত আইনকে নিজের স্বৈরশাসনের স্বপক্ষে ব্যবহার করে থেকে। একই সাথে সামাজিক ভাবে কিছু মিথস্ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন ও ডাইভার্টের চেষ্টা করে। আর এজন্য তাদের প্রয়োজন হয় বুদ্ধিজীবি, শীল্পি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবীদসহ সমাজের গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তিত্বদের পক্ষভুক্ত কিছু সাইনবোর্ড। আর এই সাইনবোর্ড গুলোকে জীবিত করে তুলতে কিছু ব্যাক্তিকে তারা মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলে। ফলস্বরুপ বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাক্তিত্বরা জনতার সম্মুখ থেকে ঝড়ে পড়তে থাকেন। এমন অবস্থায় সমাজের মৌলিক অঙ্গগুলো সম্পূর্ণই সরকারের ইশারায় পরিচালিত হতে থাকে। কিংবা, চালিত হবার প্রচারণা পায়।
-এটিই সামাজিক হ্যাকিং।
আর এই হ্যাকিংকে ডাইভার্ট করে স্বাভাবিক শক্তিমত্তা অক্ষুন্ন রাখার যোগ্যতা আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইন স্যোসাল প্লাটফর্ম গুলোর।
ঠিক এই অঙ্গনগুলোকে কতিপয় অযোগ্য, চাটুকার, দালাল শ্রেণীর দ্বারা হ্যাক করা সম্ভব নয়। এখানে বিটিভি না দেখলেও চলে। কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি ডলার চুরির খবর রাখঢাক করে প্রচারণার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। যদিও ৫৭ ধারার মাধ্যমে একটা অপতৎপরতা এখানেও রয়েছে!
অনলাইনে পরিচালিত মানব মিডিয়াকে হাত করতে না পারায় প্রয়োজন হয়ে যায়, গ্যাং তৈরি ও পৃষ্ঠপোষকতার। যারা সম্মিলিত ভাবে সাধারন জনতা সেজে মতপ্রকাশককে অপমান, অপদস্ত, গালাগাল, সম্মানহানি, অপবাদ, অপব্যাখ্যা, ভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচালন... ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবে দ্বিধান্বিত করতে ব্যবহার হয়। ঠিক সাধারন মানুষের মাঝ থেকে সাধারন মানুষ সেজে একযোগে এই গ্যাংগুলো কাজ করে। এর বাস্তব দৃশ্যায়ন হল, টিএসসিতে বর্ষবরনে নারীদের ওপর গণনির্যাতন! অবিকল মানুষের মত। মানুষের মাঝে ভিড় করা একদল পশুর গণ অপতৎপরতা।
৫,
এই গ্যাং এবং তাদের অস্তিত্ব পুরোটাই মতপ্রকাশ, মুক্তকন্ঠ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বুদ্ধিবৃত্তির জন্য হুমকি! তাই সময় এসেছে সামাজিক ভাইরাস, মিডিয়া ভাইরাস এবং স্যোসাল মিডিয়া ভাইরাস চিহ্নিত করে জনতার প্রতিরোধ গড়ার!
নচেৎ, ঐক্যবদ্ধ ডাকাত দল অনৈক্যের সুযোগে একদিন ক্ষুব্ধ কোন 'ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগারকে'ও অপদস্ত করে ছাড়বে। সেদিন হয়তো মুক্তকন্ঠের একক প্রতিনিধি হবার অসহায়ত্ব জেঁকে বসবে তাকেও! হঠাৎ মতপ্রকাশের পরাধীনতা অনুভূত হবে। স্বাভাবিক ভাবেই যখন বুঝতে পারবেন, কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গন নিয়ে লেখার স্বাধীনতা আপনার আছে। এর বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছুই নাই। তখন নিজেকে একটা নির্দিষ্ট প্রকল্পে আবদ্ধ অবস্থাতেই খুঁজে পাবেন।
আশা করি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরনকারী প্রতিটি উপাদানকে আমাদের স্বীকৃতির খাতা থেকে আলাদা করতে আমরা সবাই একমত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করব।
মানুষ চিরোজীবী হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১