অবতারনিকা :
আজ (৭ ডিসেম্বর ২০১০) বিকাল ৫ টায় আকস্মাৎ আমি এক অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংর্স্পশে আসলাম। ঘটনা চক্রের প্রত্যক্ষভাবে অকুস্থলে উপস্থিত না থাকলে , রোগটি কিংবা রোগটির ভয়াবহতা আমি কখন্ও বিশ্বাস করতাম না। বাসায় এসে রোগটি নিয়ে ইন্টারনেটে একটু খুজতেই অজানা এই রোগটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। রোগটির নাম Bibliophobia যার' বাংলা নাম দাড়ায় 'বই ভীতি'।
Bibliophobia কি?
সাধারণ ভাবে Bibliophobia বলতে বই ভীতি বোঝালেও , বিস্তৃতার্থে Bibliophobia দ্বারা বইযেল মত সম্পূর্ণ নিদোষ বা অক্ষতিকর বা ভীতিকর ( যেমন , তেলপোকা বা মাকড়সা ভীতি) কোন জিনিসের প্রতি ব্যক্তি আতংকগ্রস্ততা কে বোঝায়।
'বই ভীতি'র চরম প্রকাশ সাধারণত না দেখা গেলেও ; আমাদরে আসে- পাশের অনেকেই কিন্তু এই বই ভীতিতে ভোগেন । এমনকি , বই ভীতিগ্রস্ত ব্যক্তিও অনেক সময় বুঝতে পারে না যে বই তার কাছে আতংকের কারণ। এই বই ভীতির কিন্তু নানা ধরণের। কেউ কেউ যে কোন বই দেখলেই আতংকগ্রস্ত হয়ে পরেন ,এমন কি শেলফে সাজ্জানো বই দেখেও ভয়ে শিউড়ে উঠেন। আবার কেউ কেউ শুধু মাত্র বিশেষ শ্রেনীর বই ( স্কুলে পাঠ্য বই, ভুতের বই, কমসি ইত্যাদি ) দ্বারা বা বিশেষ আকৃতির বই দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। Bibliophobia এর বাহ্যিক উপসর্গ গুলো ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্র বিভিন্ন ভবে বিবিন্ন মাত্রায় প্রাকাশ পায়।
Bibliophobia এর symptoms সম্পর্কে সংশ্রিষ্ট ওয়বেগুলোতে বলা হয়েছে
As with any phobia, the symptoms vary by person depending on their level of fear. The symptoms typically include extreme anxiety, dread and anything associated with panic such as shortness of breath, rapid breathing, irregular heartbeat, sweating, excessive sweating, nausea, dry mouth, nausea, inability to articulate words or sentences, dry mouth and shaking. .
একজন Bibliophobia গ্রস্ত একজন সহযাত্রী ...........
আজ বিকাল ৫:৩০ নাগাদ মলিবাগ মোড় থেকে কাঁটাবন মোড় যাবার উদ্দেশ্যে তরঙ্গপ্লাসে উঠি। ব্যতিক্রমভাবে আজ বাসটি ছিল ভীড় শুণ্য । আমার অবস্থান ৪ র্থ সারিতে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ঠিক পিছনে। আমার সামনে সিটে বসা ২০/২২ বৎসরে মেয়েটি হঠৎ সমগ্র শরীরির খিচু দিয়ে মুহুর্তরে মধ্য জ্ঞান হারালেন .......হাত পা শক্ত হয়ে সিটে এরলয়ে পড়লেন (অনেকটাই মৃগী রোগী মত)।১৫/২০ সেকেন্ড পড়ে তার শরীরে কিছুটা চেতনা আসলেও শরীর -হাত তখন শক্ত ও বাঁকা হয়েই ছিল..........ভয়ংকর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন।চিৎকার করে কথা বলতে চাইছিলেন কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় হচ্ছিল না। যে টুকু শক্ত তার মাঝে ছিল তা দিয়ে তিনি বারবার হাতের ঈশারা কাউকে সরে যেতে বলছিলেন ।
আমি প্রথমে মনে করেছিলাম চারদিকে ভড়ি জমে যাওয়া তার সাপোকেশন বা দমবন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি সবাই কে সরতে যেতে বলছেন। সবাই কে দূরে সারিয়ে দেওয়ার পরও তিনি ঈশারা করছিলেন সরে যাবার জন্য।যাহোক, প্রচুর পানি খাবার পর তিনি ৫ মিনিট পরে কথা বলবার কিছুটা শক্তি পেলেন। এবং তার প্রথম শব্দ হল ' বই'।
বিষয় টি বুঝতে আমাদের সময় লাগল। হাঠাৎ খেয়াল করলাম কখন যেন বাসে একজন হকার কিছু বই নিয়ে উঠেছে এবং ' যাত্রা পথে একটা প্রয়োজনী বই কিনুন বা পড়ুন' এ জাতিও কথা বলতেই মেয়েটি Bibliophobia তে আক্রান্ত হয়েছে।বই হকার কে বাস থেকে নামিয়ে দিতেই তিনি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠলেন। পরে তার কাছ থেকে যা জানা গেল...........'বেশ কিছু বছর ধরে বই পড়া বিষয়ক কোন কথা শুনলেই তিনি এবাবে অসুস্থ হয়ে পরেন'।
...........এবং একটি ততোধিক অদ্ভূৎ মানসিকতার কাহিনী:
Bibliophobia নামক অদ্ভুৎঅজানা এই রোগ নিয়ে ইন্টারনেটে অনেক তথ্য পেলাম। আধুনিক অনেক চিকিৎসায় Bibliophobia আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। আশা করি আমার নাম না জানা সহযাত্রীটিও অদূর ভবিষ্যতে তার বই ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন সকলের সহর্মমিতায়। কিন্ত, একই সময় মিলিত হওয়া অপর এক সহযাত্রীনি আদৌ কোন দিন সুস্থ হয়ে উঠবেন না কিনা সে বিষয়ে আমার ভিষণ সন্দেহ আছে।
সে কাহিনী বলে বিদায় নিচ্ছি।
Bibliophobia আক্রান্ত মেয়েটির সামনে সিটে বসে ছিলেন ২০/২২ বৎসরের অপর একটি মেযে এবং একজন মাঝ বয়সী মহিলা ( সম্ভবত মা)। মেয়েটি Bibliophobia আক্রান্ত হবার পর আমি মৃগী রোগ ভেবে তার হাত থেকে পরে যাওয়া ব্যাগটিতে ঔষধ আছে কিনা কিংবা মোবাইলে পরিবারের কোন নম্বর পাওয়া যায় কিনা দেখবার জন্য সম্মুখবর্তি মেয়েটিকে দিলাম.............।
কিন্তু মেয়েটির মা ( বা অভিবাবক ) তখন ব্যস্ত মেয়েটির মাথাসহ কান ভাল ভাবে ওড়না দিয়ে মুড়ে দিতে। খেয়াল করে শুনরাম.......তিনি চাপা ধমকের সুরে মেয়েটিকে বলছেন ' ভালো করে কানটা ঢেকে রাখ......... ভেড়ের মধ্যে কানের দুল নিয়ে যেতে পারে।''
পুনশ্চ ঃ উল্লেখ্য করা যায় যে মা টি নিজের কান নিয়ে আতংকিত ছিলেন না ; কারণ তিনি ছিলেন উম্মুক্ত মুখ হিজাব পরিহিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২২