somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের প্রথম সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ

২৩ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনার জীবনের লক্ষ্য কী, এমন প্রশ্নের উত্তরে যদি কেউ বলে, জ্বী জনাব, আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে ১০১ টা নারীকে হত্যা করে সন্ন্যাসী হওয়া, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে?
শুনতে আজগুবি মনে হলেও এমন একজন মানুষ মানুষ সত্যিই ছিল যে কিনা পণ করেছিল সে জীবনে ১০১টা নারীকে হত্যা করবে এবং এই লক্ষ্য নিয়ে সে দুই বছরের ভেতরে ১১ জন নারীকে ধর্ষণ এবং হত্যাও করেছিল। আরও অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে এই লোক আমাদের বাংলাদেশেই নাগরিক। এ খুনের ঘটনা আমাদের দেশেই ঘটেছে। তার নাম রসু খাঁ। সে বাংলাদেশের প্রথম সিরিয়াল কিলার ।
রসু খাঁ এর জন্ম চাঁদপুরের মদনা গ্রামে। কম বয়সে বাবা মারা যায় তার। পরে তার মা জমি জমা বিক্রি করে বড় মেয়ের কাছে টঙ্গিতে চলে আসেন । এই সময়ে রসুঁ খা একেবারে অভিভাবকহীন ভাবে জীবন যাপন শুরু করে। সেই সাথে ছোট খাটো অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তবে সেটা কেবল ছোট খাটো চুরির ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এই পর্যন্ত যদি থাকত তাহলে হয়তো এই পোস্ট লেখার কোন দরকার পড়ত না। তবে এরপর রসু খাঁয়ের জীবনে যা ঘটলো বলা যায় সেটা ছিল তার সিরিয়াল কিলার হওয়ার প্রথম ধাপ । রসু খাঁ বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের ঘটক কৌশলে রসু খাঁকে বিয়ের পাত্রীর চেহারা দেখায় না । রসু তার বউয়ের চেহারা দেখে বাসর রাতে । তখন সে আবিস্কার করে যে তার বউয়ের একটা চোখ নষ্ট । রসু নিজেকে প্রতারিত মনে করে। তবে বউয়ের সাথে ঘর সংসার ঠিকই শুরু করে। বছর দুয়েক সংসার করার পরে সে তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে শ্যালিকাকে বিয়ে টঙ্গীতে চলে আসে । টঙ্গীতে এসে তার স্ত্রী গার্মেন্টে চাকরি নেয়, অন্য দিকে রসু তার পুরানো চুরি চামারির কাজ করতে শুরু করে। এভাবে দিন পার করে কিছু কাল ।

স্ত্রীর গার্মেন্টের চাকরির সুবাদে রসুর সাথে আরও গার্মেন্টস কর্মীদের পরিচয় হয়। এভাবেই এক গার্মেন্টসের মেয়ের সাথে রসুর প্রেম শুরু হয়। কিন্তু দেখা যায় সেই মেয়ে কদিন পরে অন্য আরেকজনে সাথে প্রেম শুরু করে । এটা নিয়ে তাদের ভেতরে ঝামেলা শুরু হলে সেই তার নতুন প্রেমিক এবং প্রেমিকার কিছু বন্ধুবান্ধব দিয়ে রসুকে বেদম মাইর দেয়। এই মাইর খেয়ে রসু আবারও নিজেকে প্রতারিত মনে করে এবং এই প্রতারণার প্রতিশোশ নিতে সে তখন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে সে ১০১টা নারীকে ধর্ষণ করবে এবং তাদের হত্যা করবে । এরপর সে সন্ন্যাসী হবে।

২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে রসু মোট এগারোজন নারীকে ধর্ষণ এবং হত্যা করে। রসু সাভার এবং টঙ্গী থেকে এই মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাদের চাদপুরে নিয়ে আসত। তারপর সেখানে তাদের ধর্ষন ও খুন করে সেখানকার নদীতে বা ডোবাতে ফেলে দিত। কখনও সে একাই এই কাজ করত আবার কখন কেউ তার সাথে থাকত। এই মেয়েগুলোর সবাই ছিল নিন্ম বিত্তের। এই কারণে তাদের খুন নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা ছিল না, খুব একটা জানাজানিও হয় নি, হইচই হয় নি। আমার তো মনে হয় যে যদি রসু নিজের মুখে যদি স্বীকার না করত তাহলে এদের আসল খুনী কোন দিন বের হত না কিংবা খুনী ধরার কোন চেষ্টা করাও হত না।

রসু ধরা পড়ল কিভাবে?
২০০৯ সালে কড়ইতলী গ্রামের খালের পাড় থেকে পারভীন নামের একজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এই লাশের ময়নাতদন্ত থেকে জানা যায় নারীকে আগে ধর্ষণ এবং পরে নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে। এই নির্মন খুনের হত্যা রহস্য পুলিশ কিছুতেই বের করতে পারছিল না। কারণ তাদের কাছে কোন সুত্র ছিল না। কোন মোটিভ ছিল না। এমন সময়ে তাদের কাছে একটা রহস্যময় ফোন কল আসে। সেখানে এক ব্যক্তি ফোন করে জানায় যে, সে একজন রিক্সাচালক এবং এই নারীকে সে সেদিন রিক্সায় করে নিয়ে এসেছিল । পরে দুইজন যুবকের নাম বলে । ফোন কলের ব্যক্তিটি বলে যে ঐদুইজন যুবকই নারীতে হত্যা করেছে।

পুলিশ সেই দুই ব্যক্তিকে পাকড়াও করে কিন্তু এক সময়ে তারা বুঝতে পারে যে তারা নির্দোষ । তারা তখন সেই ফোনকলের উপরে সন্দেহ করতে শুরু করে। সেই নম্বরটি বন্ধ পায় তারা । প্রায় মাস খানেক পরে সেই নম্বরটি আবারও খোলা পাওয়া যায়। পুলিশ ধরে সেই ফোনের ব্যক্তির কাছে গিয়ে হাজির হয়। তার কাছ থেকে জানা যায় যে এই সিম এবং মোবাইল সে পেয়েছে রসু খাঁ নামের একজনের কাছ থেকে । মসজিদের ফ্যান চুরি করতে গিয়ে রসু খাঁ ধরা পরেছিল । সেই সময়ে তার কাছ থেকে এই মোবাইল আর সিম নিয়ে নেওয়া হয়।

পুলিশ এবার রসু খাঁকে গ্রেফতার করে। তাকে পারভীন হত্যা মামলায় জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করলে রসু খাঁ তা স্বীকার করে নেয়। পরে পরে কেবল কৌতুহলের কারণে পুলিশ আগে পাওয়া ছয়টা অজ্ঞাত লাশের কথা জিজ্ঞেস করলে রসু সেসব স্বীকার করে নেয়। পারভীন হত্যা ছাড়াও আরও দশটি খুনের বর্ণনা দেয় । পরে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
২০১৫ সালে তার ফাঁসির রায় হয়। এই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্টের রায়েও সেই মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে ।
এই গেল আমাদের দেশের প্রথম সিরিয়াল কিলারের গল্প। এখনও সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় নি।

রসু খাঁকে নিয়ে কোন বই লেখা না হলেই খবরে দেখলাম নির্মাতা সিহাব শাহীন রসু খাঁকে নিয়ে ফিল্ম বা ওয়েব ফিল্ম বানাবে। সেখানে অভিনয় করবে আরফান নিশো।

দু'চারদিন আগে রাশিয়ার প্রথম সিরিয়াল কিলার নিয়ে পড়ছিলাম । সেটা নিয়ে একটা ব্লগপোস্ট করেছিলাম ব্লগে । সেখানেই আরইউ আর সাজিদ বাংলাদেশের প্রথম সিরিয়াল কিলার নিয়ে মন্তব্য করলাম । আমার ধারণা ছিল যে সিরিয়াল কিলার হিসাবে এরশাদ সিকদারের নাম আসবে । এরশাদ সিকদারকে আমার সিরিয়াল কিলারের চেয়েও সন্ত্রাসীই মনে হল বেশি । বেশ কয়েকতা আর্টিকেল আর পত্রিকা পড়ে দেখলাম মানুষজন এরশাদ সিকদারের থেকে রসু খাঁকেই প্রথম সিরিয়াল কিলার উপাধী দিয়েছে । ভাবলাম পোস্টটা লেখা যাক ।

তথ্যসুত্র

বাংলাদেশী সিরিয়াল কিলার পার্ট ওয়ান
উনি কিন্তু রসু খা! বাংলার সিরিয়াল কিলার!!!
যেভাবে সিরিয়াল কিলার
A Case Study on Serial Killer Rashu Kha
সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ফাঁসির আদেশ

ছবিটা কালের কন্ঠ থেকে নেওয়া।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×