ফেসবুকে ইভেন্ট ইনভাইটেশন পেয়ে সাথে সাথেই 'গোয়িং' সাইন করি। ভৌগলিক দুরত্বের কারণে সরেজমিন যেতে না পরলেও পত্রিকার বরাতে কনফার্ম হলাম এ লুঙ্গিমার্চ অত্যন্ত সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। AAjfjsdআন্তরিক ধন্যবাদ আয়োজক ও অংশগ্রহনকারীদের।
একদার নিম্নজলাভূমি বারিধারা সাধারন মানুষের জোতজমি ছিল। সরকার আইনী গায়েরজোরে তা হুকুম দখল করে মূলত কূটনৈতিকপাড়া হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু কালেকালে তাতে কিছু স্বদেশী বড়লোকও ড্যারা বাধেঁ। মোটাদাগে কমিশনখোর রাজনীতিক, অসাধু ব্যবসায়ী ও চোর আমলাদের নিরাপদ ভিআইপি আবাসস্থলে পরিণত হয় বারিধারা। উদাহরন হিসেবে চোরাধিরাজ লেজেহুমু এরশাদ প্রণিধানযোগ্য। হাতেগোনা কিছু সৎ ধনী মানুষ ওখানে নেই তা নয়, কিন্তু নিশ্চিৎ তারা হাতেগোনাই। ২০০৪-৫ সালে এরশাদের পাশের একটি বিল্ডিংয়ে নর্থসাউথে বিবিএ পড়ুয়া এক ছেলেকে আমি পড়াতাম। তার বাবার 'ইন্ড্রাস্ট্রি ছিল, ব্যবসা করেন' ইত্যাদি জানা গেলেও ছেলে, দারোয়ান, তার মা কাউকেই জিঙ্গাসাবাদ করে কর্তার পেশা পরিস্কার জানা যায়নি। এক মাসের বেতন পরের মাসে পাওয়া গেলেও তার পরের মাসের বেতন অদ্যাবধি (২০১৩) পাওয়া যায়নি! কয়েক মাস ফলোআপ করেও না! বারিধারার সব গৃহকর্তা/মা/ছেলেরা এমন 'বেঈমান ও প্রবঞ্চক' না হলেও তাদের অর্জিত সম্পদ ও অবস্থানে যে ব্যাপক মাত্রায় ঘাপলা আছে তা নিশ্চিৎ।
তবে ঘাপলাবাজরা আন্ধাররাইতে বিলাইর মত থাকলে কারো কিছু আসত না, যেতও না। হঠাৎ তাদের প্রেস্টিজের উদয় হয়েছে। লুঙ্গি নামক একটা নিরীহ প্রাণহীন পোষাক তাদের 'কস্টার্জিত' স্ট্যাটাসকে কর্দমাক্ত করেছে বলে খবরে প্রকাশ। তবে যেকোন মানুষ বা গোটাদেশ নয়, তাদের রোষানলে পড়েছে দরিদ্র রিকশাচালকরা। এলাকার সমিতির সভাপতি লুঙ্গি পরে বারিধারায় রিকশা চালনা ব্যান করেছেন। তা তামিল করছে রিকশাওয়ালাদের কাছাকাছি আরেকটি নিপীড়ীত গোস্টী প্রহরীরা। এমনিতে ঘাপলাবাজ চোর চাট্টা কিসিমের হঠাৎ বড়লোকরা স্ট্যাটাস ঝাড়েন কাজের বুয়া, দারোয়ান, ড্রাইভার, পিয়ন, ওয়ার্কার শ্রেনীর দুর্বল মানুষদের উপর। তারা কায়দা করে ব্যাংকডাকাতি করলেও পুলিশ গিয়ে প্রথম বাঁধে দারোয়ানকে!
এটা নিশ্চিৎ করেই বলা যায়- বারিধারার আলোচ্য বাঙ্গালী অধিবাসীরা স্পেন বা তুর্কিস্তান থেকে হিজরত/মাইগ্রেশন করে সেখানে আসেননি। এসেছেন সোনাইমুড়ি, ভুরুঙ্গামারি, মুলাদী, কালীহাতি থেকে। তাদের বাপদাদা চৌদ্ধগুস্টি লুঙ্গি শুধু পড়েননি- লুঙ্গিই ছিল জীবন। লুঙ্গির কোছায় মুড়ি, খৈ, বুট রেখে খেতেন; অনেকে বিড়ি, দেশলাই, লাইটার রাখতেন; এক কাছায় টাকা গুঁজে রাখতেন; অযুর পরে লুঙ্গি দিয়েই তোয়ালের কাজ সারতেন; গরমে ঘাম মুছতে লুঙ্গি। ছোটখাট নদীনালা সামনে আসলে তারা কাছাখুলে নদীপার বলে....তা পেরুতেন, মাছ ধরে কোচায় ভরতেন। এছাড়া প্রাকৃতিক চাপে লুঙ্গিওয়ালা কত আরামেই না যেথায় খুশি বসে যেতে পারেন। প্যান্টে কি এই সুবিধা আছে? ওদের বাপদাদাকে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে কত আরামে তারা রাইতে এ লুঙ্গি পরে ঘুমাতেন, অপরপক্ষের ডাকে তাৎক্ষনিক সাড়া দিতেন.....আরো কত সুবিধা।
এহেন লুঙ্গি কি করিয়া সদ্য বড়লোকের জাত মারিল তা বুদ্ধিতে কুলোয়না।
লুঙ্গি বাংলাদেশের ডমেস্টিক তৈরি পোশাক শিল্পের বড় খাত। জনপ্রতি ২ টি করে লুঙ্গি থাকলেও দেশে প্রায় ১৬ কোটি লুঙ্গির বাজার। ১ টি করে পাল্টালেও বছরে ৮ কোটি পিস নতুন লুঙ্গির মার্কেট। প্রবাসী বাঙ্গালীরা মাটি পানি ফল কিছুই নিয়ে যেতে পারেননা। কিন্তু বাঙ্গালীর আবহমান লুঙ্গি ব্যাগে নিয়ে ইমিগ্রেশন ছাড়ে। এভাবে দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্য, ওশেনিয়া, আসিয়ান, ই ইউ, নর্থ আমেরিকাতে লুঙ্গির বিরাট বাজার ছড়িয়ে পড়েছে। নরসিংদী, সিরাজগন্জ, নারায়নগন্জ ও পাবনা এদেশের সবচে বড় লুঙ্গি উৎপাদনস্থল। এখানে গ্রামে গন্জে বাড়ির উঠোনে লাখ লাখ তাঁতে কাজ করছে মানুষ, বিশেষ করে ঘরের কাজ ও বাইরের কাজ একসাথে করার সুবিধাসম্পন্ন এ শিল্প পল্লীকর্মসংস্থানে মহান অবদান রেখেছে। লুঙ্গি বানানো একটি মহান শিল্প। যারা দেখেননি মিস করেছেন। একটি একটি সুতোকে হাত ও পায়ের কৌশলে বুনন করতে করতে এ লুঙ্গি। ২০০ থেকে ৫০০ টাকার আরামদায়ক লুঙ্গি ইউরোপ থেকে ইমপোর্ট করে ৩০০০ টাকায় পরলে জাত যেতনা, জাতে উঠত বোধ হয়।