সবতেরে দেখি জামাতের গুণগান গাইতাছে তায় আমিও সুর ধরলাম আর কি------------
জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়ার জন্যই গণতান্ত্রিক ইসলামী দলের রাজনীতিকে নিষিদ্ধের কথা বলা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন জঙ্গিবাদ হলো জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক আদর্শের পারিপন্থী। যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত তারা জামায়াতকে তাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করে। আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়। এক দিকে তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলছে অপরদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ইসলামী সংগঠনগুলোর রাজনীতি বন্ধ করতে চায়। এর মাধ্যমে তারা জঙ্গিবাদকেই উস্কে দিতে চাইছে। এটা খুবই অদুরদর্শী আচরণ। মাওলানা নিজামী সাপ্তাহিক ইংরেজী ম্যাগাজিন প্রোব ( PROBE ) এর সর্বশেষ সংখ্যায় (আগস্ট ৩-৯) প্রদত্ত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশ করা হল :
PROBE : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দুর্নীতি দমন অভিযান, রাজনৈতিক সংস্কার এবং সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষন কি?
নিজামী : প্রেসিডেন্ট প্রতিকূল ও জটিল এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারী করেন। এমতাবস্থায় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নয়া প্রধান উপদেষ্টা ও নতুন উপদেষ্টাবর্গসহ নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। তারা একটি অর্থবহ ও গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন অনুষ্টানের পরিবেশ সৃষ্টির কাজ শুরু করেন। নির্বাচন কমিশন পুণর্গঠন করা হয়েছে। এটা এক চমৎকার উদ্যোগ এবং আমরা এর প্রশংসা করি।
PROBE : রাজনৈতিক দলের সংস্কার সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন?
নিজামী : রাজনীতির-ই সংস্কার করা উচিত। কতিপয় নেতার পরিবর্তন রাজনৈতিক সংস্কার নয়। সম্প্রতি এক নিবন্ধে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের বিবেচনার জন্য কতিপয় প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম । এতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কে কিছু লিখেছিলাম। যার মধ্যে রয়েছে দলসমূহের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা, পারিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বন্ধকরণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন, যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি। অধিকাংশ দলের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে পূর্ণ কর্তৃত্বের অধিকারী। এ ধরনের উদাহরণ ভালো নয় এবং এর পরিবর্তন হওয়া উচিত।
PROBE : অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক দলসমূহের সংস্কার প্রকৃতপক্ষে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
নিজামী : পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রমানাদি ছাড়া আমরা কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না, এ জন্য আমি বলবো না যে, সংস্কার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অবশ্য এটা কারো কাছে মনে হতে পারে যে, সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বত:স্ফুর্ততা দেখা যাচ্ছে না। সংস্কার উদ্যোগের ফলে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করতে পারে । এটা ভাল লক্ষণ নয়।
সংস্কারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সুস্থ রাজনীতি। বর্তমানে রাজনীতি অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। সুস্থ রাজনীতির বিকাশ পদ্ধতিও সুস্থ হওয়া উচিত। রাজনৈতিক দলসমূহকেই সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের স্বত:স্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিনিধিদের মধ্যে অর্থবহ সংলাপ হওয়া উচিত। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
এটা শুধু নেতা পরিবর্তনের বিষয় নয়। এর সাথে আন্ত:দলীয় সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক দলসমূহ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী তবে তারা পরস্পরের শক্র হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকাশ্যে অবাধে বিবৃতি দিতে, তাদের কর্মসূচি ও আদর্শ পেশ করতে পারেন। একমত না হলে আমি দ্বিমত পোষণ করে আমার যুক্তি পেশ করবো, তবে শক্তি প্রয়োগ করবো না। কিন্তু আমাদের দেশের অভ্যাস হচ্ছে বলপ্রয়োগ করা। কোন রাজনৈতিক দল সমাবেশ করলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী দল বাধা দেবে। এ ধরনের তৎপরতার ফলে পাল্টা ব্যবস্থা ও সহিংসতার সৃষ্টি হয়। কালো টাকার ফলে রাজনীতিতে পেশী শক্তির দাপট বেড়েছে।
এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে রাজনৈতিক দলসমূহকে সহ-অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে। পারস্পরিক সহমর্মিতা থাকতে হবে। এ জন্য সংলাপ প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলসমূহকে এক প্রকার আচরণবিধি মেনে চলার জন্য ঐকমত্যে পৌছতে হবে।
PROBE : মাইনাস টু ফরমুলা বাস্তাবায়নের ফলে আপনিও মাইনাস হয়ে যাবেন বলে মনে করেন?
নিজামী : বিশ্লেষকরা মাইনাস-প্লাস সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু এটা প্রকৃত বিষয় নয়। কতিপয় মৌল বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। মাইনাস-প্লাস করে সংস্কার আবর্তিত হবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই, নেতৃত্বের প্রতি আমার মোহ নেই। সংস্কার মাইনাস-প্লাস কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। আমার নিজের ব্যাপারে বলতে চাই, আমার সংগঠন যদি আজ বলে আমার নেতৃত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই, তাহলে আমি তা স্বাগত জানাবো। আমি এখন যুবক নই এবং সম্ভবত: রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার সময় এসেছে, যদিও রাজনীতিতে আমার চেয়েও বর্ষীয়ান লোকও রয়েছেন। অন্যান্য দলে যারা নতুন নেতৃত্বে আসছেন, তারাও আমার চেয়ে কম বয়সের নয়!
PROBE : দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে বিভিন্ন দলের নেতারা গ্রেফতার হলেও আপনার দলীয় নেতারা মুক্ত আছেন। আপনার বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাকান্ড সম্পর্কে আপনার এবং সেক্রেটারী জেনারেলের বিরুদ্ধে সিপিবি'র মামলা রয়েছে। সেক্রেটারী জেনারেলের বিরুদ্ধে চাদাবাজির মামলাও রয়েছে।
নিজামী : জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেলের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করা হয়, একটি মামলা দাউদকান্দিতে, অপরটি জকিগঞ্জে। এ মামলাটি মিথ্যা বলে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে সারাবিশ্ব জানে কি ঘটেছিল। সকলেই জানে কারা লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকা অভিযানে যাওয়ার কথা বলেছিল। লগি-বৈঠা দিয়ে কারা মানুষ হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করেছিল। আমরা ছিলাম জুলুমের শিকার। এই মামলায় আমাদের অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হচ্ছে এক প্রহসন। সুবিচারের সকল বিবেচনার এটা পরিপন্থী। আমরা এই মামলায় জামিনে আছি। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা জামিনে থাকবো। সুতরাং আমরা প্রেফতার না হলে আপত্তির কি আছে। তুদুপরি ২১ আগষ্টের ঘটনা সম্পর্কে এক হিরোইনখোর মামলা করেছে। এটা আমলে আনা কিছু নেই।
PROBE : আওয়ামী লীগ জামায়াতের ন্যায় ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহকে ভবিষ্যতে নিষিদ্ধ করার দাবি করেছে। তারা জামায়াতের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদের উত্থানে এবং অস্ত্র ও অর্থ পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। এসব অভিযোগের জবাব কি?
নিজামী : রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগ এসব অভিযোগ এনেছে। গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে তারা যখন প্রথম অভিযোগ দায়ের ও মামলা করে তখন তারা জামায়াতে ইসলামীর কথা বলেনি। বাস্তবে গত কয়েক বছর ধরে তারা এ ব্যাপারে জামায়াতের নাম উল্লেখ করেননি। এরপর তারা হঠাৎ এক হিরোইনখোরকে দিয়ে এই মামলা করায়।
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে বলা যায়, এটা জামায়াতের রাজনৈতিক মতবাদের বিরোধী । যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা জামায়াতকে তাদের জন্যে প্রবল ক্ষতিকর গণ্য করে । তারা জামায়াতের বিরোধিতায় খুব সক্রিয়। যদি তারা দেশের মধ্যে কোনক্রমে ভিত গড়ে তুলতে পারে, তাহলে জামায়াত হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। সুতরাং জামায়াত তাদের সমর্থন বা পৃষ্টপোষকতা করার প্রশ্নই আসে না।
জামায়াত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী একটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতের প্রকাশিত শত শত গ্রন্থ রয়েছে। এসব বই থেকে জামায়াত জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয় কিংবা তাদের আশ্রয় দেয় এ রকম একটি অনুচ্ছেদ বা শব্দের কথা কেউ বলতে পারবে না। এই মিথ্যা অভিযোগের ব্যাপারে আমরা পার্লামেন্টে জবাব দিয়েছি। আমরা রাজপথে, সমাবেশে এর জবাব দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ দু'বার ক্ষমতায় ছিল। ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত তাদের চ্যালেঞ্জ করার কেউ ছিল না। এ সময় তাদের পক্ষে কি সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন একটা মামলা দায়ের করাও কি সম্ভব হয়েছে? তারা কি জামায়াতের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের দায়ে একটা মামলাও দায়ের করতে পেরেছে? মেজর রফিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে দাগী গডফাদারদের একটি তালিকা প্রত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ঐ তালিকায় জামায়াতের কোন সদস্যের নাম দেখানোর জন্য আমি চ্যালেঞ্জ করছি। সুতরাং এখন যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির জন্য।
আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়। এর অর্থ কি? একদিকে তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলছে, অপরদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত ইসলামী সংগঠনসমূহকে তারা নিষিদ্ধ করতে চায়। ধর্ম ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সংগঠনসমূহকে নিষিদ্ধ করে তারা এদেরকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে এটা সহায়ক হবে না। আবার, ওরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সমালোচনা করলেও নির্বাচনী স্বার্থে একটি ধর্মীয় দলের সাথে সমঝোতা চুক্তি করে । তারা মাওলানা আজিজুল হকের ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল । এটা কি স্ববিরোধিতা নয়। এখন তারা সংস্কারের কথা বলছে যাতে করে দলীয় প্রধান এ ধরনের সিন্ধান্ত নিতে না পারে। এ ধরনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর কোন বক্তব্য বিবেচনায় আনা উচিত বলে আমি মনে করিনা।
PROBE : তারা দাবি করছে যুদ্ধপরাধীদের বিচার করতে হবে। আরো কয়েকটি মহলও এ দাবি করছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? আপনি কি নিজেকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেন, যে জন্য আপনাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে?
নিজামী : যুদ্ধাপরাধী কাদের বলে? যে যুদ্ধে অংশ নেয় এবং অপরাধ সংঘটিত করে। আমরা যুদ্ধে অংশ নেইনি, সুতরাং যুদ্ধাপরাধী হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আওয়ামী লীগের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কথা শোভা পায় না, কারণ তারা ক্ষমতায় থাকা কালে ৯৫ হাজার পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ছাড়াই ভারতে পাঠিয়েছিল। সুতরাং ওদের মুখে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি মানায় না। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে তারা আমাদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারী মামলাও দায়ের করতে পারেনি।
PROBE : শেখ মুজিব এক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমা করেছিলেন?
নিজামী : হ্যা, তিনি একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগরা দাবি করে যে, জামায়াত এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়ে না, সাধারণ ক্ষমা ছিল রাজনৈতিক ভিন্নমতের জন্য। এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় মাত্র কয়েকটি ফৌজদারী বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না-অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ ও হত্যা। আমি পার্লামেন্টে বার বার চ্যালেঞ্জ করেছি আমাদের বিরুদ্ধে এসব ঘটনার অভিযোগ আনতে ও প্রমাণ করতে। জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ আনার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। তাদের নিরংকুশ ক্ষমতার আমলে জামায়াতের পক্ষে দাড়াবার মত কোন আইনজীবী ছিল না। কিন্তু সে সময় তারা, মাঠ পর্যায়ে বা জেলা অথবা কেন্দ্রের কোনো একজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কানো ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে পারেনি। যেহেতু তারা জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন মামলা করতে পারেনি, এজন্য তারা গল্প রচনা করছে। আমরা এদেশেরই মানুষ। এদেশের মানুষ যদি ওদের অভিযোগের প্রতি কর্ণপাত করতো তাহলে আমরা এখানে রাজনীতি করতে পারতাম না।
PROBE : চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলের অপরাধ ও দুনীতির জন্য নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জোটের শরীক হিসেবে জামায়াত কি এই দুনীতির অংশীদার নয়?
নিজামী : মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে কোন দুর্নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় না। কিংবা দুর্নীতির সিদ্ধান্ত হয় না কোন রাজনৈতিক ফোরামে। দুর্নীতি হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে, প্রকাশ্যে হয় না। তবে সরকারের বিরুদ্ধে যখন সার্বিক নিন্দাবাদ উচ্চারিত হয়, অংশীদার হিসেবে আমরা তা এড়াতে পারি না। এজন্য রাজনৈতিক অসুবিধা হলে আমরাও অসুবিধার মধ্যে পড়বো। সমগ্র জাতির উপরও এর দায় বর্তাবে।
PROBE : আপনাদের দলের অভ্যন্তরীণ মনিটরিং রয়েছে নিয়মিত এবং দলের অভ্যন্তরে কি হচ্ছে সে ব্যাপারে আপনারা খুবই সচেতন। সুতরাং জোট সরকারের আমলে আপনাদের যেসব এমপি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন?
নিজামী : দলের কোন সদস্য যদি আপত্তিকর কিছু করে তাহলে সেটা আমাদের নির্বাহী কমিটির মাসিক বৈঠকে উত্থাপিত হয়। প্রয়োজন বোধে এ ব্যাপারেও তদন্ত চালানো এবং তদানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এটা এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। মিজানুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ সময় সারা বছর তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং দুর্নীতি সংঘটনকালেও অসুস্থ ছিলেন। আমাদের কাছে দুর্নীতির খবর যথাসময়ে আসলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তবে তিনি অসুস্থ ছিলেন এজন্য তার বিষয়টি পরে আমলে আনা হয়। নজরুল ইসলামের দুর্নীতির ব্যাপারে এখনো কোন কিছু প্রমাণিত হয়নি। ডা: আবদুল্লাহ তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু তখন তার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়নি। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি আদাবরে চাদাবাজি করেছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজনীতির উপর থেকে নিষেজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে আমরা দেখবো এসব অভিযোগের আইনগত ভিত্তি কতটুকু?
আমাদের দলের কোন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে আমরা তৎক্ষণাৎ তার তদন্ত করি। এরপর আমাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
PROBE : নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে কিভাবে দেখছেন?
নিজামী : আমাদের দেশে গণতন্ত্র রয়েছে। আছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। যে কোন ব্যক্তি যেকোন সময় দল গঠনের উদ্যোগ নিতে পারেন। নতুন দল যদি রাজনীতিতে গুণগত কোন পরিবর্তন আনতে পারে তাহলে দেশের রাজনীতিতে একটা নতুন সংযোজন হবে। আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি।
PROBE : অন্যান্য দলের তুলনায় জামায়াতে ইসলামী আর্থিকভাবে শক্তিশালী এবং এ বিষয়টি প্রায়ই আলোচনায় আসে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন কি?
নিজামী : জামায়াতকে আঘাত করার এটা একটা ফন্দি। এ ধরনের ধারণার পিছনে কি প্রমান আছে?
PROBE : ইবনে সিনা ট্রাস্ট ছাড়াও আরো কিছু ট্রাস্ট এবং ইসলামী ব্যাংক রয়েছে যা জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এটা জামায়াতের আয়ের এক বিরাট উৎস?
নিজামী : এদেশে যে কেউ জনকল্যাণমূলক সংস্থা বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারেন। এর সাথে কোন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা টানা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। ইবনে সিনা বা ইসলামী ব্যাংকের সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক নেই। এডভোকেট মুজিবুর রহমান ইবনে সিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন। যৌবনকালে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সুতরাং এর সাথে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক হল কিভাবে? কমোডর আতাউর রহমান একইভাবে ইবনে সিনা ট্রাস্টের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ কর্মকর্তা। উনি কিভাবে জামায়াতের সাথে জড়িত হলেন, এসব সংস্থায় জামায়াতের কিছু সংখ্যক লোক থাকতে পারে। এই ট্রাস্টের মুনাফা জনকল্যাণে ব্যয়িত হয়। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না, জামায়াতে ইসলামী এই সংস্থা থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে। দেশে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। এরা কি কখনো এ তথ্য পেয়েছে যে, এসব সংগঠন জামায়াতে ইসলামী চালায় অথবা দলে অর্থ যোগান দেয়।
ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক লস্কর। তিনি কোন দলের সাথে জড়িত ছিলেন না। লুৎফর রহমান সরকার ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তাকে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর করা হয় । লুৎফর রহমান সরকার জামায়াতের লোক হলে আ: লীগ তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানাতো? তারা সুনিশ্চিত ছিল যে, জামায়াতের সাথে লুৎফর রহমান সরকারের কোন সম্পর্ক নেই। তথাপি তিনি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের এমডি। এ ধরনের অভিযোগ কতিপয় মহলের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রতিফলন।
PROBE : আপনারা কি এখনও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরীক?
নিজামী : চারদলীয় জোট অটুল থাকাকালেই জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা হয়। এই জোট বিলুপ্ত করার কোন ঘোষনা দেয়া হয়নি। ঘরোয়া রাজনীতি চালু থাকা অবধি চারদলীয় জোটের কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। বর্তমানে আমরা বলতে পারি না আমরা জোটে আছি কি না। ঘরোয়া রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
PROBE : বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং মান্নান ভূইয়ার নেতৃত্বে আরেকটি বিএনপি এই দুই গ্রুপের ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কি?
নিজামী : এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য দলের অভ্যন্তরীন বিষয়ে আমরা নাক গলাতে চাই না। এটা তাদের নির্ধারণ করতে হবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে দেশের স্বার্থে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
PROBE : অনেক রাজনীতিক গ্রেফতার হওয়ার আশংকা করছেন। আপনিও কি গ্রেফতারের আশংকা করছেন?
নিজামী : আমি বাড়িতে থাকি। খাওয়া-দাওয়া করি ঘুমাই। গ্রেফতার হওয়ার কোন কারণ আমি দেখছি না। আমি অনেক গুজব শুনি যে আমি নাকি ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে গেছি। কিন্তু আমি এখন বাড়িতে অবস্থান করছি। টেলিফোনেও আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমি গ্রেফতার হয়েছি কিনা? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে এ ধরনের গুজব থেকেই যাচ্ছে। তবে আমি এ ধরনের কোন আশংকা করি না।
PROBE : মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। এখন আপনি বাংলাদেশের রাজনীতি করছেন এমনকি সরকারের শরীক হিসেবেও। আপনারা যদি একবার ক্ষমা চান তাহলে বিষয়টি চুকে যায়। কেন আপনারা তা করছেন না। এ ব্যাপারে জামায়াত অনমনীয় কেন?
নিজামী : আপনাদের স্মরণে আছে অধ্যাপক গোলাম আযম নাগরিকত্ব ইস্যুতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি জামায়াতের নেতৃত্বে ছিলেন। সুপ্রীমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে তার নাগরিকত্ব বহাল হওয়ার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে তিনি ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি ১৯৭১ সালে তার ভূমিকার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী, জেনারেল ওসমানী এবং জিয়াউর রহমানের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন । যদি ক্ষমা প্রার্থনায় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো তাহলে তার ঐ বক্তব্যে পর বিষয়টি আর জিইয়ে থাকতো না।
PROBE : এসব বিষয় যেহেতু জিইয়ে রয়েছে সেজন্য এ বিষয়টি চিরতরে মিটিয়ে ফেলার জন্য প্রকাশ্যে একটি বিস্তারিত বিবৃতি দিচ্ছেন না কেন?
নিজামী : আমরা বহুবার ব্যাখ্যা দিয়েছি। বিষয়টি তবু জিইয়ে রাখা হচ্ছে নিছক এই কারণে যে, জামায়াতের বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই।
PROBE : দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনি কি ভাবছেন?
নিজামী : আমরা দেশের জন্য সর্বোচ্চ ভালটাই কামনা করি। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে আমরা সরকারকে সমর্থন করেছি। সেই সাথে আমরা আশা করেছি কারো প্রপাগান্ডার শিকার হয়ে কোন নির্দোষ লোক যেন হয়রানির শিকার না হয়। এই সরকারের নিরপেক্ষতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে দেশের ক্ষতি হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সফল হোন আমরা চাই। সামরিক বাহিনী এই সরকারকে সমর্থন করছে এবং সেনাবাহিনী দলীয় মতামতের উর্ধ্বে। তারা জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অথবা যদি ব্যর্থ হয় এ সরকার, তাহলে জাতির অবলম্বন বলতে আর কিছু থাকবে না।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ বিভাগের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের ব্যাপারে যথাযথ ও ইতিবাচক ফল আমরা চাই অবশেষে নির্বাচন অবশ্যই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার এর জন্য অংগীকারাবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নেয়ায় আমরা বিরোধী নই। তবে অনির্বাচিত সরকার অনির্দিষ্ট সময় ক্ষমতায় থাকুন তা কেউ চায় না।
সূত্র
প্রোব-এর সাথে সাক্ষাৎকারে মাওলানা নিজামী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।
দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?
বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি হাজার কথা বলে
আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি
ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন