somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৬ টি জেলার মানুষকে ‘দৌলতদিয়া পতিতালয়’ থেকে রক্ষা করবে কে!?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু কুয়াশা থাকলেই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া/আরিচার ফেরী বন্ধ! বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ১৬টি জেলা ঢাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র হাইওয়ে ঢাকা-পাটুরিয়া/আরিচা। এই অঞ্চলসহ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন যেহেতু পদ্মা সেতু নেই সেহেতু ফেরী বা লঞ্চ ছাড়া পদ্মা নদী পারাপারের কোন ব্যাবস্থানেই। পুরো শিতকালটা সন্ধ্যার পর প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশা আচ্ছন্ন থাকে এবং এই কুয়াশা নদীর মধ্যে আরও গভীর বা ঘন। কোন কোন দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুয়াশা আচ্ছন্ন থাকে। কুয়াশার কারণে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে, তাই প্রায়ই পদ্মা নদীর দুই পাড়ে হাজার হাজার বাস, ট্রাক এমনকি এ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ১০ ঘন্টা থেকে ১৫ ঘন্টার জন্য দাড়িয়ে থাকে। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা মানুষেরা অসহায় হয়ে চরম শিতে অসহনিয় যন্ত্রণার মধ্যে সময় কাটায় সেই সময়। টয়লেট বা বাথরুম তো বহু দূরের কথা খাবার পানিও জোটেনা অনেকের। নদীর ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সের রুগি জ্যামের কারণে মাঝে মাঝেই মারা যায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই।

গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে ফেরার পথে সারারাত ফেরীতে উঠে বসে রইলাম। ফেরীর ক্যাপ্টেনের রুমে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- ফেরী কখন ছাড়বেন?
তিনি বল্লেন- তাতো বলতে পারছিনা, কুয়াশা না কাটলে ফেরী ছাড়াতে পারবো না।
আমি বল্লাম- খুব বেশি কুয়াশাতো দেখছিনা, মোটামুটিতো দেখাই যাচ্ছে। ক্যাপ্টেন আমার কথা শুনে এমন একটা ভাব করলেন যেন আমি একটি নাবাল ছেলে, মায়ের কাছে ‘আকাশের চাঁদ এনে দাও’ এমন একটা আব্দার করেফেলেছি।
তিনি বল্লেন- দেখেন নদীর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বাঁশ গেড়ে নদীর গভিরতার সংকেত দেয়া আছে, ঐ সংকেত যদি ফেরী থেকে দেখতে পাই তাহলেই ফেরী ছাড়া সম্ভব।
তার জবাবে আমি বল্লাম- এটা ২০১৩ সাল, ঢাকায় বসে একটি প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস অথবা নেটকানেক্টেড যেকোন যানবাহন কোন রোডে, ঠিক কোন স্থানে, কত স্পিডে চলছে তা জানা যায়, আর এই যুগে আপনাকে ফেরীর দোতালায় বসে জানালা দিয়ে খালি চোঁখে বাঁশের লাঠির সংকেত দেখতে হচ্ছে কেন? ক্যাপ্টেন বল্লেন এটি তো বিআইডাব্লিউটিসি আর সরকারের ব্যাপার আমার ব্যাপার না। সরকার যেভাবে চাইবে সেই ভাবেই চলবে।

আমার ভাগ্নে এবার সাইন্স থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে, এই ইন্টারেপড়া ছেলেটাকেও যদি বলি কুয়াশার মধ্যে ফেরী চলাচলের জন্য একটা সার্কিট তৈরি করে দাও আমার বিশ্বাস এই বাচ্চা ছেলেটাও সনোমিটার দিয়ে অনায়াসেই একটা সার্কিট তৈরি করে দিতে পারবে, যার সাহায্যে নদীর গভিরতা বা অন্যকোন ফেরী বা লঞ্চ কাছাকাছি আসছে কিনা বোঝা যাবে। তাহলে কেন হাজার হাজার মানুষের জীবনকে অসহনিয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? তাহলে কেন এখন পর্যন্ত অতি নিন্ম মানের প্রযুক্তিও ফেরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে না? ৬ কোটি টাকা ব্যায় করে ফেরি মেরামতের জন্য ডেনিস কম্পানিকে ঠিকা দেয়ার নামে টাকা/পয়সা লুটপাট করা যায় আর ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ব্যায় করে কুয়াশার মধ্যে ফেরী চালানোর ব্যবস্থা করা যায় না!? আপনারা যারা এর ভুক্তভোগি এবং এই লেখাটা যারা পড়ছেন আসুন তার কারনটা জেনে নেই।

দৌলতদিয়া-আরিচা/পাটুরিয়া ঘাট সমস্যাটা আসালে কি?

দৌলতদিয়া ঘাটে রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পতিতালয়। দৌলতদিয়া ঘাটটি রাজবাড়ী জেলার অর্ন্তগত গোয়ালন্দ উপজেলার একটি ইউনিয়ন যা রাজবাড়ী-১ আসনের অর্ন্তভূক্ত। রাজবাড়ী-১ আসনের এযাবৎ যত জন এম.পি নির্বাচিত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই সর্বোবৃৎ আয়ের স্থান এই পতিতালয় এবং লঞ্চ ও ফেরী ঘাট।

দৌলতদিয়ায় ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’ নামে পতিতাদের একটি রেজিষ্টার্ড সংগঠন রয়েছে, এই সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ি বর্তমানে এই পতিতালয়ে পতিতার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এখানে প্রায় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ বাড়ীওয়ালী রয়েছে এই সব বাড়ীওয়ালীর আন্ডারে সর্বোনিন্ম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে পতিতা রয়েছে। এই সব বাড়ীওয়ালীর প্রতিদিনের সর্বনিন্মো আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, অবস্থাশালী বাড়ীওয়ালীদের আয় দিনে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। মদ, গাঁজা, হেরোইন থেকে শুরু করে সকল প্রকার মাদক ব্যবসা এখানে ওপেন-সিক্রেট। এখানকার এম.পি যেই হোক না কেন, তিনিই এই পতিতালয়ের প্রধান কর্তাব্যক্তি নিয়োগদেন। এই পতিতালয়ের প্রধান ক্লায়েন্ট হচ্ছে মটর শ্রমিকরা, ট্রাক/বাস ড্রাইভাররা ৪ পাঁচ ঘন্টার জ্যামে পড়লে হেলপারকে গাড়ীর ষ্ট্রেয়ারিং-এ বসিয়ে দিয়ে পতিতালয়ে চলে আসেন। অন্যান্য ধরণের ক্লায়েন্টও এখানে কম নয়।

রাজবাড়ী থেকে যে সকল জেলা দূরে সেই সকল জেলার অনেকেই এখন পর্যন্ত জানে পদ্মা সেতু হবে ঢাকা-আরিচা হাইওয়ের জন্য পদ্মা নদীর উপর। যাদের ভুল ধারনা আছে তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি- না পদ্মা সেতু এই হাইওয়ের জন্য না, পদ্মা সেতু হবে ফরিদপুরের মাওয়া দিয়ে। কারন কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পদ্মা সেতু এখানে হওয়া থেকে বন্ধ করা হয়েছে। কারন এখানে পতিতালয় এবং ঘাট থেকে প্রতিদিন শুধুমাত্র এম.পি মহোদয়ই ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা উপর্জন করেন। এখানে ঘাট না থাকলে পতিতালয় কেন্দ্রীক যাদের আয় তাদের কি হবে? শুধু সেতু বন্ধ করলে তো হবে না, ঘাটে জ্যামও তৈরি করতে হবে, কারন মটর শ্রমিকরাই মূলত দৌতলদিয়া পতিতালয়ের প্রধান কাষ্টমার। শিতকালে ফেরী বন্ধ করে এবং গরমকালে ঘাটের নেতাদের (পতিতালয়ের দালাল) নিজেদের বাস-ট্রাক দিয়ে কৃত্তিম জ্যাম তৈরি করে পতিতালয়ের ক্লায়েন্ট জোগাড় করা হয়।

এই রাজবাড়ী জেলার বর্তমান ১নং আসনের এম.পি মহোদয় বিগত এম.পি মহোদয়দের থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেন। তিনি বর্তমানে দৌলদিয়া পতিতালয়ের একটি মোষ্ট-ওয়ান্টেড লোককে ডান হাত বানিয়ে সকল প্রকার টোল আদায়সহ সকল প্রকার সু-কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব অপর্ণ করেছেন। এই মোষ্ট-ওয়ান্টেড লোকটিকে মেম্বর থেকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। এই মোষ্ট-ওয়ান্টেড লোকটি বর্তমানে এতোই ক্ষমতাশালী হয়েছেন যে থানার ওসি থেকে শুরু করে জেলার এস.পি পর্যন্ত বদলী করার ক্ষমতা তিনি রাখেন। তিনি প্রতিদিনের পেমেন্ট ছাড়াও এম.পি মহোদয়কে ১ কোটি টাকা দামের গাড়ী উপহার দিয়েছেন। এম.পি মহোদয় সেই গাড়ীতে চড়ে এ্যাম্বুলেন্সে মারা যাওয়া রুগি দেখতে যান, আহা, উহু করেন আর রুগির আত্মিয় স্বজনদের শান্তনা দেন।

আজও যে লোকটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ঘাটের এই কৃত্তিম জ্যামে পড়ে মারা গেলেন, তিনি বা তার আত্মীয় স্বজনরা কি জানেন এর জন্য দয়ি এই পতিতালয়ের দালালেরা? বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের ১৬ টি জেলার মানুষ যারা ঢাকায় আশা যাওয়া করেন তারা কি হিসাব করেছেন পতিতালয়ের দালালেরা আপনার জীবনের কত ঘন্টা কেড়ে নিয়েছে?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:২৮
২৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×