গাদাঁগাদীঁ করে ১৫ কোটি মানুষ বসবাস করিতেছি বিশ্বমানচিত্রে নখতুল্য যৎসামান্য এই ক্ষুদ্র ভূখন্ডে। উত্তর-দক্ষিনে ১০০০ আর পূবে-পশ্চিমে ৫০০ কিলোমিটারের বেশী জমিন আমাদের ভাগে বিশ্ব-রাজনীতি বরাদ্ধ করেনি। সামান্য প্রাকৃতিক গ্যাস ছাড়া বড় কোন সোনা দানা তেল হীরা জহরতের খনিও ভাগে পড়েনি। আল্লাহর এই দুনিয়ার পুরোটা জুড়ে রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদিআরব, মার্কিন মুল্লুক বা আলাস্কা। অথচ থাকার মত মানুষ নেই। জমি লোভী রাস্ট্রগুলি মহাসাগরের হাজার হাজার দীপপূঞ্জ পর্যন্ত নিজের দখলে নিয়েছে। হাত বাড়িয়েছে এন্টার্কটিকা, আর্কটিকের বরফ খন্ডে। চাদঁ ও নাকি তাদের! একদিন বলবে, তারাগুলো আমাদের, সুর্য আমাদের, নি:সীম মহাশুন্য আমাদের! তারপর করে ফেলবে প্যাটেন্ট রাইট। দাবি করবে রয়েলটি। সূর্যালোক বাবদ এত ডলার, চন্দ্রালোক বাবদ এত ডলার। প্রবহমান বাতাস বাবদ..।
তবু আমরা ভাল আছি। এত অল্প জায়গায় আমরা কাচাঁপাট রপ্তানীতে এক নাম্বার, নিজেদের প্রয়োজনীয় ধান, শাক-সবজি, ফলমুল, মাছ, মুরগি, ছাগল, ডিম, মরিচ, ভুট্টা উৎপাদন করার পর চিংড়ি, ইলিশ, সবজি রপ্তানি করছি। পোশাক তৈরী করছি বিশ্বের ৬০০ কোটি পূরুষ, মহিলা বা বাচ্চাদের জন্য। এমনকি প্রয়োজনীয় কাপড় বা সুতাও বানাচ্ছি। জমি থাকলে তুলার জন্য মধ্যএশিয়া যেতামনা। আগে জাহাজ ভাংতাম শুধু এখন জাহাজ বানচ্ছি। নিজেরা প্রতিদিন ৩/৪ কাপ চা পান করার পরও ব্যাপক রপ্তানি করছি। সিমেন্ট, সিরামিক, টাইলস, কাচঁ, সার এর মত ভারী শিল্পে আমাদের ইউরোপীয় সাফল্য।
জলবসন্ত ও পোলিও দূরীভূত। একটি বাচ্চাও টিকাদান ব্যতীত নেই। প্রসূতি ও মাতৃস্বাস্থ্যে আমরা অল্পসময়ে ছাড়িয়ে গেছি দক্ষিন এশিয়া। কন্যাশিশুদের শিক্ষার হার পুত্রদের ছেয়ে ঢের বেশী। তাদের প্রতি বাবা মা, পরিবার, রাস্ট্রের যত্ন প্রতিবেশী পারমানবিক শক্তিধর ভারত, পাকিস্তানের তুলনায় ইর্ষনীয় ও অনুকরনীয় বেটার। ছেলে শিশুরা ও ভাল আছে যথারীতি। দম্পতি প্রতি ৮/১০ বাচ্চার এ দেশটিতে ১৫/২০ বছরের প্রচারনায় ২ সন্তান অভ্যাসে চলে এসেছে। কমেছে মৃত্যুহার।
খালবিল নদীনালার দেশে ধমনী শিরার মত পাকা সড়ক হয়ে গেছে অলরেডি। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু করেছি আমরা। টেলিফোনহীন একটি রাস্ট্রের আবালবৃদ্ধবনিতা সবার হাতে এখন মোবাইল। দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহার। WiMax সেবাতে আমরা প্রথম দের কাতারে নাম লিখাচ্ছি। রাজধানীর কিছু ঘাটতি ছাড়া বিশুদ্ধ পানি আমাদের সবার নাগালে যা বহূ দেশে দুর্লভ।
মত, মতপ্রকাশ এখানে সম্ভবত: স্বাধীনতার চূড়ান্ত। শত শত সংবাদপত্র, ডজনাধিক টিভি চ্যানেল, ওয়েবসাইট, ব্লগসাইট, রেডিও সারাক্ষন ইচ্ছামত সরকার বা যেকারোর সমালোচনা করছে। সভা, সমিতি, সেমিনার, বই, সংঘটনের জোয়ারে দেশ ভাসছে। আরব বিশ্ব, আফ্রিকা, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ ও ল্যাটিনের মানুষের কাছে যা সপ্ন মাত্র! মুক্ত বিশ্বের আঁতুড়ঘর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রও অতটা মুক্ত নয়।
আমাদের প্রকৌশলী, ডাক্তার, আর্কিটেক্ট, লয়ার, একাউন্টেটস রা নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভীনদেশেও সেবা দিচ্ছে। দ্রুত এগোচ্ছে প্রোগামাররা। সফটওয়ার, গেমস, এনিমেশন তৈরী শুরু হয়েছে।
সুতরাং, বালাদেশ এগুচ্ছে। ৩৮ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য ও অবিশ্বাস্য। এশিয়া, আফ্রিকা বা ল্যাটিনের অনেক মানুষের কাছে আমাদের গল্প বললে বলবে- একবার নিয়ে চলুনতু দেশটাতে। যেখানে বৃদ্ধ মা-বাবাকে আকঁড়ে থাকে সন্তান, নিয়ম করে বাপের বাড়ি নাইওর যায় বিবাহিত কন্যা, প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে চারদিন খাবার পাঠায় প্রতিবেশী, পাড়ার মুরব্বীদের সামনে পড়লে লুকিয়ে ফেলা হয় হাতের জ্বলন্ত সিগারেট, শিক্ষকের সামনে নত থাকে বয়োবৃদ্ধ সাবেক ছাত্রটিও, স্বামীর আগে খাবার হজম হয়না স্ত্রীর, আর সন্তান মানে নিজের হৃৎপিন্ড। এমন দেশটি আমার মাতৃভূমি। বাংলাদেশ। আমার মা। মা'র ৩৮ তম জন্মবার্ষিকীতে সবাইকে আগাম শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:০৪