কুপমন্ডুকতা, জাতিগত বিরোধ, সামন্তবাদ ও মোটামাথার জন্য বিখ্যাত পাকিস্তান আরেকধাপ এগিয়ে গেল। পিপিপি, মিলিটারী, মুসলিমলীগ এ ত্রিভুজ চক্রে বন্দী পাকিস্তান সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। জাল ছিন্ন করেছিল একবার আওয়ামীলীগ। ১৯৭০ সালে! তবে সে ফলাফলও রাস্ট্র পাকিস্তানের জন্য সুফল বয়ে আনেনি। বরং সামন্ত-মিলিটারী গোয়ার্তুমী জন্ম দেয় মানবেতিহাসের এক মহা রক্তাত্ব অধ্যায়। বার্থ অব বাংলাদেশ ফ্রম ইস্ট পাকিস্তান।
যদিও যথারীতি 'ভুট্টো' পরিবারের হাত থেকে এবারের নির্বাচনেও শাসনভার 'নওয়াজ' পরিবারের কাছেই বালিশ খেলার মত হাত বদল হচ্ছে, তবুও উঠে এসেছে অন্তত: আরেকটি অপশন- পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। ১৯৯১ সালে ক্রিজ থেকে বিদেয় নেয়ার পর গ্রেট ক্রিকেটার ইমরান জটিলতায় ভরা রাজনীতির মাঠে নামেন। ১ / ২ টি আসন নিয়ে শুরুতে তুস্ট থাকতে হলেও যাত্রা শুরুর মোটামুটি ২০ বছরের মাথায় পিটিআই (বার্তাসংস্থা নয়!) দেশের যুগ্ম ভাবে ২য় শক্তিশালী দল হতে পেরেছে। শুধু তা নয় খাইবারপাখতুনখাওয়া প্রদেশে এককভাবে প্রাদেশিক সরকার গঠন করার মত আসন পেয়েছে দলটি। প্রচারাভিযানে এক মঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়ে ইমরান এখন হাসপাতালে। কংগ্র্যাটস ইমরান! ওয়েল ডান পিটিআই!! জিতে রহো!!!
পাকিস্তানের অন্দরমহল নিয়ে আমাদের খুব পরিস্কার ধারণা না থাকলেও এটা পরিস্কার যে নানা মতে বিভক্ত, বিশৃংখল পাকিস্তানের লাউ-কদু শাসনের মাঝে ভিন্নতর কিছুর প্রত্যাশায় জনতা এ রায় দিয়েছে। স্পিরিট ধরে রাখতে পারলে পিটিআই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার ভার পাবে।
পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট অনেক সরল। প্রায় সকল মানুষ নৃতাত্ত্বিক বাঙ্গালী, ধর্মে মুসলিম, ভাষা বাংলা, অর্থনৈতিক সামন্তবাদ নেই প্রায়, সশস্ত্র কোন গ্রুপ নেই, আমেরিকার নির্বিচার বোমা হামলা বা ধারে কাছে কোথাও ঘাঁটি নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। সাধামাটা বৈচিত্রহীন সমতল এদেশের সমস্যা খুব সিম্পল:
১। রাজনৈতিক সামন্তবাদ
২। ভারতের সরাসরি সীমান্ত হত্যাকান্ড ও নানাবিধ কুটচাল
৩। মেরুদন্ডহীন ভোটিং কালচার
৪। দালাল ও দলকানা মিডিয়া
আর এসবের ভীড়েই চিড়েচ্যাপ্টা আম-জনতা। তারপরও প্রথম সমস্যাটিই অন্যান্য সমস্যার মূলকারণ।
রাজনৈতিক সামন্তবাদ বস্তুটা কি? গ্রামের সব জমি মোড়লের। বাকিরা হয় বর্গাচাষী নয় দিনমজুর- এ যখন হয় অবস্থা তখন তাকে অর্থনৈতিক সামন্তবাদ বলে। যেমন- পাকিস্তান, উ:ভারত, আফগানিস্তান, শেখ শাসিত মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি। সে গ্রামের কালচার, হাসি, কান্না, বিচার আচার সবই হয় মোড়লের ইচ্ছায়। দরিদ্র জনসাধারন দুর শহরের জজকোট পর্যন্ত পা মাড়ানোর সময়/পয়সা/ক্ষমতা রাখেনা।
নানা ঘটনার রেশ ধরে মুসলীম লীগের পেট চিড়ে আ'লীগের জন্ম হয়। আর আ'লীগের সীমাহীন দুরাচারের প্রত্যাঘাতে আজকের বিএনপির জন্ম হয়। কারো ভাল লাগুক আর না-লাগুক প্রায় ৮০% বাংলাদেশী সম্মিলিতভাবে দল দুটোর সমর্থক। এ দুটো দল মিলে জোট গঠন করলে কমপক্ষে আগামী ৫০বছর ক্ষমতায় থাকতে তাদের অসুবিধা হবেনা!

ধানের শিষ প্রতীকের দলটির মালিক খালেদা জিয়া। মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর হক থাকে এ ফর্মুলায় তিনি এটার মালিক হন। জিয়ার ভাই/ভাতিজারা এখন পর্যন্ত বিএনপি নিয়ে টানাটানি করেননি। সন্তান পর্যায়ে মালিকরা যথেস্ট একটিভ। পাইপে লাইনে বৌমা ও নাতনীরাও আছেন আলহামদুলিল্লাহ।
সামন্তবাদী এ দল দুটির বাদবাকী প্রেসিডিয়াম/স্থায়ী কমিটি, জেলা কমিটি, কাউন্সিলর ইত্যাদি বার্ষিক বা ত্রৈবার্ষিক ফোরাম ঠুঁটো জগন্নাথ। তারা সামন্তদেবীর চরণে অবনত মস্তকে হাজির হন ও আদেশ নিষেধ অবগত হয়ে বিদেয় হন। গ্রামের পপুলার লোক ইউনিয়ন সভাপতি, উপজেলার পপুলার লোক এম পি, দেশের পপুলার লোক মন্ত্রী হওয়ার মত কোন সিস্টেম এ দল দুটিতে নেই। ফলে যেকোন লোক বিএনপি/লীগ করে উপরে উঠতে চাইলে পিরামিডের গোড়া বড় করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে নেত্রীর মারেফাতের সাথে কিভাবে লিংকড হওয়া যায় সেদিকেই মনোযোগ দেয়। সারাদেশে ছোট বড় নানান পোস্টার, ব্যানার তার প্রমান। বড় করে মুরাদ জং, তার কোনায় রানা, আরো কোনায় রানার কোন হেল্পার। আর উপরে ডান কোনায় বঙ্গবন্ধু, বা কোনায় হাসিনা ও জয়। অর্থাৎ সিলসিলা কাভার। চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ আল নোমানের মুক্তি চাইছেন কোন এক তোতন তবে পোস্টার ছাপিয়েছেন জনৈক হিরন। এরকম। অর্থাৎ, খালেদার কৃপা নোমানের উপর বর্ষিত, নোমানের পদলেহন করে তোতন আপাতত: ওয়ার্ড পর্যায়ে.., আর হিরন হয়ত মহল্লাদলের ছিনতাই কাজটা সামনে লিজ পেতে চাচ্ছে তোতনের ভরসায়।
এ ধরনের অসুস্থ সিস্টেম। ভদ্রভাষায় রাজনৈতিক সামন্তবাদ গেঁড়ে বসেছে এখানে। আর জনতা ভেড়ার ন্যায় কোন একটি সিস্টেমকে ভ্যালিডিটি দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উন্নয়ন, ধর্ম, দিনবদল, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি সব ভাঁওতাবাজি। এ ব্লগারও অপছন্দের দলকে অন্তত: গত ২ টার্ম ভোট দিতে বাধ্য হয়েছে শুধুমাত্র প্রার্থীদের কমপারেটিভ স্ট্রেন্থ দেখে। সমস্যা হচ্ছে প্রার্থীরা দেশ চালায়না, দেশ চালায় দল। থুক্কু দলরাও দেশ চালায়না দেশ চালায় সামন্ত দেবী ও কতিপয় উড়ে এসে জুড়ে বসা সামন্তভাঁড়।
যে কথা বলছিলাম এ রাজনৈতিক সামন্তবাদের জাল ছিন্ন করে কেউ এগিয়ে আসলে ১৫/২০ বছরে উল্লেখযোগ্য ভিন্নচিত্র লক্ষ্য করা যাবে। ইমরানের খানের পাইরেটেড কোন ভার্সন এখানে আছে কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৪২