বাড়ী ভাড়া – ব্যাপারটা দিন দিন একটা মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়াচ্ছে। কথায় কথায় বাড়ীওয়ালারা এখন বাড়ী ভাড়া বারানোতে ব্যাস্ত। আমার মত ভাষমান ছাপোষারা যারা পেটের দায়ে ঢাকা পড়ে আছি, সবাই আমরা এই বাড়ী ভাড়ার ফাদে আটকানো। উত্তরায় যে বিল্ডংটাতে আমি থাকি, আমরা তিন বন্ধু তিন টা আলাদা ফ্ল্যাট এ আমাদের ছোট্ট ছোট্ট সংসার। গত ছয় মাসে সবারই মোটামুটি বাড়ী ভাড়া বেড়েছে এবং আবারো বাড়ানোর জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।টাকার অংকটা অনেকটা মাথা খারাপ করার মত যা কিনা প্রারম্ভিক ভাড়ার তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেশি।আমরা যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি বছর ঘুরে কত টাকা তাদের বেতন বাড়ে? বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই সেটা ৭ থেকে ১০ ভাগ এর মধ্যে আর যদি অনেক ভালো বেড়ে থাকে তবুও তা ১৫ ভাগের বেশি না। এবার ধরে নিন আমি মাসিক ৪০ হাজার টাকার বেতেনে কর্মরত এবং সর্বোচ্চ ১৫ ভাগ বেতন বৃদ্ধির কারনে আমার ৬ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি পেল। সুখবর নিয়ে বাসায় ফিরার সাথে সাথেই বাড়ীওয়ালা আমার হাতে আরো একটা চিঠি ধরিয়ে বাড়ী ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়ে দিল যেখানে লিখা আছে আগামি মাস থেকে নতুন বাড়ী ভাড়া ৪ হাজার বেড়ে ১০ থেকে ১৪ হাজার করা হল। এবার এক হাত মাথায় আর অন্য হাতে কলম নিয়ে বসে পরলাম বর্ধিত টাকা দিয়ে বাজার মুল্যের সাথে কিভাবে পাল্লা দিব। কোনো হিসাবই মিলাতে না পেরে আমাদের মহামান্য মন্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেলো – খাবারের তালিকা এবং পরিমান ছোট করে ফেলতে হবে। তাও মিলেনা – জামাকাপড় কমাতে হবে (সাইজে না, গননায় - নাহলে তো ইজ্জত টাও যাবে)। নিম্ন মানের একটা বাড়ী ভাড়া নিয়ে খরচে সামঞ্জস্য আনতে হবে। এতে করে পরিবারের সম্মান এবং নিরাপত্তার ব্যাপারটা সামনে চলে আসে। এটা করা যাবেনা। মিলে না – পরিবারের স্বাস্থ খাতের খরচ কমিয়ে দিতে হবে। তারপরও মিলে না, কোনো ভাবেই এই হিসাব মিলবার নয়। আসলে বিগত এবং বর্তমান কোনো সরকারই আমাদের মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করেনি। ক্ষমতার লোভে তারা কেবল ভোটের সময় মানুষের পাশে এশে দাঁড়ায়। নির্লজ্জ কন্ঠে অংগীকার করে ক্ষমতায় গেলে মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করবে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা বেমালুম ভুলে যায় তাদের অংগীকার এর কথা।
সরকার অবশ্য একটা নিতীমালা তৈরি করে দিয়ছে বাড়ী ভাড়ার যেটা ওই নিতীমালা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। নিয়ম আছে কিন্তু নিয়ম মানানোর কোনো উদ্যোগ নাই। ঘোড়ার গলায় লাগাম আছে কিন্তু সেই লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই, আর সেই পাগলা ঘোড়ার পদতলে আমরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত। ডিসিসি’র একটা সাইট থেকে সেই লাগামের কিছু বিস্তারিত জানলাম। সে হিসাবে যে বাসাটায় আমি থাকি তার সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়া উচিৎ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু মাস শেষে আমাকে গুনতে হবে ১৪ হাজার টাকা। আসলে সবাই তার অধিনস্তকে সর্বোচ্চ শক্তিতে শোষন করে চলছে।
আসলে আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। সরকার নিজেদের তৃপ্তিতে মনোযোগী। আমার মত ভাষমান মানুষ অবহেলা অযত্নে যদি রাস্তার পাশে লাশ হয়েও পড়ে থাকি, সে লাশের গন্ধ তাদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ীর কালো জানালা ভেদ করে তাদের নাকে পৌছাবেনা ।।