somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া, দেশে এবং বিদেশে

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের কাহিনী

দেশে ড্রাইভিং শিখার জন্য ধানমন্ডি এলাকার এক নামকরা ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হলাম। ক্লাস রুম লেসন নিতে হলো, তারপর রাস্তায় নামাবে তারা। রাস্তায় চালানো শিখাবে ৮ ঘন্টা। কোর্স ফি দিতে হলো ৮০০০ টাকা। লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পর ৯ মাস পরে আমাকে পরীক্ষার ডেট দিলো। ড্রাইভিং স্কুল থেকে থেকে জানালো হলো, ৩০০ টাকা খরচ করলে তারা পরীক্ষার ডেট আগিয়ে এনে দিতে পারবে। খরচ করলাম ৩০০ টাকা। ২ মাসের মাঝে পরীক্ষার ডেট পেলাম।

৮ ঘন্টা গাড়ি চালানো আর ৪ ঘন্টা ইনক্লাস লেসন নিয়ে আমি মোটামোটি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টার সময় জোয়ার সাহারার বিআরটিসির ডিপোতে গেলাম সকাল বেলা, ড্রাইভিং স্কুলের মানুষেরাই আমাকে নিয়ে গেল পরীক্ষাস্থলে। লাইন ধরে দাড়িয়ে ঘন্টা খানেক দাড়ানোর পর রিটেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বসতে পারলাম। আরো ১ ঘন্টা পর রিটেন পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো। তারপর আবার লাইনে দাড়ালাম ভাইভা দেওয়ার জন্য। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ভাইভা পাস করে শেষ মুক্তি পেলাম দুপুর ১টায়। এরপর রোড টেস্ট বাকী আছে।

দুপুর একটার দিকে ড্রাইভিং স্কুলের মানুষটা বললো, স্যার রোড টেস্ট দিতে দিতে বিকাল ৪টা-৫টার লেগে যেতে পারে। আজকে যদি শেষ করতে না পারে তারা, তবে কালকে হয়ত আবার আসতে হতে পারে। এর চেয়ে বরং আপনি আমাকে ৩০০ টাকা দেন, আপনাকে পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। চলেন বাসায় ফিরে যায়।

বৈশাখের গরমে এটা একটা লোভনীয় অফার। ৩০০ টাকার বিনিময়ে ৪ ঘন্টা রোদের মধ্যে দাড়ানো থেকে মুক্তি। যথারীতি আমি লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। পুরোপুরি জেনুইন, বিআরটিএ তে গিয়ে ছবি তুলতে হলো, চিপওয়ালা লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। ১০০% জেনুইন।


দেশের রোড টেস্টের কোন অভিজ্ঞতা আমার হলো না। পরিচিত একজনের কাছে শুনলাম, তাকে জাস্ট বললো, গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেখাতে। গাড়ি চালু করলো, আর পরীক্ষায় পাস সে।

বিদেশের কাহিনী

আমাকে প্রথমে রিটেন টেস্ট দেওয়া লাগল। রিটেন টেস্ট দেওয়ার জন্য ১০০ পৃষ্ঠার নিয়ম কানুনের বই পড়তে হলো। তারপর রোড টেস্ট। রোড টেস্ট দেওয়ার আগে ১২ ঘন্টা ইনস্ট্রাক্টর থেকে লেসন নিলাম। বুঝলাম, দেশে ৮০০০ টাকা দিয়ে ধানমন্ডির স্কুল থেকে তেমন কিছুই শিখা হলো না। তারা শিখিয়েছিল শুধু গাড়ি চালানো, কিভাবে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করতে হয়, কিভাবে হেডলাইট চালাতে হয়, সেই সাথে ডানে আর বামে গাড়ি ঘুড়ানো, এক্সিলারেশন আর ব্রেক, ধানমন্ডি লেকের আশেপাশে হালকা গাড়ি চালানো। আর কিছু না। পার্কিংটাও শিখায় নাই ঠিক মত।

বিদেশে এসে উপরের সবগুলো শিখলাম প্রথম লেসন এ। এরপর বাকী সময়গুলো শুধু গেল নিয়ম কানুন মেনে গাড়ি চালাতে।


বিদেশের পরীক্ষায় পার্কিং টেস্ট দিতে হবে আর ২০ মিনিট রাস্তায় চালাতে হবে। পরীক্ষায় পাস নাম্বার বলে কিছু নাই। ২০-৩০ মিনিটের পরীক্ষায় ভুলের সংখ্যার হিসাব নেয় শুধু। প্রতি ভুলের জন্য অপরাধভেদে ৫,১০,২০, ৫০ নাম্বার কাটা যায়। ৪০ কিংবা ৪৫ এর বেশি নাম্বার কাটা গেলেই ফেল।

১ম বার: একটা স্টপ সাইন এ আমার গাড়ি পুরোপুরো থামানো হয় নাই, রোলিং স্টপ ছিল। একেবারেই ৫০ নম্বর কাটা গেল অতএব আমি ফেইল।

২য় বার: ২-৩ টা ছোট খাটো ভুল। গাড়ি রাস্তার হলুদ মার্কে লেগেছে, টার্ন নেওয়ার সময় একটু ওয়াইড ছিলো। ছোটখাটো ভুল, অতএব আবার ফেইল।

৩য় বার: রাইট টার্ণ নেওয়ার সময় পথচারী এর রাস্তা পার হবে কিনা, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা না করেই চলে গিয়েছি। অতএব আবার ফেইল।

এরপর আমার প্রাকটিস করা শুরু করলাম, আরো ১৬ ঘন্টা চালালাম।শুধুমাত্র হাত পাকানো আর নিয়ম কানুন ঝালাই করার জন্য।

৪র্থ বার: এইবার আমি পাস করলাম। ১০০% একুরেট, কোন ভুল নাই।

বিদেশে এসে একটা লাইসেন্স পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলো। গাড়ি কমবেশি সবাই চালাতে পারে, নিয়ম কানুন মেনে চালানোটাই আসল ব্যাপার।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যদি এমন হতো.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৮

যদি এমন হতো....

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা-দারিদ্র-মহামারী, যুদ্ধবিগ্রহের ধ্বংসযজ্ঞে মানুষে মানুষে, দেশে দেশে সকল বৈরীতা ভুলে একটা সুখী পরিবার গঠন করে দুনিটাকে সত্যিকার ভূস্বর্গ করতে...
শুরু হতো বাংলাদেশ থেকে। সব রাজনৈতিক দল মুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বিকার ( কবি দাউদ হায়দার স্বরনে তারি লেখা কিছু কবিতা থেকে উৎসাহিত হয়ে)

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৫



জন্মেছি, এও এক ঘটনা মাত্র।
কারও ইচ্ছেতে নয়, কারও অনিচ্ছেতেও নয়।
রক্তের গন্ধে ভরা এক সকালে
আমি নেমে এসেছি, অপ্রত্যাশিত চিৎকারে ।

শহরের ধুলো, গলির বিক্রি হয়ে যাওয়া রোদ,
বাসের পাদানিতে ঝিমিয়ে পড়া শরীর,
সবকিছু দেখেছি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের পাশে আমেরিকা-ইসরায়েল। পাকিস্তানের পাশে কারা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩


গত রাতে ইসরায়েল থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গেছে একটি কার্গো বিমান। তাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাইডেড মিসাইল বিপুল পরিমাণে আছে। এই মিসাইলগুলো অতি নিখুঁতভাবে মেঘ, বৃষ্টি বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×