- কিরে বন্ধু কি খবর? তোর অবস্থা এমন কেন?
বন্ধুর প্রশ্নে হাসব না কাদব বুঝতে পারছি না । তাই বললাম আরে না ভাল অবস্থা । কোন টেনশন নাই । চিন্তা নাই । মহাপুরুষদের আবার চিন্তা কিসের ।
- তারপর ও মনে হচ্ছে কিছু ভাবছিস। আমাকে বলতে পারিস।
- সারা জীবন তুই আমার কাছে সাহায্য নিলি । তোর সাড়ে ১৩ নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের লগে ব্রেক আপের সময় যে কোলবালিশ ভিজাইলি তোরে নিয়া যে ওর বাসায় গেলাম । তুই যে ওরে জানলা দিয়া ফ্লাইং কিক দিলি । এই বুদ্ধি কার কাছ থেকে নিছিলি ।
ফ্লাইং কিক না । কিস দিছি। আমি ওরে সত্য ভালবাসতাম । ও আমার ট্রু লাভ ছিল ।
- হ তুই তোর পৌনে উনিশ নাম্বারের সময়ও এইটাই বলছিলি। যে ওর তোর ট্রু লাভ। আবার ওর জন্য ড্রেনেও পরছেন । মনে নাই ।
আচ্ছা বাদ দে দোস্ত । তারপর তোর জনের কি খবর।
- ছিঃ ছিঃ কি বলিস । মহাপুরুষদের গার্লফ্রেন্ড থাকে না। ভক্ত থাকে । বুঝলি ।
- বুঝলাম তা তার কি খবর। কোন খোজ রাখছিস।
আমার ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজচ্ছে । আলো আলো তুমি কখনও আমার হলে না । না মহাপুরুষদের মনে দুঃখ থাকতে নেই ।
কিরে চুপ হয়ে গেলি কেন?
- আরে না । আজ তার জন্ম দিন । এই দিনটা ছিল আমার জন্য উতসব ছিল এক সময়। আহা কত কত গিফট দিয়েছি ।
- শালা!!! আমরা ট্রীট চাইলেই টাকা নাই । আর গার্লফ্রেন্ডরে গিফট দেয়ার সময় টাকা আসে কই থিকা।
- এসব উপরের লেভেলের ব্যাপার স্যাপার । তোর মাথায় যাবে না। এখন বল আজকের দিন সেলিব্রেট করা যায় কিভাবে ।
দোস্ত চল ওর বাসায় যাই । সারপ্রাইজ দেই । কি বলিস ।
- আমার সাথে থাকতে থাকতে তোর ও বুদ্ধি খুলছে। এই জন্য ই বলি মহাপুরুষদের সঙ্গে বেশি বেশি থাকবি।
যেই বলা সেই কাজ । বন্ধুকে নিয়ে চললাম এক্সের বাসায় । আজকে অনেক দিনের শোধ তুলব । দেখা যাক । সাথে আরও দুই তিন জন থাকলে ভাল হতো । মনে মনে গান চলছে চার বোতল ভদকা । নাহ ভদকা এখন পাওয়া যাবে না । এসব ভাবতে ভাবতে চলে এলাম এক্সের বাসার সামনে । সন্ধ্যায় সময় । তাই ওনার হাজবেন্ডের বাসায় আছে কিনা কেন জানে ।
ধুরর থাকলে ই কি । আমাদের কাজ খাওয়া । তারপর চলে যাওয়া । তিন তলায় উঠলাম । কলিং বেল চাপ দিলাম । বডি বিল্ডার টাইপ একজন দরজা খুলে দিল । তাকে দেখে তো আমার আর বন্ধুর দুজেনের অবস্থা ছিপতে আটকানো বোতল টাইপ । ইনি দেখতে অনেকটা আলিফ লায়লার তাক জ্বীন তবাক জ্বীনের মত । আর আমরা দুজন ই তালপাতার সেপাই । ফু দিলে একদম ঝড়া পাতার মত ই উড়ে যাব । বোধ করি ইনি ই সেই । যাক হ্যান্ডসাম পাত্র । বিয়ে করে সুখেই আছে ।
- কি চাই? গুরু গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করলেন ।
জ্বীনের মত কন্ঠ । এর প্রতিদিন দুই বেলা করে করল্লার জুস ও নিমপাতার রস খেয়ে ছাদে রেওয়াজ করা উচিত । তাতেও ঠিক হবে না । মনে মনে বললাম বেটা আমি আমার এক্সের কাছে এসেছি । তুমি জিজ্ঞেস করার কে । বললাম আমি আপনার স্ত্রী লাবন্যর কাছে এসেছি ।
মনে হল কেউ যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়োগিরির জ্বালিয়ে দিয়েছে । এখন ই ফেটে পরবে ।
- তাকে কেন চাই, সে কি হয় , আপনাকে তো আগে দেখিনি, বডিবিল্ডার বলল ।
মনে মনে কলা খাওয়ার মত মনে মনে বললাম, চিনলে কবেই ডিভোর্স দিয়া দিতা । তখন আমি বগল বাজাইতাম । আর মুড়ি চানাচুর খাইতাম । সেটা তো বলতে পারি না । বললাম উনার সাথে আমার অনেক আগে পরিচয় ছিল । অনেক দিন খোজ নাই তাই খোজ নিতে আসলাম ।
- আচ্ছা, তা কেমন পরিচয় ছিল, আপনি তাকে কিভাবে চিনতেন, প্রশ্ন করেই চুপ ।
আমি পরলাম মহাফ্যাসাদে । বন্ধু কে খাওয়াব বলে নিয়ে আসছি । এখন পরেছি জ্বীনের খপ্পরে । এত এত প্রশ্ন যেন আমাকে উনাদের বাড়ির জামাই করবেন । বললাম উনাকে ঢাক দিন । আর বাইরে বসে কি কথা বলব ভিতরে বসি । বলে ওনার বডি বিল্ডার বডিকে তোয়াকা না করে চিপা দিয়ে আমার তাল পাতার বডি ঢুকিয়ে সোজা ড্রইং রুমে গেলাম । সোফা আরাম করে বসে উনাকে বললাম, ভাই এসিটা একটু ছেড়ে দিন । বাইরে অনেক গরম ।
উনি মনে হচ্ছে ভূত দেখছেন । আমার কর্মকান্ড তার ভাল সুবিধা লাগছে না । পুলিশে খবর দিলে আমিও শেষ হতে পারি । গত দুই বার ওসি ছেড়ে দিয়েছে । তবে এবার ডিম থেরাপি না দিলেও বাশ ডলা থেরাপি দিতে পারে । সম্ভাবনা আছে । তবুও পরাজয়ে ডরে না বীর ।
বন্ধুর মুখ চোখ শুকিয়ে পুরা লইট্যা মাছ শুটকি হয়ে গেছে ।
এদিকে সামনের সোফায় বসে উনি আমাকে ভাল ভাবে লক্ষ্য করছেন ।
- আমি বললাম ভাই, আমি ছেলে । মেয়ে না । আর ও টাইপের ও না । তাই এভাবে না তাকিয়ে । কিছু নিয়ে আসুন খাই । আজ তো আপনার বউর জন্ম দিন ।
ওনার চেহারা দেখার মত হলো । ওনার ওয়াইফ এর জন্ম দিন সেটা আমার জানার কথা না । মনে হচ্ছে উনি কিম জং উন কে দেখছেন । এখন উনি ডোনাল্ড ট্রাম্প । আমার বন্ধু বারাক ওবামা ।
দেখেন অনেক ক্ষুধা লাগছে । কেক এনেছেন । নিয়ে আসুন । গন্ধতে বোঝা যাচ্ছে বিরিয়ানি রান্না হয়েছে । যান নিয়ে আসুন ।
নিজেকে আমার অনেক ক্ষমতাধর মনে হচ্ছে । আহা পাশে দু চার জন বডি গার্ড থাকলে ভাল হতো । উনি ভিতরে গেলেন । খাবার সাজিয়ে ওনার স্ত্রী কাছ থেকে নিয়ে আসলেন ।
আমি আর আমার বন্ধু ঝাপিয়ে পরে খাওয়া শুরু করলাম । মনে হচ্ছে এই মাত্র আমরা আমাজন থেকে মুক্তি পেয়ে এসেছি ।
সব শেষ করে । বললাম ওনাকে একটু ঢাকুন । কথা বলে যাই ।
- উনি ঢাকলেন কই গো শুনছ । তোমার শুভাঙ্গক্ষীরা এসেছে । দেখে যাও ।
ওনার স্ত্রী আসার পর । আমি আর বন্ধু দুজনেই শকড হয়ে গেলাম । এ মা এ কে!!! ওনি আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড না । তাহলে কোন বাসায় এলাম । আল্লাহ এবার বুঝি বাপের দেয়া প্রান নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব না । কি বলব বুঝতেছি না । এইবারের মত বাচতে হবে ।
- বললাম ইয়ে আংকেল । আজ আমরা উঠি । হ্যা, অন্য দিন । আসব । আচ্ছা আন্টি আসি । ভাল থাকবেন । আর গুল্টু মল্টু কে আদর দিয়েন ।
বলে আর দেরি না পরি মরি করে দরজা খুলে ফ্ল্যাশের গতিতে নিচে নেমে পিছেনে আর তাকালাম না । দৌড়ে পাড়ায় চলে আসলাম ।
- শালা!!!! তোর সাথে আর কোথাও যাব । কোন দিন আবার কার বাসায় নিয়ে যাস । ওইটা তোর এক্স । চল্লিশ বছরের আন্টি তোর এক্স হয় ক্যামেন ।
- আরে পাগলা!!!! মেয়েদের বিয়ে হলে আন্টি হয়ে যায় ।
মনে মনে বললাম । ও তাহলে বাসা চেঞ্জ করে ফেলেছে । যাই হোক খানাটা ভাল ছিল । আন্টির হাতের রান্না চমতকার ।
- ওই শালা!!! মুনাজাত ধর । আর শপথ কর । আর কখনও এক্সের বাড়ি যাবি না । আর এক্সের কথা ভাববি ও না ।
- বন্ধু বলল, বন্ধু হেলে কি মোরা নতুন কইরা প্রেম হরমু ।
আমি বললাম, প্রেম ভালবাসা বিয়ে এই তিনের উর্ধ্বে আমি । বুঝলি । মহাপুরুষরা পৃথিবীর চিন্তা করে । মানব জাতির চিন্তা করে । এখন ই এক্সের ফোন আসল । আপাতত এক্সের চিন্তা বাদ দিয়ে দুজনেই আইস্ক্রিম খেয়ে বাসায় চলে আসলাম ।
এই সিরিজের আগের গল্প গুলোঃ
গল্পঃ বিয়ে কারাগার (মহাপুরুষ সিরিজ)
ব্যাচেলর্স সমিতিঃ এক ভাঙ্গা সমিতির গল্প (মহাপুরুষ সিরিজ)
সমুদ্র বিলাসঃ জার্নি বাই বাস (মহাপুরুষ সিরিজ)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১১