সাইদ আরমান, সিনিয়র ইকোনমিক করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকদের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। গ্রাহকরা ই-মেইল ও ফোনে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ জানাচ্ছেন।
রোববার বাংলানিউজে ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ডাচ-বাংলা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এ নিয়ে ব্যাংকপাড়া এবং এর গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। রোববার এবং সোমবার অনেক গ্রাহক আমাদের ফোন করে এবং ই-মেইলে তাদের ভোগান্তির কথা জানান। এ নিয়ে সোমবার বাংলানিউজে প্রকাশিত হয় ‘গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ডাচ-বাংলার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনের পরও গ্রাহকদের অভিযোগ অব্যাহত থাকে।
গ্রাহকদের অভিযোগগুলো তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।
ব্যাংকটির গ্রাহকরা জানান, তাদের হিসাব থেকে অঘোষিত চার্জ কেটে নেওয়া হচ্ছে। হিসাব খোলার সময় যেসব চার্জ ধার্য করার কথা গ্রাহকদের বলা হয়নি, বর্তমানে এমন চার্জ ধার্য করে হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোনো নোটিশ ছাড়াই গ্রাহকের হিসাব থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ব্যাংকটি। টাকা আয়ের এই অভিনব কৌশলে হতাশ ডাচ-বাংলার গ্রাহকরা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এটিএম নেটওয়ার্ক ফিও আদায় শুরু করেছে ব্যাংকটি। প্রত্যেক গ্রাহকের হিসাব থেকে ২৩০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে ফি হিসেবে। বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনা করে হিসাব করলে দেখা যায়, এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অথচ হিসাব খোলার সময় এমন ফি নেওয়ার কথা গ্রাহকদের বলেনি কর্তৃপক্ষ।
হুমায়ুন কবির জুয়েল নামের একজন গ্রাহক জানান, যেখানে অন্য সকল ব্যাংক এটিএম ও নেটওয়ার্কিং খাতে কোনো চার্জ নেয়না সেখানে ডাচ-বাংলা নিচ্ছে ২৩০ টাকা করে চার্জ। তিনি আরও বলেন এটিএম কার্ডের চার্জ যেখানে সকল ব্যাংকে ২০০-৩৪৫ টাকার মধ্যে সেখানে ডাচ-বাংলার চার্জ ৪৬০ টাকা।
ডাচ-বাংলার অনিয়ম শুধু এখানেই থেমে নেই। এর গ্রাহকরা জানান, এটিএম বুথে লেনদেন করতে গেলে যদি উদ্বৃত্ত তথ্য চাওয়া হয়, তার জন্য গ্রাহককে তিন টাকা দিতে হয়। অন্য কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নেই। এমনকি ডাচ বাংলা ব্যাংক শুরুর দিকে এই চার্জ নিতো না।
তথ্য মতে, প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক ডাচ বাংলার বুথে লেনদেন করছেন। তারা সবাই অবশ্য ব্যালেন্স তথ্য নিচ্ছেন না। কিন্তু তারা সবাই যদি তিন টাকা করে ব্যালেন্স তথ্য নেন, তবে ব্যাংকের প্রতিদিন আয় হচ্ছে লাখ টাকা। মাসিক হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকা। আর বছরে গড়াচ্ছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। আর এর অর্ধেক গ্রাহকও যদি নেন তবেও আয় ৬ কোটি টাকা। গ্রাহকদের মতে, এই আয় নিয়ম বহিভূর্ত।
এদিকে, ডাচ-বাংলা কার্ড নবায়ন ফি হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে বছরে ৪৬০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এটিও অন্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। অধিকাংশ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর পরিমান তিনশ টাকা থেকে সাড়ে তিনশ টাকার মধ্যে।
জানা গেছে, বর্তমানে এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার। আর শাখার সংখ্যা প্রায় ১২১। আর এটিএম বুথের সংখ্যা ২ হাজার ৭৯টি।
হাবিবুর রহমান নামে একজন গ্রাহক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। এটিএম বুথ, নেটওয়ার্ক সার্ভিস, ছেঁড়া টাকা এসব নিয়ে সার্ভিস চার্জ মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আর নয়।
রিপন কবির নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কীভাবে ২ হাজার টাকা ডিপোজিট রাখবো, ডিবিবিএল কি তা বোঝে না? যদি এমনটাই করা হবে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হিসাব খোলার জন্য ক্যাম্পেইন কেন করা হলো।
আমজাদ হোসেন শাহেদ নামে একজন স্যালারি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, এখন কি করবো আমি বুঝতে পারছি না।
মাসুদুল হক মাসুদ নামে একজন গ্রাহক বলেন, “আমার অ্যাকাউন্টে ১৫০০ টাকা আছে। আমার প্রয়োজন ১০০০ টাকা তুলে নেওয়া। অথচ আমি তা তুলতে পারবো না। এটা কী মেনে নেওয়া যায়।”
সুমন প্রামানিক লিখেছেন- মাত্র ১০০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংক এখন ২,০০০ টাকা রাখা বাধ্যতামূলক করে কোটি কোটি টাকা আয় করতে চাইছে যা বড় ধরনের অন্যায়। আপনি যদি ২,০০০ টাকা না রাখেন তাহলে ৬ মাসের মধ্যে আপনার হিসাব বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার টাকা ব্যাংক নিয়ে নেবে। এ খাতেও তারা কোটি কোটি টাকা আয় করবে।
যখন ওরা নতুন ব্রাঞ্চ খুলে তখন যাকে পায় তাকে ই মাত্র ১০০ টাকা জমা‘র মাধ্যমে একাউন্ট খোলায়। এখন সকলের কাছ থেকে ২০০০ টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করছে। স্বল্প আয়ের মানুষ, ছাত্র, গৃহিনী, ক্ষুদ্র চাকুরীজীবিদের পক্ষে কোনক্রমেই এতো টাকা তাদের এ্যকাউন্টে রাখা সম্ভব নয়।
আসুন আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমরা যারা ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী তাদের বাচান। ২,০০০ টাকা এ্যাকাউন্টে ফেলে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
মোহসিন মাহমুদ লিখেছেন, “অ্যাকাউন্ট করলাম ৫ বছর হচ্ছে, চেক বই এখনো পেলাম না !! চেক বইয়ের জন্য গেলে, একবার এইখানে, একবার ওইখানে ঘুরতে হয় ! আজব ! আবার চেক বইয়ের জন্য টাকাও কাটে !! আমরা যারা ছাত্র ,আমাদের অ্যাকাউন্ট এ কতো টাকা থাকে ! তার মধ্যে যদি ২ হাজার টাকা রেখে দেয়, তাহলে আর অ্যাকাউন্ট রাখার কি দরকার! তাই ১ তারিখ এর আগে অ্যাকাউন্ট বাতিল । ৫০০ টাকা ভিক্ষা দিবো DBBL কে ।।”
রনি হোসেন লিখেছেন, “আমদের নিজেদেরকেই এগুলো প্রতিহত করতে হবে। কারন এগুলো দেখার মত আমদের দেশে কেউ নেই। আসুন আমরা সবাই ডাচ বাংলাকে না বলি। একমত হলে লাইক দিন.........।”
রনির এই লাইক আবেদনে সাড়া দেন অনেক পাঠক।
অন্যদিকে বাংলানিউজে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন নিয়ে এর পাঠক এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকরা বাংলানিউজের এই সাহসী ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলানিউজে এমন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের পরও অন্য পত্রিকা এবং টেলিভিশনগুলো কেন নীবর। তারা কি বিজ্ঞাপনের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
প্রতিবেদন বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চাওয়া হলে তারা প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন।
প্রতারণার আরও অভিযোগ ডাচ-বাংলা গ্রাহকদের
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
রাজনৈতিক সংকটে বিএনপি খেলছে পিছনে থেকে, কিনতু কেন?
রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এখনও ক্ষমতায় থাকত। রাজনীতি গড়ে উঠে গণমানুষের পারসেপসনের উপর ভিত্তি করে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকের পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ই সঠিক
কিছু মানুষ পুরোপুরি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাঁচে। তারা বারবার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের কথাই একমাত্র সত্য। এই প্রক্রিয়াটি এক ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসি বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ড.ইউনূস আউট, হাসিনা ইন প্রজেক্ট : কতদূর অগ্রগতি হইলো ?
খুবই সাদামাটা ভাবে সমাপ্তি ঘটলো প্রধান উপদেষ্টার সাথে বড়ো রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতের বৈঠক। সাবসিডারি হিসাবে বিনা আমন্ত্রণে ড. ইউনূসের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল এনসিপি ! আগামীকাল বাকি দলগুলোর সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ড. ইউনুস, বিএনপি ও ‘সমাধান’ নাটক: আস্থার সংকট না কৌশলের খেলা?
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক অদ্ভুত দৃশ্যপট আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট চায় নির্বাচন ও কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির পদত্যাগ; অন্যদিকে সেই ব্যক্তিদের নিয়েই আলোচনার টেবিলে বসছেন ড.... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী রাজনীতির গতিপথ
আওয়ামী উত্থান হতে হতে পতন এবং অবশেষে পলায়ন।সেলপি তুলেও বাইডেন থেকে রক্ষা পাওয়া গেল না।ট্রাম্পে ফিরে আসার প্রত্যাশা থাকলেও সেইটা এখন মরিচিকা। বিচার বাঞ্চালে বিএনপির উপর ভর করা... ...বাকিটুকু পড়ুন