মনে করেন আপনি রিলাক্স মুডে আছেন। কোন একটা সমুদ্রের বীচে ছাতার নিচে চোখ দুটা বন্ধ করে আপনার সেই প্রিয়তম মানুষটাকে কল্পনা করছেন আর ঠিক সেই মুহুর্তে সেই প্রিয় মানুষটির ফোন কিন্তু পকেট থেকে ফোন বের করতে ইচ্ছে করছে না আবার তার সাথে কথা বলতেও খুব ইচ্ছে করছে। কেউ যদি আপনার ফোনটা বের করে দিয়ে আপনার কানে ধরে আর আপনি যদি আরামচে কথা বলেন তাহলে সেই দৃশ্যটা কল্পনা করতে আপনার কেমন লাগবে? কিংবা আপনি ঘরের কাজে অনেক ব্যস্ত, বিশেষকরে রান্না-বান্নার কাজে আপনার হাত দুইটা বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে আর ঠিক সেই সময় আপনার প্রিয় মানুষটির ফোন কিন্তু রিসিভ করতে পারছেন না ঐ সময় কেউ যদি আপনার কানের কাছে ফোনটা ধরে তাহলে আপনার কেমন লাগবে? অবশ্যই ভালো কিন্তু ঘরের খেয়ে পরের কেউ উপকার করতে চাইবে না। এই পৃথিবীতে এমন কোন দয়ালু ব্যক্তি নাই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার ফোন আপনার কানে ধরে রাখবে এবং আপনি আরামচে কথা বলবেন।
কিন্তু গুগল গ্লাস সেই অসাধ্য কাজটি করেছে। এখন কারো সাথে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্টফোন স্পর্শ না করেই কথা বলতে পারবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার স্মার্টফোনটি আপনার পকেটেই থাকতে হবে সেটা প্যান্ট কিংবা শার্টের পকেটেই হোক।
গত কয়েক শতাব্দীতে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে বিকাশ হয় নি তা গত কয়েক দশকে হয়েছে। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, টাচ প্রযুক্তি এবং সব শেষে গুগল গ্লাস। আসলে গুগল গ্লাসটা হচ্ছে কম্পিউটারেরই একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। আগে কম্পিউটারগুলি ছিল বিশাল বিশাল যেগুলো বিশালাকৃতির কক্ষে রাখা হত। তারপর চলে এলো এর সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ডেস্কটপ পিসি। কম্পিউটার কি শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ...? না তা নয়। তারপর চলে এল ল্যাপটপ, পিডিএ, পামটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি ইত্যাদি। এর সাথে সাথে মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশ। চলে এলো সকলের হাতে স্মার্টফোন। সবাই যখন স্মার্ট প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত তখন মানুষের জীবনকে আরো একটু স্মার্ট করতে গুগল ঘোষণা দিল গুগল গ্লাস তৈরির।
গুগল তখন প্রযুক্তির বাজারে রমরমা ব্যবসা বিস্তার করে যাচ্ছে। সার্চ ইঞ্জিন দিয়েই মূলত গুগলের ব্যবসা শুরু। এরপর ইউটিউব, জি-মেইল, মোবাইল ফোনের এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম, ড্রাইভার বিহীন গুগল গাড়ী, গুগল ম্যাপ, গুগল পজিশনিং সার্ভিস, গুগল প্লাস এবং সর্বশেষে গুগল গ্লাসের ইনোভেশন।
আসলে গুগল গ্লাসটা কি এবং এর কার্যাবলি কি কি এই প্রশ্নগুলো হয়ত অনেকের মনে জাগতে পারে তাই গুগল গ্লাস নিয়ে আজ লিখলাম।
আসলে গুগল গ্লাস মূলত আমাদের চিরাচরিত নরমাল সানগ্লাসের মত একটা গ্লাস তবে এর বেসিক পার্থক্য হল নরমাল গ্লাস প্রযুক্তি নির্ভর নয় আর গুগল গ্লাস প্রযুক্তি নির্ভর। একটা গ্লাস মানুষকে যে কতটা দিক দিয়ে স্মার্ট বানায় গুগল গ্লাস তারই একটা প্রতিচ্ছবি। ৫ মেগাপিক্সেলের ৫০০ ডলারের সাদা ও কালো রঙের গুগল গ্লাস বর্তমানে আমেরিকার বাজারে। গুগল গ্লাস মূলত পার্সোনাল কম্পিউটারেরই ক্ষুদ্র ভার্সন। গুগল গ্লাস দিয়ে সাধারণত যা যা করা যায়-
-এইচ ডি ফটো তোলা যায়।
-৭২০ পিক্সেলের এইচ ডি ভিডিও করা যায়।
-রাস্তার নির্দেশনা পাওয়া যায় যা সরাসরি গুগল ম্যাপের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত।
-মেসেজ সেন্ড করা যায়।
-ফোন কল করা এবং রিসিভ করা যায়।
-গুগল প্লাসের বিভিন্ন আপডেট পাওয়া যায়।
-গুগল সার্চ করা যায় এবং
-মেইল চেক করা যায়।
তবে এ সকল কাজ করার জন্য আপনার স্মার্টফোনটি ব্লু-টুথ কানেকশনের মাধ্যমে গুগল গ্লাসের সাথে কানেক্ট থাকতে হবে তা না হলে কিন্তু কিছুই হবে না। মূলত এক্ষেত্রে আপনার স্মার্টফোনটির গুরুত্ব অনেক বেশী। যেহেতু গুগল গ্লাসে সরাসরি সিম ইনসার্ট করার ব্যবস্থা নাই তাই স্মার্টফোন দিয়েই গুগল গ্লাসে ইন্টারনেট কানেকশন দিতে হয়। কথা বলার জন্য ছোট একটা এয়ার ফোন আপনার কানের সাথে লাগানো থাকবে আর আপনার ডান চোখে থাকবে বিশালাকৃতির স্ক্রিন যেখানে আপনার সকল আপ টু ডেট দেখাবে। আপনি আপনার হাতের আঙুলের মাধ্যমে গুগল গ্লাসের সেটিংস এ পরিবর্তন আনতে পারবেন। শুধুই কি হাত আপনি ভয়েস কমান্ড দিয়েও একই কাজ করতে পারবেন।
মনে করেন আপনি কোথাও বেড়াতে গেছেন এবং সেই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার অনেক ভালো লেগেছে কিন্তু ছিনতাইকারীর ভয়ে আপনি আপনার স্মার্টফোনটা বের করতে সাহস পাচ্ছেন না সেক্ষেত্রে আপনি আপনার গুগল গ্লাসে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে ঐ জায়গার ছবি এবং ভিডিও করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে ইংরেজী প্রোনানসিয়েশনে অনেক দক্ষ হতে হবে।
জরুরী ফোন করা, ফোন রিসিভ করা, মেসেজ সেন্ড করা কিংবা ভিডিও কলিং সুবিধাও আপনি সামান্য ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে করতে পারবেন।
ধরুন আপনি কোথাও গিয়ে হারিয়ে গেলেন, ফেরার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে গুগল গ্লাস আপনাকে সাহায্য করবে তার গুগল ম্যাপের সাহায্যে। এক্ষেত্রে আপনি সরাসরি ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আপনি আপনার পজিশন নির্দেশ করতে পারবেন এবং আপনার ফেরার রাস্তাও খুঁজে পাবেন।
আপনি যদি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং পছন্দ করেন সেক্ষেত্রে গুগল গ্লাস আপনাকে সেই সু্যোগটা দিচ্ছে। আপাতত আপনি গুগল প্লাসের সমস্ত আপডেট পাবেন কিন্তু পরবর্তিতে ফেসবুকের সংযুক্তিও ঘটবে গুগল গ্লাসে। এছাড়াও আপনি গুগল গ্লাসের মাধ্যমে আপনার জি-মেইল আই ডির মেইল সার্বক্ষনিক চেক করতে পারবেন।
ধরুন এই মহুর্তে আপনার একটা ইনফরমশনের খুব দরকার কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না কি করা যায়। সেক্ষেত্রে গুগল গ্লাস আপনাকে সাহায্য করবে। গুগল গ্লাসের গুগল সার্চিং অপশনে গিয়ে আপনি সহজেই যেকোন কিছুর সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এই হল আপাতত গুগল গ্লাসের আপডেট। তবে ভবিষ্যতে গুগল গ্লাসে আরো অনেক ফিচার যুক্ত হবে যেমন, ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারনেট, ইউটিউব ভিডিও, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং ইত্যাদির সংযুক্তি। মোট কথা বর্তমানে আমরা একটা কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের সাহায্যে যা যা করি কিংবা যেসব ফিচার ব্যবহার করি তার সমস্ত কিছু অদূর ভবিষ্যতে হয়ত গুগল গ্লাসে সংযুক্ত হবে এবং তা অতি দ্রুত।