অনেক দিন পর বন্ধুর বাসায় গেলাম দেখা করতে । যদিও আমি হঠাৎ এভাবেই উদয় হই । যদিও তারা আমাকে ঝামেলা মনে করে । এতে ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই । এটা অনেক অনেকটা উদর পিন্ডি বুদর ঘাড়ে । তাছাড়া সন্ন্যাসী মানুষ আমি। হাহাহাহা । কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । দরজা খুলে আমাকে দেখে বন্ধু আনন্দে কেদে দিল । জড়িয়ে ধরে বলল, দোস্ত তুই এত দিন পরে এলি । আমাকে মনে পরল । ওর আচরনে চ্যাকাভ্যাবা সরি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । ঘটনা কি? এত আবেগ । এর মধ্যে ঘাপলা আছে । সাবধান থাকতে হবে ।
আমাকে দেখে কিছুটা অবাক লাল ফতুয়া আর লুঙ্গীতে কেমন জানি বাবা বাবা মনে হচ্ছে। কিরে অপু তুই এই বেশ নিল কেন? তুই কি বাবা হয়ে গেছিস? হাত দেখে বেরাস? আমি বললাম, আস্তে আস্তে বল। ভাবি শুনে কি বলবে । আমি বসব না তোকে দেখতে এসেছি । দোয়া দিয়ে চলে যাব । হাহাহাহা । ভাবি আমাকে এই বেশে দেখলে নির্ঘাত পাগল ভেবে ঝাড়ু নিয়ে দৌড়ানি দিবে। বন্ধু বলল, দোস্ত তুই এসে ভালই করেছিস আমাকে কয়েকটা সমাধান দিয়ে যাবি।
কিরে কি হয়েছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
ও বলল, আগে বস ঠান্ডা হও । তোর ভাবী কে বলি লেবুর শরবত করতে । আমি বললাম আস্তে আস্তে এত তাড়া কিসের । সব হবে তুই শান্ত হও । বল কি হয়েছে । বন্ধু বলে বলব আগে তোর জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসি । বুন্ধর ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছে আমি তার এঞ্জেল । জীবন বাচাতে এসেছি । কি করব পালাই । তার আগেই বন্ধু আবার হাজির খাবার নিয়ে । ভাবি ব্যস্ত । তাই এলেন না, ভাল হল খাবার সব সাবাড় করলাম ।
এখন বল কি হয়েছে । বন্ধু আমাকে বাচা । ওর মুখ থেকে শুনে মনে হলো নিশ্চয়ই কোন বিপদে পরেছে । বাংলা ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজচ্ছে । বাজ পরার শব্দ হচ্ছে । মনে হচ্ছে জসিমের অনেক বড় বিপদ লটারি জিততে পারেনি । দোস্ত তোর ভাবির, এই বলে আমার মুখের দিকে তাকাল । এখন নিজেকে গ্রীক দেবতা মনে হচ্ছে । শালা মতি গতি ভাল না । অপু সাধু সাবধান । আমি বললাম, কেন দোস্ত ভাবির কি হয়েছে । কোন সমস্যা, ভাবি কি অসুস্থ । নাকি অন্য কোন ব্যাপার । দোস্ত ভাবি কি পরকীয়া করছে । খোজ লাগাব । ধুরর হারামি, তোর আর কি কোন কাজ নাই একটু চুপ থাক ।
চুপ থেকে যা শুনলাম তার সারমর্ম হচ্ছে । দোস্ত আমি তো বিয়ে করে অনেক বেশি ফেসে গেছি । আমি শেষ । খালি মনের মধ্যে বাজে আমি ফাইসা গেছি মাইনক্যার চিপায় । খালি হাস ফাস লাগে । পাখির মত উড়তে ইচ্ছা করে । আমি ভাবলাম কেন? দোস্ত ভাবি কি তোরে শারীরিক ভাবে অত্যাচার করে । আমাকে বলতে পারিস ।
মানবাধিকার সংস্থার লোক আছে আমার জান শোনা । তোর কোন সমস্যা হবে না । তোর গায়ে কি ভাবি হাত তোলে । আচ্ছা তুই একটা জিডি করবি । যদিও পুরুষ নির্যাতন আইন নেই । চল শাহাবাগে আন্দোলনে যাই । " চাই পুরুষ নির্যাতন আইন চাই " । এই বিষয় নিয়ে আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা হবে । তুই হিট খেয়ে যাবি । সারা পৃথিবীতে তুই বিখ্যাত হয়ে যাবি। দোস্ত আমি আমার সমস্যার কথা বললাম আর তুই ফাইজলামি শুরু করেছিস । অপু তুই এখন ও আগের মত আছিস ।
তখন বললাম বদলানোর কোন ইচ্ছে নাই শালা । অপু শোন, আগে আমি কত ভাল ছিলাম । কোন তারিখ মনে রাখা লাগত না । মাঝে মাঝে গিফট দিয়েই খালাস হয়ে যেতাম । দোস্ত আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ।
কিন্তু তোর ভাবির যন্ত্রনায় এখন দিন তারিখ মাস ঘন্টা সেকেন্ড সব রাখা লাগে । এই তো সেদিন রমজান শুরু বলে গিফট দেইনি কেন রাগ করে গাল ফুলিয়ে ছিল । পরের দিন একটা মেকাপ বক্স আনলাম । তা তার পছন্দ হলো না গিয়ে চেঞ্জ করলাম । তার সাথে এক গাদা শপিং । বলে কি এটা প্রি ঈদ শপিং । আমি হাসব না কাদব বুঝলাম না । তাও ভাল বললাম চল একটু আগে বাসায় যাই । আজ আড্ডা আছে । অমনি তিনি রাগেশ্বরী হয়ে উঠলেন সাথে তো ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল আছে । জানিস কত দিন কাচ্চি খাই না । তোর ভাবি আমারে ডায়েট উপর রাখছে । আমারে এই কারাগার থেকে বাচা । এই ডাইনীর হাত থেকে আমারে উদ্ধার কর ।
ইশশ!!!
কিরে অপু এমন করলি কেন? আমি বললাম কথাটা রেকর্ড করে রাখতে পারলে ভাল হতো । ভাবি কে সেন্ড করে দিতাম ।
দোস্ত তুই এমন ক্যান ।
আমি বললাম, ভাবী তোরে ভালবাসে তো তাই একটু পজেসিভ । ওটা কিছু না । ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে । জেলখানাতে মানুষ অভ্যাস করে নেয় । তোর ও হবে ।
এই সময় ভাবী আসলেন । তাকে দেখে অবস্থা বুঝা যাচ্ছে না । কোন ঘাপলা আছে । আল্লাহ্ বাচাও আজকে । পিছনে ব্যাকগ্রাউন্ড বাজচ্ছে। বন্ধুর দিকে দেখলাম চিমসা আম হয়ে গেছে। শালায় বউরে এত ভয় পায় । যাক বাবা আমি বিয়ে করিনি । ভাল হয়েছে ।
কি খবর ভাই? কেমন আছেন? কোথা থেকে আসলেন?
এইতো ভাবী, সিলেট আর চিটাগাং ঘুরে আসলাম ।
এখন ও বিয়ে করেছেন না কেন? আর কত একা থাকবেন?
আমার ব্যাক গ্রাউন্ডে দেবশ্রী এর গান বেজে উঠল, আর কত রাত একা থাকব । ধুরর কি সব ভাবতেছি । দেখি বন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে বলছে চোখে চোখে বলছে জীবনে বেচে থাকতে বিয়ে করিস না ।
আমিও নিরব সম্মতি দিলাম ।
কি ভাই? কি ভাবছেন? বলেন তো মেয়ে দেখি? নাকি পছন্দের মেয়ে আছে?
না ভাবী নাই । তবে বিয়ের চেয়ে ভাল আছি । যারা বিয়ে করেছে তাদের অবস্থা বেশি ভাল না ।
কেন? কি ব্যাপার আপনার বন্ধু আমার ব্যাপারে কি বলেছে ?
আরে ভাবী রেগে যাচ্ছেন কেন? ওতো আপনার প্রশংসা শেষ করতে পারে না । আপনি ওকে কতো ভালবাসেন তা বলেও শেষ করতে পারবে না । এইসব আরকি । বলে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম ।
কি যে বলেন ভাই!! এমন কিছুই না । ভাবী বলল ।
যাক পাম এ কাজ হয়েছে । ভাবী একটু লজ্জা পেলেন । বন্ধু আমার দিকে ভ্যাম্পায়ারের মত তাকিয়ে আছে । যেন এখন ই পারলে রক্ত চুষে নেয় । অবস্থা সুবিধার না । কে যানে চলে যাব তবে সম্ভবত ঝড় আসছে । পৌনে ১৪ নাম্বার মহা মহা বিপদ সংকেত পাচ্ছি । অপু পালা পালা। বুকে মধ্যে বাজচ্ছে ।
ভাবী বললেন, ভাই এবার একটা বিয়ে করেই ফেলেন । আমার ননদের মেয়ের জামাইয়ের মামার বাড়ির ভায়রার মেয়ের ভাসুরের শ্বশুর বাড়ির প্রতিবেশীর চাচার ছেলের বউরের বাড়ির পাশের বাসার একটা সুন্দর মেয়ে আছে বলেন তো খোজ লাইগাই ।
আমি শুনে তো অজ্ঞান হবার বাকি ছিল । মনীষিরা ঠিক ই বলেছেন মেয়েদের স্মরন শক্তি অনেক প্রখড় । না হলে পাচ বছর আগে তুমি কি করেছ সেইটা ঝগড়ার সময় তুলে আনবে । তাড়াতাড়ি ভাগা দরকার । না হলে ভাবী আজ বিয়ে দিয়েই ছাড়বে ।
আমি বললাম ভাবী আজ উঠি । পরে আবার আসব । বন্ধু হাত ধরে বসল । নিজেকে তখন দিলওয়ালে দুলহানিয়া লেজাঙ্গে এর কাজল মনে হচ্ছিল । ও যেন শপথ করেছে আমাকে ছাড়বেই না । ওর করুন দৃষ্টি আমাকেও ইমোশনাল করে দিয়েছে । তবুও যেতে তো হবেই । ওর চোখ বলছে দোস্ত তুই গেলেই আমি শেষ । প্লিজ থেকে যা ।
আমি বললাম, দোস্ত গুয়ান্তানামো থেকে তোকে আবু গারীব এ যেতে পারবি । তোকে আগেই বলেছিলাম । এখন আর কি করবি । ভাল থাকিস ।
বন্ধুর চোখ দেখে মনে হল, যেওনা সাথী গান বাজচ্ছে ।
এরপর মনে বললাম এজন্য ই মহাপুরুষেরা বিয়ে করেন নাই ।
#মহাপুরুষ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭